সৃষ্টজগৎ ও কুরআন
- কাজী ওয়াদুদ নওয়াজ
- ২৮ মে ২০২৩, ২০:০২
আল কুরানের জ্ঞান ওহির মাধ্যমে প্রাপ্ত চিরন্তন জ্ঞান। আর অন্য সূত্র থেকে মানব জাতির অর্জিত জ্ঞান আপেক্ষিক। বিজ্ঞান তার ঐতিহাসিক বিকাশের বিশেষ পর্যায়ে কোনো আপেক্ষিক জ্ঞানকেই তুলে ধরে। কুরআনের দৃষ্টিতে ‘ঈমান’ সব জ্ঞানের মূল ভিত্তি। স্রষ্টার সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনের প্রচেষ্টা ও এ সম্পর্কিত জ্ঞান হলো শ্রেষ্ঠ জ্ঞান।
সৃষ্টিরহস্য উদঘাটনের ইঙ্গিতবাহী বলেই কুরআন ‘মহা-বিজ্ঞানময় গ্রন্থ’। মানব প্রকৃতির সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝা ও সেই অনুযায়ী ব্যক্তি ও সমাজজীবন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে জারিকৃত শরিয়াহ সেই জ্ঞানেরই ধারাবাহিকতা। আল্লাহর সৃষ্টি-প্রশাসনের বাস্তবতা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুধাবনের মানব জাতির জন্য কুরআন নাজিল করা হয়েছে।
‘এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, এটি মুত্তাকিদের জন্য হেদায়েত।’ (সূরা ২ : আয়াত ২)
‘এ (কুরআন) হচ্ছে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট দলিল, (সর্বোপরি) বিশ্বাসীদের জন্য তা হচ্ছে জ্ঞানের কথা,পথনির্দেশ ও অনুগ্রহ।’ (সূরা ৪৫ : আয়াত ২০)
‘আমি যদি এ কুরআনকে কোনো পাহাড়ের ওপর অবতীর্র্ণ করতাম তাহলে (নিশ্চয়ই) তাকে দেখতেন, কিভাবে তা বিনীত হয়ে আল্লাহর ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে পড়ছে। আমি এসব উদাহরণ মানুষের জন্য এ কারণেই বর্ণনা করছি, যেন তারা কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে।’ (সূরা ৫৯ : আয়াত ২১)
পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে, জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, তোমার সেই মহান দয়ালু প্রভুর নামে, যিনি কলম দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি এমন কিছু তাকে শিখিয়েছেন, যা তিনি না শেখালে সে জানতেই পারত না। অথচ এই মানুষটিই বড় হয়ে বিদ্রোহে মেতে ওঠে। সে দেখতে পায় এখন তার কোনো অভাব নেই। অথচ এ নির্বোধ ভেবে দেখে না (একদিন) প্রভুর কাছেই তার প্রত্যাবর্তন হবে।’ (সূরা ৯৬ : আয়াত ১-৮)
আল্লাহ মানব জাতির কাছে সুস্পষ্টভাবে কুরআনের মাহাত্ম্য ও কুরআন শিক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরেছেন। মানুষকে পড়ার নির্দেশ মানে কুরআন ও বিশ্ব-প্রকৃতি থেকে জ্ঞানার্জন করার নির্দেশ। সূরা ২ : আয়াত ২, থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, কুরআনের জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশের চাবিকাঠি হলো ‘ঈমান’ ও ‘তাকওয়া’।
স্তূপিকৃত কঠিন পাথর দ্বারা আল্লাহ পাহাড় তৈরি করেছেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় সেই পাথরের বুক চিরেও ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়। আর এই কুরআন প্রস্তর-কঠিন মানুষের অন্তরকেও বিগলিত করে তার হৃদয় ও চক্ষুতে অশ্রুর প্লাবন বইয়ে দেয়। কুরআন মানুষের মৌলিক প্রকৃতির শিকড় ধরে টান দেয়, অস্তিত্বের গভীরে তুলে আলোড়ন, চিন্তা-চেতনায় নিয়ে আসে এক অভ‚তপূর্ব বিপ্লব। আর তারই প্রতিফলন ঘটেছিল ইসলামিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে।
আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি উপদেশ গ্রহণ করার জন্য কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, কে আছে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার?’ (সূরা ৫৪ : আয়াত২২) মানুষের কাছে কুরআনকে সহজবোধ্য করার লক্ষ্যে কুরআনে গৃহীত আল্লাহর পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ :
১. আমি এ কুরআনে মানুষদের (বোঝানোর) জন্য (ছোট-বড়) সব রকমের উদাহরণই পেশ করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (সূরা ৩৯ : আয়াত ২৭)
২. ভাষাশৈলী, সুর-লালিত্য ও ধ্বনি-মাধুর্য যা কুরআনকে হিফজ করা মানুষের জন্য সহজ করে দিয়েছে। পৃথিবীতে এমন গ্রন্থ আর দ্বিতীয়টি নেই।
‘আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট বাণী অবতীর্ণ করেছেন, তা এমন (উৎকৃষ্ট) কিতাব যার প্রতিটি বাণী পরস্পরের সাথে সামঞ্জস্যশীল, অভিন্ন (যেখানে আল্লাহর ওয়াদাগুলো বারবার পেশ করা হয়েছে), যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে, এ (কিতাব শোনার) ফলে তাদের চামড়া (শরীর) কেঁপে ওঠে, অতঃপর তাদের দেহ ও মন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁঁকে পড়ে...।’ (সূরা ৩৯ : আয়াত ২৩ )
৩. অজ্ঞতার অন্ধকারে হাতড়ে না ফিরে জ্ঞাত বস্তুর মাধ্যমে আল্লাহর অস্তিত্ব অনুসন্ধান করেতে হবে।
প্রকৃতিপাঠ থেকে উদ্ভূত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যেকোনো জ্ঞানের গুরুত্ব, সারবত্তা নির্ণয় ও সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কষ্টিপাথর হলো কুরআন। এর জন্য প্রয়োজন কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর মর্মবস্তু উপলব্ধি।
‘যারা (নিশ্চিতভাবে) বিশ্বাস করত বিশ্বাসকারীদের জন্য পৃথিবীতে নিদর্শনাবলি রয়েছে এবং তোমাদের নিজেদের (এ দেহের) মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না? আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ (সূরা ৫১ : আয়াত ২০-২২)
মানুষের বোঝার সুবিধার জন্য আল্লাহ কুরআনকে সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা আমাদের স্বার্থবুদ্ধি ও নির্বুদ্ধিতার কারণে একে জটিল করে ফেলছি। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ জীবন ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসলামী জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সৃজনশীল কুরআন অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। পাশ্চাত্য শিক্ষাসংস্কৃতির কলুষ-কদর্যতা থেকে ইসলামী মূল্যবোধ, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো কুরআন। বস্তুবাদী মতাদর্শ মানব জাতিকে প্রবৃত্তির দাসে পরিণত করেছে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সর্বোচ্চ ইসলামী নৈতিকতা তথা তাকওয়া প্রতিষ্ঠা করতে হলে জাতীয়পর্যায়ে কুরআন ও বিজ্ঞান শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।
আল্লাহর নাজিলকৃত গ্রন্থ ও বিশ্বজগতে দৃশ্যমান আল্লাহর নিদর্শনগুলো অস্বীকারকারী সব বস্তুবাদীর কুরআন অন্ধ, মূক ও বধির বলে আখ্যা দিয়েছে। কুরআন বলে- ‘তাদের অন্তর আছে কিন্তু তারা বুঝতে পারে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তারা দেখতে পায় না, তাদের কান আছে কিন্তু তারা শুনতে পায় না- তারা পশুসদৃশ্য বা তারও অধম।’ আল্লাহ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বজগত ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। অন্ধ প্রকৃতির খেয়ালখুশি তাই বিশ্ব-প্রশাসন ও ক্রমবিকাশের চালিকাশক্তি হতে পারে না।
আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা- ‘আমি সত্য দিয়ে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড বানিয়েছি। (হে মানুষ) তুমি কি দেখতে পাও না, আল্লাহ আসমান ও জমিনকে যথাবিধি (সত্য দিয়ে) সৃষ্ট করেছেন, তোমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করে নতুন (কোনো) সৃষ্টি (তোমাদের জায়গায়) আনয়ন করতে পারেন।’ (সূরা ১৪ : আয়াত ১৯)
প্রকৃতি বিজ্ঞান ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুজগতের অন্তর্নিহিত সত্যকে প্রকাশ করে, পক্ষান্তরে কুরআন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অতিন্দ্রিয় উভয় সত্যের মধ্যে সংযোগ সেতু নির্মাণ করে। বস্তুজগতের চিরন্তন বাস্তবতা অনুধাবন করতে হলে এই দুই সত্যের সম্মিলনের মাধ্যমেই তা সম্ভব। আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা- ‘অচিরেই আমি আমার নিদর্শনগুলো দিগন্তবলয়ে প্রদর্শন করব এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও (তা আমি দেখিয়ে দেবো), যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ওপর এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এ (কুরআনই মূলত) সত্য; এ কথা কি যথেষ্ট নয়, আপনার প্রভু (আপনার) সব কিছু সম্পর্কে অবহিত।’ (সূরা ৪১ : আয়াত ৫৩)
উপরোক্ত আয়াতটির মাধ্যমে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, জ্ঞানের অগ্রযাত্রার মাধ্যমেই কেবল মানবজাতি কুরআনের সত্যতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। আপেক্ষিক তত্ত্ব, এসট্রোফিজিকস, কসমোলজির মাধ্যমে ম্যাক্রো পর্যায়ে ও জীব-বিজ্ঞান, জেনেটি, আণবিক ও কোয়ান্টাম বায়োলজির মাধ্যমে মাইক্রোপর্যায়ে আল্লাহর সৃষ্টিরহস্য উদঘাটন করে বিজ্ঞান কুরআনের সত্যতা ঘোষণা করবে। আল্লাহর সর্বব্যাপী জ্ঞান পুরো সৃষ্টিজগত বেষ্টন করে আছে, কুরআনের মাধ্যমে সেই জ্ঞান আল্লাহ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, সৃজনশীলভাবে সেই জ্ঞান মানব জাতির কল্যাণে ব্যবহার করার জন্য। যেকোনো যুগ বা কালে মানব জাতির বিকাশমান জ্ঞান-ভাণ্ডারের সাথে সম্পৃক্তির মাধ্যমেই কেবল এই সৃজশীলতার বিকাশ সম্ভব।
পরীক্ষিত কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যের সাথে কুরআনের কোনো বিরোধ নেই। বিরোধ আছে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের বস্তুবাদী ব্যাখ্যার সাথে। কুরআন কখনো বিজ্ঞানকে বস্তুবাদীদের একচেটিয়া সম্পত্তি বলে মনে করে না। বিজ্ঞান হলো আদম জাতিকে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের ধারাবাহিকতা। বস্তুজগতে আল্লাহর সৃষ্টিরহস্য উদঘাটনের প্রচণ্ড শক্তিশালী এক মাধ্যম।
আল্লাহর আদেশ অমান্য করার শাস্তি স্বরূপ আদমের প্রতি আল্লাহর স্বর্গোদ্যান থেকে বহিষ্কারাদেশ ‘তোমরা নেমে যাও পৃথিবীতে পরস্পর শত্রু হিসেবে।’ (আয়াত-২ : ৩৬) বাস্তব জগতে ডারউইনের Natural Selection I Survival of the fittest তত্ত্ব দু’টির ইঙ্গিতবাহী। এই তত্ত্ব দু’টি হলো ক্রমবিকাশের লক্ষ্যে আল্লাহর জারিকৃত প্রাকৃতিক বিধান। কিন্তু বস্তুবাদীরা এদের ক্রমবিকাশের চালিকাশক্তি রূপে গণ্য করে। সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে বসানোর প্রয়াস পায়।
প্রাণিজগত ও পরিবেশের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের ভিত্তির ওপর ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব দাঁড়িয়ে আছে। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের মাধ্যমে মানুষের জান্তব প্রবৃত্তি ও অন্ধ প্রকৃতির খেয়ালখুশিকে ক্রমবিকাশের চালিকাশক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু এত সুশৃঙ্খল, সৌন্দর্যমণ্ডিত বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিজগতের চালিকাশক্তি কখনো অন্ধ-প্রকৃতির খেয়ালখুশি হতে পারে না। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনে আল্লাহর এক সুমহান ইচ্ছাশক্তি কাজ করছে।
ডারউইনের বিবর্তনবাদকে বাস্তব সত্য বলে মেনে নিলেও তা কি আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা বহিভর্‚ত বিষয় বলে গণ্য হবে? অবশ্যই না। যা কিছুই ঘটুক, যেভাবেই ঘটুক তার সব কিছুই আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতাবলয়ের মধ্যেই সংঘটিত হয়। বস্তুবাদীরা যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ বিশ্বাসীরাও তেমনি আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ সৃজনশীল ক্রমবিকাশকে অস্বীকার করে। উভয়পক্ষই সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে আছে।
বিস্তারিত সব কিছু বাদ দিয়ে আমি ঈশ্বরের চিন্তাধারাকে অনুধাবন করতে চাই, আলবার্ট আইনস্টাইনের এই বিখ্যাত উক্তিটির আলোকে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে- আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিজ্ঞানের বিকাশ ও অগ্রগতির মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা স্রষ্টার চিন্তাধারার কতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছেন। কুরআন আল্লাহর সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মানব জাতির প্রতি আহ্বান রেখেছে। তাই আল্লাহর সৃজনশীল ক্রমবিকাশের গতিধারা পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবন মানুষের জন্য বিশেষ জরুরি।
তাঁর নিদর্শনসংবলিত যে দু’টি গ্রন্থ আল্লাহ মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন তার একটি হলো কুরআন আর অন্যটি হলো সমগ্র সৃষ্টিজগত। কুরআনে এই নিদর্শনগুলো সমন্বয়ের প্রকৃতি ও গুরুত্ব নির্ধারণের দায়িত্ব মানুষের। আর বিশ্বজগতে এই সমন্বয়ের দায়িত্ব পড়েছে বিজ্ঞানের ওপর। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মধ্যে সমন্বয়ের সাধারণ সূত্র আবিষ্কারের গুরুদায়িত্ব বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। প্রস্তাবিত মহাবিশ্বের ‘সার্বিক তত্ত্বটি’ আবিস্কৃত হলে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদি তত্ত্বের সত্যতা ঘোষণা করবে।
চার্লস ডারউইনের সংগৃহীত ডাইনোসর ও বিভিন্ন প্রাণীর জীবাশ্মগুলো (ফসিল) আয়াতে মুহকামের ভিত্তিকে মজবুত করেছে- আর সেই মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে মানুষ তার সৃষ্টিরহস্য, যা চূড়ান্ত বিশ্লেষণে আয়াতে মুতাশাবিহাতের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে আয়াতে মুতাশাবিহাতেরে প্রতিফলন আয়াতে মুহকাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
মহাবিশ্বের উদ্ভিদ ও জীবজগতসহ সব কিছুর সৃষ্টি, ক্রমবিকাশ ও ধ্বংসসহ সব কিছুই আল্লাহর প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল সৃজনশীল ক্রমবিকাশের ফল। আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য ও সৃষ্টি প্রশাসনের পদ্ধতি ও নীতিমালা উপলব্ধির উপাদানগুলো পৃথিবীতেই মজুদ আছে। কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতটিতে আল্লাহ সৃষ্টিরহস্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে সমগ্র মানব জাতির প্রতি সেই আলামত অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন- ‘হে নবী আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহর জমিনে পরিভ্রমণ করো এবং (এর সর্বত্র) দেখো, কিভাবে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে প্রথমবার অস্তিত্বে আনেন এবং (একবার ধ্বংস হয়ে গেলে) কিভাবে পুনর্বার সৃষ্টি করেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সূরা ২৯ : আয়াত ২০)
আর ডারউইন একজন নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানী হিসেবে সারাটি জীবন সেই আলামত সংগ্রহের কাজেই ব্যাপৃত ছিলেন বলেই মনে হয়। ডারউইন নাস্তিক ছিলেন না। বিজ্ঞানী হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি আল্লাহর সেই নির্দেশই পালন করেছেন হয়তো। ক্রমবিকাশের সপক্ষে ডারউইনের সংগৃহীত প্রমাণগুলো একজন মুসলমানের ঈমানের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়; বরং আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিকৌশলের সাক্ষী হিসেবে তা বিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা