২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিশু-কিশোরদের কর্মে নিয়োগসংক্রান্ত আইনকানুন

শিশু-কিশোরদের কর্মে নিয়োগসংক্রান্ত আইনকানুন। - ছবি : সংগৃহীত

শিশুরা হলো সৃষ্টিমুখী, সৃজনশীল। তারা পৃথিবীকে গড়তে জানে। সুতরাং তাদের বেড়ে ওঠার পথ রুদ্ধ করে দিয়ে একটি জাতি বেশিদূর এগোতে পারে না। শিশুশ্রমকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় খেলার মাঠ, খেলাধুলা ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক, আবৃত্তি, গল্প বলা, দেয়ালিকা লেখা ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিশুদের ব্যস্ত রাখতে পারলে শিশুরা প্রজাপতির মতো বেড়ে উঠবে। এ কথা ঠিক, দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত অনেক শিশু-কিশোর পেটের দায়ে কর্মে নিযুক্ত হতে বাধ্য হয়। অপ্রাপ্ত বয়সে তারা সংসারের বোঝা মাথায় নেয়।

শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ হলেও এসব কোমলমতি শিশু-কিশোর প্রয়োজনীয় বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে শর্তাধীনে পেশায় ও প্রতিষ্ঠানে কাজে নিয়োজিত হতে পারে। আমাদের উচিত, ওদেরকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়া। পাশাপাশি কাজ করার ফলে তারা যাতে শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই শিশু-কিশোরদের জন্য সীমিত পরিসরে কর্মে নিয়োগ-সংক্রান্ত কিছু বিধি-বিধান প্রণীত হয়েছে।

এখানে শিশু-কিশোরদের কর্মে নিয়োগসংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলো শ্রম আইনের আলোকে খুব সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-
১. ‘শিশু’ অর্থ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ হয়নি এমন কোনো ব্যক্তি। ‘কিশোর’ অর্থ ১৪ বছর পূর্ণ করেছেন কিন্তু ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি এমন কোনো ব্যক্তি;
২. কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু বা কিশোরকে কোনো পেশা বা প্রতিষ্ঠানে কাজে নিযুক্ত করবেন না। এর লঙ্ঘন হলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে। তবে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক সক্ষমতা প্রত্যয়নপত্র (১২ মাস পর্যন্ত বলবৎ) গ্রহণ করে কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিশু বা কিশোরকে কাজে নিযুক্ত করা যাবে;
৩. কোনো শিশুর মা-বাবা বা অভিভাবক শিশুকে কোনো কাজে নিয়োগের অনুমতি প্রদান করে কারো সাথে কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। চুক্তি করলে তিনি এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন;
৪. কোনো পেশা বা প্রতিষ্ঠানে কোনো কিশোরকে ‘শিক্ষাধীন’ (Apprentice) হিসেবে অথবা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য নিয়োগ করা যাবে;
৫. ঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে (যেমন-তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রলেপ দেয়া, বৈদ্যুতিক এক্যুমুলেটর তৈরি, কাচের দ্রব্যাদি তৈরি, ধাতু শান দেয়া, সিসা নিয়ে কাজ, সেল্যুলোজ দ্রবণ প্রস্তুতসহ অন্তত ৩২ প্রকার কাজ) এবং বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি ও বিপজ্জনক চালনাগুলোতে কোনো কিশোরকে নিয়োজিত করা যাবে না;
৬. কোনো কিশোরকে কারখানা বা খনিতে দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার বেশি এবং সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজে নিযুক্ত রাখা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দৈনিক সাত ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কিশোরকে কাজে নিযুক্ত রাখা যাবে না;
৭. কোনো কিশোরকে কোনো প্রতিষ্ঠানে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যবর্তী সময়ে কোনো কাজ করতে দেয়া যাবে না। একই দিনে কোনো কিশোর একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে না;
৮. কোনো কিশোরকে ভূ-গর্ভে বা পানির নিচে কোনো কাজে নিয়োগ করা যাবে না;
৯. ১৫ বছরের কম বয়সী কোনো কিশোর শ্রমিকের ওপর কোনো অপরাধের জন্য জরিমানা আরোপ করা যাবে না;
১০. ১৮ বছর বয়স পূর্ণ না হলে কোনো ব্যক্তিকে অর্থাৎ কিশোরকে সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানে কোনো পদে নিয়োগ করা যাবে না।

আজকের শিশু-কিশোররাই একদিন বড় হবে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে এটি অমোঘ সত্য। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই মাড়িয়ে সমাজ-সংসারে যারা বড় হয়, জীবনযুদ্ধে তাদের বিজয় অনিবার্য। বিজয়ের এ সংগ্রাম মহত্তম। আমাদের খেটেখাওয়া শিশু-কিশোরদের এ নিদারুণ যাতনাময় সংগ্রামমুখর কর্ম ও কর্মস্থল নিরাপদ হোক- এটিই কাম্য।

লেখক : অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট, শ্রম আইন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ।


আরো সংবাদ



premium cement