২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের ফাঁকা বুলি

ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন - ছবি : লেখক

আজ ১০ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। আজই পূর্ণ হচ্ছে জাতিসঙ্ঘ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭২ বছর। ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে ১৯৪৮ সালের এই দিনে গৃহীত হয় ঘোষণাটি। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালিত হচ্ছে। কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছিল, বর্তমানে তা নজিরবিহীন প্রশ্নের মুখে।

মানবাধিকার বলতে কী বোঝায়
রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত সুযোগ-সুবিধা যা পেয়ে মানুষ বিকশিত হয় তাকেই অধিকার বলে। যেমন, পরিবার গঠন, ভোটদান ইত্যাদি। শিক্ষা, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান মানুষের সর্বজনীন মৌলিক অধিকার। অধিকারকে আমরা দু’ভাবে চিন্তা করতে পারি। একটি হলো নৈতিক অধিকার যা মানুষের বিবেকবোধ থেকে আসে। অপরটি হলো আইনগত অধিকার। আইনগত অধিকার আবার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক-এই তিনভাবে ভাগ করা যায়।

যেসব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অধিকারের কথা দেশের সংবিধানে উল্লেখ থাকে এবং সরকার কর্তৃক অলঙ্ঘনীয় তাই মৌলিক অধিকার। আর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারই হলো মানবাধিকার।
এক কথায় মানবাধিকার হলো জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত এমন কতগুলো অধিকার যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে ভোগ করা যায়। মানব পরিবারের সব সদস্যের সর্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। এটি প্রতিটি মানুষের জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার, যা সে নিজে ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না।

আঞ্চলিক যুদ্ধ, সঙ্ঘাত, হানাহানির কারণে মানুষের অধিকার যখন বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের বিষয়টি এখন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হচ্ছে।

তিন স্তরে মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে : প্রথমত, একটি পরিবার ও সমাজের কর্তারা তাদের অধীনস্থদের অধিকার রক্ষা করবে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র এবং তৃতীয়ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করবে।

জাতিসঙ্ঘের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অব হিউমান রাইটসের প্রথম অনুচ্ছেদে রয়েছে যে, ‘জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।’ বর্তমান বিশ্বে হিউমান রাইটস শব্দটি বহুল আলোচিত ও বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। মানবাধিকারের বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় হলেও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই এ নিয়ে চলছে বাক-বিতণ্ডা ও দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত। এক দিকে মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাধর শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো অবলীলায় হরণ ও দমন করে চলছে। আর দুর্বল জাতিগুলোর সাথে সবল জাতিগুলোর আচরণ আজকাল মানবাধিকারকে একটি উপহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে।

মানবাধিকারের ক্রমবিকাশ
সাইরাস সিলিন্ডার : ৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পারস্যের রাজা দ্বিতীয় সাইরাস যিনি ‘সাইরাস দ্য গ্রেট’ নামে সমধিক পরিচিত, ব্যাবিলন আক্রমণ করেন। ব্যাবিলন জয়ের পর তিনি স্থানীয়দের হাতে নির্যাতিত বিশেষ করে ইহুদি দাস জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে দেন। তাদের নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনেরও ব্যবস্থা করেন। এরপর সাইরাসের নির্দেশে একটি সিলিন্ডার তৈরি করা হয়। যা সাইরাস সিলিন্ডার নামে অভিহিত। এতে সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটিই বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার সনদ।

মদিনা সনদ : মানবাধিকারের প্রধান ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী সা: কর্তৃক মদিনা সনদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মদিনা সনদকে পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এ সনদে মোট ৪৭টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, যেগুলোতে মানবাধিকারের বিষয়গুলো সর্বপ্রথম সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অনুচ্ছেদসমূহ :
সনদে স্বাক্ষরকারী সব সম্প্রদায় একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে এবং সব সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।

সব নাগরিক পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

নাগরিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

সব ধরনের রক্তক্ষয়, হত্যা ও ধর্ষণ নিষিদ্ধ।

কেউ ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তার কারণে অপরাধীর সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।

দুর্বল ও অসহায়দের সর্বতোভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।

ম্যাগনা কার্টা : মানবাধিকারের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে ম্যাগনা কার্টাকে একটি মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি মানবাধিকারের মহাসনদ হিসেবে ইতিহাসে অভিহিত। এটি ছিল মূলত ইংল্যান্ডের রাজা জন ও ধনী বিত্তশালী ব্যারনদের মধ্যে ১২১৫ সালে সম্পাদিত একটি চুক্তি। এতে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল যে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাউন্সিলের পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে খামখেয়ালিভাবে জনগণের ওপর কর আরোপ করা যাবে না। রাজকর্মকর্তারা যথেচ্ছভাবে জনগণের ভূ-সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারবে না। ব্যবসায়ীরা রাজ্যের মধ্যে ইচ্ছেমতো এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারবে। কোনো স্বাধীন মানুষকে বিচারিক রায় বা দেশীয় আইনানুযায়ী ব্যতীত গ্রেফতার, কারারুদ্ধকরণ, সম্পত্তিচ্যুত, দ্বীপান্তরিত বা নির্বাসিত কিংবা হয়রানির শিকার করা যাবে না।

এই ম্যাগনা কার্টা চুক্তির মধ্য দিয়েই সংসদীয় গণতন্ত্রের পাশাপাশি আইনের শাসনের ধারণার যাত্রাও শুরু হয়। এই ঐতিহাসিক সনদেই বিশ্ব ইতিহাসে সর্বপ্রথম ঘোষণা করা হয় কোনো দেশের রাজাসহ সে দেশের সবাই রাষ্ট্রীয় আইনের অধীন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। প্রজাদের অধিকার ও রাজার ক্ষমতা হ্রাসের যৌক্তিক এ দলিল পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশে মানবাধিকার ও জনগণের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে।

পিটিশন অব রাইটস : ১৬শ শতকে ব্রিটিশ জনগণের আন্দোলনের ফলে প্রথম যে তাৎপর্যপূর্ণ দলিলের সৃষ্টি হয় তা পিটিশন অব রাইটস নামে অভিহিত। ১৬২৮ সালে পিটিশন অব রাইটস সংসদ কর্তৃক আইনের আকারে গৃহীত হয়েছিল। পার্লামেন্টের সম্মতি ছাড়া করারোপ, বিনা অপরাধে কারারুদ্ধকরণ, ব্যক্তিগত বাসস্থানে স্বেচ্ছাচারী অনুপ্রবেশ এবং সামরিক আইনের প্রয়োগ থেকে জনগণকে সুরক্ষা প্রদান করেছিল মানবাধিকারের এ গুরুত্বপূর্ণ দলিলটি।

বিল অব রাইটস : ১৬৮৯ সালে বিল অব রাইটস ব্রিটিশ পার্লমেন্টে গৃহীত হয় ও বিধিবদ্ধ আইনে রূপান্তরিত হয়। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। প্রখ্যাত ফরাসি দার্শনিক ভল্টেয়ারের মতে, বিল অব রাইটস প্রত্যেক মানুষকে সেই সব প্রাকৃতিক অধিকার পুনরুদ্ধার করে দিয়েছে যেগুলো থেকে তারা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শাসক থেকে বঞ্চিত ছিল।

ইসলামে মানবাধিকার : কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকারের বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। ইসলামে সর্বজনীন মানবাধিকারের বিষয়টি জীবনের সর্বক্ষেত্র ও বিভাগে পরিব্যাপ্ত। ইসলাম মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবময় অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে। মানুষকে সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের মর্মবাণী শুনিয়ে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব, বংশীয়মর্যাদা, শ্রেণিবৈষম্য ও বর্ণপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে। অধীনদের প্রতি সদাচারী ও ন্যায়পরায়ণ হতে শিক্ষা দিয়েছে। আরব-অনারব, সাদা-কালো সবাই একই পিতা-মাতা হজরত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া (আ:)-এর সন্তান। মানুষের মধ্যে মর্যাদার কোনো পার্থক্য হতে পারে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানবজাতির সম্মান ও মর্যাদার অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি জীবনযাত্রার মৌলিক অধিকার, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার, জীবনরক্ষণ ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, একতা, সঙ্ঘবদ্ধ ও সাম্যের অধিকার, হালাল উপার্জনের অধিকার, এতিম, মিসকিন, অসহায় নারী ও শিশুর অধিকার, প্রতিবেশীর অধিকার, কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রভৃতি সব ব্যাপারেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ও কালজয়ী চিরন্তন আদর্শ হিসেবে ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বর্তমান অর্জন : আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মানবাধিকার এখন বিশ্বব্যাপী বেশি স্বীকৃত। শিশু, নারী, নিপীড়নের শিকার ব্যক্তি, বিশেষ চাহিদার প্রতিবন্ধী মানুষ আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি দ্বারা আশ্রয় ও রক্ষা পাচ্ছেন।

বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে মোট ১৮টি স্বাধীনতা ও অধিকার স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় বর্ণিত রয়েছে। এগুলো হলো নাগরিক ও রাজনৈতিক মানবাধিকার। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানবাধিকার এবং সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে। এগুলো স্থান পেয়েছে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’ হিসেবে। বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে আইনের দৃষ্টিতে সবার সম-অধিকারের (অনুচ্ছেদ-২৭) এবং ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে সবার আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে (অনুচ্ছেদ-৩১ এবং ৩৩)। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলোয় অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, সুযোগের সমতা ও কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের কর্মের অধিকার লাভের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে এসব অর্জন ব্যর্থতার তুলনায় খুবই নগণ্য।

বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার : কাগজ-কলমে, বক্তৃতা আর বিবৃতিতে সারা বিশ্বের মানুষ মানবতার জয়গান গেয়ে বেড়ায়। বাস্তবে গোটা বিশ্বই মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নিজেরাও যেমন জড়িত তেমনই যারা এই কাজে জড়িত তাদেরও ইন্ধনদাতা। মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব যে রাষ্ট্র বা সরকারের সেই সরকার বা রাষ্ট্রের হাতেই দেশে দেশে মানবাধিকার সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে। অত্যাচারী এসব রাষ্ট্রযন্ত্রের অত্যাচারে পৃথিবী আজ নরককুণ্ড।

মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। কিন্তু বাস্তবে তাদের এই মানবাধিকারের বুলি কেবল নিজ দেশের কিংবা নিজ রাজনৈতিক বিবেচনার পছন্দের লোকদের জন্য, অন্য ধর্ম বা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের জন্য নয়। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনের মতো দেশগুলোর ওপর পাশ্চিমা বিশ্বের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এবং তার কারণে মানবতার সীমাহীন অপমান। সবখানেই চলছে অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে মানবতার কথিত রক্ষকরাই।

গোটা বিশ্বের মানবতা আজ বিবেকের কাঠগড়ায়। মানবতা আজ বিবেক, আদর্শ আর নীতিনৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত নয় বরং তা অন্যদের বঞ্চিত করে নিজ দেশ আর সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। শক্তিধর দেশগুলো নিজস্ব বলয় ধরে রাখতে হেন কাজ নেই যা করছে না।

জাতিসঙ্ঘ শক্তিধর রাষ্ট্রের তল্পিবাহক : বিশ্বব্যাপী মানুষের দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে জাতিসঙ্ঘ। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা আজ একপ্রস্থ কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়। চোখের মাথা খেয়ে বসে আছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও। মধ্যপ্রাচ্য আর মুসলিম জনগোষ্ঠীসংক্রান্ত খবর প্রচারে তারা এক চোখানীতি অবলম্বন করে।

মানবতা ও মানবাধিকারের বিচারে বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে দেশে চলছে গণহত্যা আর জাতিগত নিধনযজ্ঞ। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও সঙ্ঘবদ্ধ বৌদ্ধ অধিবাসীদের অভিযান এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া ও ইয়েমেনে ধুঁকছে মানবতা। ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষের কবলে লাখ লাখ নাগরিক।

হত্যা, ধ্বংস আর জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমাচ্ছে মানুষ। কিন্তু নির্যাতিত ও নিপীড়িত এসব মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর, তারাই আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

সঙ্ঘাত প্রতিরোধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্পষ্টত ব্যর্থ হয়েছে ঐতিহাসিক সনদ ম্যাগনা কার্টা, জাতিসঙ্ঘ সনদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা। মানবাধিকার আজ এক দুস্থ, অসহায় এতিম বালকের নাম।

লেখক : নিবন্ধকার ও কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement