১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভার্চ্যুয়াল বাজেট আলোচনা : সরকারের ভর্তুকিকৃত সার পাচ্ছে তামাক চাষিরা

ভার্চ্যুয়াল বাজেট আলোচনা : সরকারের ভর্তুকিকৃত সার পাচ্ছে তামাক চাষিরা -

সমাজ ভয়াবহভাবে তামাকে ঝুঁকছে। বর্তমানে যুবসমাজের মধ্যে তামাক সেবন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা ভয়াবহ। ২৪ বছরের নিচে ৪৯ শতাংশ তরুণ সমাজ রয়েছে যারা তামাক সেবন করছে এটা ভয়াবহ চিত্র। বিশ্বে তামাক ব্যবহারে বাংলাদেশ অন্যতম বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহ্সান রাসেল।

আর বক্তারা বলছেন, আমাদের যুবসমাজকে না বাঁচাতে পারলে দেশের টার্গেট পূরণ হবে না। সরকার সারে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। অথচ ভর্তুকি সার তামাক চাষিরা পাচ্ছেন। এতে করে তামাক কোম্পানি লাভবান হচ্ছে। আবার তামাক বন্ধ করলে যুব সমাজ ইয়াবার দিকে ঝুঁকবে।

আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ তামাক কর বৃদ্ধির মাধ্যমে যুব সমাজকে তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করা শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিজেএফবি ও ডরপ,’র যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার এই ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করা হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো: মোস্তাফিজুর রহমান, সভাপতি এফএইচএম হুমায়ুন কবীর, ডরপ’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম, ভোলা শিবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূরুন নাহার বেগম। প্রজ্ঞার টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রামের হেড হাসান শাহরিয়ার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুশান্ত সিনহা।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে হাসান শাহরিয়ার বলেন, দেশে চার কোটি মানুষ তামাক পণ্য ব্যবহার করে। তামাক পণ্যের ধরণ ও ব্র্যান্ড ভেদে কর চালু আছে। বাজারে ৪ থেকে ১৪ টাকায় সিগারেট পাওয়া যায়। মানুষ কম দামের সিগারেটে ঝুঁকছে। বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাক পণ্যের দাম কম। সিগারেট অধিক সহজলভ্য হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লে বাড়েনি সিগারেটের দাম। ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত টার্গেট পূরণ করতে হলে প্রতি বছর দেড় শতাংশ হারে তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে। তামাকখাতে রাজস্ব ২২ হাজার কোটি টাকা। তামাক ব্যবহারে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। তার মানে তামাক প্রতি বছর দেশের ৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করে যাচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে এক তৃতীয়াংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে এটা খুবই ক্ষতিকর। যুবদের যদি আমরা তামাক সেবন থেকে দূরে না রাখতে পারি তবে আমাদের টার্গেট পূরণ করতে পারবো না।

তিনি বলেন, সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কিভাবে যুব সমাজকে মাদক-তামাক থেকে দূরে রাখা যায়। তারপরও যে চিত্র দেখলাম এটা ভয়াবহ। এতো ট্যাক্স বৃদ্ধির পরও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। শুধু ট্যাক্স বৃদ্ধি নয় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে তামাক সেবন বন্ধে।

তিনি আরো বলেন, তামাকে কর বৃদ্ধি করতে হবে। তামাক সেবনের মধ্য দিয়ে যুব সমাজ বড় ধরণের নেশায় ঝুঁকে পড়ছে। এই বিষয়ে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। আমি নানা অনুষ্ঠানে বলে থাকি আমি কখনো মাদক ও তামাক সেবন করি নাই। সব সময় খেলাধুলায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি।

তামাকের কর বৃদ্ধিতে সংসদে জোরালে ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী রাসেল বলেন, আমি সব সময় সংসদে তামাকে কর বৃদ্ধির বিষয়ে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি। আসন্ন বাজেটে তামাকের কর বৃদ্ধিতে চেষ্টা করব। সিগারেটের শলাকা বিক্রি বন্ধের পদক্ষেপ নেব। তা হলে অনেক যুবক এক সঙ্গে এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে পারবে না। তামাকের কর বৃদ্ধির বিষয়ে জোরালো ব্যবস্থা নেব। যাতে আমার তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে পারি।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, যুব সমাজকে নানা নেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা যুব সমাজের জন্য অন্যতম সমস্যা।

তিনি বলেন, তামাক বন্ধ নিয়ে বিতর্ক আছে। ছোট নেশা বাদ গেলে যুবকরা বড় নেশা গ্রহণ করবে কি-না, এটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তামাক বন্ধ করলে অনেকে ইয়াবার দিকেও ঝুঁকবে। এটা নিয়েও ভাবতে হবে। পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ তামাক থেকে বের হতে পারেনি। আমরা আবেগে অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু বাস্তবে কী হবে তা ভাবতে হবে।

অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমাদের যুবসমাজকে না বাঁচাতে পারলে দেশের টার্গেট পূরণ হবে না। ২০৪০ সালে উন্নত দেশে রূপ দিতে হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। তামাক ক্ষতিকারক বস্তু। তামাকে বেশি বেশি ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে হবে। তামাকে খুব একটা বেশি ট্যাক্স বৃদ্ধি হচ্ছে বলে মনে হয় না। তামাকে ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে যুবসমাজকে তামাকমুক্ত করতে পারব। যারা আগে সেবন করতো তাদের রক্ষা করতে পারব।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশীয়ায় অনেক সূচকে অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছি। এমনকি মাথাপিছু আয় ভারতের থেকে এগিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে তামাকপণ্যের দাম কম। এটা বাড়াতে না পারলে দেশের জন্য ক্ষতি-যুব সমাজের জন্য শঙ্কা। দেশে ৩৫ শতাংশ লোক তামাকপণ্য ব্যবহার করেন।

তিনি বলেন, সরকার সারে বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। অথচ ভর্তুকি সার তামাক চাষিরা পাচ্ছেন। এতে করে তামাক কোম্পানি লাভবান হচ্ছে। ভর্তুকি সার তামাকের জমিতে যাতে ব্যবহার না হয় সরকারকে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সভাপতি হুমায়ুন কবীর, ২০১৮-১৯ সালে দেখেছি ২২ হাজার কোটি টাকার কর এসে তামাক থেকে একইভাবে ৩০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে চিকিৎসা বাবদ। তাহলে কী দেখলাম অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতি হতে হয়েছে। আমাদের যুব সমাজ নেশা প্রবেশ করছে তার প্রাথমিক অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে সিগারেট।

ডরপ’র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম বলেন, যারা তামাক সেবন করে এসব যুবসমাজকে প্রটেক্ট করা খুবই জরুরি। তামাক সেবনে যুব সমাজকে নিরুৎসাহি করাতে হবে। সিঙ্গেল শলাকা বিক্রি বন্ধ করতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী ১০ টাকায় এক শলাকা কিনে সেবন করে।

ভোলা শিবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুরুন নাহার বেগম, আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাচ্ছি ১৪ থেকে ১৫ বছরের যুবকেরা তামাক সেবন করে। অনেক মেয়েরা অল্প বয়সে গুল খাচ্ছে। তাই সরকারকে অনুরোধ করবে সরকার যেন তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধি করে।


আরো সংবাদ



premium cement