২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দারিদ্র বিমোচনে ক্যাশ ওয়াকফ

দারিদ্র বিমোচনে ক্যাশ ওয়াকফ - ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে দারিদ্রতা একটি মৌলিক সমস্যা। বিশেষত কোভিড-১৯-এর কারণে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের পর ২০২০ সালে মধ্যবিত্ত অস্বাভাবিকহারে নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ২,১৫৩ জন লোক দরিদ্রতম ৪৬০ কোটি লোকের মোট অর্থের চেয়েও বেশি অর্থ নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে জানিয়েছে ‘অক্সফাম’। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের বার্ষিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম সম্মেলনের আগে এক প্রতিবেদনে অক্সফাম এমনটি জানিয়েছে। (যায় যায় দিন, ২০ জানুয়ারি, ২০২০)

বিশ্বে অতি গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এ দেশের ২ কোটি ২৯ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে। বিশ্বব্যাংকের ‘প্রভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি ২০২০ : রিভসলস অব ফরচুন বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার : ভাগ্য বিপর্যয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। (দৈনিক যুগান্তর, ১০ নভেম্বর, ২০২০)

বিশ্বব্যাংকের মতে, কোভিড-১৯ মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষই দারিদ্র্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। (ঐ)

দরিদ্র বিমোচনে নানাজন নানা কথা বলছেন। কেউ কেউ আবার সুদী ক্ষুদ্রঋণের মতো ভয়াবহ বিষয়ের পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন। বাস্তবিক অর্থে দরিদ্র বিমোচনের জন্য সুদমুক্ত ভারসাম্য অর্থনীতির বিকল্প নেই। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না।

স্বেচ্ছাসেবী অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাঝে অন্যতম হলো ‘ক্যাশ ওয়াকফ’। এর মাধ্যমে দারিদ্রবিমোচনে অস্বাভাবিক সফলতা অর্জন করা সম্ভব। প্রয়োজন সচেতনতা ও সঠিক মূল্যায়ণ। বক্ষ্যমাণ গবেষণায় ক্যাশ ওয়াকফ কিভাবে দরিদ্রবিমোচনে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে ওই বিষয়টি আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

ওয়াকফ কী?

‘ওয়াকফ’ শব্দটি আরবি হলো আল-ওয়াক্ফ। শাব্দিক অর্থ- কোনো সম্পদকে তার মালিকানাধর্মী স্বাভাবিক ব্যবহার থেকে মুক্ত রাখা। পরিভাষায় এর দ্বারা বোঝানো হয়- تحبيس الأصل وتسبيل الثمرة 'কোনো বস্তুর মূল এভাবে ওয়াকফ করা যে, এর মূল সবসময় বহাল থাকবে। তবে এর উপকারিতা ও ফল দরিদ্র্যদের মাঝে বণ্টন করা হবে।' (ইবনে কুদামাহ, মুগনী, ৮/১৮৪)

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি তার মালিকানা কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ এভাবে ওয়াকফ করা যে এর সাথে মালিকানাসুলভ কোনো আচরণ সে করবে না। যেমন, বিক্রি করা; ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা ইত্যাদি। বরং এর মূল সংরক্ষণ করে এর উপকারিতা ও আমদানি বিশেষ কল্যাণমূলক খাতে (যে খাতের কথা ওয়াকফকারী বলে যেতে পারে) ব্যয় করা হবে। যেমন, একটা ফ্ল্যাট ওয়াকফ করার অর্থ হলো, তা সংরক্ষণ করা হবে এবং তাতে গরিবদেরকে থাকতে দেয়া হবে। অথবা তা ভাড়া দিয়ে এর আয় গরিবদের মাঝে বণ্টন করা হবে। (আজামি, ২০১০, ৩৬)

হাদীসের মধ্যে উক্ত মূল কথাটি এসেছে এভাবে-নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর রা.-এর এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, إن شئت حبست أصلها وتصدقت بها'তুমি ইচ্ছা করলে জমিটির মূল স্বত্ত ওয়াকফ করে এর উৎপন্ন ফসল সাদাকা করতে পারো।' (আল-বুখারি ২০০৪, ২৭৬৪.)

ওয়াকফের কিছু পরিভাষা
যিনি ওয়াকফ করেন, তাকে বলা হয়- ওয়াকিফ (Donor) বাওয়াকফকারী ব্যক্তি। আর যা ওয়াকফ করা হয়, তাকে বলা হয় ‘মাওকূফ (The waqf property) বা ওয়াকফ সম্পত্তি। এটি যেমন স্থাবর সম্পত্তি হতে পারে, তেমনি নগদ ক্যাশও হতে পারে।

আর যার উদ্দেশ্যে ওয়াকফ করা হয়, তাকে বলা হয় ‘মাওকূফ আলাইহি ’(Beneficiary) বা ওয়াকফের উপযোগ ও উপকারভোগী। সে মুসলিম হওয়া জরুরি নয়। অমুসলিমও হতে পারে। অনুরূপ ধনবান ব্যক্তিরাও ইবহবভরপরধৎু হতে পারে। এমনকি পশু-পাখি সংরক্ষণ, সেবা, পরিচর্যা ইত্যাদির উদ্দেশ্যেও ওয়াকফ হতে পারে।সাধারণ দানের চেয়ে ওয়াকফের ভিন্নতা ও ব্যাপকতার এটি একটি দিক। একই সাথে ইসলামের অনন্যতারও একটি দিক ফুটে ওঠে এ দিকে থেকে।

ওয়াকফ ও সাধারণ দান
বাহ্যত মনে হয়, সাধারণ দান ও ওয়াকফ একই। উভয় ক্ষেত্রে দান করা হয়। তবে বাস্তবে এ দুটির মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। সংক্ষেপে তা হল-ওয়াকফে মূল অক্ষুণ্ন রেখে শুধু বস্তুর উপকারিতা দান করা হয়। অপরদিকে দানে মূলও দান করে দেয়া হয়। ওয়াকফে উপযোগ ও উপকারিতা চলমান থাকে। অপরদিকে দান সাধারণত অস্থায়ী হয়।
ওয়াকফের ক্ষেত্র বিস্তৃত। এর উপকারভোগী কেবল দরিদ্র শ্রেণীই নয়। অপরদিকে দানের ক্ষেত্রে সাধারণত অপরিসর। এর উপকারভোগী সাধারণত দরিদ্র শ্রেণী হয়ে থাকে। ওয়াকফের মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এর প্রভাব সূদুরপ্রসারী। অপরদিকে দানে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এর প্রভাব সূদুরপ্রসারী নয় ।

এসব ভিন্নতার কারণে ওয়াকফের গুরুত্ব ও মর্যাদা দান ও সদাকার চেয়ে অধিক। এর গুরুত্ব যেমন সওয়াবের দিক থেকে অনেক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্র ও সামাজিক অর্থনীতিতে ওয়াকফের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। বিশেষত দীর্ঘ মেয়াদি দরিদ্র ও অর্থ সংকট দূরিকরণে এর জুরি মেলা ভার।

ইসলামের দৃষ্টিতে ওয়াকফের মর্যাদা
ইসলামের দৃষ্টিতে ওয়াকফ ‘সাদাকায়ে জারিয়া’ তথা চলমান দানের অন্তর্ভুক্ত। মৃত্যুর পরও ওয়াকিফের ওয়াকফ মানবতার কল্যাণে অব্যাহত থাকে। উক্ত ‘সাদাকায়ে জারিয়া’-এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। একটি হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

إذا مات الإنسان اتقطع عنه عمله إلا من ثلاث: إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أوولد صالح يدعو له

'মানুষের মৃত্যুর পর তিনটি আমল ছাড়া তার সব আমল হয়ে যায়। তা হলো, সাদকায়ে জারিয়া, যে ইলম দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং যে নেক সন্তান তার জন্য দোয়া করে।' (অষ-ছঁংযধরৎর, হড়: ১৬৩১.)

ইমাম নববী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন- 'হাদীসে উল্লেখিত ‘সাদাকায়ে জারিয়া’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ওয়াকফ। এ হাদীসটি ওয়াকফের বৈধতার উপর একটি মৌলিক দলিল। পাশাপাশি ওয়াকফের গুরুত্ব ও তার বিশাল সওয়াবেরও প্রমাণও তাতে রয়েছে।' (নাবাবি, খণ্ড.২, পৃ.৮৫.)

ওয়াকফ যুগে যুগে
ওয়াকফ ধারণাটি সুপ্রাচীন। পূর্ববর্তী নবীরাও ওয়াফফ করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীরা ব্যাপকভাবে ওয়াকফ করেছেন। সাহাবীরা তাদের মূল্যবান সম্পদটি ওয়াকফের জন্য নির্বাচন করতেন। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে তৎকালীন ব্যাপক ওয়াকফ রীতি বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। এখানে নমুনা স্বরূপ সংক্ষেপে তৎকালীন বহুমাত্রিক ওয়াকফের কিছু খণ্ড চিত্র তুলে ধরা হলো-

মসজিদ ওয়াকফ
ইসলামে ওয়াকফের ইতিহাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর মসজিদে কুবা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।(আল-মাওয়াহিবুল লাদুনিয়্যাহ বিল মিনাহিল মুহাম্মাদিয়্যাহ, ১/৩০৮) বলা যায়, এটি ছিল ইসলামী যুগের সর্বপ্রথম ওয়াকফ। আর দ্বিতীয় ওয়াকফ ছিলো মসজিদে নববী। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে জমি কিনে ওয়াকফ করেছিলেন এবং তাতে মসজিদ নির্মাণ করলেন। (উমদাতুল কারী, বৈরুত, দারুল ফিকর, ৪/১৭৭)

রূমা কূপ : সুপেয় পানির জন্য ওয়াকফ
মদিনায় মিষ্ট পানির জন্য বিখ্যাত একটি কূপ ছিল। রূমা কূপ। কূপটি ছিলো এক ইহুদির। মুসলমানরা সহজে সেখান থেকে পানি নিতে পারত না। তাদেরকে পানি কিনতে হতো। এ ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লক্ষ্য করলেন। একদিন বললেন,

منيشتريبئررومةفيجعلدلوهمعدلاءالمسلمينبخيرلهمنهافيالجنة؟

'কে আছো, যে রূমা কূপটি ক্রয় করবে এবং তা থেকে অন্য মুসলমানদের বালতির সাথে নিজের বালতি নামানোরও সুযোগ লাভ করবে (ওয়াকফ করবে), আর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বদলা জান্নাতে গ্রহণ করবে?'

এ মুবারক ঘোষণার উসমান ইবনে আফফান রা. কূপটি ক্রয় করে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। (জামে তিরমিযী, তাহকীক : বাশশার আওয়াদ মারুফ, হাদীস নং ৩৭০৩)

আজ ঢাকা শহরে বিশুদ্ধ পানির বেশ সঙ্কট। বিত্তবানরা ডিপ কল বসিয়ে ওয়াকফ করে দিতে পারেন।

ফসলের বাগান ওয়াকফ
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন,إن رسول الله صلى الله عليه وسلم جعل سبع حيطان بالمدينة صدقة على بني المطلب وبني هاشم.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় তাঁর সাতটি বাগান বনী আব্দুল মুত্তালেব এবং বনি হাশেমের জন্য ওয়াকফ করে গিয়েছেন। (বাইহাকী, আহমাদ ইবনে হুসাইন ইবনে আলী, আসসুনানুল কুবরা, মুলতান, নাশরুস সুন্নাহ, ৬/১৬০।)

এ বর্ণনা থেকে পারিবারিক ওয়াকফের প্রমাণ মেলে। যা আজ বেশ অবহেলিত।

ভূমি ওয়াকফ
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আবাদি জমি ওয়াকফ করেন হযরত উমর ফারুক রা.। তিনি খাযবারের এক খণ্ড জমি লাভ করে ছিলেন, যার নাম ছিলো ‘সুমাগ’। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এমন এক খণ্ড জমি লাভ করেছি, যার মতো মূল্যবান জমি ইতিপূর্বে আমি লাভ করিনি। আপনি আমাকে উক্ত জমির ব্যাপারে কী আদেশ করবেন? অন্য বর্ণনায় এসেছে যে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি দান করতে চাচ্ছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'তুমি মূল ভূমিকে ওয়াকফ করে দাও এভাবে যে, তা বিক্রি করা যাবে না, হেবা করা যাবে না এবং তাতে উত্তরাধিকারও সাব্যস্ত হবে না। তবে তার ফসলকে খরচ করা হবে।' (বুখারী, ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী, সহীহ বুখারী, মুহাম্মদ যুহাইর ইবনে নাসের আন নাসের, দারু তাওকিন নাজাহ, প্রথম এডিশন : ১৪২২হি., হাদীস নং ২৭৬৪।)

এভাবে সাহাবীরা নিজেদের মূল্যবান সম্পদ ওয়াকফের জন্য নির্বাচন করতেন।

পশু ওয়াকফ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি উট ওয়াকফ করল। তখন তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, তুমি এটি হাজীদের জন্য ব্যবহার কর। (সারাখসী, আল-মাবসূত, দারুল মা’রেফা, বৈরুত, খ.৩, পৃ.১০)

জাবির রা. এর ঐতিহাসিক বক্তব্য
সাহাবাযুগে ওয়াকফের অগণিত ইতিহাস থেকেএখানে নমুনা স্বরূপ মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। মূলত প্রায় প্রত্যেক সাহাবীই কোনো না কোনো সম্পদ ওয়াকফ করতেন। বিষয়টি একাধিক বর্ণনায় এসেছে। বিশেষত হযরত জাবির রা. বলেছেন-فما أعلم أحداً ذا مقدرة من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم من المهاجرين والأنصار إلا حبس مالاً من ماله صدقه موقوفة
অর্থাৎ, আমি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে মর্যাদাবান এমন কোনো সাহাবী জানি না, যিনি তার সম্পদের একাংশ চিরস্থায়ীভাবে ওয়াকফ করে যাননি। (আবু বকর খাসফাফ, আহকামুল আওকাফ, পৃ.১৫)

আজ আমরা সাহাবা চরিত থেকে কত দূরে! মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। তবে সেভাবে ওয়াকফ করছে না। অল্প কিছু মানুষ যা ওয়াকফ করেন, তাও কেবল মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য। এর বাইরেও যে ওয়াকফ করা যায় ও প্রয়োজন সেটি অনেকেই জানেন না। এর জন্য ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, সাহাবা যুগের পর ইসলামী খেলাফতের স্বর্ণযুগে এই ওয়াকফের ধারা অব্যাহত ছিল। বরং আরও ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়াকফ হতো। বনু উমাইয়্যা, আব্বাসী ও উসমানী শাসনামলে ওয়াকফের এত এত চমৎকার দৃষ্টান্ত রয়েছে, যা আলোচনা করা হলে রীতিমত একটি বৃহৎ গ্রন্থ হয়ে যাবে। হাসপাতাল, সেনা ছাউনি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরি, কয়েদিদের জন্য বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আবাসিক হোস্টেল, খাল, সেতু ইত্যাদি খাতে ওয়াকফ করা হতো। এমনকি পশু পাখি প্রতিপালনের জন্যও স্বতন্ত্র ওয়াকফ করা হতো। এককথায় ওই সময়ে ওয়াকফ ছিল বহুমাত্রিক। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে এর বিশাল অবদান ছিল। যা আজ আমরা হারাতে বসেছি।

ওয়াকফ ও ক্যাশ ওয়াকফ
ওয়াকফ হল-সাধারণ ওয়াকফ। এতে স্থাবর ও অস্থাবর সবকিছু অন্তর্ভুক্ত। জমি যেমন ওয়াকফ করা যায়, প্রচলনের ভিত্তিতে বই-পত্রও ওয়াকফ করা যায়। অপরদিকে ক্যাশ ওয়াকফ হলো- বিশেষ ওয়াকফ। এতে শুধু মুদ্রা ওয়াকফ অন্তর্ভুক্ত। অন্য কিছু নয়। যদিও ব্যাপক অর্থে ওয়াকফের মধ্যে ক্যাশ ওয়াকফও চলে আসে। তবে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করতে সাম্প্রতিক সময়ে ‘ক্যাশ ওয়াকফ’ আলাদা করে বলা হয়। ইসলামী ইতিহাসে তা ‘ওয়াকফুন-নুক্বুদ’ (وقف النقود) নামে পরিচিত। ‘নুক্বুদ’ অর্থ- মুদ্রা বা ক্যাশ।

ক্যাশ ওয়াকফ : পরিচিতি
প্রাচীন ফিকহে ক্যাশ ওয়াকফের বিশেষ কোনো পরিচিতি নেই। বর্তমান সময়ের ফকীহরা এর বিভিন্ন একাডেমিক পরিচয় পেশ করেছেন। ড. মুহাম্মাদ সালেম বাখদার ক্যাশ ওয়াকফ বিষয়ত তার পিএইচ.ডি গবেষণাপত্রে লিখেছেন-

حبس مبالغ نقدية للقرض الحسن اوللإستثمار المباح شرعاً وصرف الأرباح المتحققة حسب شرط الواقف أو في مجالات خيرية.
অর্থাৎ ক্যাশ ওয়াকফ হলো- নগদ টাকা ওয়াকফ করা হবে করজে হাসানা অথবা শরিয়াহর দৃষ্টিতে বৈধ বিনিয়োগে তা কাজে লাগানোর জন্য। এরপর প্রাপ্ত মুনাফা ওয়াকিফের শর্তানুযায়ী কিংবা কল্যাণমূলক কোনো খাতে ব্যয় করা হবে। (তামওয়ীলু ওয়াকফিন নুকুদ, পৃ.৪৭)

মোটকথা, ক্যাশ ওয়াকফে ওয়াকফকৃত মূল অর্থ পরিমাণে অক্ষুণ্ন থাকবে। এরপর একে করজে হাসানা অথবা বৈধ নিরাপদ বিনিয়োগে কাজে লাগানো হবে। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা কল্যাণমূলক খাতে ব্যয় হবে।

ক্যাশ ওয়াকফের সূচনা
সাহাবা যুগে অন্যান্য ওয়াকফের ব্যাপক প্রচলন থাকলেও ক্যাশ ওয়াকফের তেমন প্রচলন ছিল না। ঐতিহাসিকভাবে সর্বপ্রথম দি¦তীয় হিজরী শতাব্দিতে এর সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ইমাম যুহরী রহ. (মৃ.১২৪হি.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল-এক লোক এক হাজার দিনার ওয়াকফ করেছে। এক ব্যবসায়ী দাসকে তা দেয়া হয়েছে। এর থেকে অর্জিত মুনাফা দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন করা হবে। ওয়াকফকারী ওই মুনাফা থেকে কিছু কি গ্রহণ করতে পারবে? ইমাম যুহরী রহ. বলেন, না, সে তা গ্রহণ করতে পারবে না। সহীহ বুখারী, ৪/৪০৫ (ফাতহুল বারীসহ)

এখান থেকে বোঝা যায়, হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দির শুরুতে ক্যাশ ওয়াকফের দৃষ্টান্ত ছিল। এরপর মুসলিম খেলাফত আমলে এর কিছু কিছু নজির পাওয়া যায়। তবে ব্যাপকতা ছিল না। ওই সময়ে ওয়াকফ বলতে সাধারণত স্থাবর সম্পত্তির ওয়াকফ বোঝানো হতো।

পরে উসমানি সালাতানাতে ক্যাশ ওয়াকফের ব্যাপক সূচনা ঘটে। ঠিক এসময় এর তাত্ত্বিক দিক আলোচনায় সরব হয়ে উঠে। শরীয়াহ্ ভিত্তি নিয়ে কথা হয়। পাশাপাশি এর বিপুল প্রয়োগও হয়। তৎকালীন উসামানি সালাতানাতের প্রখ্যাত বিচারক ইমাম আবু সাউদ রহ. এর পক্ষে সরব হন। হানাফি ফিকহে ক্যাশ ওয়াকফের বৈধতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে একে সমর্থন দেয়া হয়। এ সময়ে হানাফি ফকীহরা একে বাস্তবতার আলোকে অত্যন্ত জোরালোভাবে সমর্থন করেন। ফলে পরে ক্যাশ ওয়াকফ ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়ে উঠে।
যারা এর বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের মতামত গ্রহণযোগ্য হয় না। ফলে উসমানি আমলে ব্যাপকভাবে ক্যাশ ওয়াকফ প্রতিষ্ঠিত হয়। এক ইস্তাম্বুলেই ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে মোট ৯৮টি ওয়াকফের মধ্যে ৪৮টি ছিল ক্যাশ ওয়াকফ।
এ সময় প্রায় প্রতিটি এলাকায় ক্যাশ ওয়াকফ ছিল। ইতিহাসে উসমানীয়দের এই মহৎ কাজ, বিশেষত হানাফী ফকীহদের যুগোপযোগী উদ্যোগ মহান কীর্তি হয়ে আছে। (ওয়াকফুন নুক্বুদ, ড. আব্দুল্লাহ বিন মুসলিহ, পৃ.১৭)

ক্যাশ ওয়াকফ বৈধতা
ক্যাশ ওয়াকফের বৈধতা নিয়ে সালাফে কিছুটা মতভেদ ছিল। মূলত হাদীসে ওয়াকফের যে মূলনীতি উল্লেখ হয়েছে, সাহাবীগণ যেভাবে ওয়াকফ করেছেন, সব সামনে রেখে মুজতাহিদ ইমামরা ওয়াকফকৃত বস্তুর ব্যাপারে ইজতিহাদের আলোকে বিভিন্ন দর্শন সেট করেছেন। এসব দর্শনে ভিন্নতা থাকায় ক্যাশ ওয়াকফ নিয়েও মতভিন্নতা তৈরি হয়েছিল।

হানাফি মতামত
হানাফি ফকীহদের মাঝে দুটি মতামত ছিল- ইমাম আবু ইউসূফ রহ.-এর মতে, মৌলিকভাবে কেবল স্থাবর সম্পত্তি ওয়াকফ করা যাবে। স্বতন্ত্রভাবে অস্থাবর বা স্থানান্তরযোগ্য বস্তু ওয়াকফ করা যাবে না। অপরদিকে ইমাম মুহাম্মাদ রহ.-এর মতে, উরফ ও প্রচলন থাকলে স্থানান্তরযোগ্য না হলেও তা ওয়াকফ করা যাবে। যেমন, বই, তরবারি ইত্যাদি। পরবর্তী হানাফি ফিকহে ব্যাপকভাবে ইমাম মুহাম্মাদ রহ.-এর মতই গ্রহণ করা হয়েছে। একেই অধিক বিশুদ্ধ ও অনুসরণীয় বলা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, সরাসরি ক্যাশ ওয়াকফ নিয়ে ইমামদ্বয় কিছু বলেননি।

ক্যাশ ওয়াকফের ব্যাপারে হানাফি ফিকহে স্পষ্ট ফতোয়া পাওয়া যায়দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দির শেষ ও তৃতীয় হিজরী শতাব্দির শুরুর দিকে। যে মনীষী থেকে এ ব্যাপারে প্রথম স্পষ্ট ফাতাওয়া পাওয়া যায়, তিনি হলেন- ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-আনসারী রহ. (১১৮-২১৫হি.)।

প্রসিদ্ধ সাহাবী আনাস বিন মালেক রা. এর চতুর্থ প্রজন্মের উত্তরসূরী। ইমাম আবু ইউসূফ রহ. ও ইমাম যুফার রহ. শিষত্য অর্জন করেছেন। বিশেষত ইমাম যুফার রহ. এর বিশিষ্ট শিষ্য ছিলেন। খলিফা হারুনুর রশীদের সময়কালে তিনি বসরার বিচারপতি ছিলেন। ইমাম বুখারী রহ. এর উস্তাযও ছিলেন তিনি। (আল-জাওয়াহিরুল মুযিয়্যা, ২/৭২)
এই মনীষীপ্রথম ব্যাপকভাবে ক্যাশ ওয়াকফ বৈধতার ফতোয়া প্রদান করেছেন। তিনি এর রূপরেখাও বলেছেন যে এর টাকা মুদারাবায় বিনিয়োগ করা হবে, এরপর সেখান থেকে অর্জিত মুনাফা ব্যায় করা হবে। তদ্রূপ করজে হাসানাও দেয়া যেতে পারে। (আল-ইসআফ, পৃ.২৬)

পরবর্তী হানাফি ফিকহে উক্ত ফতোয়াই গৃহিত হয়। অবশ্য কারো মতে প্রচলনের শর্তে স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ ওয়াকফ বৈধতার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ রহ. যে ফতোয়া দিয়েছেন, ব্যাপক অর্থে ক্যাশ ওয়াকফের বৈধতা এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার, ফারফুর, ১৩/৪৫০)

মালেকি মতামত
মালেকি ফিকহেও ক্বরদ দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাশ ওয়াকফ বৈধ। (মাজুমআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া, ৩১/২৩৪)

হাম্বলি মতামত

হাম্বলি ফিকহের দৃষ্টিতে, মূল অক্ষুণ্ন থাকার শর্তে ওয়াকফ বৈধ হয়। ক্যাশ বা মুদ্রায় মূল বাকি থাকে না, তাই ক্যাশ ওয়াকফ বৈধ নয়। (আল-ইনসাফ, ৭/৯) তবে হাম্বলি ফিকহের বিশিষ্ট ফকীহ ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. ক্যাশ ওয়াকফের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন। (ঐ)

শাফেয়ি মতামত
শাফেয়ি ফিকহে, মুদ্রা যেহেতু ভাড়ায় প্রদান করা যায় না, তাই তাদের মতে ক্যাশ ওয়াকফ বৈধ নয়। (শরহুল মুহাযাযাব, ১৫/২৭৭) তবে তাদের কতিপয় ফকীহ একে বৈধ বলেছেন।

মোটকথা, প্রাচীন হাম্বলি ও শাফেয়ি ফিকহে ক্যাশ ওয়াকফ বৈধতার বিপক্ষে মতামত থাকলেও বর্তমান সময়ে মৌলিকভাবে প্রায় সকল ফকীহ এর বৈধতার ব্যাপারে একমত।

ইসলামী ফিকহ একাডেমী জিদ্দাহ-র সিদ্ধান্ত
গত ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামী ফিকহ একাডেমী জিদ্দাহ-এর ১৯তম সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। তাতে একটি সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়েছে-

إذا استُثمر المال النقدي الموقوف في شراء أسهمٍ أو صكوك أو غيرها، فإن تلك الأسهم والصكوك لا تكون وقفًا بعينها مكان النقد، ما لم ينص الواقف على ذلك، ويجوز بيعها للاستثمار الأكثر فائدة لمصلحة الوقف، ويكون أصل المبلغ النقدي هو الموقوف المحبَّس... انتهى

অর্থাৎ ক্যাশ ওয়াকফকে সুকুক ও শেয়ার ক্রয়েও বিনিয়োগ করা যাবে। ওয়াকফকারী স্পষ্ট কিছু না বললে ক্রয়কৃত সুকুক ও শেয়ার সরাসরি ওয়াকফ হয়ে যাবে না। বরং সেটি লাভে বিক্রয়ও করা যাবে। ওয়াকফকৃত ক্যাশ মূল ওয়াকফ হিসাবে বাকি থাকবে। (মাজাল্লাতু মাজমাউ ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা: ১৫, ৩/৫২৭)
উক্ত সিদ্ধান্তে ক্যাশ ওয়াকফকে স্পষ্ট বৈধ বলা হয়েছে। এসব সেমিনারে বর্তমান সময়ের সকল মাযহাবের ফকীহদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এছাড়া ২০০৪-এ অনুষ্ঠিত আরেক অধিবেশনের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট বলা হয়েছে-

وقف النقود جائز شرعاً، لأن المقصد الشرعي من الوقف وهو حبس الأصل وتسبيل المنفعة متحقق فيها.
‘ক্যাশ ওয়াকফ শরঈ দৃষ্টিতে বৈধ। কারণ ওয়াকফের মূল উদ্দেশ্য হল-মূল অক্ষুণ্ন রেখে এর উপকার দান করে দেয়া। এই মূল বিষয়টি ক্যাশ ওয়াকফে পাওয়া যায়।’ (অধিবেশন: ১৫, সিদ্ধান্ত: ১৪০ ৬/১৫,)

এ্যাওফি-র সিদ্ধান্ত
এছাড়া আন্তর্জাতিক শরীয়াহ্ স্ট্যান্ডার্ড প্রণেতা প্রতিষ্ঠান এ্যাওফি (AAOIFI) তাদের ওয়াকফ বিষয়ক ৩৩ নং শরীয়াহ্ স্ট্যান্ডার্ডেও ক্যাশ ওয়াকফকে ব্যাপকভাবে অনুমোদন করেছেন। দেখুন-ধারা : ৩/৪/৩/৩/।

মোটকথা, বর্তমানে ক্যাশ ওয়াকফ বৈধ। এ ব্যাপারে পূর্বে কিছু মতভেদ থাকলেও বর্তমানে প্রায় সকলেই এর বৈধতার ব্যাপারে একমত।

একটি কথা না বললেই নয়, ঐতিহাসিকভাবে এ ব্যাপারে হানাফি ফিকহের বিশেষ অবদান রয়েছে। তাঁরাই প্রথম একে বিশদভাবে বৈধ বলেছেন। উসমানি আমলে এর বহুমুখী ব্যবহারও তারা করেছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে একে সমর্থন করেছেন। ইমাম আহমদ আল-আনসারী রহ., ইমাম আবু সাউদ রহ.সহ প্রমুখ হানাফি ফকীহদের কাছে আজ আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের সে সময়ের সদূর প্রসারী চিন্তা ও গবেষণা থেকে কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবী আলো গ্রহণ করতে থাকবে। দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ক্যাশ ওয়াকফ যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে, এর পেছনে তাঁদের অসামান্য অবদান রয়েছে।

ক্যাশ ওয়াকফ : দারিদ্র বিমোচনে প্রয়োগ পদ্ধতি
ক্যাশ ওয়াকফের মূল কথা হল-ওয়াকফ করা মূল ক্যাশ পরিমাণে অক্ষুণ্ন থাকবে। ওয়াকফের নীতি অনুযায়ী, এর মূল অক্ষুণ্ন রেখে উপকার গ্রহণ করা হবে। উপকার গ্রহণের প্রসিদ্ধ পদ্ধতি দুটি। যথা-ক. করজে হাসানা সেবা প্রদান। খ. বিনিয়োগ প্রদান।

ক্যাশ ওয়াকফ ও করজে হাসানা: দারিদ্র বিমোচনে বহুমুখী প্রয়োগ

সাধারণত করজে হাসানা অস্থায়ী হয়। দেয়ার পর শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ক্যাশ ওয়াকফের অধীনে করজে হাসানা সেবা চালু করতে পারলে তা হবে দীর্ঘস্থায়ী। এর মাধ্যমে সমাজের বহু ক্ষেত্রে দরিদ্র বিমোচন সম্ভব। সুদী ক্ষুদ্র ঋণের বিপরীতে এটি একটি উত্তম বিকল্প হতে পারে। এর পদ্ধতি হলো-

ক্যাশ টাকা ওয়াকফ করা হবে। এরপর মূল টাকা কাউকে করজে হাসানা হিসাবে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে ওয়াকফকারী শুধু বাস্তব সার্ভিস চার্জ নিতে পারবে। যারা বিবাহ করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে এই সেবা দেয়া যাবে। ছাত্রদেরকে দেয়া যাবে।

প্রতিটি আবাসিক ছাত্র/ছাত্রী হোস্টেলে এই সেবা চালু করা যেতে পারে। বাড়িতে যাওয়ার সময় প্রায়ই ছাত্রদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকে না। কারো কাছ থেকে ধার করতে হয়। এক্ষেত্রে হোস্টেলের স্থায়ী বিশ্বস্ত কোনো দায়িত্বশীলের অধীনে ক্যাশ ওয়াকফ চালু করা যেতে পারে। ছাত্ররা যে যার মতো করে, প্রতি মাসে কিছু টাকা ক্যাশ ওয়াকফ করবে। এরপর ওই টাকা থেকে তাদেরকে করজে হাসানা দেয়া হবে। পরীক্ষার ফি থেকে শুরু করে খাবারের টাকাও তারা এখান থেকে করজে হাসানা হিসাবে নিতে পারবে।

প্রতিটি পরিবারে গড়ে উঠতে পারে ক্ষুদ্র ক্যাশ ওয়াকফ প্রকল্প। পরিবারের সদস্যরা সাধ্যমতো ক্যাশ ওয়াকফ করবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা সংরক্ষিত থাকবে। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনমতো করজে হাসানা গ্রহণ করতে পারবে।

প্রতিটি অফিসে ক্যাশ ওয়াকফ রীতি গড়ে তোলা সম্ভব। অফিসের কর্মকর্তারা নানা প্রয়োজনে সুদী ঋণ গ্রহণ করেন। অফিসে ক্যাশ ওয়াকফ এর ব্যবস্থা থাকলে সুদী ঋণের বিপরীতে সহজেই করজে হাসানা পাওয়া যাবে।

প্রতিটি এলাকায় সমিতি থাকে। বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষদের স্বতন্ত্র সমিতি থাকে। এসব সমিতি থেকে সদস্যরা সুদে ঋণ গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে ক্যাশ ওয়াকফ সুন্দর সমাধান। নাম মাত্র সার্ভিস চার্জে সদস্যরা করজে হাসানা পেয়ে যাবেন। দরিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ ধারণা দুর্দান্ত সফলতা নিয়ে আসবে।

এভাবে সমাজের প্রতিটি সেক্টরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্যাশ ওয়াকফ ছড়িয়ে দেয়া যায়। এর থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়া জরুরী নয়। অমুসলিমও এর থেকে উপকৃত হতে পারেন। ক্যাশ ওয়াকফ সম্পূর্ণরূপে দরিদ্রবান্ধব। একে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই দারিদ্র বিমোচন হবে। তথাকথিত গরিব মারার অস্ত্র সুদী ক্ষুদ্র ঋণের বিপরীতে এটি একটি সুদৃঢ় বিকল্প হিসাবে কাজ করবে। প্রয়োজন এ বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করা। ক্যাশ ওয়াকফকে গণ আন্দোলনে রূপ দেয়া। এর জন্য সুচিন্তিত নীতিমালা ও অবকাঠামো তৈরি করা। যেন তা স্থায়ী হয়। ক্যাশ ওয়াকফ বিনষ্ট না হয়।

ক্যাশ ওয়াকফ ও বিনিয়োগ : দারিদ্র বিমোচনে বহুমুখী প্রয়োগ
ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে সহজ বিনিয়োগ সেবাও প্রদান করা যায়। মূল টাকা ওয়াকফ করা হবে। এরপর তা নির্ভরযোগ্য খাতে বিনিয়োগ করা হবে। সেই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা জনকল্যাণমূলক খাতে, দরিদ্র বিমোচনে অথবা ওয়াকিফ যেভাবে বলেন, সেভাবে স্বেচ্ছাসেবী অর্থনৈতিক খাতে ব্যয় হবে।

আজকে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা পূঁজির জন্য সুদে ঋণ গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগধর্মী ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যসে তাদেরকে সহজে বিনিয়োগ সেবা প্রদান করা যাবে। সেটি হতে পারে মুদারাবা, মুশারাকা বা অন্য কোনও পদ্ধতিতে। অথবা কোনো দোকান বা বাড়ি ক্রয় করে সেটি ভাড়ায় ব্যবহৃত হতে পারে।

ঢাকা শহরে আবাসন খাতের বিরাট সংকট রয়েছে। বাড়ির মালিকরা ইচ্ছেমতো বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করেন। অসহায় ভাড়াটিয়াদেরকে এসব কিছু বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়। এই ঢাকা শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ লোকই ভাড়ায় থাকেন। গৃহহীনদের তুলনায় বাড়ি অপর্যাপ্ত হওযায় বাড়ির মালিকরা যখন তখন যেকোনো হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগীধর্মী ক্যাশ ওয়ার্কপের মাধ্যমে সহজেই এর সমাধান করা যায়। ক্যাশ টাকায় বাড়ি ক্রয় করে তা ন্যায্য মূল্যে ভাড়ায় দেয়া হবে। প্রাপ্ত ভাড়া দরিদ্র বিমোচনে ব্যয় হবে।

‘বাড়ি ভাড়া ক্যাশ ওয়াকফ’ নামে সামাজিক সংগঠন তৈরি হতে পারে। সমাজের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের অধীনে তা পরিচালিত হবে। এতে বাড়ির মালিকদের সিন্ডিকেটও সহজে ভাঙ্গা যাবে।

গ্রামে বা শহরে অনেকেরই ক্ষুদ্র বিনিয়োগ গ্রহণের প্রয়োজন হয়। একটি দোকান করবে কেউ। দোকানের মালামাল কিনতে হবে। কেউ সেলাই মেশিন কিনবে। মূলধন প্রয়োজন। সাধারণত এক্ষেত্রে সুদী ক্ষুদ্র ঋণের আশ্রয় নেয়া হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগধর্মী ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করে তা কিস্তিতে সহজে বিক্রয় করা যায়।

অথবা কারো ব্যবসায় মূলধন প্রয়োজন, সেটিও এভাবে সমাধান করা সম্ভব। প্রতি এলাকায় বা গ্রামে ‘ক্যাশ ওয়াকফ সমিতি’ গড়ে উঠতে পারে। সেখান থেকে সহজে এধরনের বিনিয়োগ প্রদান করা হবে। এই বিনিয়োগ ধনী-গরীব, মুসলিম-অমুসলিম সকলেই গ্রহণ করতে পারবে। এর মাধ্যমে সহজে দারিদ্র বিমোচন সম্ভব। গলাকাটা ক্ষুদ্র ঋণের আশ্রয় নিতে হবে না।

পরিবহন সেবায়ও ক্যাশ ওয়াকফ ব্যবহার করা সম্ভব। ঢাকা শহরে যখন তখন বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। ঢাকা থেকে বিভিন্ন এলাকায় যেসব বাস ছেড়ে যায়, সেগুলোর ভাড়াও অনেক ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত। এক্ষেত্রে ‘ক্যাশ ওয়াকফ পরিবহন সেবা’ নামে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। ক্যাশ ওয়াকফ দিয়ে পরিবহন ক্রয় করা হবে। এরপর তা ন্যায্য মূল্যে ভাড়ায় চালিত হবে। লব্ধ আয় দারিদ্র বিমোচনে ব্যয় হবে।

এভাবে বিনিয়োগধর্মী ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে নানা সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যা অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারবে।

ক্যাশ ওয়াকফ ও পরিবর্তিত সম্পদ
ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে যে সম্পদ ক্রয় করা হবে, সেটি হুবহু ওয়াকফ হিসাবে বিবেচিত হবে না। যেমন, ক্যাশ ওয়াকফ দিয়ে একটি দোকান ক্রয় করে ভাড়ায় প্রদান করা হল। তাহলে ওই দোকান সরাসরি ওয়াকফ হবে না। তাই প্রয়োজনে সেটি বিক্রয় করা যাবে। হাঁ, মূল ক্যাশ পরিমাণ টাকা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। (জিদ্দাহ, রেজুলেশন, মাজাল্লাহ, স.১৫, ৩/৫২৭)

ক্যাশ ওয়াকফ ও মূল্যস্ফীতি
বর্তমান মুদ্রায় মূল্যস্ফিতি বা মূদ্রাস্ফীতি একটি সাধারণ বিষয়। মুদ্রাস্ফীতি হলো মুদ্রার মান হ্রাস হওয়া। ধরা যাক, কাউকে এক হাজার টাকা ঋণ দেয়া হলো। তখন এক হাজার টাকা দিয়ে যে দ্রব্য বা সেবা পাওয়া যেত, এক বছর পর ঋণ পরিশোধের সময় কিন্তু ওই সেবা বা দ্রব্য পাওয়া যায় না। ওই পরিমাণ দ্রব্য বা সেবা পেতে উদাহরণস্বরূপ ১২ শ' টাকা খরচ করতে হয়। তাহলে বলা হবে ২০০ টাকা মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। অথবা এর বিপরীত মুদ্রাহ্রাসও হতে পারে। অর্থাৎ ১০০০ টাকার মান হবে ৯০০ টাকা।

এখন প্রশ্ন হলো, ক্যাশ ওয়াকিফ যে দিন যে মূল্যমানের মুদ্রা ওয়াকফ করেছিল, সেটি ধর্তব্য হবে, নাকি পরিবর্তিত মুদ্রামান বিবেচিত হবে?

এক্ষেত্রে তিনটি সম্ভাব্য সূরত হতে পারে। যথা-

ক. যেদিন ওয়াকফ করা হয়েছে, সেদিনের উল্লেখিত মুদ্রা বিবেচিত হবে। অর্থাৎ মূল সংখ্যা বিবেচিত হবে।
খ. মান বিবেচিত হবে। অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি হলেও সেটি ধর্তব্য হবে না। বরং এর মূল মান ধর্তব্য হবে।
গ.মুদ্রাহ্রাস হলে মূল ওয়াকফমূল মুদ্রা ধর্তব্য হবে। অর্থাৎ প্রথম মতামত গ্রহণ করা হবে। আর মুদ্রাস্ফীতি হলেমূল মান বিবেচিত হবে।

কেউ কেউ তৃতীয় সম্ভাব্য সূরতকে অগ্রগন্য বলেছেন। আবার কেউ প্রথম সম্ভাব্য সূরতকে অগ্রগণ্য বলেছেন। তাদের মাঝে অন্যতম ড.সুলতান ইবনে নাসের। (নাওয়াযিলুল ওয়াকফ, পৃ.১৭৩)

অস্থায়ীভাবে ক্যাশ ওয়াকফ
ওয়াকফের ক্ষেত্রে মূল এটিই যে, তা স্থায়ী হবে। ওয়াকিফ ওয়াকফ করার পর তা ফিরিয়ে নিতে পারবে না। ওয়াকফ করার পর সেটি তার মালিকানা থেকে চিরদিনের জন্য বের হয়ে যায়। এটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ ফকীহগণের মত। তবে মালেকী ফিকহ অনুযায়ী, অস্থায়ীভাবেও ওয়াকফ করা যায়। ওয়াকিফ শর্তারোপ করতে পারে, নির্ধারিত সময়ের পর ওয়াকফ সম্পত্তি পূর্বের মতো ওয়াকিফের মালিকানায় চলে যাবে। আন্তর্জাতিক শরীয়াহ্ স্ট্যান্ডার্ড প্রণেতা প্রতিষ্ঠান এ্যাওফি (AAOIFI) তাদের ওয়াকফ বিষয়ক ৩৩ নং শরীয়াহ্ স্ট্যান্ডার্ডে এক্ষেত্রে মালেকী ফিকহ গ্রহণ করেছেন। তারা লিখেছেন-

الأصل أن يكون الوقف مؤبدا، ويجوز أن يكون مؤقتاً لمدة إذا نص الواقف على توقيته بحيث يرجع الموقوف بعدها إلى المالك.
‘ওয়াকফের ক্ষেত্রে মূল এটিই যে, তা চিরস্থায়ী হবে। তবে ওয়াকিফ যদি স্পষ্ট বলে রাখে যে, নির্ধারিত সময়ের পর ওয়াকফকৃত সম্পদ তার মালিকানায় ফিরে যাবে, তাহলে এভাবে অস্থায়ী ওয়াকফও হতে পারে।’-ধারা: ৩/১/৪

সুতরাং উক্ত মতানুযায়ী ক্যাশ ওয়াকফও অস্থায়ীভাবে হতে পারে। কেউ এক বছরের জন্য ১০ হাজার টাকা ক্যাশ ওয়াকফ করতে পারেন। শর্ত করতে পারেন, এক বছর পর মূল টাকা তিনি ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।

এই মতটি গ্রহণের ফায়দা হলো- এ মতানুযায়ী ওয়াকফ করতে মানুষ অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। ক্যাশ টাকা চিরদিনের জন্য ত্যাগ করে ওয়াকফ করতে হবে না এ মানসিকতা ক্যাশ ওয়াকফকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় স্থায়ী ওয়াকফের প্রতি উৎসাহিত করাই ভালো। প্রথমে স্থায়ীভাবে ক্যাশ ওয়াকফ করতে বলা হবে। একান্ত রাজী না হলে অস্থায়ী পদ্ধতির কথা বলা যেতে পারে।

ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট : দারিদ্র বিমোচনে বৈজ্ঞানিক উপায়
ক্যাশ ওয়াকফ প্রক্রিয়াকে ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় বা আর্থিক কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পদ্ধতির নাম ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’। এর দ্বারা মূলত ‘ইউনিট অব একাউণ্ট’ বোঝানো হয়। শেয়ার বাজারে যেমন শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে মিনিমাম লট থাকে। তেমনি, প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাশ ওয়াকফের ক্ষেত্রেও মিনিমান লট থাকে। সেই লট ক্রয় করতে হয়। যিনি ক্রয় করবেন তিনি হবেন মূলত ক্যাশ ওয়াকিফ। এরপর তাকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। এটিই ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’।

ধরা যাক, এবিসি ব্যাংক ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট চালু করেছে। মিনিমাম সার্টিফিকেট মূল্য ১ হাজার টাকা। তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে-এক হাজার টাকা যে ক্যাশ ওয়াকফ করবে, তাকে এই মূল্যের একটি সত্যায়ণকারী সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। সহজে মানুষকে বলা হবে, এক হাজার টাকা দিয়ে একটি ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট ক্রয় করুন। অথবা ‘ইউনিট অব একাউণ্ট’ ক্রয় করুন। ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ আলাদা কিছু নয়। একে সাধারণ ক্যাশ ওয়াকফকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার বৈজ্ঞানিক ও সহজ প্রক্রিয়ার নামই ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’।
আমাদের দেশে ছয়ের অধিক ইসলামী ব্যাংক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্কসহ বহু মুসলিম দেশে ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ চালু আছে।

‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ : ব্যাংকিং অপারেশন
ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ যেভাবে ব্যবহৃত হয়, সংক্ষেপে তা হলো-
সাধারণত দু’ ধরনের একাউন্ট থাকে। যথা-ক. মুদারাবা ক্যাশ ওয়াকফ হিসাব (MCWA)। খ.মুদারাবা ক্যাশ ওয়াকফ সঞ্চয়ী হিসাব (MCWSA)। (ব্যাংকভেদে ক্যাশ ওয়াকফ একাউণ্টের বিভিন্ন নাম হয়ে থাকে)

মুদারাবা ক্যাশ ওয়াকফ হিসাব-এর পদ্ধতি হলো- প্রথমে ওয়াকিফ ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ ক্রয় করবে। ব্যাংক হবে তার পক্ষে ক্যাশ ওয়াকফ তত্ত্বাবধানকারী। এভাবে প্রথম পর্যায়ে ব্যাংক ও গ্রাহকের মাঝে ওয়াকফের সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। ক্যাশ ওয়াকফ করার সাথে ব্যাংক ঐ পরিমাণ ক্যাশের ভিত্তিতে একটি সার্টিফিকেট ওয়াকিফকে প্রদান করবে।

এরপর দ্বিতীয় ধাপে-ওয়াকফ সম্পদের পক্ষে ব্যাংক হবে মুদারিব। ব্যাংক সেটি মুদারাবা হিসাবে বিনিয়োগ করবে। প্রাপ্ত মুনাফা ওয়াকিফ কর্তৃক নির্ধারিত খাতে বা ব্যাংক কর্তৃক নানা দারিদ্র বিমোচন খাতে তা ব্যয় হবে। এই হিসাবের বৈশিষ্ট্য হল, এতে ওয়াকিফ এককালিন ক্যাশ ওয়াকফ করে থাকে।

মুদারাবা ক্যাশ ওয়াকফ সঞ্চয়ী হিসাব-এর পদ্ধতি মূলত হুবহু মুদারাবা ক্যাশ ওয়াকফ হিসাবের মতোই। পার্থক্য হল, এখানে ওয়াকিফ গ্রাহক সময়ে সময়ে ক্যাশ ওয়াকফ করে থাকে। এককালিন করা হয় না। তাই এর নাম সঞ্চয়ী হিসাব।

সাধারণত আমাদের দেশে ব্যাংকিং ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’-এ টাকা ফেরৎ নেয়ার সুযোগ নেই। একাউন্ট বন্ধ করার সুযোগ নেই। স্থায়ী ওয়াকফ হয়ে থাকে। তবে আমরা বলেছি, অস্থায়ী ক্যাশ ওয়াকফও করার সুযোগ আছে। এই সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেটে মানুষ আরও উদ্বুদ্ধ হবে বলে আশা করি।

ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট: ব্যাংকিং ব্যয়ের খাত
সাধারণত আমাদের দেশে ব্যাংকিং ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’-এ লব্ধ আয় ব্যয়ের দু’ ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এক. ওয়াকিফ গ্রাহক নিজ থেকে খাত বলে দিবে। দুই. ওয়াকিফ না বলে দিলে, ব্যাংক মৌলিক ০৫টি খাতে ব্যয় করবে।
০৫টি মৌলিক খাত হলো-
(ক) পরিবার পুনর্বাসন (খ) শিক্ষা ও সংস্কৃতি (গ) স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা (ঘ) সামাজিক উপযোগিতা (ঙ) যাকাত প্রাপ্তির উপযুক্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান। এগুলোর অধীনে বিভিন্ন ধরনের ৩৪টি উপখাত রয়েছে। তা হলো-
পরিবার পুনর্বাসন :
১. দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অবস্থার পরিবর্তন। ২. শারীরিকভাবে পঙ্গু/অক্ষমদের এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন। ৩. ভিক্ষুক পুনর্বাসন। ৪. দুস্থ মহিলাদের পুনর্বাসন। ৫. শহরের বস্তিবাসী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থার উন্নয়ন।

শিক্ষা-সংস্কৃতি :
৬. এতিমদের শিক্ষা, যেমন : বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক বিতরণ। ৭. দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যুগোপযোগী শিক্ষার বিস্তার ও উন্নয়ন। ৮. গৃহে শিশুদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা সুবিধা প্রদান, মায়েদের শিক্ষা সুবিধা কর্মসূচি। ৯. শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলার সুযোগ। ১০. ইসলামী সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং শিল্পকলার বিকাশ ও উন্নয়ন। ১১. দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা। ১২. বৃত্তির আকারে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদান।১৩. উচ্চতর কারিগরি শিক্ষায় সহযোগিতা প্রদান। ১৪. দুর্গম ও অবহেলিত অঞ্চলে শিক্ষাবিস্তারে সহযোগিতা প্রদান। ১৫. কোনো নির্দিষ্ট মাদরাসা/স্কুল/ কলেজকে অর্থায়ন। ১৬. মেধাবী প্রজন্মের জন্য সুশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি। ১৭. পিতা-মাতা এবং যেকোনো পূর্বসূরির স্মৃতি রক্ষার্থে শিক্ষা, গবেষণা, ধর্ম এবং সমাজ সেবার ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকল্পে সহযোগিতা প্রদান। ১৮. ‘শিক্ষা চেয়ার’ প্রদান।

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা :
১৯. গ্রামীণ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। ২০. বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ (গৃহ, বস্তি, স্কুল, মসজিদ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে)। ২১. হাসপাতাল ও ক্লিনিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কর্মসূচি পরিচালনা, বিশেষ করে গরিবদের জন্য। ২২. স্বাস্থ্য গবেষণায় অনুদান, নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে গবেষণা।

সামাজিক উপযোগিতা :
২৩. ঝগড়া ও কলহ নিরসন (গ্রাম্য মামলা/ মোকদ্দমা)। ২৪. দুস্থ মহিলাদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনানুগ সহযোগিতা প্রদান। ২৫. দরিদ্র মেয়েদের যৌতুকবিহীন বিবাহ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা প্রদান। ২৬. গ্রামের রাস্তাঘাট ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির রক্ষণাবেক্ষণ। ২৭. শান্তিপ্রিয় অমুসলিমদের সহযোগিতা প্রদান। ২৮. মাদকাসক্তি, জুয়া এবং অন্যান্য সামাজিক অনাচার যেমন চুরি ও বিবিধ অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও বন্ধের ব্যবস্থা করা। ২৯. সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, স্থাপন ও উন্নয়ন। ৩০. আয় উৎপাদনকারী (ওহপড়সব এবহবৎধঃরহম) কর্মসূচির মাধ্যমে নির্দিষ্ট মসজিদ/মসজিদ-সম্পত্তির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ। ৩১. আয় উৎপাদনকারী কর্মসূচির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ। ৩২. আয় উৎপাদনকারী কর্মসূচির মাধ্যমে ঈদগাহের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ। ৩৩. নওমুসলিমদের পুনর্বাসন।

যাকাত প্রাপ্তির উপযুক্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের পুনর্বাসন :

৩৪. কুরআনে বর্ণিত যাকাত পাওয়ার যোগ্য আটটি খাত যেমন : ফকির, মিসকিন, জাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত/কর্মরত কর্মচারী, যাদের অন্তর দ্বীনের প্রতি অনুরাগী করা প্রয়োজন, দাস মুক্তি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের মধ্যে বণ্টন করা।এ ছাড়াও ওয়াকিফ শরিয়াহসম্মত যেকোনো সমাজকল্যাণ ও সেবামূলক খাত নিজ থেকে উল্লেখ করতে পারেন। (প্রফেসর ড.এম.এ. মান্নান সাহেবের লেখা ‘যুগের প্রয়োজেন ক্যাশ ওয়াকফ’ অবলম্বনে, দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৩ অক্টোবর, ২০২০)

‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ ও দারিদ্র বিমোচন
‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ এর আলোচিত ৩৫টি খাত নিঃসন্দেহে দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শুধু ব্যাংক নয়; সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে এসব খাতে এর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা সম্ভব করা যাবে। ‘ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট’ মূলত আধুনিক যুগে দরিদ্র বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার। শরীয়াহর আলোকে সহজেই এর মাধ্যমে দারিদ্রতা হ্রাস করা সম্ভব।

অর্থনীতির দৃষ্টিতে ক্যাশ ওয়াকফ
অর্থনীতিতে স্বেচ্ছাসেবক খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছাসেবী খাতের বিশেষ ভূমিকা থাকে। নববী যুগে স্বেচ্ছাসেবী খাত হিসাবে উল্লেখযোগ্য খাত ছিল-যাকাত, নফল দান, ওয়াকফ, করজে হাসানা। আজকে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এসব স্বেচ্ছাসেবক খাত উপেক্ষিত। আমরা বাজেট প্রণয়নে সর্বদা কর ও বৈদেশিক সুদী ঋণের উপর নির্ভর করি। স্বেচ্ছাসেবী খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না।

পশ্চিমা দেশগুলোতেও এ ধরনের ব্যক্তিকেন্দ্রিক জনকল্যাণমূলক খাত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জিএনপির ১০% আসে স্বেচ্ছাসেবক খাত থেকে। তাহলে আমাদের বাজেটে কেন এটা উপেক্ষিত থাকবে। অর্থ সংস্থানের এত বিশাল ক্ষেত্র থাকার পরও আমরা সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকি ঋণের আশায়। মুসলিম সমাজের অবহেলিত সামাজিক সম্পদ কাজে লাগানোর প্রেরণা থেকেই ‘ক্যাশ ওয়াক্ফ সার্টিফিকেট’ ধারণাটি এসেছে। এর মাধ্যমে অর্থনীতিতে বড় ধরনের স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব।

কর ব্যবস্থা ও ক্যাশ ওয়াকফ
প্রচলিত কর ব্যবস্থা কখনোই দরিদ্রবান্ধব নয়। ধনীবান্ধব। এটি আমাদের দেশে উপনিবেশিক উত্তরাধিকার। কর মওকুফ, কালো টাকা সাদা করা, রফতানিতে ভর্তুকি এসবই ধনীদের স্বার্থে। ভ্যাট নামক পরোক্ষ কর স্পষ্ট জুলুম।অপরদিকে ক্যাশ ওয়াকফ সম্পূর্ণ দরিদ্রবান্ধব। ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে পূর্বে আলোচিত নানা উপায়ে সমাজের দরিদ্র বিমোচন সম্ভব। ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে করমুক্ত এলাকাও করা সম্ভব।

ধরা যাক, একটি ভার্সিটি কতিপয় বিত্তবানদের করে পরিচালিত হয়। এখানে ক্যাশ ওয়াকফ করা যায়। তাদেরকে বলা হবে ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে তা পরিচালন করতে। একটি ট্রাস্টি করা হবে। ট্রাস্টির সদস্যরা ক্যাশ ওয়াকিফ হবে। তাদেরকে আলাদা করে কর দিতে হবে না। এতে তাদের মাঝে নিজস্বতার অনুভূতি তৈরি হবে। যা মূল কাজে অতিরিক্ত উৎসাহ যোগ করবে।

ওয়াকফ ব্যাংক: সময়ের ভাবনা
আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্যাংক আছে। তবে ওয়াকফ ব্যাংক নেই। দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই ধরনের ব্যাংক সময়ের দাবি। ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট ও অন্যান্য এ্যাসেট ওয়াকফ কার্যক্রমের জন্য তৈরি হবে ওয়াকফ ব্যাংক। কিছু বিত্তবান উদ্যেক্তা এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করবেন।

এরপর এর মাধ্যমে সব ধরনের ওয়াকফ সংগ্রহ করা হবে। ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে যে ক্যাশ উঠে আসবে, তা মুদারিব হিসাবে ব্যাংক বিনিয়োগ করবে। এখানে উদ্যোক্তাদের একটি প্রফিট থাকতে পারে। ওয়াকফ সম্পদের প্রফিটের অংশ দিয়ে ওয়াকফ তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংকের ব্যয় নির্বাহ হবে।

উক্ত ওয়াকফ ব্যাংক থেকে ব্যাপকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণসহ নানা জনকল্যাণমূলক খাতে লব্ধ আয় ব্যয় করা হবে। এই ওয়াকফ ব্যাংকের মাধ্যমে ‘রি-সাইকেল ওয়াকফ সাটিফিকেট’ও ইস্যূ করা সম্ভব। ধরুন, আপনার বাসার একটি পুরনো খাট আছে। ব্যবহার হচ্ছে না। সেটি ওয়াকফ ব্যাংকে দিয়ে দিতে পারেন।

আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আর্থিকভাবে নিরাপদ রাখতে তথাকথিত সুদী জীবন বীমা করে যাই। ওয়াকফ ব্যাংক এর মাধ্যমে ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট ক্রয় করে ভবিষ্যত প্রজন্মের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। কারণ ইসলামে নিজ সন্তানদের জন্যও ওয়াকফ করা বৈধ।

মোটকথা, একটি ওয়াকফ ব্যাংকের মাধ্যমে এভাবে নানামুখী দরিদ্রবিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন আইনী অবকাঠামো সহজ করা। বিত্তবানদেরকে উদ্বুদ্ধ করা।

ক্যাশ ওয়াকফ ও ঝুঁকি: উত্তোরণ ভাবনা
ক্যাশ ওয়াকফ-এ সাধারণ ওয়াকফের চেয়ে কিছু ঝুঁকি ও জটিলতা রয়েছে। ওয়াকফের একটি মৌল নীতি হল-সেটির মূল অক্ষুণ্ন রাখা। স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে তা সহজ। কিন্তু টাকার ক্ষেত্রে তা জটিল। টাকা মানুষের হাতে চলে যায়। সঠিকভাবে এর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। করজে হাসানা দেয়া হলে সেটি উসূল করতে হয়। হিসাব করে মূল ক্যাশ অক্ষুণ্ন রাখতে হয়।

এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই ক্যাশ ওয়াকফ করার আগে অবশ্যই এর সুদৃঢ় অবকাঠামো ও পরিচালন পদ্ধতি ঠিক করে নিতে হবে। এ দিক থেকে ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় ক্যাশ ওয়াকফ সার্টিফিকেট তুলনামূলক সহজ। এর অবকাঠামো ও পরিচালন পদ্ধতি সুদৃঢ়।

এর বাইরে ক্যাশ ওয়াকফ গড়ে তুলতে হলে- প্রথমে এর ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে। যেন তা বিনষ্ট না হয়ে যায়। অবকাঠামো উন্নয়ন করতে না পারলে সেক্ষেত্রে সাময়িকভাবে অস্থায়ী ক্যাশ ওয়াকফ চালু করা যায়।
ক্যাশ ওয়াকফ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এমন বিনিয়োগ নির্বাচন করতে হবে, যাতে তুলনামূলক ঝুঁকি কম। (স.৩৩, ধ.৩/৪/৩/৩)

ক্যাশ ওয়াকফ গণপ্রতিষ্ঠাকরণ: কিছু প্রস্তাবনা

ক্যাশ ওয়াকফকে গণ আন্দোলনে রূপ দিতে হলে আমাদেরকে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। সংক্ষেপে তা হল-
-ক্যাশ ওয়াকফ বিষয়ে স্বতন্ত্র আইনী অবকাঠামো তৈরি করা।
-ক্যাশ ওয়াকফকে করমুক্ত করা। ওয়াকিফকে একটা পর্যায়ে করমুক্ত ঘোষণা করা।
-ইসলামী ব্যাংকগুলোতে স্থায়ী ক্যাশ ওয়াকফের পাশাপাশি অস্থায়ী ক্যাশ ওয়াকফও চালু করা।
-মসজিদের মিম্বর-এ ক্যাশ ওয়াকফ নিয়ে আলোচনা করা।
-ছোট ছোট পুস্তিকা রচনা, মিডিয়া ইত্যাদি মাধ্যমে এ ব্যাপারে গণ সচেতনতা তৈরি করা।
-ওয়াকিফদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন ছাড় ও সুযোগ প্রদান করা।
-ওয়াকফ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আইনী অবকাঠামো উন্নয়ন করা।
-একাডেমিক প্রক্রিয়ায় ওয়াকফকে অন্তর্ভুক্তকরণ।

শেষ কথা,
দারিদ্র বিমোচনে ক্যাশ ওয়াকফ সময়ের একটি অন্যতম হাতিয়ার। এর মাধ্যমে চলমান কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট ও দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখা যাবে। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা তৈরি করা। সরকার এর প্রতি সদয় হলে ক্যাশ ওয়াকফের মাধ্যমে অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

লেখক : সার্টিফাইড শরীয়াহ এ্যাডভাইজর এ্যান্ড অডিটর, এ্যাওফি, বাহরাইন


আরো সংবাদ



premium cement
এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য

সকল