১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধর্মবিমুখ শিক্ষাব্যবস্থা!

-

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত রূপরেখায় ধর্মশিক্ষা আবশ্যিক বিষয় হিসেবে উপেক্ষিত হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে আগে যা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ ও এ দেশের সব ধর্মের মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করে। শিশুদের নৈতিক ও মানবিক মান বিকাশে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে থাকে প্রত্যেকটি পরিবার।

আজকের শিশু দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নাগরিক ও কর্ণধার। শৈশবকালই ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার উপযুক্ত সময়। বর্তমান শিক্ষাক্রমে নার্সারি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা ইতোমধ্যে বাদ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বিদায় নিচ্ছে।

দেশের জনগণের এটি বুঝতে বাকি নেই যে, ধর্মবিমুখ ও নৈতিকতাহীন নাগরিক তৈরির জন্য মূলত প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ধর্মশিক্ষাকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে বাদ দিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এর ফলে অনৈতিকতা ও অপকর্মের জোয়ার আরো বেগবান হবে। দেশ সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া,ব্যভিচার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিতে ভরে যাবে এবং সমাজের সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা আরো বিনষ্ট হবে। এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাদ দেয়া জাতীয় শিক্ষানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি এটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণও বটে। একদিকে সরকার ইসলামী শিক্ষাকে আবশ্যিক বিষয় থেকে বাদ দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে, অপর দিকে সমাজে অপসংস্কৃতি বেড়ে যাওয়া এবং বাড়াবাড়িমূলক বিস্তারের মাধ্যমে অনৈতিকতার পথ প্রসস্ত করে দিচ্ছে বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন। এটি সম্পূর্ণরূপে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থী।

বাংলাদেশ একটি মুসলিমপ্রধান দেশ। এ দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ কথাটি লেখা আছে। এসব বিবেচনায় পাঠ্যবই থেকে ইসলাম শিক্ষা আবশ্যিক বিষয় থেকে বাদ দেয়া একবারে অযৌক্তিক। এটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

স্র্রষ্টায় ভীতি না থাকলে আমানতের খিয়ানত করে, অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে জড়িয়ে পড়ে মানুষ। অসৎ নাগরিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে বিরাট বাধা। অপর দিকে, ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা দৈহিক, মানসিক বিকাশ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়। তারা উৎপাদনশীল ও দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়, যা একটি দেশের উন্নতি-অগ্রগতিতে খুব প্রয়োজন। তা ছাড়া ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। একই সাথে পরমত সহিষ্ণুতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়। ফলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বিদ্যমান থাকে।

সব ধর্মে ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। আল কুরআনে বলা হয়েছে ‘পড়ো! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা আলাক)। মহান রব এ আয়াতে জ্ঞানার্জনের কথা বলেছেন। যে জ্ঞানার্জন করলে মহান আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে জানা যাবে। আর এ ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা জাতিকে উপহার দিতে পারে একদল সৎ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব। ইতিহাসের সব যুগে একশ্রেণীর সৎ, দক্ষ, যোগ্য লোকের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা দেশ, সমাজ এমনভাবে পরিচালনা করেছেন যেখানে দুর্নীতি-অনিয়ম, অন্যায়-অবিচার ছিল না। আর এটি সম্ভব হয়েছিল ধর্মীয় শিক্ষার কারণে। আজো সমাজ পরিবর্তনে প্রয়োজন সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব। দেশ-জাতির সঠিক নেতৃত্ব যথাযথভাবে গড়ে ওঠে ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে। তাই শিক্ষার সব পরিমণ্ডলে আদর্শবান ব্যক্তিদের জীবন চরিত্র পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। মুহাম্মদ সা: ও অন্যান্য নবীর জীবনাদর্শ এবং অন্যান্য ধর্মের জন্য তাদের ধর্মের মহান ব্যক্তিদের জীবনাদর্শ পাঠ্যপুস্তকে রাখতে হবে।

বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বেকারত্ব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আয়-বৈষম্য ও পর্নোগ্রাফির বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা। এ অবস্থায় কোমলমতি শিশুদের ন্যূনতম ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া অপরিহার্য। এটি সময়ের দাবি। তাই আমরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে সব স্তরে ইসলামী শিক্ষাসহ সব ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে এবং ইংরেজির মতো আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে আরবি ভাষাকে পাঠ্য হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে ধর্মবিবর্জিত শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement