২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মেলাঘরের ক্র্যাক প্লাটুন

- ছবি : সংগৃহীত

‘মেলাঘর’ নামক স্থানটি আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত; এ স্থানটিকে মুক্তিযুদ্ধের ‘তীর্থপীঠ’ বলা হয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টর সদর দফতর, খালেদ মোশাররফ, এ টি এম হায়দার, গাফফার হাওলাদার, কর্নেল মাহবুব, জেনারেল কবির, ক্যাপ্টেন সালেক, মেজর মতিন, জেনারেল জামিল ডি আহসান প্রমুখ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সুবিখ্যাত ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ রাজধানী ঢাকা দখল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে ‘মেলাঘর’ স্থানটি একাকার হয়ে আছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে ত্রিপুরার সিপাইজলা জেলার অন্তর্গত একটি নগর হচ্ছে মেলাঘর। এটি রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে এলাকাটি ছিল অত্যন্ত পশ্চাৎপদ, চার দিকে উঁচু উঁচু পাহাড় আর ঘন বন-জঙ্গলে আচ্ছাদিত, লাল মাটির উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ সামান্য বৃষ্টিতেই পিচ্ছিল হয়ে পড়ত। ফলে মানব বসতির জন্য ছিল সম্পূর্ণ অনুপযোগী। বর্তমানের ‘মেলাঘর’ দেখলে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না যে, ৫০ বছর আগে এখানেই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র।

মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের মধ্যে অন্যতম ২ নম্বর সেক্টর। ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও নোয়াখালী নিয়ে গঠিত হয় এ সেক্টর। ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ইপিআর বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং অসংখ্য ছাত্র-যুবক মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গঠিত হয় এ সেক্টরটি। এর সদর দফতর ছিল মেলাঘরে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল খালেদ মোশাররফ (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) ছিলেন সেই সেক্টরের কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তিতুল্য ক্যাপ্টেন আবু তাহের অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধের সব প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা, রসদ সরবরাহ করা হতো এ ‘মেলাঘর’ থেকে। যদিও ১৯৭১ সালে ‘মেলাঘর’-এর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মানুষের বসবাসের জন্য একেবারেই উপযুক্ত ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের সীমানাসংলগ্ন কৌশলগতভাবে উপযোগী অন্য কোনো ভালো স্থান না থাকায় এ ‘মেলাঘর’কেই খালেদ মোশাররফ বেছে নেন তার সেক্টরের সদর দফতর ও গেরিলা প্রশিক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে।

২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সৌভাগ্য যে, তিনি তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পেয়েছিলেন এ টি এম হায়দারকে যিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যন্ত দুর্ধর্ষ, দুঃসাহসী, নির্ভীক, অকুতোভয়, সর্বোচ্চ পেশাগত মানের চৌকস কমান্ডো সেনাদল ‘দ্য স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ’ সংক্ষেপে ‘এসএসজি’ (ঝঢ়বপরধষ ঝবৎারপব এৎড়ঁঢ় ঝ.ঝ.এ.)-এর সুপ্রশিক্ষিত কমান্ডো অফিসার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কিংবদন্তি হয়ে আছেন এ ক্ষণজন্মা অফিসার। ইতিহাসে এ টি এম হায়দার বীর উত্তম এক অবিস্মরণীয় নাম। খালেদ মোশাররফ যুদ্ধে মারাত্মক আহত হওয়ার পর তিনি ২ নম্বর সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হিসেবেও (’৭১ সালের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) দায়িত্ব পালন করেন। কুমিল্লা সেনানিবাসের তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের তরুণ অফিসার হানাদারদের কবল থেকে পালিয়ে এসে যোগ দিলেন ৪ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফের কাছে। এসএসজি প্রশিক্ষিত ক্যাপ্টেন হায়দারকে পেয়ে ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন খালেদ। ‘রতনে রতন চিনে’ ফেললেন। এরকমই একজন সুপ্রশিক্ষিত ক্যাপ্টেন হায়দারের প্রয়োজন ছিল তার। ক্যাপ্টেন হায়দার হাজার হাজার তরুণ, ছাত্র-যুবককে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। মেজর খালেদ মোশাররফ সাথে সাথে তার পরিকল্পনা গ্রহণ ও অনুমোদন করলেন।

মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার তার বিশাল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী ও দুঃসাহসী ছাত্রদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরামহীন অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এ মেলাঘর থেকে। ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার অত্যন্ত সীমিত সুযোগ-সুবিধা ও অসংখ্য দুঃখকষ্ট অগ্রাহ্য করে ধনী, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের মা-বাবার আদরের দুলালরা মাতৃভ‚মিকে দখলদারমুক্ত করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সব কিছু বেমালুম ভুলে যান।

সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুতই শুরু হলো হায়দারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও অন্যান্য প্রশিক্ষিত জেসিও/এনসিও এবং সৈনিকদের নিয়ে তিনি শক্তিশালী একটি প্রশিক্ষণ টিম গড়ে তুললেন। হাজার হাজার ছাত্র-যুবককে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করলেন যাদের পোশাক ছিল লুঙ্গি, কারো প্যান্ট, কারো পায়জামা, কারো মালকোচা মারা লুঙ্গি; গায়ে ময়লা শার্ট, গেঞ্জি। এভাবে বিশাল এক অনিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলতে থাকলেন হায়দার। পাকিস্তানের চেরাটে বিশেষ কমান্ডো প্রশিক্ষণের পুরো অভিজ্ঞতাই কাজে লাগালেন তিনি। তিনি আরো জানতেন হানাদার বাহিনীর দুর্বলতাগুলো। প্রশিক্ষণের সময় তিনি কমান্ডোদের সেগুলোও জানাতেন। হায়দারের ভাষায়, ‘পাকিস্তানি কমান্ডো বাহিনীর মিঠঠা খানের থার্ড কমান্ডো ব্যাটালিয়নে কাজ করে পাকিস্তানি বাহিনীর সবার চরিত্র সম্পর্কে জেনেছি। কী কী করলে তাদের ঘায়েল করা যাবে, তা-ও আমি জানি। গেরিলাযুদ্ধে সঠিক ও কঠিন প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।’ বোমা, গোলাবারুদ ব্যবহার, স্থাপনা ধ্বংস, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা, রেকি, রেইড, অ্যামবুশ, ডিফেন্স, অ্যাটাক, দ্রুত হামলা, শক্র ধ্বংস করে পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি প্রশিক্ষণগুলো তিনি দিতে থাকলেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে বলতেন, ‘তোমরা খুব বুঝে-শুনে এগোবে। তোমাদের যে ট্রেনিং ও ব্রিফিং দিয়েছি; তা যদি ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারো জয় আমাদের হবেই ইনশা আল্লাহ।’

এরপর মেজর হায়দার গেরিলাদের শপথপাঠ করাতেন- ‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখিয়া প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমার নিজের জীবন উৎসর্গ করিতে প্রস্তুত আছি। আমি আরো অঙ্গীকার করিতেছি যে- ১. সর্বদা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, সরকারের প্রতি ও মুক্তিবাহিনীর প্রতি অনুগত থাকিব; ২. আমি বাংলাদেশের জনসাধারণের কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করিব; ৩. আমাদের শত্রু পাকিস্তানিদের ধ্বংস সাধনে লিপ্ত থাকিব; ৪. কোনো প্রকার লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হইব না; ৫. কোনো লুটের মাল ছুঁইব না; ৬. নারী ও শিশুদের প্রতি কোনো অশোভন আচরণ করিব না ৭. মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ না করিলে কোনো বাঙালিকে হত্যা করিব না এবং হত্যা করিতে সহায়তা করিব না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

শপথ গ্রহণের পর যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয়া হতো একেকটি দলকে। প্রথম দিকে হায়দার নিজেই একেকটি টিম নিয়ে ঢাকা-কুমিল্লা, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেলপথ, কালভার্ট, পুল ইত্যাদি ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে দিলেন। এতে তার দ্বারা প্রশিক্ষিত গেরিলারা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে স্বাধীনভাবে অপারেশন পরিচালনা করতে শুরু করল। কয়েক মাসের মধ্যে হায়দার তার প্রশিক্ষণ টিমের সহযোগিতায় ৩৫ হাজারেরও বেশি যোদ্ধাকে সুপ্রশিক্ষিত করে গড়ে তুললেন বিশাল এক গেরিলা বাহিনী। এ বাহিনী হানাদারদের ঘুম ‘হারাম’ করে দিলো। হায়দার তার মায়ের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বললেন, ‘হায়দার, তোর প্রশিক্ষণ দেয়া ছেলেরা ঢাকায় বীরের মতো যুদ্ধ করছে। মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা করছে। ওরা ধরা পড়ছে, পাকিস্তানিরা ওদের মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারছে না। ওরা জীবন দিচ্ছে, তবু মুখ খুলছে না। হায়দার, তোর এই ছেলেরা আমাদের দেশকে স্বাধীন করবেই।’

হিট অ্যান্ড রান থেকে ক্র্যাক প্লাটুন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঢাকা শহরে গেরিলা আক্রমণ পরিচালনাকারী একদল তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গঠিত ক্র্যাক প্লাটুন ছিল ক্যাপ্টেন হায়দারের অনবদ্য সৃষ্টি। সে সময় এ প্লাটুন একটি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিল। এই গেরিলা দলটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ‘হিট অ্যান্ড রান’ পদ্ধতিতে অনেক আক্রমণ পরিচালনা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক ত্রাসের সঞ্চার করে। পাকিস্তান সরকার রাত-দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতিকারী’ বলে প্রচার করে যাচ্ছে, বহির্বিশ্ব যাতে কোনোভাবেই বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম টের না পায়। ঢাকা ছিল বাড়তি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর ও ‘কে’ ফোর্স কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করলেন। পাক সরকারের মিথ্যাচারের জবাব ও সারা বিশ্বকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানান দেয়ার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকায় গেরিলা অপারেশন করার জন্য তার নির্দেশে ক্যাপ্টেন হায়দার প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী, দুঃসাহসী ও মেধাবী ১৭ জন তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুললেন এক দুর্ধর্ষ গেরিলা দল। এদের কাজ ছিল গ্রেনেড ছোড়া থেকে শুরু করে ঝটিকা আক্রমণ, অতর্কিত ত্রাস সৃষ্টি করা এবং ‘হিট অ্যান্ড রান’।

মোটকথা, আরবান গেরিলা যুদ্ধের সব ধরনের কৌশলই এদের রপ্ত করানো হয়। এ দলকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের আশপাশে একটি গেরিলা অপারেশন ‘হিট অ্যান্ড রান’ পরিচালনা করার জন্য প্রথমবারের মতো ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু ঢাকার অশান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরতে তারা যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর কেন্দ্রে হামলা করে বসে, তাতে তোলপাড় ওঠে চার দিকে। দুর্ধর্ষ অপারেশনটির কথা শুনে নড়েচড়ে ওঠে যুদ্ধের সব পক্ষ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। অপারেশন শেষে আলম-মায়া-জিয়ারা যখন ক্যাম্পে ফেরেন, তখন প্রশিক্ষণদাতা এ টি এম হায়দারকে উদ্দেশ্য করে খালেদ বলে ওঠেন, ‘লুক হায়দার, এদের বললাম টার্গেটের আশপাশে বিস্ফোরণ ঘটাতে, আর ওরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে। ‘ঞযবু ধষষ ধৎব ঈৎধপশ চবড়ঢ়ষব. ইৎধাড়! ইৎধাড়!’ তিনিই প্রথম এ দলটিকে ‘ক্র্যাক’ আখ্যা দেন; সেই থেকে ঢাকার গেরিলা অপারেশনে যাওয়া যোদ্ধাদের প্লাটুনটি ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ নামে পরিচিতি পায়।

ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলারা ছিলেন- আবুল বারক আলভী, শহীদ আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীরবিক্রম, আজম খান, আমিনুল ইসলাম নসু, আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন বীর প্রতীক, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, কাজী কামাল উদ্দিন বীরবিক্রম, কামরুল হক স্বপন বীরবিক্রম, গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, চুল্লু, জহির উদ্দিন জালাল, জহিরুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, নীলু, পুলু, ফতেহ চৌধুরী, শহীদ বদিউজ্জামান, বদিউল আলম বদি বীরবিক্রম, মতিন-১, মতিন-২, শহীদ মাগফার আহমেদ চৌধুরী, মাহবুব, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, মাজহাব, রাইসুল ইসলাম আসাদ, লিনু বিল্লাহ, শহীদ শফি ইমাম রুমী, শহীদুল্লাহ খান বাদল, শাহাদাত চৌধুরী, হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক, হিউবার্ট রোজারিও।

জুন মাসের প্রথম থেকেই ঢাকাতে শুরু হলো ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলাদের হামলা। ক্র্যাক প্লাটুনের এ অপারেশনের ব্যাপক সফলতার পর একের পর এক গেরিলা কায়দায় হিট অ্যান্ড রান অপারেশন চালাতে থাকে হায়দারের বাহিনী। তছনছ করে দিতে থাকে হানাদার বাহিনীর সব পরিকল্পনা। ব্রিজ, কালভার্ট, রেললাইন, সড়কপথ ধ্বংস করে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বিচ্ছিন্ন করে দেয় সেপ্টেম্বরের মধ্যে। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে এই বিচ্ছুর দল কাকডাকা ভোরে, রৌদ্রোজ্জ্বল অপরাহ্ণে কিংবা মধ্যরাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন চালিয়ে যেত। ছোট ছোট অপারেশনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে তারা তটস্থ করে রাখত পাকিস্তানি বাহিনীকে। আর এতে স্বাধীনচেতা ঢাকার অবরুদ্ধ বাঙালিদের মনোবল হতো দৃঢ়। শত্রু বাহিনী একেবারেই অসহায়, ন্যুব্জ ও নতজানু হয়ে পড়ে নভেম্বর মাসের শুরুতে। তারা শুধু সেনানিবাসের খাঁচায় বন্দী হয়ে বলতে থাকে, ‘মুক্তি কাঁহা হ্যায়, মুক্তি কাঁহা হ্যায়’? এ গেরিলাদের হামলায় তটস্থ হয়ে জেনারেল নিয়াজি তাদের নাম দিয়েছিল ‘মুক্তি কা বিচ্ছু’।

অপারেশনগুলো : পাঁচ থেকে ছয়জনের এক একটি দল ‘হিট অ্যান্ড রান’ পদ্ধতিতে ঝটিকা আক্রমণ করে এই গেরিলা অপারেশনে অংশ নিত। ঢাকা শহরে তারা মোট ৮২টি অপারেশন পরিচালনা করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ৯ জুন সন্ধ্যায় ‘অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল’; ৭ আগস্ট রাত ৮টায় ‘অপারেশন ফার্মগেট চেক পয়েন্ট’। এ ছাড়াও ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকা শহরে আরো যেসব গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করে তার মধ্যে ছিল- অপারেশন গ্যানিজ পেট্রল পাম্প, অপারেশন দাউদ পেট্রল পাম্প, অপারেশন এলিফ্যান্ট রোড পাওয়ার স্টেশন, অপারেশন যাত্রাবাড়ী পাওয়ার স্টেশন, অপারেশন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, অপারেশন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, অপারেশন উলন পাওয়ার স্টেশন, অপারেশন তোপখানা রোড ইউএস ইনফরমেশন সেন্টার, অ্যাটাক অন দ্য মুভ, ডেস্টিনেশন আননোন ইত্যাদি।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকার মতো অনেক বিশ্ব মিডিয়াতে ক্র্যাক প্লাটুনের সফল অপারেশনের খবর বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হতো। ফলে সারা বিশ্ব জানতে পেরেছিল মুক্তিযুদ্ধের সফলতার নিত্যদিনের কাহিনী। আর এ ভাবেই ‘মেলাঘরের ক্র্যাক প্লাটুন’ স্থান করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সোনালি পাতায়।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক ইতিহাসবিদ
hoque2515@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার কবরে শুয়ে ছেলের প্রতিবাদ ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরো ৭১ জন নিহত পানছড়ি উপজেলায় চলমান বাজার বয়কট স্থগিত ঘোষণা

সকল