স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে করণীয়
- মো: সরোয়ার উদ্দিন
- ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২৪

বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের দেশকে একটি টেকসই আধুনিক দেশে রূপান্তরিত করার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং জনশক্তি ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং কার্যকরের মধ্য দিয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। কিভাবে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হতে পারি আজকের কলামে তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
যে কোনো দেশ উন্নতির শিখরে যেতে চাইলে সমৃদ্ধ জনশক্তি অপরিহার্য। তার জন্য চাই মানসম্পন্ন শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসহ বাস্তবভিত্তিক ও বিশেষায়িতজ্ঞান অর্জন এবং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরি করে। এর নিরিখে নির্ধারিত কাজে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, উত্তমকে নির্বাচন এবং যথাযথ ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের ক্ষমতা অর্জন হলো যোগ্য জনশক্তি। ন্যূনতম সময়, স্বল্পব্যয় ও সহজে সঠিকভাবে সবটুকু কার্য সম্পাদনের ক্ষমতাই (কৌশলী)- প্রযুক্তি। ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে অতিদ্রুত শতভাগ সঠিক তথ্য ‘সফটওয়্যারের’ সাহায্যে (সংশ্লিষ্ট উপাত্তের ভিত্তিতে) প্রণয়ন; এসব তথ্যকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ‘সংরক্ষণ’ এবং প্রয়োজনে ‘উদ্ধার’ ও ‘ব্যবহারের’ জন্য ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস (ডিবিএমএস) এবং প্রতিষ্ঠানের ভেতর বিভিন্ন শাখাসহ প্রধান কার্যালয় প্রভৃতি তথ্য আদান-প্রদানে ‘লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (এলএএন)’ এবং বাইরে ‘ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (ডব্লিউএএন)’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
দেশের সব ক্ষেত্রে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও দক্ষকর্মী বাহিনী তৈরি ছাড়াও কর্তব্যপরায়ণ, সাহসী ও নিরপেক্ষ প্রশাসন তৈরি এবং আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন, মেরামত ও ব্যবহার প্রভৃতি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে উচ্চশিক্ষিত, যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনশক্তি শুধু পারে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে।
প্রথমত, দেশের সব জনগণকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। এর ফলে পরিবার, সমাজ, দেশ, ধর্ম, জাতি ও সংস্কৃতি প্রভৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে চলার শিক্ষা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হয়। তাই সরকারকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রবর্তন, গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নের সব দায়িত্ব পালন করতে হয়।
কিন্তু আমাদের দেশে সব পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষার বড়ই অভাব। প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্লাস নেয়া এবং সিলেবাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ অধ্যায় অজানা থেকে যায় শিক্ষার্থীদের জন্য। অথচ পুরা সিলেবাসের ওপর চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রম, পাঠের ঘাটতি পূরণ এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে নোট ও গাইড বই অনুসরণ করে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। এসব গাইড ও নোট বইয়ের অধিকাংশ লেখক কোনো না কোনো কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। অসঙ্গতি, সংক্ষিপ্ত ও ভুলে ভরা। মূল পাঠ্যবইয়েও ভুল দেখা যায়।
মেধা-নিম্ন, মধ্য ও তীক্ষè স্মরণশক্তির পুরোপুরিভাবে উৎকর্ষসাধন ও বিকশিত করার নিমিত্তে প্রত্যেককে (অ্যাকাডেমিক শিক্ষায়) শিক্ষিত ও যোগ্য সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন, মেরামত ও ব্যবহার প্রভৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করতে হবে। এ নিরিখে যোগ্য জনশক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে স্মার্ট দেশ গড়ে তোলা যায়।
শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজ প্রভৃতির যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষানীতি গ্রহণ সাপেক্ষে শিক্ষিত জনসম্পদ তৈরির নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জাতিকে যোগ্য ও দক্ষ সম্পদে পরিণত করতে সর্বোত্তম আধুনিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, শ্রেষ্ঠকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন ও বাস্তবায়নে সবধরনের সাহায্য ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আধুনিক শিক্ষিত ও দেশ গড়ে তোলা যেতে পারে।
প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকের জ্ঞান, বিবেক ও বুদ্ধি প্রভৃতি বিকশিত ও উন্মক্ত হয়। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকর জন্য ভালো-মন্দ, উন্নত-অনুন্নত, মঙ্গল-ক্ষতি ও গ্রহণ-বর্জন প্রভৃতি বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য করে গড়ে তোলাই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের আসল উদ্দেশ্য। একারণে সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় যোগ্য ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক সব শ্রেণিকক্ষে নিয়মিতভাবে নির্ধারিত পাঠ্যসূচিতে পাঠদান এবং তা উদ্ধার (মৌখিক ও লিখিতভাবে) এর চেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ ও উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ প্রতিবেদন তৈরি প্রভৃতি দায়িত্ব প্রধান শিক্ষক যথাযথভাবে সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
নিকটতম বা কাছাকাছি একই উপজেলার পাঁচ স্কুলের (প্রত্যেক স্কুল হতে একজন) পাঁচজন যোগ্য ও সিনিয়র শিক্ষক নিয়ে পাঠমূল্যায়ন কমিটি গঠন করা যেতে পারে। প্রতি ১৫ দিনের (শেষ দিকে) ভেতর একদিন শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকের পাঠ প্রতিবেদনের-অগ্রগতি ও মূল্যায়ন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করার জন্য পরামর্শ দিতে পারেন- এ কমিটি।
কম করে হলেও প্রতি মাসে একবার সরেজমিন প্রত্যেক বিদ্যালয় পরিদর্শন, শিক্ষকদের সাথে আলোচনা ও সমস্যা উদঘাটনসহ সমাধানের পথনির্দেশনসহ শিক্ষকদের প্রতিবেদন সংগ্রহ প্রভৃতি দায়িত্ব পালন করতে পারেন- উপজেলা শিক্ষা অফিসার। উপজেলার সব বিদ্যালয় হতে প্রতিবেদন সংগ্রহ অতঃপর এ শিক্ষার অবস্থাসহ নিজস্ব মতামত দিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে তিন মাসের মধ্যে এ প্রতিবেদন প্রেরণ করতে পারে- জেলা শিক্ষা অফিস। জেলার সব উপজেলা হতে প্রতিবেদন পাওয়ার পর সারসংক্ষেপসহ নিজস্ব মতামত দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি অতঃপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারে- জেলা শিক্ষা অফিস। দেশে সব জেলার শিক্ষা অফিস হতে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত, আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধন্ত গ্রহণ এবং তা জেলা, উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিতে পারে- কেন্দ্র।
পঞ্চম শ্রেণী হতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কেবল পাসের সনদ পাবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম, মধ্যম ও পাস- এ তিন ক্যাটাগরিতে সনদ দেয়া যেতে পারে। তবে অকৃতকার্যকারীরা কেবল অধ্যায়সহ বিগত সময়ের পাঠ প্রতিবেদন সনদ পেতে পারে।
ষষ্ঠ (মাধ্যমিক স্তরে) শ্রেণী হতে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ- সুবিধা ক্রমে কমে আসবে। কেবল উত্তম ও মধ্যম সনদধারীদের এ সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
দশম শ্রেণী পর্যন্ত অভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা শুধু একাদশ (মাধ্যমিক স্তরে) শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে এসএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ, নম্বর ও বিষয় প্রভৃতির ভিত্তিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও কলা প্রভৃতি শাখায় এ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে মাঝারি মেধাবীরা অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ও পরিশ্রমে পাঠবিষয় মস্তিষ্কে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়। এদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রভৃতি শিক্ষা গ্রহণ করা শ্রেয়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকর্মযজ্ঞের ৮৫ শতাংশ কাজ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সম্পাদিত করে থাকেন (১৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মলেন, ২০২৩ আইডিইবি)।
তীক্ষ্ণ মেধাবীরা অতি অল্প সময়ে কঠিন বিষয়সমূহ সহজে বেশি করে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়। এদের উচ্চশিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ, বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন এবং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করতে সরকারিভাবে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। এরাই জাতির সব ক্ষেত্রে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ, বিকল্পের মধ্য হতে সর্বোত্তমটা নির্বাচন এবং ক্যারিস্ম্যাটিক নেতৃতে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দিতে সক্ষম হবে।
বিশ্বের সব দেশে- খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা ও ব্যাংক প্রভৃতি প্রত্যেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপাত্তের ভিত্তিতে ‘সফটওয়্যারের’ সাহায্যে সঠিক তথ্য প্রণয়ন, এ তথ্য যথাযথভাবে জমা ও উদ্ধারে ‘ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে’র (ডিবিএমএস) সাহায্যে সংরক্ষণ এবং প্রতিষ্ঠানের ভেতর ‘লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (এলএএন)’ এবং বাইরের ‘ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে’র (ডব্লিউএএন) সাহায্যে আদান-প্রদানই (যোগাযোগই)- আধুনিক প্রযুক্তি। উল্লিখিত প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আইসিটি বিষয়ে যোগ্য প্রোগ্রামার, অভিজ্ঞ সিস্টেমস অ্যানালিস্ট এবং পর্যাপ্তসংখ্যক দক্ষ অপারেটরসহ আধুনিক ‘হার্ডওয়্যার’ ও ‘সফটওয়্যার’ এবং ইঞ্জিনিয়ার তৈরিসহ আইটি সম্পর্কিত সব উপকরণ ন্যূনতম দামে পর্যাপ্ত পরিমাণ জোগান নিশ্চিত করতে হবে।
পিএইচডি গবেষণায় উঠে এসেছে- বাংলাদেশের ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৬৪ ধরনের আলাদা ও পৃথক স্বতন্ত্র মুডের উপাত্তকে তথ্যে পরিণত করতে ১৭ ধরনের পৃথক ও আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হতো। এ ক্ষেত্রে গবেষক মাত্র একটা ‘সফটওয়্যার’ দ্বারা উল্লিখিত সব ব্যাংকের সব মুডের উপাত্তকে তথ্যে পরিণত করা সম্ভব যা ‘বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লেনদেনে সফটওয়্যারের ব্যবহার’ শীর্ষক প্রবন্ধটি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা’র, সংখ্যা-৮৯, অক্টোবর- ২০০৭ এ ছাপা হয়।
সব ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য দেশ ও বিদেশের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে জমা ও উদ্ধারের জন্য, যথাক্রমে ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেজ ফাইল সারভার (ডিডিবিএফএস), রিলেশনসিপ ডাটাবেজ ফাইল সার্ভার (আরডিবিএফএস), আদার ব্যাংক ডাটাবেজ ফাইল সার্ভার (ওবিডিবিএফএস), সেন্ট্রাল ব্যাংক ডাটাবেজ ফাইল সার্ভার (সিবিডিবিএফএস) এবং স্ট্যান্ডএ্যালং ডাটাবেজ ফাইল সর্ভার (এসএডিবিএফএস) প্রভৃতিসহ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এসব তথ্য আদান-প্রদানে ‘লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (এলএএন)’ এবং বাইরের জন্য ‘ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (ডব্লিউএএন)’ ছাড়াও সাধারণ, গোপন ও অতিগোপন তথ্যের ক্ষেত্রে, যথাক্রমে- ইন্টারনেট, এক্সট্রানেট ও ইট্রানেটসহ অফ এবং অনলাইনের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে পিএইচডি থিসিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
লেখক : প্রফেসর ও গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা