১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রবুবিয়াত : মওলানা ভাসানীর চূড়ান্ত রাজনৈতিক ভাবনা

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী - ফাইল ছবি

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রায় এক শতাব্দীর দীর্ঘ জীবনে অব্যাহতভাবে ‘সংগ্রাম’ চালিয়ে গেছেন। বস্তুগত সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের চিন্তা তার কখনো ছিল না। তিনি কৈশোরে অংশীদার হয়েছেন ‘অনুশীলন’-এর সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে, উঠতি যৌবনে জমিদারবিরোধী আন্দোলন করেছেন, যৌবন বিলিয়েছেন আসামে-ধুবড়ির বনে-জঙ্গলে-চরে মজলুম বাঙালির স্বার্থ রক্ষায়, যৌবন-প্রৌঢ়ত্ব সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ও বার্ধক্য ইসলামী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। জীবন সায়াহ্নে ‘হুকুমতে রব্বানিয়া’ প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত থেকেছেন।

‘হুকুমতে রব্বানিয়া’ ধারণার সাথে রবুবিয়াত বা পালনবাদের উৎপত্তিগত সম্পর্ক আছে। রবুবিয়াত নির্বিশেষে ব্যক্তির দায়। আর হুকুমতে রব্বানিয়ার সাথে সম্পর্ক সরকার ও রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার। মওলানা ভাসানী ‘রবুবিয়াতের পথে ১৯২১ সাল থেকে চলছেন’ বলে দাবি করেছেন (আজাদ খান : ভাসানীর কথা, শ্রাবণ প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৯, পৃষ্ঠা-৫৮)। আর হুকুমতে রব্বানিয়া কায়েমের লক্ষ্যে সংগ্রাম চালানোর অঙ্গীকার করেছেন ১৯৪৬ সালে, আসামের ধুবড়িতে, এক মধ্যরাতে। আল্লামা আজাদ সুবহানীর হাতে হাত রেখে, বাহ্যত সিগারেটের ছাইদানিকে কা’বা কল্পনা করে (আজাদ খান : ভাসানীর কথা, শ্রাবণ প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৯, পৃষ্ঠা-৫৮)। ভাসানী গবেষক আজাদ খান (মওলানা ভাসানীর পুত্র আবু বকর খান ভাসানীর পুত্র) দাবি করেন, মওলানা ভাসানী ১৮৯৭ সালেই আসামের ধুবড়ি গিয়েছিলেন, সুফি পীর শাহ নাসিরুদ্দীন বোগদাদির সাথে। তখন থেকেই তিনি ‘হক্কুল এবাদ মিশন’ নিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমান নিবন্ধে মওলানা ভাসানীর চূড়ান্ত রাজনৈতিক ভাবনা হিসেবে রবুবিয়াত বিষয়ক তার ভাবনা উপস্থাপন করা হবে।

রবুবিয়াত প্রশ্নে মওলানা ভাসানী : ভাবনার বিকাশ
রবুবিয়াত বিষয়ে মওলানা ভাসানীর ভাবনা জানার সূত্র হিসেবে তার কিছু লেখা-বক্তৃতা-বিবৃতি পাওয়া যাচ্ছে। এসব স্মৃতিকথা-এসব লেখা-বিবৃতি-বক্তৃতার নির্দিষ্ট তারিখ পাওয়া কঠিন।
‘মওলানা ভাসানীর স্মৃতিকথা’ শিরোনামে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা (১৯৫৭) বিষয়ক একটি রচনায় তিনি জানান, ‘... আমার রাজনৈতিক উপলব্ধি সেই দিন সুস্পষ্ট এবং গভীর ছিল না ...’ (আজাদ খান, ১৩)। এই স্মৃতিকথা ১৯৬৭ সালের বলে লেখা হয়েছে। ‘এ সময়কে’ মওলানা ভাসানী ‘জীবনের সন্ধ্যালগ্ন’ বলেছেন। আর বর্ণিত ‘ইহাদের’ মানে মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মওলানা মোহাম্মদ আলী, বিপিন পাল, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, পণ্ডিত মতিলাল নেহরু, জওয়াহেরলাল নেহরু, বালগঙ্গাধর তিলক, মহামতি গোখেল, ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন। তার এই উপলব্ধি ১৯৬৭ সালের, বিবেচনায় রাখা যেতে পারে, তখন তার বয়স ৮৭।

‘রবুবিয়াতের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি লেখায়, ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে, মওলানা ভাসানী দাবি করেন, তিনি ‘হুকুমতে রব্বানিয়া’র ‘পথ ধরেছেন’ ১৯২১ সাল থেকে আর আল্লামা আজাদ সুবহানীর হাতে হাত রেখে; হুকুমতে রব্বানিয়া কায়েমের লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ওয়াদা করেছিলেন ১৯৪৬ সালে, আসামের ধুবড়িতে।

রবুবিয়াত বা হুকুমতে রব্বানিয়ার পথে মওলানা ভাসানী বাহ্যত কখন থেকে চলা শুরু করেছেন বা ঘোষিত সমাজতন্ত্রের পথ থেকে তিনি বাহ্যত কখন থেকে ভিন্নপথ ধরেছেন তা খোঁজার চেষ্টা করা যাক।

মওলানা ভাসানীর সেক্রেটারি (একান্ত সচিব-পিএস অর্থে) সৈয়দ ইরফানুল বারী একটি স্মৃতিকথা লিখেছেন। নাম ‘মওলানা ভাসানী : কাছে থেকে দেখা’ (প্যাপিরাস প্রকাশনী, ঢাকা, ২০২২)। তিনি লিখেছেন : ‘আমি বললাম, হুজুর আপনার পার্টি ন্যাপের মধ্যে একটা কথা চাউর হয়েছে, আপনি বস্তুবাদী ছিলেন, আমি আপনার কাছে আসার পর থেকে আপনি ভাববাদী হয়ে পড়েছেন। এ কথাটা আমাকে এমন ঘা দিয়েছে, আমি বুঝাতে পারছি না। হুজুর শান্ত ভাষায় বললেন, এত সহজে ওলটপালট হলে চলবে! আজকাল, তুমি আসার এক বছর আগে থেকেই, আমি হুকুমতে রব্বানিয়ার কথা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, ইসলামী সমাজতন্ত্রের কথা বলছি। সেটাতেই ওরা বলছে আমি ভাববাদী হয়ে গেছি। ...তুমি আসার পর থেকে ওরা দেখছে আমি ওদের উপর কোনো কোনো কাজে আর নির্ভরশীল নই। ব্যাস এতটুকুই’ (পৃ-৪৭)।

মওলানা ভাসানীর রবুবিয়াত ভাবনার স্বরূপ
মওলানা ভাসানী ১৯৭৪ সালে লেখা বা পুস্তিকায় রবুবিয়াত বিষয়ে কথা বলেছেন, নির্দিষ্টভাবে। তেমন একটি লেখা, ‘রবুবিয়াতের ভূমিকা’ (এপ্রিল ১৯৭৪), অন্যটি ‘পালনবাদ : কি ও কেন’ (১৯৭৪)। তবে এটি সন্তোষে, ‘নিখিল বাংলাদেশ মুসলিম সম্মেলন’ উপলক্ষে লিখিত, তেমন স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আরেকটি ইঙ্গিত আছে লেখাটিতে। রাসূলে করিম হজরত মুহাম্মদ সা: সম্বন্ধে অবমাননাকর কবিতা লিখেছিলেন কবি দাউদ হায়দার। এ লেখায় সেটির বিষয়ে প্রতিবাদ-অসন্তোষের উল্লেখ আছে।

‘পালনবাদ : কি ও কেন’ শীর্ষক লেখায় মওলানা ভাসানী লিখেছেন :

ক. সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার যে নীতি ইসলামী বিপ্লবকে এক নতুন বৈশিষ্ট্যে বলীয়ান করিয়াছিল তাহা হইল ইসলামের পালনবাদ। ইসলামের মূলকথা হইল স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস এবং স্রষ্টাকে লালন-পালন ও বিবর্তনকর্তা হিসেবে গ্রহণ করা। সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুকে স্রষ্টা যেমন লালন পালন করেন, তেমনি তিনি লালন পালন করেন সৃষ্টির অভিজাত মানুষকেও।’
খ. ‘মানুষ সৃষ্ট হইয়াছে স্রষ্টার প্রতিভূ হিসেবে। তাই মানুষ তাহার দৈনন্দিন জীবনযাপনেও হইবে পালনবাদের অনুসারী।’

গ. ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় স্রষ্টার প্রতিভূ হিসেবে মানুষ পালনবাদের নীতিকে প্রবর্তন করিবে, শাসনবাদকে করিবে পরিহার।’

গ. ‘রবুবিয়াত অর্থাৎ- পালনবাদের প্রতিষ্ঠা ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।’

ঘ. ‘আমরা যদি ভুলিয়া যাইতে পারিতাম ব্যক্তিগত অথবা দেশগত স্বার্থকে, আমরা যদি গ্রহণ করিতে পারিতাম পালনবাদের স্বভাবসুন্দর নীতি, তাহা হইলে শান্তি সুদূর পরাহত হইতো না।’

‘রবুবিয়াতের ভূমিকা’ শীর্ষক লেখায় মওলানা ভাসানী
ক. ‘আজ আমি পরিষ্কার ভঙ্গিমায় শুরু করিয়াছি হুকুমতে রব্বানিয়া কায়েমের প্রস্তুতি। তাই গত ৮ এপ্রিল ১৯৭৪ সন্তোষে হুকুমতে রব্বানিয়া সমিতি প্রতিষ্ঠা করিয়াছি।’

খ. ‘আমার বিশ্বাস একমাত্র রবুবিয়াতের দর্শনই জাতি, ধর্ম, মতবাদ নির্বিশেষে শান্তি দিতে পারে।’

গ. ‘এই সমিতি সমাজতন্ত্রবাদীদের মতো কেবল লা-ইলাহা-ই কায়েম করিবে না, সেখানে ইল্লাল্লাহর বীজও বপন করিবে। তাহাদের কোনো কাজে আত্মতুষ্টি অর্থাৎ নফসানিয়াত যেমন থাকিবে না ঠিক তেমনি অহেতুক বৈরাগ্য অর্থাৎ রাহবানিয়াতও থাকিবে না। এই সমিতি যেমন হক্কুল্লাহ আদায় করিবে ঠিক তেমনি হক্কুল এবাদও করিয়া যাইবে।’

ঘ. ‘রবুবিয়াত কোনো ধর্মের কথা নহে। উহা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি স্বতঃসিদ্ধ বিধান।’

‘মওলানা ভাসানী : কাছ থেকে দেখা’ শীর্ষক স্মৃতিগ্রন্থে সৈয়দ ইরফানুল বারী জানাচ্ছেন, ১৯৭৪ সালের আগস্টের শেষ সপ্তাহ বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একদিন মওলানা ভাসানী তার দরবার হলে কুরআনের তাফসির শোনান। তাফসিরের একপর্যায়ে তিনি বলেন :
ক. কুরআন শরিফের মূল আহ্বান কি? সূরা আল ইমরানে ৭৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মানবজাতিকে আহ্বান জানিয়ে বলছেন, ‘তোমরা রব্বানি হয়ে যাও’। রবুবিয়াতের আদর্শে বিশ্বাসী নেতা এবং কর্মী আল্লাহর এই আহ্বানে জীবন ও কর্ম দিয়ে ‘তোমরা রব্বানি হয়ে যাও’ এই স্লোগান রাজনীতিতে-সংস্কৃতিতে প্রতিষ্ঠিত করবে। গভীর আদর্শবোধসম্পন্ন দৃঢ় চরিত্রবান এবং আপোষহীন সংগ্রামশীলতার অধিকারী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরাই মানুষের সার্বিক কল্যাণের পথ প্রশস্ত করতে পারেন (পৃষ্ঠা-১৬২)।

খ. ‘হুজুরের আলোচনায় অর্থাৎ তাফসিরে প্রবলভাবে রাজনৈতিক বিষয় আশয় এসেছিল। যার সার কথা ছিল রবুবিয়াতের আদর্শকে সমুন্নত করে তুলে ধর। হুজুর বললেন, রব থেকে রবুবিয়াত। রব বললে আমরা শুধু বুঝি রব মানে হলো স্রষ্টা। ‘স্রষ্টা’তেই কথা শেষ হবার নয়। স্রষ্টা মানতে হবেই। পাশাপাশি মানতে হবে স্রষ্টা একই সাথে লালন-পালনকারী এবং বিবর্তনকারী। রব যে অর্থে লালন-পালনকারী সে অর্থেই তাঁর লালন পালন বৈষম্যবিহীন, শোষণবিহীন। তিনি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করেন না। লালন-পালনে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় এসবের বিচার করেন না। সব এবং সবাই তাঁর কাছে সমান। ধ্বংসের দিক ধাবিত হয় এমন কোনো সিস্টেম রবুবিয়াতে নাই। ‘পালনবাদের’ রাজনীতিতে কোনো কারণেই ভেদাভেদ হবে না। বৈষম্য হবে না। এ হলো খোদায়ী লালন পালন’ (পৃষ্ঠা-১৬৩)।

দীর্ঘ জীবন পাওয়া সত্ত্বেও একেবারে শেষ বছরগুলোতে তিনি যে বিপ্লব করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে বিপ্লবের মানুষ গড়ে তুলতে পারেননি। সময়ও পাননি। তাই শুনতে পাই জীবনের সর্বশেষে ভাষণে, মৃত্যুর মাত্র চার দিন আগে (১৩ নভেম্বর ১৯৭৬-বর্তমান নিবন্ধকার) সন্তোষ দরবার হলে খোদায়ী খিদমতগার সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘...আমার সংগ্রামের শেষ নাই’ (পৃষ্ঠা-১৬৭)।

গ. এর প্রায় আড়াই বছর আগে, ৭ এপ্রিল ১৯৭৪, ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণ দেন। ‘ভাষণে হুজুর রবুবিয়াত ব্যাখ্যা করলেন। আমরা জন্ম থেকেই, মাতৃগর্ভে থাকাকাল থেকে রবুবিয়াতের বিধান অনুযায়ী লালিত-পালিত হচ্ছি। এই বিধান পরিবারে ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকলে কোনো প্রকার শোষণ বঞ্চনা থাকবে না। রাব্বুল আলামিন বৈষম্য করেন না। তাঁর নিকট কোনো ভেদাভেদ নাই। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বা সম্প্রদায় নির্বিশেষে তিনি লালন-পালন করেন। এই আদর্শ রাষ্ট্রীয়ভাবে সমগ্র দেশে কায়েম করতে হবে।’ (পৃ. ১৪৬)।

কুরআনে রবুবিয়াত
আল কুরআনের প্রথম সূরা আল ফাতিহার প্রথম আয়াতে আল্লাহকে ‘রব্বুল আলামিন’ বলা হয়েছে। আর সেই রব্বুল আলামিনের বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে, ‘আর রহমান’ ও ‘আর রহিম’। কুরআনের ১১৩টি সূরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’র আওতাধীন ‘আর রহমান’ ও ‘আর রহিম’ রয়েছে এবং অন্য একটি সূরার (নামল-৩০) ভেতরে একবার আছে এই ‘বিসমিল্লাহ’।
এই বিসমিল্লাহর বাইরে কুরআনে রহমান আছে ৫৭ ও রহিম আছে ১১৬ বার।
কুরআনে রব আছে ৯৭৫ বার। অবশ্য এই সব ‘রব’-এর সম্পর্ক আল্লøাহর সাথে নয়। যেমন আল্লাহর শেখানো ও ব্যাপক পরিচিত দোয়া ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি ছাগিরা’। এ দোয়ায় ‘প্রথম রব’-এর সম্পর্ক আল্লাহর সাথে, আর ‘দ্বিতীয় রব’-এর (রব্বাইয়া, দ্বিবচন) সম্পর্ক ব্যক্তির বা দোয়াকারীর পিতা-মাতার সাথে। এমন করে কুরআনের আরো কয়েকটি স্থানে উচ্চারিত ‘রব’-এর সম্পর্ক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে করা হয়েছে। জানানো যেতে পারে, এই প্রসঙ্গটি অর্থাৎ কুরআনের এই দোয়াসহ অন্য কিছু স্থানের ‘রব’-এর সম্পর্ক আল্লাহর সাথে নয়, অন্য কারো সাথে করা হয়েছে।

কুরআনের রব শব্দ থেকে ‘রব্বানি’ আকারে ব্যবহার আছে তিন স্থানে। রবের অস্তিত্বগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রবুবিয়াত। অর্থ হতে পারে পালনবাদ।
এই বাংলাকৃত পালনবাদ সম্ভবত প্রথম ব্যবহার করেন মওলানা ভাসানী।

মানুষের মূল অস্তিত্ব বা পরিচয় : সে রবের খলিফা বা প্রতিনিধি। কুরআনের সূরা বাকারার ৩০ নম্বর আয়াতে এ কথা সুনির্দিষ্টভাবে রয়েছে, এভাবে- ‘ওইজ কালা রব্বুকা’ লিল মালাইকাতি ‘ইন্নি জাইলুন ফিল আরদি খলিফা’ (স্মরণ করুন সে সময়ের/ঘটনার/বৈঠক-সভার কথা, যখন ‘আপনার রব (রব্বুকা)’ ফেরেশতাদের বললেন, ‘অবশ্যই আমি (ইন্নি)’ আরদে-জমিনে ‘খলিফা স্থাপন করব-পাঠাব’। বাকারার এই আয়াত-বাক্যের মধ্যে বা কাছাকাছি আল্লাহ শব্দের ব্যবহার-প্রয়োগ নেই এবং এ আয়াতে-বাক্যে নির্দিষ্টভাবেই ‘রব’-এর ব্যবহার করা হয়েছে। এর সহজ অর্থ বোঝার কথা ‘এ দুনিয়ায় মানুষ রবের খলিফা’। মানে, নির্বিশেষে মানুষের মূল অস্তিত্ব বা পরিচয় ‘সে রবের খলিফা’।

রবের খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ এই ইহজীবনে রুবুবিয়্যাতের আদর্শ মেনে চলবে, মানে, নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য উপকারী-কল্যাণকর হবে। এটিই রুবুবিয়্যাতের মূল কথা।

শেষ পর্যবেক্ষণ
‘হুকুমতে রব্বানিয়া : পূর্বশর্ত’ শীর্ষক একটি গ্রন্থে (হুকুমতে রব্বানিয়া সমিতি প্রকাশনী, সন্তোষ, টাঙ্গাইল, ১৯৭৪) মওলানা আবুল কালাম আজাদ, শামসুল হক, আল্লামা আজাদ সুবহানী ও আবুল হাশিমের লেখা ছাপা হয়েছিল। ‘রবুবিয়াতের ভূমিকা’ শিরোনামে মওলানা ভাসানীর একটি পুস্তিকা আছে। এসব প্রকাশনায় মওলানা ভাসানীর রুবুবিয়্যাত বিষয়ক ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে।

‘রাজনৈতিক অর্জনের’ বস্তুগত সংজ্ঞা বিবেচনায় মওলানা ভাসানীকে নিয়ে বিভিন্ন মাত্রার বিশ্লেষণের সুযোগ আছে বটে। সৈয়দ ইরফানুল বারীর বিশ্লেষণে হতাশা আছে। তাতে বস্তুনিষ্ঠতা পাওয়া যেতে পারে।

উপযুক্ত প্রশিক্ষিত বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মী-অনুগামী গঠনে মওলানা ভাসানী ভিন্নমাত্রায় মূল্যায়িত হতে পারেন। বিপ্লবী মানবীয় অস্তিত্ব গঠনের মন্ত্র সফলতার সাথেই শিখিয়ে গেছেন মওলানা ভাসানী।

লেখক : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement