২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সাংবাদিকরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়েছে : এম আবদুল্লাহ

বক্তব্য রাখছেন বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ। - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে)-সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, সাংবাদিকরা এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়েছে। বেকারত্ব আর অভাব-অনটনে শত শত সাংবাদিক পরিবারে হাহাকার চলছে। সরকারের অনুগত কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিক ছাড়া বেশিরভাগ সংবাদকর্মী আজ নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সংসার টানতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই রমজানে বহু সাংবাদিক পরিবারের পাতে মাছ-গোশত উঠবে না। সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। এ দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গণমাধ্যমের শত্রু সরকারকে বিদায় করে গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা ফেরাতে হবে।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহ (জেইউএম)-এর ত্রি-বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এ সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সাধারণ সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাখখারুল ইসলাম রানা।

সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। আর্থিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ নজীব আশরাফ হোসেন। রিপোর্ট দুটির ওপর আলোচনা শেষে অনুমোদন হয়।

এম আবদুল্লাহ সাংবাদিক হত্যা নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে যেমন সাংবাদিকেরা নিরাপদ নয়, তেমনি নিজের বেডরুমেও সংবাদকর্মীরা নিরাপত্তাহীন। তার প্রমাণ শিশু সন্তানের সামনে সাগর-রুনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড। কর্মস্থলে সাংবাদিক নিরাপদ নয়, তার প্রমাণ কুষ্টিয়ার সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলকে নিজ অফিস থেকে ডেকে নিয়ে খুন। ১৪ বছরে ৫৪ জন সাংবাদিক খুনের দায় সরকার এড়াতে পারে না।

বিএফইউজে সভাপতি বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতি ছড়াতে কয়েক দিন আগে বানোয়াট এক মামলায় ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক কামরুল হাসান দর্পনকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ধরে নিয়ে জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে সিনিয়র ফটো সাংবাদিক আবদুল আজিজ ফারুকীকে। গণতন্ত্রের মুখপত্র দৈনিক দিনকাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ঠুনকো অজুহাতে।

এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা ছাড়া সাংবাদিক খুন-নির্যাতন ও গণমাধ্যমে বিরাজমান অস্থিরতার অবসান হবে না, হাজারো সাংবাদিকের দুর্দশা, বেকারত্ব, নিরাপত্তাহীনতা ঘুচবে না।

তিনি বলেন, কোনো সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো কিংবা কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানো সাংবাদিকদের কাজ নয়। কিন্তু গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সাংবাদিকেরা বরাবরই লড়াই করেছে। কারণ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতা থাকে না। আর স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ না থাকলে সংবাদমাধ্যম ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, অরাজকতা বিরাজ করে। বাংলাদেশে এখন সত্যিকারের সাংবাদিকতা অনুপস্থিত।

বিএফইউজে সভাপতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ সর্বাত্মক আন্দোলনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, সাংবাদিক সমাজকে দমন-নিপীড়ন চালিয়ে কোনো স্বৈরাচারী সরকার টিকতে পারেনি। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যেও সাংবাদিকদের সংগ্রাম করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, সাংবাদিক সমাজকে শৃঙ্খলিত করার জন্যে গণমাধ্যম কর্মী আইন, প্রেস কাউন্সিল আইনের সংশোধন, ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। অনির্বাচিত সরকার আবার ক্ষমতায় থাকার পায়তারা করছে। ভোটাধিকার ফিরাতে আমরা সংগ্রাম করছি।

তিনি বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় আসে, গণমাধ্যম তখনই অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে, গণমাধ্যম কর্মীরা বেকার হয়। এই সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে ক্ষমতায় এসে চাকরিচ্যুত করছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement