২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোরআনের আয়াত, করোনাভাইরাস এবং মুমিনের উপলব্ধি

কোরআনের আয়াত, করোনাভাইরাস এবং মুমিনের উপলব্ধি - ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য, সমৃদ্ধি ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে আলোকসজ্জিত এ পৃথিবী হঠাৎ করে এভাবে থমকে যাবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। পৃথিবী নামক এ গ্রহ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র দূর করে সকল মানুষের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২০ সালে কোভিড-১৯-এর আক্রমণে তা আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার প্রধান যে বিষয়গুলো তথা দারিদ্র, ক্ষুধা ও এইডসে প্রশমনের ওপরই বেশি প্রভাব পড়েছে।

বিশ্বসভ্যতার নেতৃত্ব থেকে মুসলিম দেশগুলোর পিছিয়ে পড়ার পর যখন ইউরোপীয় রেনেসাঁর উত্থান হল তখন থেকেই অমুসলিম কতিপয় নেতা পুরো বিশ্বকে নিজেদের ইচ্ছামতো চালানোর পরিকল্পনা করে আসছে। তাদের চিন্তাভাবনা ও দর্শন অবলোকন করলে মনে হয় যে মহাবিশে^র স্রষ্টা বিশ্ব সৃষ্টি করে এখন বৃদ্ধ ও অচল হয়ে গেছেন, তিনি এখন ঠিকমত চোখেও দেখেন না, কানেও শোনেন না, কাজেই বিশ্ব নিয়ে তাঁর কোনো মতামত আমাদের জানারও দরকার নেই, শোনারও দরকার নেই। আমরা মাঝে মাঝে বুড়ো দাদার মতো তাঁর কিছু প্রশংসা করব আর তাঁর গ্রন্থখানি পুরানো বইয়ের মতো একটু নেড়েচেড়ে দেখব। ওই গ্রন্থ থেকে কোনো শিক্ষা নেব না। আমরা এখন বিজ্ঞানমনস্ক প্রযুক্তিবিদ আমাদের কারো কাছ থেকে কিছু শিখতে হবে না। বিশ্বকে আমরা আমাদের মত করে চালাব।

বর্তমান সময়ের বেশির ভাগ মানুষের মনের মধ্যে এ ধরনের চিন্তাভাবনা কাজ করছে। আরাম আয়েশের জন্য প্রচুর টাকা পয়সা আয় করছে, ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে ও নানা ডিজাইনের পোশাক পরছে ,অত্যাধুনিক বাড়ি, গাড়ি,অসুস্থ হলে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ ইত্যদি বিভিন্ন উপাদান মানুষকে আজ তাদের স্রষ্টা থেকে উদাসীন করে দিয়েছে। উদাসীন এ মানবজাতিকে সচেতন করার জন্যই যুগে যুগে বিভিন্ন রোগ, ব্যাধি ও মহামারি পাঠানো হয়েছে। মানবজাতির ম্যানুয়াল আল-কুরআন অধ্যায়ন করলে আমরা মহাবিশ্ব পরিচালনায় আল্লাহর ভূমিকা, মানুষের দায়িত্ব ও পরিণতি এবং এসব মহামারির কারণ ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য জানতে পারব।

০১. স্রষ্টা এখনো প্রতি মুহুর্তে বিশ্ব পরিচালনা করছেন :
আল্লাহ তা’আলা- যিনি মহাকাশ,পৃথিবী ও উভয়ের মাঝে অবস্থিত সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক কিংবা সুপারিশকারী নেই। তোমরা কি বোঝার চেষ্টা করবে না? মহাকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সবকিছু তিনিই পরিচালনা করছেন, তারপর তিঁনি সবকিছুকে তার কাছে নিয়ে যাবেন এমন একদিনে যার পরিমাণ তোমাদের গণণায় হাজার বছরের সমান। (সুরা আস-সিজদা : ৪-৫)

নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা মহাকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনাকে ধরে রেখেছেন যাতে তারা স্বীয় কক্ষপথ থেকে সরে না যায়, যদি এরা কক্ষপথ থেকে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে তাহলে তিনি ছাড়া এমন কে আছে যে এদের উভয়কে স্থির রাখতে পারবে, অবশ্যই তিনি মহা সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। (সুরা ফাতীর : ৪১)

পৃথিবী নামক যে গ্রহে আমরা বাস করছি তা মহাকাশের মাঝে উড়োজাহাজের মতো উড়ন্ত গতিময় যা নিয়ন্ত্রণ করছেন স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামীন। আমরা সেই পৃথিবীর মধ্যে শত শত সমুদ্র সৈকতে অশ্লীলতার জোয়ার বইয়ে দিয়েছি। শুধু জোয়ার বইয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সে জোয়ারের নোংড়া পানি মোবাইল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর পেটে পৌঁছে দিয়েছি। তাই অধিকাংশ বিশ্ববাসীর মুখ থেকে আজ আর সততা নৈতিকতার সুঘ্রাণ বের হয় না। যেহেতু মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয় তাই স্রষ্টা এবার সবার মুখই ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করেছেন মাস্ক দিয়ে। যারা দুষিত তাদের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করার জন্য। আর যারা সুস্থ তাদেরকে রক্ষা করার জন্য।

০২. স্রষ্টা সকল জাতিকে সংশোধনের সময় দেন :
মানব জাতির হিসাব অনুযায়ী ১০০০ বছরে স্রষ্টার কাছে হয় এক দিন যা সুরা সিজদার ৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। উক্ত হিসাব অনুযায়ী ১২৫ বছরে হয় একটি বিকেলের সময়ের মতো। বিগত বিশ শতকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের কিছু নেতা বিশ্বকে ধর্মহীন করার যে কর্মপরিকলপনা হাতে নিয়েছে তা যদি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় তাহলে বিশ্বে মানবিকতা ও নৈতিকতা বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। এসবের একট হচ্ছে অষ্টাদশ শতকে কার্যক্রম শুরু করা অ্যাডাম উইশেপ্টের দি ইলুমিনাতি (বৈশ্বিক এলিটদের একটি ছায়া সংগঠন)। তাদের মাস্টার প্লান ছিল সাতটি : ১. সরকারি সব শৃঙ্খলা বিলুপ্ত করা, ২. ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলুপ্ত করা, ৩. উত্তরাধিকার বিলুপ্ত করা, ৪. দেশপ্রেম বিলুপ্ত করা, ৫. ধর্ম বিলুপ্ত করা, ৬, পরিবার বিলুপ্ত করা, ৭. নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

গোটা পৃথিবীতে তাদের কার্যক্রম দেখে সাধারণ মানুষ স্রষ্টা সম্পর্কে ভাবছিল যে স্রষ্টা কি কিছুই দেখছেন না? আর দেখে থাকলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন না কেন? স্রষ্টা তাদের মনের প্রশ্নের জবাব অনেক আগেই দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন :

অত্যাচারী সম্প্রদায় যা করছে সে সম্পর্কে তুমি আল্লাহকে কখনো বেখবর মনে করিও না। তিনি তাদের সে দিন আসা পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন যে দিন (আজাব দেখে) তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (সুরা ইবরাহীম-৪২)

আল্লাহতাআ’লা মানুষকে তাদের আচরণের জন্য পাকড়াও করলে পৃথিবীর কোনো একটি জীব জন্তুকেও তিনি রেহাই দিতেন না। কিন্তু তিনি তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন, অতঃপর যখন সময় উত্তীর্ণ হয়ে যাবে (তখন তিনি তাদের পাকড়াও করবেন।) আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তাঁর বান্দাদের যাবতীয় কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। (সুরা ফাতির : ৪৫)

০৩. ক্রমান্বয়ে লঘু শাস্তি পাঠান সুপথে ফিরে আসার জন্য :
আল্লাহর বিশ্বব্যবস্থাপনার দিকে সুস্থ মনে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে যে মহাবিশ্বের এত সুন্দর, বৈচিত্র্যময় ও আরামদায়ক ব্যবস্থাপনা যিনি মানুষের জন্য করেছেন তিনি আসলে মানুষের কোনো অকল্যাণ কামনা করতে পারেন না। মানুষ তাদের নিজেদের কর্ম দ্বারা মহামারী নিয়ে আসে। মানুষকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তা’আলা বলেন :

তোমরা কি দেখতে পাও না আল্লাহ তাআ’লা কিভাবে এ পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা এবং সমুদ্রে চলমান নৌযানগুলো নিজের আদেশক্রমে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তিনিই মহাকাশকে ধরে রেখেছেন যাতে করে তা পৃথিবীর ওপর পড়ে না যায়। কিন্তু তাঁর আদেশ হলে (ভিন্ন কথা) অবশ্যই আল্লাহ তাআ’লা মানবজাতির প্রতি স্নেহশীল ও দয়াবান। (সুরা-আল-হজ : ৬৫)

আল্লাহ তা’আলা মানুষের প্রতি করুনাময় বলেই আংশিকও ছোট ছোট মুছিবত পাঠান যাতে মানুষ আল্লাহর কল্যাণকর বিধানের প্রতি মনোনিবেশ করে।

বড় আজাবের আগে অবশ্যই তাদের ছোট আযাবও আস্বাদন করাবো যাতে করে তারা আমার দিকে ফিরে আসে। ( সুরা আস-সিজদা-২১)

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৪২ লাখ মানুষ মারা গিয়েছে। প্রায় সাড়ে সাত শ' কোটি বিশ্ববাসীর তুলনায় এ মৃত্যু সংখ্যা তেমন বেশি নয়। যেখানে ব্লাক ডেথ নামক ভয়ঙ্কর প্লেগ রোগে ১৩৩১- ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে তখনকার পৃথিবীর ৫০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ২০ কোটি অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক বিশ্ববাসীর প্রাণ গিয়েছিল।১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্প্যানিশ ফ্লুর সংক্রমণে ১৮ মাসে প্রায় ১০ কোটি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। প্রতি ৩০-৪০ বছর পর পর পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন নামের ভাইরাস ফ্লুয়ের নিয়মিত সংক্রমণ ঘটছেই। এবং কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর অভিজ্ঞতার পর হয়তো ভ্যাকসিন আবিস্কৃত হয়। একটি ফ্লু শেষ হতে না হতে আর একটি ফ্লু দেখা দেয় ।

ডব্লিউএইচও প্রধান ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। হয়ত বর্তমান কোভিড-১৯-ই সর্বশেষ ও বৃহত্তম বৈশ্বিক মহামারী নয়। হতে পারে আরো বড় কোনো দুর্যোগের এটি শুরু। মানুষ যেভাবে প্রাকৃতিক বায়োবৈচিত্র নষ্ট করছে তাতে পৃথিবীর জমাকৃত তুষার স্তর যদি উন্মুক্ত হয়, তবে সেখানে চাপা পড়ে থাকা আট লাখ ৫০ হাজার ধরন ভাইরাসের অনেকগুলোই বেরিয়ে আসবে।

আসলে মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ তাআ’লা তাঁর বিশ্বকে সাজিয়েছেন সঠিক স্থাপনায়। আমরা সেখানে তার বিধানকে উপেক্ষা করে নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে বিশ্বের শান্তি শৃঙ্খলা ভেঙে দিয়েছি। পৃথিবীতে আবার সুখ শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হলে মানব জাতিকে ফিরে আসতে হবে স্রষ্টার সকল বিধানের কাছে পরিপূর্ণভাবে। ফিরিয়ে আনার সে কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে কোরআনের আলোয় আলোকিত মুসলিম নেতৃবৃন্দকে। আল্লাহ তাআ’লা আমাদেরকে সেই নেতৃবৃন্দের সাথে শামিল হওয়ার তাওফিক দিন। ভাইরাসের ক্ষমতা নেই কাউকে সংক্রমণ করার যদি আল্লাহর হুকুম না হয়। ভ্যাকসিন নিতে হবে সুন্নাত হিসেবে কিন্তু ভ্যাকসিনের উপর মুমিনের কোনো ভরসা থাকবে না। ভরসা কেবলই আল্লাহর ওপর। মুমিন তো প্রতি রাতে বিছানায় যায় মৃত্যুর অছিয়ত লিখে। মুমিনের ভাবনা যে আমার আজকের নামাজই শেষ নামাজ। আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছি যা নিয়ে আমি আমার বন্ধুর সাথে দেখা করব। মুমিনের দায়িত্ব উপলব্ধি জাগ্রত হোক সকল হৃদয়ে। আমিন।


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি

সকল