২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জনস্বার্থে প্রধানমন্ত্রীকে খোলাচিঠি

গণস্বাস্থ্য ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাদলের বাড়িতে গিয়ে করোনা চিকিৎসা

গণস্বাস্থ্য ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাদলের বাড়িতে গিয়ে করোনা চিকিৎসা - ছবি : নয়া দিগন্ত

মূল সমস্যা
সারা পৃথিবী কোভিড-১৯ রোগে পর্যুদস্ত। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে চিকিৎসকদের জট ও তাদের দালালদের প্রতারণার নেট বিস্তৃত। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি একটি দুর্ভাগ্যজনক সত্য। নিবেদিত নার্সের সেবা স্বপ্নের ছায়ায় পরিণত হওয়ায় তাদের দায়িত্ব পালন করছে অতিরিক্ত বকশিশের বিনিময়ে আয়া ও সুইপাররা। বড় হাসপাতালে হুইল চেয়ার ও ট্রলির জন্যও ঘুষ দেয়ার ঘটনা সর্বজনবিদিত। টেকনিশিয়ানদের প্রয়োজনীয়তা চিকিৎসা প্রশাসকদের চিন্তার অন্তর্ভুক্ত নয়। দেশে প্রয়োজন নিদেনপক্ষে তিন লাখ চিকিৎসক, আছে এক লাখের অনধিক। প্রতি বছর সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ২০ হাজার করে ছাত্র ভর্তি করলেও কাম্য সংখ্যায় পৌঁছতে ১২-১৫ বছর লাগবে।

ঢাকায় হাসপাতালে শয্যার স্বল্পতা, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবহৃত ওষুধের অত্যাধিক মূল্য ও রোগ নির্ণয়প্রক্রিয়ার অধিক চার্জ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রীর ওপর অকল্পনীয় বিবিধ শুল্ক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে জনগণের সামর্থ্যরে বাইরে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে রোগীকে চিকিৎসার প্রায় ৭২ শতাংশ খরচ নিজেকে বহন করতে হয় (আউট অব পকেট এক্সপেনস-ওওপি)। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে রোগীকে এত বেশি পরিমাণ চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হয় না। জনগণের অজ্ঞতার কারণে সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে আইসিইউ প্রীতি ও আকর্ষণ বেড়েছে, দালালদের আয় বেড়েছে। রোগীর পরিবার সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তদুপরি বেশির ভাগ মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রীর ওপর কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, অগ্রিম আয়কর, অগ্রিম কর, টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্স, মূল্য সংযোজন কর প্রভৃতি একত্রীভূত করে প্রায় ২০ থেকে ৬০ শতাংশ বিবিধ শুল্ক ট্যাক্স বাবদ আদায় করা হয়। বড়লোকের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে (যথা এভার কেয়ার, ইউনাইটেড, আয়েশা মেমোরিয়াল, ল্যাবএইড, স্কয়ার, আসগর আলী প্রভৃতি) তথাকথিত রেফারেল হাসপাতাল তকমা দিয়ে ব্যবহৃত মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির ওপর বিবিধ শুল্ক রেহাত দেয়া আছে। তেলা মাথায় তেল ঢালা। সামরিক বাহিনীর যানবাহন, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সামগ্রীকে উল্লিখিত শুল্কগুলো থেকে রেহাত দেয়া আছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ভোগ্যপণ্য থেকে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।

অত্যধিক শুল্কের কতক উদাহরণ
আইভি ফুয়িড ব্যাগ ছাড়া ইনফিউসন সেটে মোট শুল্ক ৬০.৭৩, মেমব্রেন ফিল্টারে ৬০.৭৩, আইভি কেনুলায় ৩৮.৮৩, স্কাল্প ভেইন সেটে ৩৮.৮৩, গ্লাভসে ২৮.৪৭, কার্ডিয়াক মনিটরে ৩০, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেটে ৩৮.৮৩, ক্যাথেটার সাকসনে ৩৮.৮৩, ডিফিব্রিলেটরে ২৬.২০, ডিস্টিলড ওয়াটার প্লান্টে ২৭.৮৮, এফুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ২৬.২০, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইএসআর মেসিন, প্লাজমা এক্সট্রুডার, রিয়েল টাইম পিসিআর, স্টেরিলাইজারে ২৭.৮৮, সার্জিকেল এডহেসিভ টেপে ৩৮.৪৭, প্রস্রাবের ব্যাগে এবং প্রিফিল্ড ও অন্যান্য সিরিঞ্জে ৩৮.৮৩, পালস অক্সিমিটারে ১৫.২৫, ভেন্টিলেটরের ওপর মোট শুল্ক ১১.৬৭ শতাংশ। পূর্ণ তালিকা অনেক বড় হবে। (সংযুক্তি-১ : সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করের বিবরণ)।

জীবনরক্ষাকারী প্রকৃতি প্রদত্ত অক্সিজেনের ওপর ১৭.৯৪ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য হয়। তদুপরি মাঝারি ধরনের ১.৪ কিউবেক মিটার অক্সিজেন সিলিন্ডারের মূল্য ২৬ হাজার ৫২২ টাকা। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার টাকা বিবিধ ট্যাক্স।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জার্মান অক্সিজেন সরবরাহকারী বহুজাতিক কোম্পানি লিনডে অন্য কোম্পানি থেকে অপেক্ষাকৃত সুলভে অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি করলে বহুজাতিক কোম্পানি লিনডে তাতে অক্সিজেন ভরে দিতে অস্বীকার করে। অথচ এই মুহূর্তে এক হাজার, ১.৪ কিউবিক মাধ্যম মাপের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের সামর্থ্য লিনডের নেই।

জীবন রক্ষাকারী অতীব প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ল্যাবরেটরি রিএজেন্টস ওপর সাত প্রকার বিবিধ শুল্ক ও পদ্ধতির কারণে ১১.৬৭, ১৭, ২৫, ২৬.৬৭, ৩০, ৩২.৭৫, ৩৮.৮৩ ও ৬০.৭৩ শতাংশ প্রভৃতি আট পদ্ধতির শুল্কায়ন হয়। হেপাটাইসিস সি’র ওষুধে ১১.৬৭, বহুমূত্রের ওষুধ মেটফরমিনে ৩৮.৮৩, উচ্চ রক্ত চাপের ওষুধ প্রাজসিনে ৩২.৭৫, ক্যান্সারের ওষুধ ট্যামোক্সিফনে ৩২.৭৫ এন্টিবায়োটিক ভ্যানকোমাইসিনে ১৭, এন্টিবায়োটিক অ্যামিকাসিন ও জেন্টামাইসিনে ২৬.৬৭ শতাংশ। আট রকম হারের শুল্কায়নে দুর্নীতি ও হয়রানি বাড়ে। (সংযুক্তি-২ : সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করের বিবরণ)।

দশটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাদলের প্রতি দুই সপ্তাহে

এক হাজার করোনা রোগীর চিকিৎসা
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাঁচজন চিকিৎসক, ২৫ অনধিক মেডিক্যাল ছাত্র এবং মেডিক্যাল সেবা সম্পর্কে অজ্ঞ কয়েক শ’ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে দুই থেকে চার সপ্তাহ ইনটেনসিভ মেডিক্যাল/নার্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে ৪৮০ শয্যার বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল পরিচালিত হতো সেখানে অসংখ্য আহত, গুলিবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থী চিকিৎসা পেয়েছেন। এই হাসপাতালের নিবেদিত প্রচেষ্টা ও সফলতা সবাইকে চমৎকৃত করেছিল।

ঢাকা শহরে সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারায় রোগীর অবনতি হয় এবং পরবর্তী সময়ে আইসিইউয়ের ওপর চাপ বাড়ে। আইসিইউতে মৃত্যুর হার উন্নত দেশগুলোতে প্রায় ৪০ শতাংশ এবং চিকিৎসাও ব্যয়বহুল।

১০ সদস্য বিশিষ্ট চিকিৎসক, নার্স-প্যারামেডিক, ফিজিওথেরাপিস্ট, প্যাথলজি টেকনিশিয়ান ও স্বেচ্ছাসেবক সমন্বিত দল করোনা রোগীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করবে। পরামর্শ দেবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ দেবে। রোগীর প্রাথমিক সেবায় পরিবারের একজনকে প্রশিক্ষণ দেবে, যিনি ভ্রাম্যমাণ দলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন।

ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাব্যবস্থা একটি সেবামূলক সাশ্রয়ী পদ্ধতি
বাড়িতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাদল চিকিৎসাসেবা দিলে জনগণের হয়রানি কমবে, তাদের শয্যার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না, হাসপাতালের সেবার জন্য আয়া রাখতে হবে না, নার্স, সুইপারদের ডাকাডাকি করে মনক্ষুণ্ন হতে হবে না। নিজ বাড়িতে যেকোনো আত্মীয়কে কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ দিলে রোগীকে যত্নসহকারে সেবা দিতে পারবেন। রক্তচাপ ও তাপমাত্রা দেখতে পারবেন, নিয়মমাফিক ওষুধ সেবন করাবেন, রোগীর সমস্যা চিকিৎসকদের ফোন করে জানাবেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেবেন। ঘরে বসে বিভিন্ন রিপোর্ট পাবেন। পরিবার সময়মতো রোগীকে পছন্দের খাবার দিতে পারবেন। বাড়িতে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা যাবে। পরিবারের যাতায়াতের ভাড়া ও সময় সাশ্রয় হবে। চিকিৎসক বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিন রোগীকে দেখে পরামর্শ দেবেন। এ জন্য চিকিৎসাদলকে কোনো ফি দিতে হবে না। সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হবে। খাদ্য সরবরাহে দুর্নীতি কমবে। রোগী নিয়মিত সব ওষুধ পাবেন। নিজ বাড়িতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়ায় মাত্র ৫-১০ শতাংশ রোগীর আইসিইউতে চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। বেশির ভাগ রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অর্থ ও সময় ব্যয় করে চিকিৎসা নেয়ার জন্য হয়রানির মোকাবেলা করতে হবে না।

বাড়িতে করোনা রোগীর চিকিৎসা
রোগের উপসর্গ বিবেচনা করে সাধারণত করোনা রোগীদের চার ভাগে ভাগ করা যুক্তিসঙ্গত- ১. মৃদু উপসর্গের রোগী; ২. সহনীয় উপসর্গের রোগী; ৩. সহনীয় রোগীদের উপসর্গ রোগীদের সাথে অসংক্রামক রোগ ও ৪. গুরুতর করোনা রোগী। সব ক্ষেত্রে মূল প্রয়োজন মাফিক ওষুধ ও পুষ্টির ব্যবস্থা করলে সাধারণত দুই সপ্তাহের চিকিৎসায় বেশির ভাগ রোগী নিরাময় হবেন। ৫-১০ শতাংশ গুরুতর রোগীদের জন্য আইসিইউয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সার্বিক চেষ্টার পরও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আইসিইউ প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীকে বাঁচানো যায় না। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, লাইফ সাপোর্ট মানে মৃত্যুর হাতছানি।

ব্যবহৃত ওষুধ ও চিকিৎসাব্যয়
মৃদু উপসর্গের রোগীর চিকিৎসা : ১. ট্যাবলেট ইভারমেকটিন ১২ মিলিগ্রাম করে পাঁচ দিন। ২. ট্যাবলেট লেভোফ্লোক্সাসিন ৫০০ মিলিগ্রাম দৈনিক একটা করে সাতদিন। ৩. ভিটামিন সি ও ডি, জিংক ট্যাবলেট এবং বি-কমপ্লেক্স সিরাপ সাত দিন। ৪. ট্যাবলেট মিথাইল প্রেডনিসোলন বা ডেক্সামেথাসন সাত দিন। ৫. ট্যাবলেট রিভারোক্সাবান ১০ মিলিগ্রাম ১৪ দিন। ৬. ট্যাবলেট প্যারাসিটামল দৈনিক এক-দুটি করে সাত দিন ৭. ট্যাবলেট এন্টিহিস্টামিন বা সেট্রিজিন এক-দুটি করে সাত দিন। ৮. পুষ্টিকর ফুড সাপ্লিমেন্ট। সপ্তাহে ব্যয় +-এক হাজার টাকা।

সহনীয় উপসর্গের রোগীর চিকিৎসা : ১. অক্সিজেন, প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা প্রতি মিনিটে +৫-৭ লিটার অক্সিজেন প্রদান দৈনিক ব্যয় ৪০০ টাকা ২. মৃদু উপসর্গের সব ওষুধের অতিরিক্ত নিম্নলিখিত ওষুধগুলো দিতে হবে- ট্যাবলেট মন্টিলুকাস্ট ১৪ দিন, টেবলেট ফেক্সোফেনাডিন ১৮০ মিলিগ্রাম সাতদিন, জি সলবুটামল সলিউশন ২ মিলিগ্রাম করে প্রতি চার ঘণ্টা পরপর ১৪ দিন, জি-ডেক্সামেথাসন ইনজেকশন ৫ মিলিগ্রাম দিনে দুইবার, নেবুলাইজেশন ইনজেকশন এসিটাইন সিসিটাইন সেবন ১৪ দিন, প্লাজমা সপ্তাহে একবার। সপ্তাহে ব্যয় +-আট হাজার ৫০০ টাকা।

অসংক্রামক-সমেত সহনীয় উপসর্গের করোনা রোগী : ১. প্রতিদিন পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা প্রতি মিনিটে +৭-১০ লিটার অক্সিজেন প্রদান, দৈনিক ব্যয় ৬০০ টাকা। ২. সহনীয় উপসর্গে ব্যবহৃত ওষুধগুলোর অতিরিক্ত ইনজেকশন মেরোপেনাম দিনে দুইবার। বহুমূত্র থাকলে- ট্যাবলেট মেটফরমিন ৫০০ মিলিগ্রাম, ট্যাবলেট গ্লিকাজাইড ৮০ মিলিগ্রাম। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে- ট্যাবলেট লোসারটন ৫০ মিগ্রাম, ট্যাবলেট প্রাজোসিন ১-২ মিলিগ্রাম, ট্যাবলেট ফুসেমাইড ২০০ মি. গ্রাম দিনে একবার। সপ্তাহে একাধিকবার বুকের এক্স-রে। সপ্তাহে ব্যয় +-১২ হাজার টাকা।

তীব্র করোনা রোগীদের সাধারণত কোমমেরবিডিটি থাকে : ১. হাসপাতালে স্থানান্তর ও প্রয়োজনে নিবিড় পরিচর্যা। ২. প্রতিদিন আট থেকে ১২ ঘণ্টা প্রতি মিনিটে ১০-১৫ লিটার অক্সিজেন প্রদান। দৈনিক ব্যয় এক হাজার টাকা। ৩. সহনীয় মাত্রার করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধ ছাড়াও একাধিক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মেরোপেনাম, ভ্যানকোমাইসিন, কলিস্টিন ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। ৪. প্রয়োজন মাফিক হৃদরোগ ও বিকল কিডনি রোগের ওষুধসমূহ। ৫. প্লাজমা সপ্তাহে দুইবার। সপ্তাহে ব্যয় +-২০ হাজার টাকা। আরো ব্যয় হবে প্রতিদিন এক্স-রে ও বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার জন্য আনুমানিক ব্যয় আট হাজার টাকা।

দুই হাজার রোগীর চিকিৎসার নিমিত্তে প্রতি মাসে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাদলের বেতনভাতা, জ্বালানি, অক্সিজেন, ওষুধ ও পুষ্টিকর খাদ্য সহায়তা প্রভৃতির জন্য অমূলধনীয় ব্যয় হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। অর্থাৎ রোগীপ্রতি গড়ে সাত হাজার ৫০০ টাকা। সরকার, দানশীল ব্যক্তি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দান ও জাকাত থেকে ছয় মাসের চিকিৎসা বাবদ ৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। পরিবার রোগীর সব পরীক্ষা ও প্লাজমা খরচ বহন করবে।

সরকারের জরুরি কর্তব্য- ১. অক্সিজেন, ওষুধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী থেকে বিশেষ এসআরও (স্ট্যাটুটরি রেগুলেটরি অর্ডার) (Statutory Regulatory Order)-এর মাধ্যমে সব প্রকার শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, মূসক প্রভৃতি প্রত্যাহার করা। ২. আইসিইউ পরিচালনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও নার্স প্যারামেডিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা- ২০০ জন চিকিৎসক ও ৫০০ জন নার্স টেকনিশিয়ানকে আইসিইউতে দ্রুত অক্সিজেন প্রদান, নন-ইনভেসিব শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া, শ্বাসতন্ত্রে টিউব মারফত অক্সিজেন সরবরাহ, অন্যান্য নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া এবং শ্বাসনালী ট্যাকিয়া ছিদ্র করে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এক মাসের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা। ৩. সব ওষুধের মূল্য এবং রোগ পরীক্ষার পদ্ধতিগুলোর চার্জ সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া। ৪. কারাগারে আবদ্ধ সব ব্যক্তিকে দ্রুত টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া এবং খুনের দায়ে এবং দুর্নীতির কারণে দণ্ডিত অভিযুক্ত ছাড়া অন্য সবাইকে জামিনে মুক্তি দেয়া। ৫. সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোয় প্রতি বছর ২০ হাজার ছাত্র ভর্তি করা এবং এমবিবিএস পাসের পর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করা। অতীতে এই নিয়ম চালু করে দুই সপ্তাহ পর প্রত্যাহার করে ভুল করেছিল। ৬. আগামী বাজেটে সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তাবেষ্টনী সংস্কার, গভীর নলকূপ ও বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মেডিক্যাল, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ও টেকনিশিয়ানদের জন্য ডরমিটরি, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম এবং পাঁচজন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট ও টেকনিশিয়ান প্রধানদের ৬০০-৭০০ বর্গফুটের বাসস্থান, বহির্বিভাগসহ ৩০ শয্যার হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও অপারেশন থিয়েটার নির্মাণে ছয় কোটি টাকা এবং অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে আলট্রাসনোলজি, চক্ষু ও বিভিন্ন ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতির জন্য অন্যূন চার কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা নিন। এরূপ উন্নয়নে ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ জনগণের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। ৭. লকডাউন কার্যকর করতে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারদের সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার পরিবর্তে বিনামূল্যে মাসিক রেশনে চাল, ডাল, আটা, আলু, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি দিতে হবে। রেশন বিতরণে সামরিক বাহিনী, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং এনজিওকর্মীদের ব্যবহার সুফল দেবে। ৮. ট্রিপসের বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের মাধ্যমে ভ্যাকসিন উৎপাদন সুবিধা সৃষ্টির জন্য নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আপনার বিশেষ দূত করে ইউরোপে পাঠান। ৯. ভ্যাকসিন উৎপাদনে ০.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করুন, সুফল পাবেন। ১০. গত বছর দ্রুত সিনোজাকের ট্রায়াল অনুমোদন না দিয়ে যে ভুল করা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। ১১. গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত এন্টিবডি এন্টিজেন অনুমোদন এক বছরে হয়নি। ড. বিজন কুমার শীলের ভিসা না হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না। ছয় মাস আগে চার বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে রিয়্যাল টাইম পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপিত হলেও ব্যবহার শুরু করতে স্বাস্থ্য অধিদফতর এখনো অনুমতি দেয়নি।

ক্ষতি হচ্ছে দেশের, বিষয়টি আপনাকে পুনরায় অবগত করলাম।

দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতির কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা সমধিক।

লেখক : ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র


আরো সংবাদ



premium cement
সহ-অধিনায়ক হতে পারেন রিজওয়ান মেক্সিকোয় মেয়র প্রার্থী ছুরিকাঘাতে নিহত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহেও ক্লাস বন্ধ ঘোষণা দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন : প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না

সকল