১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী

আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী । - ছবি : নয়া দিগন্ত

মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলে মানুষ ‘মুসলমান’ হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু তাকে যদি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও আদর্শের শিক্ষা দেয়া না হয়, তাহলে সেকি প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে? মৌলিক শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা যা একজন মানুষকে জীবন যাপন ও জীবিকার্জনে সাহায্য করে শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ রাখে এবং পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা ও অন্য মানুষের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে প্রকৃতির সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে। ইসলাম ধর্মের মূল ধর্ম বিশ্বাস মতে, একজন ব্যক্তিকে ইসলামে প্রবেশ করতে হলে কিছু মৌলিক বিষয়াদির প্রতি তাকে নিঃশর্ত বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। এ সব বিষয় দ্বিধাহীন চিত্তে অন্তরে ধারণ ও মুখে স্বীকার করার মাধ্যমেই ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষিত হতে পারেন এবং তাকে ‘মুসলিম’ নামে অভিহিত করা যায়। ২০২৩ সাল থেকে সারা দেশে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে স্কুল ও মাদরাসায় অভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে পাঠদান শুরু হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরে পঠিতব্য ১০টি বিষয় হলো- বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, শিল্প ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও ধর্মশিক্ষা।

তবে বইগুলোতে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ইসলাম ও মুসলমান প্রসঙ্গ। শুধু এড়িয়েই যাওয়া হয়নি; বরং ইসলাম ও মুসলিম ধর্মাচারবিদ্বেষী করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি বইগুলোতে যৌন বিকৃতিকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ৫৭ থেকে ৮০ শতাংশ লেখা বিধর্মীদের, সে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি প্রকৃত মুসলমান থাকবে? আমাদের ৯২ শতাংশ মানুষের সন্তানদের আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রাইমারি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত অমুসলিম শিক্ষকদের গড় হার ৫৮ শতাংশেরও বেশি। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের ৮৫ শতাংশ শিক্ষকই বিধর্মী। একটি শিশু কোমল মন নিয়ে যখন শিক্ষালাভ শুরু করে তখন তার শিক্ষক বা গুরুর ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সে আসক্ত হয়ে পড়ে। তার মিস, ম্যাডাম বা টিচারের ধর্মীয় ভাবধারা, রীতি সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনার প্রভাব শিশুটির ওপর পড়বেই। তাহলে মুসলিম শিশুরা ছোটবেলা কী শিখবে? ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কৌশলগত নিযুক্তির ফলে আজ তারা প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষকতার পদ দখল করে আছেন।

পাঠ্যপুস্তকের সবগুলো বইয়েই দেখানো হয়েছে নারী-পুরুষের ফ্রি-মিক্সিং। তবে কোনো ছবিতে কোনো নারীর মাথায় হিজাব দেখা যায়নি। বইগুলোতে হিজাবের ছবি তো দেয়া হয়নি, উল্টো হিজাব ও বোরকা নিয়ে হাসি-তামাশা করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ (অনুশীলন) বইয়ের ১২১ পৃষ্ঠায় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা ‘অবরোধবাসিনী’ থেকে এমন কিছু অংশ উল্লেখ করা হয়েছে, যা পর্দার বিধানের প্রতি বিদ্বেষ ও তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে। পর্দা করা মুসলিম নারীদের উপস্থাপন করা হয়েছে নির্বোধ, মূর্খ হিসেবে। সেখানে যারা বোরকা-হিজাব পরে তাদেরকে অবরোধবাসিনী বলা হয়েছে। বোরকা-হিজাব পরার কারণে তারা কিভাবে পুড়ে মরছে, ট্রেনের নিচে কাটা পড়ছে, ডাক্তাররা রোগীকে না দেখে রাগ করে কিভাবে চলে যাচ্ছে, কিভাবে রেলের কর্মচারীর লাথি খাচ্ছে- ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে লেখাটিতে। এসব তুলে ধরে পর্দার প্রতি ভীতি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে। সাংবিধানিক উদারতায় সব ধর্মের সমান সুযোগ এ দেশে স্বীকৃত। এ নিয়ে আলোচনা করাও আইনগত বাধা-বিপত্তিতে পূর্ণ। তবুও ৯২ শতাংশ মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুসলমানি ভাবধারায় গড়ে তোলার অপরিহার্য তাগিদে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি। আশা করি, সদাশয় সরকার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোকষ্ট ও উদ্বেগের জায়গাটি অনুধাবন করবে। এসব বইয়ের মাধ্যমে ১৬ কোটি মুসলমানের ছাত্রসমাজকে তাদের আত্মপরিচয় ও ধর্মীয় ভাবধারা ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব লেখায় ‘নেমন্তন্ন, ভজন, বাবু, প্রসাদ, পূজা, পার্বণ, বৈষ্ণব, চণ্ডীমণ্ডপ, প্রায়শ্চিত্ত, ভগবতী, শ্মশান’ ইত্যাদির মতো বহু বিশেষ অর্থ ও মর্মবোধক শব্দ ব্যবহার করে এবং শিক্ষাঙ্গনে ‘ধর্মীয় সঙ্গীত’ শ্রবণের উৎসাহ দিয়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের নিজ ধর্মবিশ্বাস দুর্বল করে ভিন্ন ধর্মের দিকে ধাবিত করার সূক্ষ্ম প্রয়াস চালানো হচ্ছে। এ দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এটি এক গভীর চক্রান্ত। এ চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকগুলো বাতিল করে ইসলামী ভাবধারায় নতুন পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে। অল্প সংখ্যক সংখ্যালঘুর সাথে একাকার করতে মুসলমানদের সন্তানদের ইসলামশূন্য শিক্ষায় শিক্ষিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অনেক শিক্ষাঙ্গনে এখন সব ছাত্রকেই সরস্বতী পূজায় উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। অথচ মুসলমানের জন্য দেব-দেবীর পূজা করা সম্পূর্ণ অবৈধ, হারাম ও শিরক। বর্তমান ধর্মহীন শিক্ষানীতিতে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠক্রমে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন শাখা থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষার নামে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের যৌনতার সবক দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার নামে এসব ধর্মবিদ্বেষ শিক্ষা দেয়া হয়। এখন শিশুদের পড়ানো হয় অর্থহীন বাজে কিছু কথা, যার অর্থ শিশু তো বোঝেই না, শিক্ষক এমনকি অভিভাবকরাও এর অর্থ জানেন না। আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম কী? হাটটিমাটিম টিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম, তাদের খাড়া দু’টি শিং কী বস্তু? একটি মুসলিম দেশের শিশু-কিশোরদের আল্লাহ, রাসূল সা:, দ্বীন, ধর্ম, পবিত্রতা, নামাজ, রোজা, সত্য বলা, সৎপথে চলা, মা-বাবার কথা শোনা, গুরুজনকে মান্য করা ইত্যাদি না শিখিয়ে এসব কী শোনানো হচ্ছে? কেউ কি জবাব দেবেন? পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম সাম্প্রদায়িক বলে বাদ দিলেও ভিন্ন ধর্মের নাড়ি-নক্ষত্রও নানা কায়দায় শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে কি বর্তমান প্রজন্ম প্রকৃত মুসলমান হবে না জ্ঞান, চিন্তা, ধারণা, কল্পনায় অন্য ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়বে, বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। পরিতাপের বিষয়- পড়ার চাপে শিশুরা এখন আর ভোরে মসজিদ বা মক্তবে যেতে পারে না। নগরজীবনের বাস্তবতায় তারা নানী-দাদী বা ধর্মীয় গৃহশিক্ষকের কাছেও মৌলিক ইসলামী শিক্ষা আগের মতো পায় না। আমরা যখন আল্লাহ, রাসূল সা:, ভালো-মন্দ, জান্নাত-জাহান্নাম, কুরআন-হাদিস, সওয়াব-গুনাহ সম্পর্কে ভালোমতো জানতে পেরেছি, এখনকার ছেলেমেয়েরা এখন এসব কিছুই জানার সুযোগ পায় না। ওরা আরবি অক্ষর বা কুরআন পড়া জানে না। নামাজও শেখে না। নবী-রাসূল, ওলি-আউলিয়া, মহান ব্যক্তি, আদর্শ মুসলিম নারীসমাজ, ধর্মীয়, মানবিক, নৈতিক কোনো শিক্ষাই তারা শেখার সুযোগ পায় না। স্কুলে তো এসব নেই-ই, বাড়িতে বা টিভি সিনেমাতেও এসব নেই। এ ধরনের ছেলেমেয়েরা আবার অন্য ধর্মের দেব-দেবী, কাল্পনিক হিরো, পৌরাণিক কাহিনীর বীর, সতী, মুণি-ঋষিদের ভালোই চেনে। অনেক সময় খুব দুশ্চিন্তা হয়, আমাদের সন্তানরা কি ভবিষ্যতে মুসলমান হিসেবে টিকে থাকতে পারবে? বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম কি ইসলামের ওপর বেড়ে উঠছে আমাদের ঈমান ইসলাম নিয়ে? ৫৭ থেকে ৮০ শতাংশ লেখা যদি বিধর্মীদের হয় তাহলে এ দেশের পাঠ্যসূচি থেকে মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে? কেন ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি এত অবহেলা? কেন শিক্ষানীতিতে ধর্মহীনতার প্রবল চাপ, মুসলমান শিক্ষার্থীরা জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় কেন মুসলমান হিসেবে গড়ে উঠার শিক্ষা পাবে না? শুনছি, একমুখী শিক্ষার নামে অচিরেই মাদরাসা, মক্তব, হাফেজি মাদরাসা ইত্যাদি ব্যবস্থায়ও বিধিনিষেধ আসছে। দেশ কি তবে নাস্তিক্যবাদীদের ইচ্ছায়ই চলবে? ধর্মপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী ও নিজ নিজ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সংবিধান কি এ দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় ভাবধারা ঈমান, ইসলাম, ধর্ম-কর্ম সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবেন না? সত্যি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের নবীন প্রজন্ম কতটুকু প্রকৃত মুসলমান আর কতটুকু জন্মগত পরিচয়ধারী, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অসংখ্য টিভি চ্যানেলে তারা রাত-দিন পৌত্তলিক শিরকি মাইথোলজি নানা বাহানায় নানা রঙে দেখে দেখে প্রায় মুখস্থ করে নিচ্ছে। আশা করি, এ দেশের কোটি কোটি মুসলমানের স্বার্থেই অবিলম্বে শিক্ষানীতি, পাঠ্যপুস্তক ও জাতীয় সাংস্কৃতিক নীতিমালা ৯২ শতাংশ মানুষের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকারের আলোকে নতুন করে রচনা করা হবে। আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামী চিন্তাবিদদেরও এ বিষয়ে আলোচনা এবং মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার বিকল্প নেই।

tafazzalh59@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইসফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল