২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ১৫৫ বছর

দেওবন্দ মাদরাসা - ছবি সংগৃহীত

ভারত উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠার ১৫৫ বছর পূর্ণ হলো। এ মাদরাসার পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যা আমাদের দেশে কওমি মাদরাসা বলে পরিচিত।

১৮৬৬ সালের ৩০ মে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দে মাওলানা কাসেম নানুতুবী, মাওলানা ফজলুর রহমান উসমানী, মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী, মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবি ও সাইয়েদ মোহাম্মদ আবেদ প্রমুখ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এক শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে এ মাদরাসায় সর্বপ্রথম শিক্ষাদান শুরু হয়। শিক্ষক ছিলেন মাওলানা মাহমুদ দেওবন্দী এবং একই নামের প্রথম শিক্ষার্থীর ছিলেন মাহমুদ দেওবন্দী।

দেওবন্দ ছিল মাওলানা কাসেম নানুতুবির শ্বশুরালয়। তিনি সেখানে গেলে বেশিরভাগ সময় সাত্তা মসজিদে নামাজ পড়তেন। হাজী আবেদ হোসাইন ছিলেন সাত্তা মসজিদের ইমাম। মাওলানা জুলফিকার আলী ও মাওলানা ফজলুর রহমান ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা। তারা নামাজ শেষে হাজী আবেদ হোসাইনের ঘরে প্রায়ই বসতেন।

ওই সময় ইংরেজদের জুলুম নিপীড়ন ও ইসলামি শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে তারা খুব চিন্তিত ছিলেন।

এমন পরিস্থিতিতে তাদের করণীয় কী হতে পারে এসব নিয়ে তারা মাঝে মধ্যেই আলোচনা করতেন। দীর্ঘ ছয় বা সাত বছর এভাবে কেটে গেল। ১৮৬৬ সালে মাওলানা কাসেম নানুতুবী দেওবন্দের দেওয়ান মহল্লায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাড়ি-সংলগ্ন সাত্তা মসজিদের ইমাম হাজী আবেদ হোসাইনের সাথে মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হওয়ার পর সেখানেই একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন।

একদিন সাত্তা মসজিদের ইমাম হাজী আবেদ হোসাইন ফজরের নামাজ শেষে ইশরাকের নামাজের অপেক্ষায় মসজিদে মোরাকাবারত ছিলেন। হঠাৎ তিনি ধ্যানমগ্নতা ছেড়ে দিয়ে নিজের কাঁধের রুমালের চার কোণ একত্রিত করে একটি থলি বানালেন এবং তাতে নিজের পক্ষ থেকে তিন টাকা রাখলেন। অতঃপর, তা নিয়ে তিনি রওনা হয়ে গেলেন মাওলানা মাহতাব আলীর কাছে। তিনি ৬ টাকা দিলেন এবং দোয়া করলেন। মাওলানা ফজলুর রহমান দিলেন ১২ টাকা, হাজী ফজলুল হক দিলেন ৬ টাকা। সেখান থেকে উঠে তিনি গেলেন মাওলানা জুলফিকার আলীর কাছে। জ্ঞানানুরাগী এই ব্যক্তি দিলেন ১২ টাকা। সেখান থেকে উঠে এই দরবেশ সম্রাট 'আবুল বারাকাত' মহল্লার দিকে রওনা হলেন। এভাবে ২০০ টাকা জমা হয়ে গেল এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত জমা হলো ৩০০ টাকা।

এভাবে বিষয়টি লোকমুখে চর্চা হয়ে গেলে বেশ কিছু টাকা জমে যায়। স্থানীয় জনগণের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে তিনি মিরাঠে কর্মরত মাওলানা কাসেম নানুতুবির কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেন যে আমরা মাদরাসার কাজ শুরু করে দিয়েছি। আপনি দ্রুত দেওবন্দে চলে আসুন। চিঠি পেয়ে মাওলানা কাসেম নানুতুবী মাওলানা মাহমুদকে শিক্ষক নিযুক্ত করে পাঠিয়ে দেন এবং তার মাধ্যমে মাদরাসার কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠি লিখে দেন।

এভাবেই গণচাঁদার ওপর ভিত্তি করে ছোট একটি ডালিম গাছের নিচে দেওবন্দ মাদরাসার গোড়াপত্তন হয়।

মাওলানা মাহমুদ সর্বপ্রথম শিক্ষা দেয়া শুরু করেন সর্বপ্রথম ছাত্র মাহমুদকে। তিনি পরে শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।

দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি

দেওবন্দ মাদরাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আটটি মূলনীতি অনুসরণ করা হয়। এগুলোকে একসাথে ‘উসূলে হাশতেগানা’ বলা হয়। দেওবন্দের অনুসরণে পরিচালিত বিশ্বের সব মাদরাসায় এই নীতিগুলো কঠোরভাবে পালন করা হয়। পরাধীন ভারতে ধসে পড়া ইসলামি শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করার মহান লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তৎকালীন দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান মাওলানা কাসেম নানুতুবি রাষ্ট্রীয় অনুদানের প্রাচীন ধারার পরিবর্তে গণচাঁদার বিষয়টির প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করে এই আটটি মূলনীতি প্রণয়ন করেন।

যথাসম্ভব মাদরাসার কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে অধিক হারে চাঁদা আদায়ের বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজেও এর জন্য চেষ্টা করতে হবে, অন্যের মাধ্যমেও চেষ্টা করতে হবে। মাদরাসার হিতাকাঙ্ক্ষীদেরও এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

যেভাবেই হোক মাদরাসার ছাত্রদের খানা চালু রাখতে হবে বরং ক্রমান্বয়ে তা উন্নত করার ব্যাপারে হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামীদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। মাদরাসার উপদেষ্টাদেরকে মাদরাসার উন্নতি, অগ্রগতি এবং সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার দিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে। নিজের মত প্রতিষ্ঠার একগুঁয়েমি যাতে কারো মাঝে না হয় এ দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি এমন অবস্থা দেখা দেয় যে উপদেষ্টারা নিজ নিজ মতের বিরোধিতা কিংবা অন্যের মতামতের সমর্থন করার বিষয়টি সহনশীলভাবে গ্রহণ করতে না পারেন তাহলে এ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিমূল নড়বড়ে হয়ে পড়বে। আর যথাসম্ভব মুক্ত মনে পরামর্শ দিতে হবে এবং মাদরাসার শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি লক্ষ্যণীয় হতে হবে।  নিজের মত প্রতিষ্ঠার মনোবৃত্তি না থাকতে হবে। এ জন্য পরামর্শদাতাকে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে তার মতামত গ্রহণীয় হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই আশাবাদী না হতে হবে।

পক্ষান্তরে শ্রোতাদেরকে মুক্তমন ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তা শুনতে হবে। অর্থাৎ এমন মনোভাব রাখতে হবে, যদি অন্যের মত যুক্তিযুক্ত ও বোধগম্য হয়, তাহলে নিজের মতের বিপরীত হলেও তা গ্রহণ করে নেয়া হবে। আর মুহতামিম বা পরিচালকের জন্য পরামর্শ সাপেক্ষে সম্পাদনযোগ্য বিষয়ে উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করে নেয়া অবশ্যই জরুরি।

তবে মুহতামিম নিয়মিত উপদেষ্টাদের থেকেও পরামর্শ করতে পারবেন কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত এমন কোনো বিদগ্ধ জ্ঞানী আলেম থেকেও পরামর্শ নিতে পারবেন, যিনি সব দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের প্রতি হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী।

তবে, যদি ঘটনাক্রমে উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্যের সাথে পরামর্শ করার সুযোগ না হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের সাথে পরামর্শক্রমে কাজ করে ফেলা হয়, তাহলে কেবল এ জন্য অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত হবে না যে ‘আমার সাথে পরামর্শ করা হলো না কেন?’

কিন্তু যদি মুহতামিম কারো সাথেই পরামর্শ না করেন, তাহলে অবশ্যই উপদেষ্টা পরিষদ আপত্তি করতে পারবে। মাদরাসার সকল শিক্ষককে অবশ্যই সমমনা ও একই চিন্তা চেতনার অনুসারী হতে হবে। সমকালীন (দুনিয়াদার) আলেমদের মতো নিজ স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ও অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার দূরভিসন্ধিতে লিপ্ত না হতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি কখনো এমন অবস্থা দেখা দেয়, তাহলে মাদরাসার জন্য এটি মোটেও কল্যাণকর হবে না।

পূর্ব থেকে যে পাঠ্যসূচি নির্ধারিত রয়েছে কিংবা পরে পরামর্শের ভিত্তিতে যে পাঠ্যসূচী নির্ধারণ করা হবে, তা যাতে সমাপ্ত হয়; এই ভিত্তিতেই পাঠদান করতে হবে।
অন্যথায় এ প্রতিষ্ঠান সুপ্রতিষ্ঠিতই হবে না। আর যদি হয়ও তবু তা ফায়দাজনক হবে না।

এ প্রতিষ্ঠানের জন্য যত দিন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হবে; তত দিন পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার শর্তে তা এমনিভাবেই চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি স্থায়ী আয়ের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমন কোনো জায়গির লাভ, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মিল ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা কিংবা বিশ্বস্ত কোনো আমির উমারার অনুদানের অঙ্গীকার ইত্যাদি, তাহলে এমন মনে হচ্ছে যে আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশার দোদুল্যমান অবস্থা; যা মূলত আল্লাহমুখী হওয়ার মূল পুঁজি, তা হাত ছাড়া হয়ে যাবে এবং গায়েবি সাহায্যের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে। তদুপরি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও কর্মচারীদের মাঝে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহ বিবাদ দেখা দিবে।

বস্তুত আয় আমদানি ও গৃহাদি নির্মাণের বিষয়ে অনেকটাই অনাড়ম্বরতা ও উপায় উপকরণহীন অবস্থা বহাল রাখার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

সরকার ও আমীর উমারাদের সংশ্লিষ্টতাও এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে হচ্ছে। যথা সম্ভব এমন ব্যক্তিদের চাঁদাই প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক বরকতময় হবে বলে মনে হচ্ছে; যাদের চাঁদাদানের মাধ্যমে সুখ্যাতি লাভের প্রত্যাশা থাকবে না। বস্তুত চাঁদাদাতাদের নেক নিয়ত প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক স্থায়ীত্বের কারণ হবে বলে মনে হয়।

দারুল উলুম দেওবন্দে পঠিত সিলেবাস বিশ্বজুড়ে দরসে নেজামি নামেই প্রসিদ্ধ৷ দরসে নেজামির প্রতিষ্ঠা হয় ১১০০ শতাব্দীর পরে৷ ১১০০ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকহারে থাকলেও তা কোনো সিলেবাসভিত্তিক বা কারিকুলামের আলোকে ছিল না। ১১০৫ হিজরিতে মোল্লা নিজামুদ্দীন সাহলাভি ইসলামী শিক্ষাকে কিছুটা ঢেলে সাজান। তিনিই দরসে নেজামি আকারে মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেন। তিনি ছিলেন একাধারে দ্বীনের সুদক্ষ আলেম, ফিকাহ শাস্ত্রবিদ, দার্শনিক, ভাষ্যকার এবং একজন শিক্ষাবিদ। তিনি উত্তর ভারতের সাহালী শহরে ১০৮৮/৮৯ মোতাবেক ১৬৭৭-৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

হিরাতের প্রসিদ্ধ শিক্ষাবিদ শায়খ আব্দুল্লাহ আনসারী ছিলেন তার পূর্বপুরুষ।

শায়খ নিজামুদ্দীন সাহালীতে ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্রের সূচনা করেন। তারই প্রপৌত্র শায়খ হাফিজের জ্ঞানসাধনায় মুগ্ধ হয়ে সম্রাট আকবর তাকে ওই এলাকায় ভালো একটি জায়গীর প্রদানের নির্দেশ দেন। ফলে শায়খ ও তার ছেলেরা নিশ্চিন্তে তালীমের কাজে মগ্ন থাকেন। ছাত্রদের খাদ্য ও বাসস্থানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাও করেন। ইসলামের শত্রুরা ১১০৩ হিজরি মোতাবেক ১৬৯১ সালে মোল্লা নিজামুদ্দীনের পিতা মোল্লা কুতুবুদ্দীনকে শহীদ করে তার শিক্ষা উপকরণগুলো জ্বালিয়ে দেন। ফলে মোল্লা নিজামুদ্দীন তার চার ভাইসহ ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌ চলে যান।

সম্রাট আওরঙ্গজেব এই পরিবারের শিক্ষার অবদানের কথা বিবেচনা করে লাখনৌর প্রসিদ্ধ মহল্লা ফিরিঙ্গি মহলে একটি স্থানে সরকারি আদেশ বলে জায়গীর দান করেন। মোল্লা নিজামুদ্দীন এখানে দ্বীনি শিক্ষার কাজ চালিয়ে যান, এমন সময় এটাই মাদরাসায়ে নিজামিয়া নামে সুপরিচিতি লাভ করে।

এই ফিরিঙ্গী মহলে এসেই তিনি ১১০৫ হিজরি সনে দরসে নেজমি প্রণয়ন করেন৷ তিনি গঠনমূলকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে প্রায় ১১টি বিষয়ের সমন্বিত সিলেবাসটি প্রণয়ন করেন। ইতিহাসে এটাই দরসে নেজামি নামে পরিচিত। দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পরে উক্ত দরসে নেজামিই মাদরাসার নেসাবভুক্ত করা হয়৷ আজ পর্যন্ত এই দরসে নেজামিই বিদ্যমান রয়েছে দারুল উলুম দেওবন্দের নেসাবে৷

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশে দারুল উলুম দেওবন্দের শাখা মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা দেওবন্দ মাদরাসার নীতি আদর্শ অনুসরণ করে দাওয়াত, তালীম ও তাজকিয়াসহ দ্বীনে ইসলামের বিভিন্ন শাখায় অসামান্য অবদান রাখছে।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, দেওবন্দ আন্দোলন


আরো সংবাদ



premium cement