১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রমজানের জুমা বিশেষ মহিমান্বিত

বায়তুল মোকাররম মসজিদ। - ছবি : সংগৃহীত

আত্মশুদ্ধির মাস পবিত্র মাহে রমজান। আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ) রহমতের ৮তম দিন। হিজরি ১৪৪৪ সালের মাহে রমজানুল মোবারকের দ্বিতীয় জুমা মোবারক। দেখতে দেখতে এরই মধ্যে আমাদের মাঝ থেকে রমজান মাসের ৭ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বারতা নিয়ে শুভাগমন ঘটে মাহে রমজানুল মোবারকের। অপরিসীম প্রতিদান লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত ও নেক আমলের মৌসুম রমজান মাস। তারই মাঝে রমজানের জুমার দিনগুলো আরো বিশেষ মহিমান্বিত। এমনিতেই বলা আছে, জুমার দিন গরিবের হজের দিন, পবিত্র ও পুণ্যের দিন।

আজ রমজানের অন্য দিনের চেয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আবেগ পরিপূর্ণ। পবিত্র রমজানের আজ অষ্টম দিনে জুমার নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দেশ ও জাতির কল্যাণসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হবে। রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ৮৫ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন- ‘রমজান হলো এ মাস, যে মাসে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি।’ এ মাসকে বরকত-রহমত-মাগফিরাতের মাস বলা হয়। এ মাসে রয়েছে শবেকদরের মতো বরকতময় রাত, যা উম্মতে মোহাম্মদির জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং যা অন্য কোনো নবীর উম্মতের ভাগ্যে জোটেনি। শবেকদরের ফজিলত সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহর ঘোষণা হলো- ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহরিন’ অর্থাৎ শবেকদরের এক রাত হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত হলো পুরো মাস রোজা রাখা ফরজ।

প্রতিটি রোজায় মহান আল্লাহ পাক অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতের তালিকাভুক্ত করেন। তাই এ মাসকে বরকত-রহমত-মাগফিরাতের মাস বলা হয়। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। আর এ কাজগুলো রমজানের প্রতি রাতেই সংঘটিত হয় এবং শেষ রমজান পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা বিদ্যমান থাকে। এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো যে, জান্নাত-জাহান্নাম আল্লাহর সৃষ্ট দু’টি বস্তু, যার দরজাগুলো প্রকৃত অর্থেই খোলা কিংবা বন্ধ করা হয়। রমজানে জুমার ফজিলত : পবিত্র মাহে রমজান অফুরন্ত ফজিলতের মাস। রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ তারাবি, তাহাজ্জুদ, সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর রমজান মাসে জুমাবার মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামের দৃষ্টিতে দিনটি অনেক বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ এ দিনকে অন্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। পবিত্র রমজানের জুমার দিন হওয়ায় এর ফজিলত আরো অনেকগুণ বেশি।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জুমার দিনের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কুরআনে ইরশাদ করেন- ‘মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ’ (সূরা জুমুআ-০৯)। হাদিসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ রা: ও আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবত (ফরজ) গোসলের মতো গোসল করে সালাতের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানি করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুতবা দেয়ার জন্য বের হন তখন ফেরেশতারা জিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। ইসলামী শরিয়তের বিধানে জুমার দিনের মাহাত্ম্য সীমাহীন। এ দিন মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম আ:-এর দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয়েছিল বলেই দিনটির নাম জুমা রাখা হয়েছে।

জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন। হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী, এ বরকতময় দিনটি আল্লাহ তায়ালা বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মদি সা:-কে দান করেছেন। নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এ পবিত্র দিনে হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এ দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় (মুসলিম শরিফ)। এ ছাড়া হাদিস শরিফে জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুমা তোমাদের পারস্পরিক দেখা সাক্ষাৎ ও সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তাই এ দিনটি রোজার জন্য নির্ধারিত করা সমীচীন নয়। জুমার আগের রাতটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, জুমার পূর্ববর্তী রাতে বনি আদমের সব আমল মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা হয় (বুখারি, আহমদ)।

তাই জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে প্রতিটি মুসলিমের উচিত দিনটিকে কাজে লাগানো। দিনটিতে মহান আল্লাহর ইবাদত করা এবং প্রার্থনায় নিজের ও সমগ্র মানবতার জন্য কল্যাণ-সৌভাগ্য ও উন্নতির দোয়া করা উচিত এবং সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক
ইমেল : drmazed96@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement