২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ - ছবি : সংগ্রহ

একটি দেশ লাখ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে। মানুষের সর্বোচ্চ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজ নিজস্ব নির্ভরতার মধ্য দিয়ে দেশ তার অস্তিত্বের যৌক্তিকতা খুঁজে পায়। সর্বোচ্চ আশাবাদী রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা এমন মতই পোষণ করেন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতান্ত্রিক। আমাদের দেশটাও গণতান্ত্রিক পরিচয় বহন করে, কিন্তু বাস্তবিকতা ভিন্ন। বর্তমান অনির্বাচিত সরকার গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিক অধিকারকে ধূলিসাৎ করে যেকোনো পন্থায় মানুষের মুক্তির কল্পনাকে অবান্তর করে তুলছে।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া আদর্শ দেশ শুধু কল্পনা জগতের মোড়কেই থাকতে পারে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আদর্শ দেশের ভিতরে সমাজে ও ব্যক্তি জীবনে সুস্থিরতা ফুটে ওঠে।
গণতান্ত্রিক পন্থায় স্বাধীন দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় আত্মমুক্তির পথ বাতলে দেয়ার প্রশস্ত রাস্তা। সে মুক্তির পথ দিয়ে স্বাধীন দেশের ভেতর চর্চায় গড়ে ওঠে নানা মত ও পথের বিশ্বাস।
ওই মুক্তির অন্বেষণে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ স্থান পেয়েছিল বটে কিন্তু স্বাধীনতার শুভ লগ্নে গড়ে উঠতে পারেনি নানা মত ও পথের বিশ্বাস।
নাগরিকদের সকল আশা আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হয়েছিল একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েমের ফলে।

বাংলাদেশের অভ্যূদয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ সৃষ্টির শতবর্ষের ইতিহাসের সর্ব শ্রেষ্ঠ ঘটনা। তার মধ্যে ও বাংলাদেশে এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি বাংলাদেশ কখনো স্বাধীন, কখনো পরাধীন ব্যাখ্যা করে নিজেদের সাংস্কৃতিক প্রবণতার ভেতরে ঐক্য বিকশিত করতে চান। সে ঐক্যের ভিত্তিটা প্রথমে তৈরি করেন বঙ্গদেশ উচ্চারণ করে। কিন্তু বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ, যার অস্তিত্ব ও বিস্তৃত সীমাহীন।

স্বাধীন দেশে স্বাধীন সাংস্কৃতিক বিবেচনায় তৈরী হয় নিজস্ব জাতীয়তাবাদের মূল্যবোধ, এই মূল্যবোধটা থাকে অনেক বেশি উদার।
বঙ্গদেশের প্রবণতার বুদ্ধিজীবিদের সংস্কৃতি ও তাদের ছবি যা আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ভাবনায় রাজনৈতিক ও মানবিক আদর্শের একটা নৈতিক সংকট তৈরী করে দেয়।

একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক ভেতরে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সরকার।

আজ বাংলাদেশ যথার্থ দেশের স্থলে দাঁড়াতে পারছে না সরকারের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার উপলব্ধির অভাবে।
অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আজ যে স্থলে দাঁড়িয়ে, সরকার সেখান থেকে এককভাবে দেশের সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, দরকার সমস্ত জনগোষ্ঠীর সমন্বয়।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সাংস্কৃতিক চেতনা বলতে ধর্ম, শিল্প-ভাবনা, বিজ্ঞান মনস্কতা, সামাজিক রুচি ও মানবিক গুণাবলী জীবনের দিকে তাকিয়ে থাকে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনের সাথে দেশের আলোকিত মুখগুলো খুব কমই সংযোগ ঘটে। একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে সামাজিক সাংস্কৃতিক মুল জায়গায় নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন ছাড়া যেকোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য।

সুষম বণ্টনে সমাজ উন্নয়নে ব্যর্থতার কারণে ভৌগোলিক অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক বাস্তবতার কোনোটাই কাজ করে না।
ভৌগোলিক সীমারেখা চিহ্নিত হবার পর ও ভাষা, ধর্ম, সাংস্কৃতি এমনকি পানিপ্রবাহের মতো বিষয়গুলো বিরোধের স্থলে দাঁড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের আকাঙ্ক্ষা আর দখলদারিত্ব সরকার ব্যবস্থার রাজনীতির যোগসূত্র প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানবিক মূল্যবোধ তৈরীর সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে উৎপাদন মুখী রাজনীতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অর্থাৎ ফসল উৎপাদনের সাথে ন্যায়সঙ্গতভাবে কৃষকের জীবন ভাবনার পরিবেশ তৈরী সরকারের দায়িত্ব।
সে ক্ষেত্রে মানবিক জ্ঞান বিকাশের সামাজিক জীবন যাপনের উপকরণ ধর্মীয়, স্বতন্ত্র ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল স্তরের নাগরিক অর্থাৎ ভৌগোলিক সীমা রেখার অন্তর্গত নাগরিকরা একত্রে এসে দাঁড়ায়।

আমাদের উচিত বাংলাদেশের নাগরিকদের রুচিকে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রেখে জীবনযাপনের আধুনিকরণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা।

এখনো যদি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে সরকার দেশের নাগরিকদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং সুষম বণ্টনে উন্নয়ন অগ্রাধিকার মনে করে, তাহলে দেশের রাজনীতি গুণগত মান এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন সম্ভব।
তবেই সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশের নাগরিকদের তার গর্ব করার ইতিহাসের কাছে ফিরিয়ে নেবে এবং বর্তমানের লজ্জা থেকে রেহাই পাবে।

লেখক পরিচিত : সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী


আরো সংবাদ



premium cement