২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সুশাসনের অভাবে বৈষম্য ও দারিদ্র্য বাড়ছে

সুশাসনের অভাবে বৈষম্য ও দারিদ্র্য বাড়ছে। - ছবি : সংগৃহীত

একটি দেশ বা সমাজের অগ্রগতির প্রাথমিক শর্তই হলো সুশাসন থাকা। সব সমস্যার মূল কারণ হলো সুশাসনের অভাব। সেটা না থাকলে উন্নয়নে অর্থই ব্যয় হবে, উন্নয়ন হবে না। জিডিপি, মাথাপিছু আয় বাড়লেও বৈষম্যের কারণে বাংলাদেশের বিপুল মানুষ তার প্রাপ্য সুফল পাচ্ছে না। বাড়বে আয়, শ্রেণীসহ বিভিন্ন বৈষম্য, বেকারত্ব, দরিদ্রতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও অর্থের অপচয় এবং লুটপাট। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়ন ও শাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সরকারের জবাবদিহিতা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্নীতি রোধ বা নির্মূল, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন সব ক্ষেত্রেই সুশাসন জরুরি। তৃতীয় বিশ্বে সুশাসনের সমস্যাকে সব সমস্যার মূল কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছে দাতাসংস্থাগুলো। তাদের মতে, এসব রাষ্ট্রে সম্পদের স্বল্পতা রয়েছে।

বহুমুখী ধারণা হিসেবে সুশাসনের উদ্ভব হয় মূলত ১৯৮৯ সালে। আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক প্রথম এই ধারণা উপস্থাপন করে। ‘সবুজ বিপ্লব’ আর ‘কাঠামো সমন্বয় কর্মসূচী’র ব্যর্থতার পর বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) উন্নয়নের শর্ত হিসেবে এ ধারণার অবতারণা করে। বিশ্বব্যাংকের মতে, সুশাসন হলো এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ সমাজের সমস্যা দূরীকরনে ও চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়। সু-শাসন হলো, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ যার মাধ্যমে নাগরিকরা নিজের সাথে এবং সরকারি কর্মকর্তা বা সংস্থার সাথে একত্রে কাজ করতে পারে যাতে নাগরিকদের আত্ম-মর্যাদা উপলব্ধিতে সমর্থন জোগায় ও আর্থ-সামাজিক রূপান্তরে সহায়তা করে।

এদিকে, ১৯৯৪ সালে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে সুশাসনের চারটি উপাদানের কথা বলেছে। আর এগুলো হলো সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছতা। জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কো সুশাসনের উপাদানের কথা বলতে বিশ্বব্যাংকের উপাদানগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণকে যুক্ত করেছে। ফলে সু-শাসন হচ্ছে এক ধরনের শাসন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ক্ষমতা সুষ্ঠুভাবে চর্চা করা হয়। এই শাসন প্রক্রিয়ায় জনগণ স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে; সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নারী-পুরুষ স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে। এটি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করে। আর্থ-রাজনৈতিক অগ্রগতিকে প্রাধান্য দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশে সুশাসনের মাত্রা সন্তোষজনক নয়।

বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতার জন্য বাংলাদেশে সুশাসন পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। নিম্ন মানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, জবাবদিহিতার অভাব, বিস্তৃত দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সুশাসনের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে গত প্রায় ২৫ বছর নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক সরকার কুশাসনের জন্য কেবল পূর্ববর্তী সরকারকেই দোষারোপ করেছে। বাংলাদেশে সুশাসন সর্বজন গ্রাহ্য স্লোগান হলেও তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাবে বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত সুশাসন অর্জন করতে পারছে না। বাংলাদেশের জনগণ ব্যাপক হারে ভোট দিলেও তা ‘নিছক অংশগ্রহণ’কেই প্রকাশ করছে। আর নিছক অংশগ্রহণ বলতে বোঝানো হচ্ছে, জনগণ শুধু প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেয়। কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তারা কেবল ভোট দেয়, সরকারের নীতিনির্ধারণে জনগণের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো ধরনের সমঝোতা না হওয়াও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি অন্তরায়।

গত চারটি সংসদীয় সরকারেরও সুশাসনে অনেক ব্যর্থতা ছিল। সুশাসনের আধুনিক ধারণা হলো নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিচার বিভাগই চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠান। তাই সুশাসনের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ অত্যাবশ্যক। সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও বাংলাদেশে নিম্ন আদালত এখনো পুরোপুরি স্বাধীন হয়নি। এটাই সবার চাওয়া। তাহলে মানুষ হয়তো বিচার ঠিকমতো পেত।

এদিকে, দেশী-বিদেশী অনেক গবেষকের মতে, বাংলাদেশে সুশাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি। সুশাসনের পূর্বশর্ত হলো সরকারের সব কার্যকলাপ থেকে দুর্নীতি দূর করা। স্বাধীনতার ৩৫ বছর পরে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয়েছে ২০০৬ সালে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন বাংলাদেশে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে মানবাধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈষম্যের কারণে কাক্সিক্ষত হারে দেশের দারিদ্র্য কমছে না। এই বৈষম্য যেমন আয়ের ক্ষেত্রে, তেমনি রয়েছে জীবন ধারণের নানা বিষয়ের ক্ষেত্রেও। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট : বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০’-এ বলা হয়েছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যসূচক (এসপিআই) অনুযায়ী রান্নার জ্বালানিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ মানুষ বৈষম্যের শিকার। উপযুক্ত বাসস্থানের ক্ষেত্রে বৈষম্যের হার ৩৮.৭ শতাংশ। এছাড়া স্যানিটেশন সুবিধার ক্ষেত্রে ৩০.৭ শতাংশ, সম্পদের ক্ষেত্রে ২৮.৩ শতাংশ, উপযুক্ত পুষ্টি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ২৫.৬ শতাংশ এবং স্কুলের ক্ষেত্রে ২৫.২ শতাংশ মানুষ বৈষম্যের শিকার।

এদিকে, এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় করার জন্য বাজেট বরাদ্দ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রাখা হয়েছে। কিন্তু যাদের জন্য এই বরাদ্দ তারা কতটা পাচ্ছে? বেসরকারি গবেষণা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে ৩৫ শতাংশ মানুষ পাচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা খাতের টাকা। ভাতা পাওয়ার যোগ্য মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ পাচ্ছেন এটির সুবিধা। তার মানে, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতা পাওয়ার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ মানুষ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মাথাপিছু তারা পাচ্ছে মাত্র ৬০০ টাকা যেখানে বরাদ্দ দেয়ার প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে তিন হাজার টাকা জনপ্রতি। আবার এই বরাদ্দ কি যারা পাবার তারা পাচ্ছে কি না।

গবেষণার তথ্য বলছে, সামাজিক সুরক্ষার জন্য দেশে বর্তমানে দেড় শতাধিক বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প আছে। এই খাতে বর্তমানে জিডিপির আড়াই থেকে ৩ শতাংশ ব্যয় বরাদ্দ হয়। কিন্তু সেখান থেকে যদি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন বাদ দেয়া হয়, তাহলে প্রকৃত খরচ হয় মোট জিডিপির এক দশমিক ৫০ থেকে এক দশমিক ৭০ শতাংশ। কাগজে-কলমে দেশের ৩৫ শতাংশ মানুষের কাছে এই টাকা যাচ্ছে। কিন্তু যাদের দরকার তাদের মাত্র ২০ শতাংশের কাছে এই টাকা যাচ্ছে।

আর বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব বলছে, যারা দিনে দুই দশমিক ১৫ ডলারের নিচে আয় করে, তারা অতি দরিদ্র। সেই হিসাবে বাংলাদেশে মাসে যারা পাঁচ হাজার ১৬০ টাকার নিচে আয় করে তারা অতিদরিদ্র। সে হিসেবে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে এই সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা দরকার। এ ছাড়া বর্তমান ব্যবস্থা যে শুধু অপ্রতুল সেটাই নয়, যাদের টাকা দরকার তারা পাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, দেশের জনগণের মাত্র ৮ শতাংশ বৃদ্ধ। আর সরকারি পেনশন হিসেবে যে টাকা দেয়া হয় সেই টাকা বাদ দিলে সামাজিক সুরক্ষার পুরো টাকার ৪১ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে বৃদ্ধদের পেছনে। দেশের ৫৬ শতাংশ যুবক হলেও মাত্র ২৮ শতাংশ টাকা সেখানে ব্যয় হচ্ছে। এ ছাড়া দরিদ্রদের কাছে টাকা গেলেও দেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে সাহায্য দেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তাদের দরকার। আবার গ্রামে সাহায্য গেলেও শহরে সাহায্য দেয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। এ ছাড়া সাহায্য বিতরণে প্রশাসনিক ব্যয় কম করায় ও ধরায় অনেক দুর্নীতি হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে যাদের দরকার তাদের কাছে টাকা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.৩০ শতাংশ। করোনা পরিস্থিতিতে সেই হিসাব বদলে গেছে। গত নভেম্বরে বেসরকারি গবেষণা বলছে, করোনার কারণে দেশে নতুন করে ২২.৯ শতাংশ মানুষ গরিব হয়েছে। নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। গরিব মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটির বেশি।

প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের ওয়ার্ল্ড ইকুয়্যালিটি ল্যাবের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের এক শতাংশ বিত্তশালীর হাতে মোট আয়ের ১৬ দশমিক তিন শতাংশ। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে, প্রতি বছর দেশে এখন নতুন করে কোটিপতি হচ্ছেন পাঁচ হাজার। বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, করোনার পরে ব্যাপক সংখ্যায় দারিদ্র্য বেড়েছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) পরিচালিত এক যৌথ সমীক্ষা বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে নতুন করে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। গত ২০২২ সালের মার্চেও এই সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ, ছয় মাসে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ৭৯ লাখ মানুষ। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পাঁচ কোটি ২০ লাখ মানুষ তীব্র ও মাঝারি খাদ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। দুই বছরে খাদ্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষ বেড়েছে ১২ লাখ।
সার্বিকভাবে যে উন্নয়নগুলো হয়েছে, বিশেষ করে সূচকে বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি বাড়া, ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে গড় হিসেবে। কিন্তু তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে কি না, সেটাই প্রশ্ন। যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তার সুফল কিন্তু বহুলাংশে সাধারণ মানুষ পায় না। কারণ এখন আমরা দেখছি, দিন দিন কিন্তু ধনী-দরিদ্র-নিম্ন মধ্যবিত্তদের ফারাক বাড়ছে। বঞ্চিতের সংখ্যা বাড়ছে।

এখানে সুশাসনের অভাব মানেই স্বচ্ছতা নেই, জবাবদিহিতা নেই। কেউ যদি অন্যায় করে তার কোনো শাস্তি হয় না। সব থেকে মারাত্মক হলো, রুল অব ল’ নেই। আইন আছে কিন্তু এটার বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। রাজনীতির আসল জিনিসটা যে, খালি ভোট দিলে হয়ে গেল তা নয়। সুশাসন ছাড়া কিন্তু কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন আমরা শুধু প্রবৃদ্ধি দেখছি, সুষম বণ্টন দেখছি না। উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে অবশ্যই টেকসই পরিকল্পনা দরকার এবং তার সুসম বাস্তবায়নের জন্য সুশাসন অত্যাবশ্যক।

লেখক : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement