১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তুরস্ক এখন কেন বাইরের দিকে তাকাচ্ছে

- ছবি : সংগৃহীত

রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের কৌশল স্থির নয়। যখন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গতিশীলতা পরিবর্তিত হয়, নীতি এবং কৌশলগুলোও পরিবর্তন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তুরস্কের বৈদেশিক নীতি এক বছরের মধ্যে এ ধরনের একটি তীক্ষè পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে যে, এমনকি যারা এটিকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে তারাও এই পরিবর্তনের সূক্ষতা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।

স্টিভেন ডেভিডের ‘সর্বভারসাম্য’ তত্তটি তুরস্কের প্রতিদ্ব›দ্বীদের সাথে সাম্প্রতিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করার জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি হতে পারে। ডেভিড যুক্তি দেন যে, নেতারা অন্য দেশের সাথে তাদের সম্পর্ক ঠিক করেন না। শুধুমাত্র বাইরের হুমকির কারণে নয়; বরং তাদের টিকে থাকার জন্য অভ্যন্তরীণ হুমকির কারণেও। তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি নেতৃত্বের প্রতি অভ্যন্তরীণ বা দেশীয় হুমকি তার নেতাদেরকে সঙ্গতিপূর্ণ নীতি বেছে নিতে বাধ্য করতে পারে, যা গৌণ প্রতিপক্ষের সাথে সারিবদ্ধ হওয়া বেছে নিতে পারে, যাতে ঘরোয়া প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক প্রতিপক্ষের জন্য বৃহত্তর ফোকাস বরাদ্দ করা যায়। ডেভিড নেতাদের যুক্তিসঙ্গত গণনার মাধ্যমে এই নীতিটি ব্যাখ্যা করেন, যারা তাদের বেঁচে থাকার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হুমকিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গত কয়েক বছরে, তুরস্ক অভ্যন্তরীণ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে যা তার নেতৃত্বকে গৌণ (বহিরাগত) হুমকির মুখে তুষ্টির নীতি বেছে নিতে বাধ্য করেছে। মিসর, ইসরাইল এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর মতো সাবেক প্রতিপক্ষের সাথে পুনর্মিলনের সাম্প্রতিক নীতিকে এই প্রেক্ষাপটে দেখা যেতে পারে। তুরস্ক একটি সঙ্কটপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেটা ২০২৩ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এমন একটি সময়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে যখন দেশটির অর্থনীতি সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে দেশটিতে অভিবাসনবিরোধী সেটিমেন্টও বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে আঙ্কারা সরকার অর্থনীতিকে ঠিক করা, উদ্বাস্তু বা শরণার্থী সমস্যার বাস্তব সমাধান, ক্রমবর্ধমানভাবে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোটের বিরুদ্ধে একটি ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে মনোনিবেশ করার জন্যই তার সব শক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা চালাতে চায়। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সরকার বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু আত্মঅনুসন্ধান করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। অতঃপর, বৈদেশিক নীতি সব অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মোকাবেলার একটি উপায় হয়ে উঠেছে।

প্রথম ও সর্বাগ্রে মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে প্রভাবিত করেছে। জনগণ নির্বাচনে যাওয়ার আগে সরকার যেসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চায় তার মধ্যে একটি হলো- চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি; উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা, বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং সৌদি ও আমিরাতের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য তুরস্কে বিনিয়োগের জন্য ইউএই (আমিরাত) ১০ বিলিয়ন ডলার তহবিল বরাদ্দ করেছে এবং একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করেছে। উপসাগরীয় দেশগুলো, মিসর এবং ইসরাইলেরও নিজেদের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক স্বার্থে তুরস্কের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তাদের নিজস্ব হিসাব-নিকাশ রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, কয়েকবার উদ্যোগ নেয়ার পর তুরস্কের ছয়টি বিরোধী দল একসাথে বসে দেশের সংসদীয় ব্যবস্থাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে একটি দলিল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে নির্বাহী প্রেসিডেন্সির মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতাসীন একেপির বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় তুরস্কের বিরোধী দলগুলো সমালোচিত হয়েছিল। কিন্তু এই ছয় দলের নেতারা নির্বাচনের জন্য তাদের যৌথ কৌশল নিয়ে আলোচনা করার লক্ষ্যে এবং তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ব্যাপারে মানদণ্ড নিয়ে আলোচনা করতে গত ২৪ এপ্রিল একটি ইফতার ডিনারে তৃতীয়বারের মতো বৈঠকে মিলিত হন।

যা হোক, বিরোধী জোট এখনো তুরস্কের সমস্যাগুলোর সুনির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করার ব্যাপারে তাদের কৌশল সম্পর্কে জনসাধারণকে বোঝাতে পারেনি। এতে তারা সফল হবেন কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে এ দিকে ক্ষমতাসীন দল তার তৃণমূলের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক সঙ্কটের পাশাপাশি শরণার্থী ইস্যুটি বিরোধী জোট এবং একেপির মধ্যে অন্যতম যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অব্যাহত ফুটেজ প্রবাহের মাধ্যমে এক ধরনের প্রচারণার কারণে তুর্কি জনগণের মধ্যে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে যাদের মধ্যে অনেকেই চান শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হোক। ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে জনসচেতনতার মাঝে, সরকার এমনকি সিরিয়ার শরণার্থীদের ঈদুল ফিতরের জন্য সীমান্তের ওপারে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে। এবারই প্রথম এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান এই সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন, সরকার ১০ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ফেরত পাঠানোর জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। এটি দেশের তুর্কি সমর্থিত বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আবাসন নির্মাণ এবং পরিষেবা প্রদানের একটি প্রকল্পের অংশ।

তুরস্ক বর্তমানে ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ তিন কোটি ৭০ লাখ সিরীয় শরণার্থী এবং আফগান ও পাকিস্তানিসহ ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ১৭ লাখ অন্যান্য বিদেশী নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। গত কয়েক বছরে স্থানীয় এবং উদ্বাস্তু তথা শরণার্থীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ধারাবাহিক ঘটনা ঘটার পর তুরস্কের বিরোধীদলীয় নেতারা সিরিয়াবিরোধী বাগাড়ম্বপূর্ণ বক্তব্য এবং তারা ক্ষমতায় এলে সিরিয়ানদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন।

শরণার্থী ইস্যুটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান দখল করতে শুরু করেছে, যাতে সরকার এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয় সে জন্য এ ব্যাপারে চাপ দেয়া হচ্ছে।

আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে এমনকি শরণার্থী ইস্যুতে আঙ্কারা ও দামেস্কের মধ্যে একটি সংলাপ চ্যানেলও খোলা হতে পারে যদিও তুরস্ক সিরিয়ার ব্যাপারে যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে তাতে কোনো পরিবর্তন করবে বলে মনে হয় না।
আঙ্কারার পররাষ্ট্রনীতির পেছনে দেশীয় রাজনীতিই প্রকৃত পথনির্দেশক প্রেরণা বলে মনে হয়। যেহেতু তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতির আচার-আচরণ বা পথনির্দেশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সাফল্যের দিকে ক্রমবর্ধমানভাবে মনোনিবেশ করেছে, এটি সাবেক প্রতিপক্ষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ তৈরি করেছে।
লেখক : তুর্কি রাজনৈতিক বিশ্লেষক। আরব নিউজ থেকে ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার


আরো সংবাদ



premium cement
জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের বাসভবনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্কিৃয় করল রাশিয়া তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের।

সকল