১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই মৃত্যু হার কম: মন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার দাবি সংসদে

স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার দাবি সংসদে - ছবি : সংগৃহীত

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনকে সরিয়ে অন্য কাউকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিসহ সংসদে মন্ত্রী ও মন্ত্রনালয়ের ব্যাপারে কঠোর সমালোচনা হয়েছে। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে, ব্যবস্থা নিয়েছে বলেই আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুহার কম। অব্যবস্থাপনার অভিযোগ সঠিক নয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে গতকাল ২০২০-২১ অর্থ-বছরের বাজেটের ওপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবি ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনাকালে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ব্যবস্থাপনার জন্য এই সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পীর ফজলুর রহমান, মুজিবুর রহমান (চুন্নু) ও রওশন আরা মান্নান এবং বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ।

পীর ফজলুর রহমান বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাত দুরাবস্থার মধ্যে আছে। মানুষ চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে। ৩৭ লাখ টাকার পর্দার কথা শুনেছি। ডাক্তারদের ২০কোটি টাকার খাওয়ার বিল এসেছে। সেখানে একটি কলার দাম ২ হাজার টাকা। একটা ডিমের দাম এক হাজার টাকা। রুটির এক স্লাইসের দাম তিন হাজার টাকা। এ অবস্থা করোনাকালেও। কয়েক দিন আগে দেখেছি কিট কেনার দুর্নীতির কারণে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানুষ বলছে, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাকি মিনা কার্টুনে পরিণত হয়েছে। কাধের ওপর বসে টিয়া পাখি মিঠু যেমন মিনাকে পরিচালিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ও যেভাবেই চলছে।

তিনি বলেন, আমি গ্রামে থাকি। গ্রামের মানুষ আমাকে বলেছেন, আপনি তো সংসদে কথা বলতে পারেন। আপনি প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে দিতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে দেওয়ার কথা বলেছেন সাধারণ জনগণ। আমি প্রধানমন্ত্রীকে মানুষের এই কথাটি জানালাম। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য সদসরাও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কড়া সমালোচনা করেন।

জাতীয় পার্টিও মুজিবুল হক বলেন, দুঃখের বিষয়, সাবেক-বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর যাঁরই হোক, অসুখ হলে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। ৩ মার্চ স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক বললেন, বাংলাদেশের যে আর্দ্রতা, গরম, করোনা বাংলাদেশে আসতে আসতে মরে যাবে। কোনো সমস্যা হবে না। আবার ২৫ জুন সেই একই ব্যক্তি বললেন, করোনা দুই থেকে তিন বছরে যাবে না। এগুলো দেখা প্রয়োজন। থানা-উপজেলায় প্রথমে খুবই নিম্নমানের পিপিই দেওয়া হলো। ডাক্তার-নার্স আক্রান্ত হলেন, মারা গেলেন, কে জবাব দেবে?

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, করোনায় মারা যাবে। সারা পৃথিবীতে যাচ্ছে। কিন্তু কতটুকু চিকিৎসা দিতে পারছি, এটাই বড় প্রশ্ন? দেশে সেই চিকিৎসাটাই নেই। বাংলাদেশে সংক্রমণ হার অনেক বেশি। নমুনা পরীক্ষার ২৩ শতাংশ পজিটিভ আসছে। তাও ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ দিন পর। এতে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, অনেক সময় মিডিয়া বলে, আমরা এখন ঘরে বসে আছি। মিডিয়া যদি সব সময় শুধু মুত্যুর খবর, দুঃসংবাদ দিতে থাকে, তাহলে আমাদের যারা তরুণ জেনারেশন আছে, তারা কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে। আমাদের বয়স্করাও অসুস্থ হয়ে যাবে। আমরাও যারা আছি, তারাও অসুস্থ হয়ে যাব। তাই আমাদের একটু পজিটিভলি কথা বলতে হবে।
তিনি বলেন, পাঁচ মাস কিন্তু আমরাই মাঠে আছি। প্রতিটি হাসপাতাল যে আমরা যাইনি, এ কথাটা সঠিক নয়। বসুন্ধরা কীভাবে বানিয়েছি। ২৫ দিনে বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার, হাসপাতাল করা হয়েছে। যেখানে দুই হাজার বেড আছে। যতগুলো কোভিড সেন্টার রয়েছে, সব কটি উদ্বোধন করেছি। সব সময়ই যদি সমালোচনা করি, তাহলে সঠিক হবে না।

তিনি বলেন আমাদের দেশে মুত্যুর হার কম, ১ দশমিক ২৬। এই মুত্যুর হার এমনি কম না, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাই মৃত্যুর হার কম।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের থাকা-খাওয়ার বিলে যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তাও সঠিক নয় বলেও দাবি করেন। তিনি কোভিট-১৯ মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement