রোগ নির্ণয় ফি নির্ধারণ করা প্রয়োজন
- অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল বিন আমীন
- ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৩
চিকিৎসা নিয়ে এখন চার দিকে বেশুমার বাণিজ্য চলছে। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারের একটি। বাস্তবে সবার ভাগ্যে জুটে না। প্রায়ই বিনাচিকিৎসায় মৃত্যু কিংবা ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আদর্শ মান অনুযায়ী, প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার জন্য যেখানে একজন চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন সেখানে আমাদের দেশে ৯ হাজার ৪৩৩ জন মানুষের চিকিৎসার জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এ সংখ্যা কম। জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতাল কিংবা শয্যা সংখ্যা কোনোটিই নেই। ফলে কান পাতলেই চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষের হাহাকার আর আহাজারি শোনা যায়। নিকট অতীতে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছেন, উন্নত ও সুচিকিৎসা কেবল দেশের ধনী ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমিত। এমনকি মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তসহ দেশের সাধারণ জনগণ বলতে গেলে উন্নত চিকিৎসা ও সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। কেবল নামমাত্র সামান্য চিকিৎসাসেবা পান তারা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগই শোনা যায়।
আমাদের চিকিৎসাসেবার মান কতটুকু উন্নত তা করোনাকালে চোখে আঙুল দিয়ে জানান দিয়েছে। করোনার পর ভেবেছিলাম দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি হবে, সেবার মান বাড়বে। কিন্তু সবই যেন ফাঁকা বুলি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক এক প্রতিবেদন মারফত জানা যায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ (অর্থাৎ ৬২ লাখ ১১ হাজার) মানুষ প্রতি বছর চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। অপরদিকে ১৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় চিকিৎসাসেবা নেয়া থেকে বিরত থাকছে। অর্থাৎ প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রয়োজন হলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন কিংবা হাসপাতালে যেতে পারছে না। আর এক পরিসংখ্যানে দেখলাম বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে একজন রোগী নিজে ৬৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় বহন করে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও আলুর বাজারে সিন্ডিকেটের থাবার মতো ওষুধের বাজারেও অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। ফলে অনেকে প্রয়োজনীয় ওষুধটুকু ক্রয় করতে পারছে না।
আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা দু’ভাবে পাওয়া যায়। এক. সরকারিভাবে, দুই. বেসরকারিভাবে। মানুষের দোড়গোড়াই চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে জেলা ও উপজেলা শহরে সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকার যায়, সরকার আসে। বড় বড় ভবন নির্মাণ হয়। কিন্তু হাসপাতালে সেবার মান বাড়েনি। আমার বাসার সামনে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালের নতুন ভবন আধুনিক সাজে সজ্জিত। বাইরে থেকে দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছিলাম। কিন্তু চিকিৎসাসেবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, জরুরি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের দেখা মেলা ভার। ফলে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে, এলাকাবাসীর ভেতর হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। সরকারি হাসপাতালে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া গেলে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে ধরনা দিত না। যদিও এক সময় সরকারি হাসপাতালই ছিল রোগ সারানোর একমাত্র ভরসা। যে সময়ের কথা বলছি সে সময় সরকারি হাসপাতালে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ চিকিৎসা করানোর জন্য ছুটে যেত। কিন্তু এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। অথচ সরকার চিকিৎসা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে। জনগণ এর সুফল পায় না।
সারা দেশে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। ধনী মানুষেরা সরকারি হাসপাতালে না গেলেও পারে! কিন্তু গরিব মানুষগুলো যাবে কোথায়? বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা ব্যয় আকাশচুম্বী। বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ একচেটিয়া ব্যবসায়ী মনোভাব লালন করেন। তারা রোগীদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় আর বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সরকারের এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ফি, বেড ফি, ওটি ফি ও সার্ভিস চাজের নামে রোগীদের পকেট কাটছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে সকালে-বিকেলে দেখার নামে ভিজিট আদায় করা হচ্ছে। একজন রোগী হাসপাতালের অধীনে ভর্তি হলেও মূলত একজন চিকিৎসকের অধীনেই ভর্তি হন। সরকারি হাসপাতালের রোগ নির্ণয় ফি আর বেসরকারি হাসপাতালের রোগ নির্ণয় ফি এক না হলেও সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন গাজীপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল পরিদর্শনকালে বলেছেন, দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রীর এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। যত দ্রুত সম্ভব এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের স্বাস্থ্য কার্ড পদ্ধতি চালু করার কথা থাকলেও এটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এ পদ্ধতি রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করা হলে মানুষ সহজেই চিকিৎসাসেবা পেত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরাও এ সুবিধাটুকু পান। আমরা আশা করব সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ, যন্ত্রপাতির অভাব, জনবলের অভাব ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সঙ্কট দূর করা প্রয়োজন। একটি রাষ্ট্র কত উন্নত তা চিকিৎসা ব্যবস্থার অগ্রগতি দেখেও বোঝা যায়। চিকিৎসাসেবা ভালো হলে রাষ্ট্রের সুনাম হয়। দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য ভিনদেশে পাড়ি জমায় না। সুতরাং যারাই দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত তারা বিষয়টি উপলব্ধি করে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতলে রোগ নির্ণয় ফি নির্ধারণ করবেন, এমনটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা