২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিউজিল্যান্ডের পত্রিকায় বাংলাদেশের প্রশংসা

- ছবি : সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত পত্রিকা ‘স্কোপ ওয়ার্ল্ড’-এ বাংলাদেশের ভ‚য়সী প্রশংসা করে ২৯ মে এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। নিবন্ধকার জন রোজারিও লিখেছেন- পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ‘বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখা উচিত’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার সাক্ষ্য বহন করে।

ইমরান খান বলেছেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং দেশটির কাছ থেকে একটি শিক্ষা নেয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘যখন একটি জাতি স্বাধীনতা এবং তার অধিকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, যখন ন্যায়বিচার মানুষের হৃদয়ে স্থির হয়, তখন আপনি যাই করুন না কেন, এমনকি সামরিক অভিযান, এটি তাদের হৃদয় থেকে বের হয় না। কারণ ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার বীজ আমাদের মধ্যে রয়েছে।’ স্কোপ ওয়ার্ল্ড পাকিস্তানের দৈনিক ডনের খবরের উল্লেখ করে বলছে, ইমরান বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার যে প্রশংসা করেছেন তা প্রমাণ করে, পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে।

ডন রিপোর্ট করেছে, স¤প্রতি ইউটিউবে স্ট্রিম করা এক লাইভ টকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান পাকিস্তানকে অগ্রগতির পথে আনতে সমাধানের জন্য সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে অবিলম্বে আলোচনার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি লাহোরে তার জামান পার্কের বাসভবন থেকে বলেন, ‘দেশ (পাকিস্তান) আসন্ন বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেহেতু হাইপারইনফ্লেশন চরমভাবে ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু ক্ষমতাসীন শাসকরা এটি নিয়ে চিন্তিত নন, কারণ তারা লুট করা সম্পদ বিদেশে লুকিয়ে রেখেছেন।’

রয়টার্স বলছে, ইমরান খান, যিনি বলেছেন যে তার বিরুদ্ধে ভ্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে, কারণ তিনি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন, যারা পাকিস্তানকে সরাসরি শাসন করেছে বা তার ইতিহাসজুড়ে বেসামরিক সরকারগুলোর ওপর খবরদারি করেছে।

খানকে ৯ মে গ্রেফতার ও আটক করা হয়, তার সমর্থকদের মধ্যে এটি ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দেয় এবং পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটির স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করে কারণ এটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের সাথে লড়াই করছে। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। ভিডিও ভাষণে, মি. খান জোর দিয়েছিলেন যে, তার সংলাপের জন্য আবেদনকে তার দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়, তিনি যোগ করেন যে, পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে শারীরিক ও অর্থনৈতিক বাড়াবাড়ি করা কোনো সমাধান নয়। তিনি ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করেছিলেন যে, তাদের সংযম ব্যবহার করা উচিত। কারণ পিটিআইকে চূর্ণ করার তাদের প্রচেষ্টা দেশকে ধ্বংস করতে পারে। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলই শাসকদের কাছ থেকে এমন বর্বর কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেনি।

সা¤প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের রাজনীতি উত্তাল। ইমরান খানের গ্রেফতার কাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে এখন পাকিস্তানজুড়ে সংঘর্ষ-হিংসা চলছে। এই ভঙ্গুর দেশের গণতন্ত্র নতুন হুমকির মুখে। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উঠছে। ইমরান খান বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে ন্যায়বিচার করা হয়নি। লাহোরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। পূর্বপাকিস্তানের কী হয়েছিল? নির্বাচনে জয়ী বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি সামরিক বাহিনী দিয়ে দমন করা হয়েছিল, তাদের অধিকার অস্বীকার করেছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী যদি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারত, তাহলে অতীতে পূর্বপাকিস্তান আলাদা হতো না।
ইমরানের এই মন্তব্যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শুধু ইমরান খানই নয়, পাকিস্তানের অনেক রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে বারবার বাংলাদেশের ইস্যুটি তুলে আনছেন এবং বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। কেন পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের ব্যর্থতা ও ভঙ্গুর অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে যেখানে বাংলাদেশ উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবিভর্‚ত হচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত দেশ।

পাকিস্তানের নেতৃত্ব বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক পাঠ শিখতে পারে। পাকিস্তানের বিভিন্ন টকশোতে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে শেখার কথাও বলা হচ্ছে। পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ খানও বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ হতে চায়। তদুপরি, পাকিস্তান সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছে। পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনেক প্রশ্ন, অনেক জিজ্ঞাসা। আর সেই সব প্রশ্নের উত্তর পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের কাছে নেই।

পাকিস্তানের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা দায়ী। বর্তমানে পাকিস্তান একটি নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে মরিয়া। রিজার্ভ প্রায় শূন্য। বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটের কারণে আমদানি বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বেশির ভাগ কারখানা বন্ধের পথে।

গ্যাস সঙ্কটের কারণে বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় সারা দেশে তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ২৭.৫৫ শতাংশ, ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক হাতে পারমাণবিক বোমা, অন্য হাতে ভিক্ষার বাটি।

প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। ১৯৭১ সাল থেকে দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত বেশির ভাগ অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। বাংলাদেশ জিরো রিজার্ভ নিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং মাত্র ৫০ বছরে পাকিস্তানকে সব অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এক ডলার ১০৭.৩৫ বাংলাদেশী টাকার সমান, অন্যদিকে ২৭৬.৫০ পাকিস্তানি রুপি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে, পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ৫৯ শতাংশ।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২ শতাংশ, পাকিস্তানের ২.১ শতাংশ। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২১, পাকিস্তানে ৫৯। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৩৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ, সমাজপতি এমনকি রাজনীতিকরা উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের উদাহরণ দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশে ৭৫ শতাংশ বেশি দারিদ্র্য ছিল, কিন্তু এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে পাকিস্তানি গণমাধ্যমে বেশ কিছু নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পাকিস্তান সরকারকে শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ধারায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

লেখক : ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement