১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লকডাউনের পর কেমন হবে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা?

এয়ারলাইন্সগুলো হয়তো ভবিষ্যতের ফ্লাইটে বিমান ভর্তি করে যাত্রী তুলবে না - বিবিসি

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে বিশ্বজুড়ে লকডাউন। একটা সময় এই অবস্থার অবসান হবে। ধীরে ধীরে শিথিল করা হবে লকডাউন। তখন ভ্রমণকারীরা যেন নিরাপদে এবং স্বস্তিতে ছুটি কাটাতে যেতে পারেন, সে জন্য ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা এখন থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। এই যেমন- বিমানে ওঠার আগে আপনার রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে, গায়ে স্যানিটাইজার ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো শুনতে হয়ত আপনার অস্বাভাবিক লাগছে। কিন্তু সময় সব স্বাভাবিক করে দিবে। অবশ্য এটা বলে রাখা দরকার যে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আবার কবে শুরু হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু যখনই শুরু হোক, কেমন হবে সেই লকডাউন পরবর্তী যুগের ভ্রমণ?

এখানে তুলে ধরা হচ্ছে তারই একটা সম্ভাব্য চিত্র।

বিমানবন্দর

লন্ডনসহ বিভিন্ন এয়ারপোর্টে ইতোমধ্যেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নানা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে যাত্রীদের মধ্যে সবসময় এক বা দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখা (যারা একসাথে থাকেন তারা ছাড়া), পুরো এয়ারপোর্ট জুড়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা এবং টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদেরকে সমানভাবে ছড়িয়ে রাখা– যাতে এক জায়গায় বেশি লোকের ভিড় না হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিরাপত্তা প্রশাসন (টিএসএ) বলছে, সিকিউরিটি স্ক্রিনিং-এর আগে ও পরে যাত্রীদের ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া উচিৎ।

তবে হংকং বিমানবন্দরে এখন যাত্রীদের পুরো শরীর জীবাণুমুক্ত করার একটি যন্ত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

এ যন্ত্রটি থেকে একটি স্প্রে যাত্রীর গায়ে ছিটিয়ে দেয়া হবে, যা যাত্রীর ত্বক ও পোশাকে কোনো ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থাকলে মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে তা মেরে ফেলবে।

হংকংয়ের এই এয়ারপোর্টে এ ছাড়াও রোবট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরে ঘুরে পরিষ্কার করার কাজ করতে থাকবে। কোনো মাইক্রোবের উপস্থিতি টের পেলে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে আঘাত হেনে তাদের ধ্বংস করবে।

এরকম কিছু রোবট অস্থায়ী হাসপাতালে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।

যেসব এয়ারপোর্টে ইলেকট্রনিক চেক-ইনের যন্ত্র আছে, সেগুলো ব্যবহার করতে যাত্রীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বেশিরভাগ বিমানবন্দরেই বিভিন্ন ধরণের নির্দেশিকা সম্বলিত পোস্টার থাকবে।

ইনট্রেপিড ট্রাভেলের প্রধান নির্বাহী জেমস থর্নটন বলছেন, চেকিংয়ের কড়াকড়ির জন্য আগামী দিনগুলোতে যাত্রীদের বিমানবন্দর পার হতে সময় বেশি লাগবে।

“‍হয়ত ইমিউনিটি পাসপোর্টের মতো কিছু চালু করা হচ্ছে- এটাও দেখতে পাবো” বলেন তিনি।

এ বছর কিছু বিমানবন্দর যাত্রীদের গায়ের তাপমাত্রা মাপা শুরু করেছিল। কিন্তু এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ কিছু লোক ভাইরাস বহন করলেও তার দেহে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।

এমিরেটস আরো এক ধাপ এগিয়ে দুবাই বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য দ্রুত কোভিড-১৯ টেস্টের ব্যবস্থা করেছে, যাতে ১০ মিনিটের মধ্যে ফল জানা যায় বলে তারা দাবি করছে।

বিমানের ভেতরের পরিবেশ

প্লেনের ভেতরে ফ্লাইট এ্যাটেনডেন্টদের হাসিমুখ আপনাকে কল্পনা করে নিতে হবে। কারণ তারা খুব সম্ভবত মাস্ক পরা থাকবে।

আপনাকেও সম্ভবত মাস্ক পরে থাকতে হবে, ফলে আপনার হাসিমুখও তারা দেখতে পাবে না।

প্রধান বিমান সংস্থাগুলো তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা উন্নত করছে, ফলে অন্তত একটা স্বস্তির ব্যাপার হবে যে আপনার ট্রে-টেবিল, সিটের হাতল, এবং সেফটি বেল্ট জীবাণুমুক্ত করা থাকবে।

কোরিয়ান এয়ার বলেছে, তারা কেবিন ক্রুদের গাউন, গ্লাভস এবং আই মাস্ক দেবে। ফলে বিমানের ভেতর পিপিই পরা লোক দেখলে ভয় পাবেন না।

বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সই বলছে, তারা বিমান পুরোপুরি যাত্রীভর্তি করবে না। আপাতত মাঝখানের সিটগুলো খালি রাখা হবে।

ফলে বিমানসংস্থাগুলো হয় লোকসান দেবে, নয় তাদের টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিতে হবে – এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একজন পাইলট নাম প্রকাশ না করার শর্তে।

গন্তব্যের চেহারা কেমন হবে?

ইতালির সমুদ্র সৈকতে গিয়ে এখন আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে যারা রৌদ্রস্নান করছেন, তাদের মাঝখানে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের পার্টিশন দেয়া আছে।

পর্যটন সংক্রান্ত একটি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উলফ সন্টাগ বলছেন, ইতালিতে এমন কিছু করার চিন্তাভাবনা চলছে।

তিনি বলছেন, ইউরোপের অনেক হোটেল চিন্তুা করছে, অতিথিদের এক রুম পর পর থাকতে দেয়া যায় কি না। তা ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় রিসোর্টগুলোতে সুইমিং পুল এখন খোলা যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।

অনেক রেস্তোরাঁ পরিকল্পনা করছে, তাদের টেবিলগুলো আরো দূরে দূরে বসাতে। অনেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মজুত গড়ে তুলছে, কেউ বা বুফে খাবার বন্ধ রাখার কথা ভাবছে।

এথেন্সে মেডিসিনের অধ্যাপক নিকোলাওস সিপসাস বলেন, এটা ঠিক যে বুফে খাবার, সুইমিং পুল, সৈকত এবং বার– এগুলো এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

ভবিষ্যতে কি ভ্রমণ একেবারেই বদলে যাবে?

হয়তো ভবিষ্যতে অনেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ কমিয়ে দেবেন, ঘরে বসেই ছুটি কাটাবেন, যাকে বল‌া হবে 'স্টে-কেশন'।

বৈশ্বিক মহামারির কারণে জাহাজ বা প্রমোদতরীতে ভ্রমণ, স্কি হলিডে, বা দীর্ঘ বিমান ভ্রমণ তাদের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে পারে।

সন্টাগ বলছেন, দেশের ভেতরে বেড়াতে যাওয়ার পর লোকেরা হয়তো উপলব্ধি করবেন, সবসময় আপনার দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার দরকার নেই।

আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণ সমিতি বা আইএটিএর এক জরিপে ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার পরেও তারা কোনো ফ্লাইট বুক করার আগে দু‌ই মাস অপেক্ষা করবেন। আর ৪০ শতাংশ বলেন, তারা অপেক্ষা করবেন কমপক্ষে ছয় মাস।

বোয়িং কোম্পানি ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ সঙ্কটে তাদের ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে। তারা বলছে, বিমান ভ্রমণ আবার ২০১৯ সালের অবস্থায় ফিরতে অন্তত তিন বছর অর্থাৎ ২০২৩ পর্যন্ত সময় লাগবে।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মালিক কোম্পানি আইএজি বলছে, তারাও মনে করে অবস্থা আগের মত হতে বেশ কয়েক বছর লাগবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement