যথাযথ নামকরণ ও ব্যবস্থা নেয়া উচিত
- মো: সরোয়ার উদ্দিন
- ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৮
সময়ের পরিবর্তনে মানুষের রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন হয়। বিশেষায়িত যোগ্যতা ও দক্ষতার ঔৎকর্ষ সাধিত হওয়ায় কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি প্রভৃতিতে প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন সাধিত হয়। পুরাতন, নতজানু ও দুর্বলকে বাদ দিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা স্থান দখল করে। এটাই স্বাভাবিক।
অনেকের মুখে শুনতে পাই, তারা বলেন, সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ বা সরকারি আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রভৃতি। এগুলো ভুল। কলেজ কখনো বিশ্ববিদ্যালয় হয় না। এসব বড় কলেজকে মাস্টার্স কলেজ অথবা অনার্স কলেজ এভাবে আখ্যায়িত করা যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ বলা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয় দেশের মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিতরণ ও নীতিনির্ধারণ প্রভৃতি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য দায়িত্ব পালনে একজন ভিসিসহ ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষানিয়ন্ত্রক প্রভৃতি থাকেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেক পদের নিজস্ব আলাদা ও পৃথক অফিসসহ প্রয়োজনীয় জনবল থাকে।
অন্যদিকে কলেজগুলো কেবল উচ্চশিক্ষা বাস্তবায়নের (অ্যাকাডেমিক) দায়িত্ব পালন করে। কলেজ যতই বড় ও ব্যাপক পরিসরের হোক না কেন, প্রধান হিসেবে একজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ থাকেন। প্রত্যেক বিভাগে একজন করে বিভাগীয় প্রধান (অধ্যাপক) এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক থাকতে পারেন। সার্বক্ষণিক দাফতরিক কার্যসম্পাদনের জন্য একজন অপারেটর ও প্রয়োজনীয় পিওন ছাড়াও কলেজে প্রধান সহকারীসহ হিসাবরক্ষক এবং অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী, পিওন, ঝাড়–দার, মালি ও দারোয়ান প্রভৃতি থাকে।
অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স সংশ্লিষ্ট কলেজে প্রত্যেক বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান-চেয়ারম্যান অথবা বিভাগীয় প্রধান থাকেন। এক্ষেত্রে নামফলক ঝুলিয়ে রাখে বিভাগে। চেয়ারম্যান- এর জন্য পৃথক ও আলাদা সুসজ্জিত রুমসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকে যা অনেক কলেজের অধ্যক্ষের রুমকেও হার মানায়।
স্মরণ রাখতে হবে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানই চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানকে অনেক বিরোধপূর্ণ, স্পর্শকাতর ও ঝামেলা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল নানা বিষয়ে বিবেচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, চূড়ান্ত রায় ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের স্বাধীনতা/ক্ষমতা পায়। এছাড়াও চেয়ারম্যানের অফিসে নানা গণ্যমান্য লোকের সমাগমসহ একান্তভাবে আলোচনা প্রভৃতি কারণে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণের জন্য পৃথক ও আলাদা সজ্জিত রুমে প্রয়োজন হয়।
কলেজের বিভাগীয় প্রধান কেবল অধ্যক্ষ কর্তৃক অর্পিত আদেশ ও নির্দেশ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক এবং প্রয়োজনে কর্মচারীদের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো পৃথক ও আলাদাসহ সজ্জিত রুমের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে কলেজে চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা পৃথকভাবে সজ্জিত রুমে কেবল বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের সেমিনারে ফি বাবদ প্রদত্ত অর্থ এবং বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
অনার্স ৪র্থ (চূড়ান্ত) বর্ষ এবং মাস্টার্স শেষ পর্বে ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের বহিঃ এবং অভ্যন্তরীণ পরীক্ষকের বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিভাগে। এক্ষেত্রে কতিপয় বিভাগ এ পরীক্ষা পরিচালনা বাবদ অতিরিক্ত হিসেবে ২০০-৪০০ টাকা নগদে আদায় করে যা বিভাগীয় প্রধানের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়। এ অর্থ আদায় সম্পূর্ণভাবে অন্যায় ও নিষিদ্ধ।
কারণ, চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় মৌখিক পরীক্ষার ব্যয় বাবদ প্রয়োজনীয় টাকা প্রত্যেক পরীক্ষার্থী পরিশোধ করে এবং এ অর্থে পরীক্ষা চালানোর সব ব্যয় নির্বাহ হয়ে যায়।
অতিরিক্ত চাঁদা হিসেবে গৃহীত অর্থ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের ছবি, নাম ও ঠিকানা সংবলিত কয়েক পৃষ্ঠার সান্ত্বনা হিসেবে স্মরণিকা ছাপার খরচ বাদে অবশিষ্ট টাকা বিভাগীয় প্রধানের পকেটে যায়। এ ব্যাপারে বিভাগীয় শিক্ষকরা মুখ খোলেন না। যদি বিভাগীয় প্রধান এসিআরে খারাপ রিপোর্ট করেন এই ভয়ে।
শুরুতে অর্থাৎ প্রথমে বাণিজ্যের আওতা ছিল পণ্য ও সেবা প্রভৃতি ক্রয়-বিক্রয় ও অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক বাণিজ্য (বণ্টন) এবং পরিবহন, গুদামজাতকরণ, ব্যাংক, বীমা ও প্রচার প্রভৃতি (সহায়ক কার্যাবলির) ভেতর সীমাবদ্ধ। এ নিরিখে পণ্য ও সেবা প্রভৃতির বণ্টন ও সহায়ক কার্যাবলির ওপর উচ্চশিক্ষা দান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিকম (ব্যাচেলর অব কমার্স) এবং শেষ পর্বে এমকম (মাস্টার্স অব কমার্স) সনদ বাণিজ্য (কমার্স) অনুষদ (বিশ্ববিদ্যালয়) এর সংশ্লিষ্ট বিভাগ, যথা-ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান প্রভৃতি প্রদান করে।
ওই বিষয়ের ওপর উচ্চশিক্ষা দান এবং সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার অনুমতি লাভ করে কমার্স কলেজগুলো। যেমন- আজম খান কমার্স কলেজ, খুলনা এবং ঢাকা কমার্স কলেজ, ঢাকা প্রভৃতি।
পরবর্তীতে সময় ও চাহিদার তাগিদে বাণিজ্য (কমার্স) এর সাথে অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হয় উৎপাদন (কৃষি ও শিল্পের কাজ)। এ পরিস্থিতিতে পণ্য ও সেবা প্রভৃতি উৎপাদন, বণ্টন ও সহায়ক কার্যাবলি (যা আগের বাণিজ্যের চেয়ে বৃহৎ পরিসর) বেড়ে যাওয়ায় নতুন নাম ধারণ করে- ব্যবসায়।
ব্যবসায়ের ওপর উচ্চশিক্ষা দান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যাচাই-বাছাই এরপর চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিবিএস (ব্যাচেলর অব বিসনেস স্টাডিজ) এবং শেষ পর্বে এমবিএস (মাস্টার্স অব বিজনেস স্টাডিজ) সনদ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেজ স্টাডিজ অনুষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, যেমন- ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান প্রভৃতি।
দেশের কমার্স কলেজগুলো পুরাপুরিভাবে ব্যবসায় (উৎপাদন, বণ্টন সহায়ক কার্যাবলির) ওপর উচ্চশিক্ষা দান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা গ্রহণ এবং আনুষ্ঠানিকতা প্রভৃতি পালন করার পরও কেন এ কলেজগুলোর নাম ব্যবসায় (বিজনেস) কলেজ করা হয়নি? অতিসত্বর এ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ব্যবসায় (বিজনেস) কলেজ করা হোক। বর্তমান প্রতিযোগিতার ছোঁয়া ব্যবসায়ের সব ক্ষেত্রকে অধিক মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল করে তুলেছে। ব্যবসায়ের মালিকরা সব খরচ বাদে কিভাবে লাভের পরিমাণ বাড়ানো যায়-এ নিরিখে নানা কৌশল গ্রহণ; ভোক্তাদের রুচি ও পছন্দমতো সবসময় পণ্য ও সেবা প্রভৃতি সরবরাহের মাধ্যমে অধিক সন্তুষ্টি লাভ এবং শ্রমিক-কর্মীদের সম্মানজনক পারিশ্রমিক প্রদান প্রভৃতি ছাড়াও পণ্য ও সেবা প্রভৃতির উৎপাদন, বণ্টন ও সহায়ক কার্যাবলিতে নানা জটিল পদ্ধতির ব্যবহার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিকল্পের মধ্যে কেবল সর্বোত্তমটাকে নির্বাচন এবং চূড়ান্তভাবে গ্রহণ এবং যথাযথ বাস্তবায়নের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা হিসেবে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি ও সব সময় ধরে রাখার জন্য পরিমিত যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার নিমিত্তে ব্যবসায়ের সব ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা দান, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই প্রভৃতি শেষে কেবল চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এবং শেষ পর্বে এমবিএ (মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সনদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় স্টাডিজ অনুষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দিচ্ছে।
এক্ষেত্রে অনুষদে ব্যবহৃত ‘স্টাডিজ’ শব্দটা অপেক্ষাকৃত পুরাতন, নতজানু ও দুর্বল অথচ ‘প্রশাসন’ শব্দটা আধুনিক। বিধায় ‘প্রশাসন’ শব্দটাকে ‘স্টাডিজ’ এর স্থলে পুনঃস্থাপন করাই শ্রেয়।
লেখক : অধ্যাপক ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা