২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভিন গ্রহের প্রাণী

-

রহস্যের আঁধারে ঘেরা মহাবিশ্ব। আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকে বলেছেন, ‘আমি ছয়দিনে মহাবিশ্বকে সৃজন করেছি ও সাজিয়েছি। মহাবিশ্বের সাতটি স্তর বিদ্যমান।’ আমাদের চর্মচক্ষে ও শক্তিশালী টেলিস্কোপ বা দূরবীনের সাহায্যে আমরা সৃষ্টি জগতের প্রথম আকাশকে অবলোকন করে থাকি। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ ও প্রাণান্ত গবেষণা সত্ত্বেও মহাকাশবিজ্ঞানীরা প্রথম আকাশের মাত্র সামান্য অংশের রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছেন। মানুষ যদি আত্মবিধ্বংসী সমরাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা বন্ধ করে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে আত্মনিয়োগ করত তাহলে মহাবিশ্বের আরো অনেক নতুন তথ্য ও তত্ত্ব উদঘাটিত হতো। কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল ইজ্জত বলেছেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের মালিকানা একমাত্র আল্লাহর।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘তিনি যাকে খুশি সাম্রাজ্য দান করেন।’ মহানবী সা: সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আপনাকে আমি মহাবিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ সে কারণে বলা যায়, মহাবিশ্বের সব নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা মানবজাতি তথা মহানবীর জন্য সৃজন করেছেন। মানবজাতি তাদের প্রয়োজনে মহাবিশ্বের যেকোনো সম্পদ ব্যবহার ও ভোগ করতে পারে। মানবজাতির আদি নিবাস সম্ভবত এশিয়াতে। ১৪৯৮ সালের আগে আমেরিকা মহাদেশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল না। সপ্তদশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ বহির্বিশ্বের কাছে ছিল অজানা। ১৮২০ সালের আগে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের মানুষের স্পষ্ট ধারণা ছিল না। অথচ বর্তমানে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে পৃথিবীর মানবজাতির ব্যাপক অংশ বসবাস করে। কেবল তাই নয়, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া বর্তমানে পৃথিবীর শক্তিশালী দু’টি মহাদেশের নাম। মানুষ অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা, অচেনাকে চেনার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছে, এখনো করছে। বর্তমানে পৃথিবী নামক গ্রহ জনসংখ্যায় ভারাক্রান্ত।

বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস বলেছেন, ‘বর্তমান পৃথিবী ৭০০ কোটি জনসংখ্যার ভর বহনে অক্ষম। সে কারণে পৃথিবী নামক গ্রহের পক্ষে জীবনোপকরণের মান সরবরাহ করার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার মানবজাতির জন্য এখনই নতুন বসতির সন্ধানের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’ আল্লাহ কত বিশাল মহাবিশ্ব সৃজন করেছেন, আমরা তা কল্পনা করতে পারি না। মহাকাশ গবেষকরা মহাবিশ্বের গবেষণা নিয়ে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছেন। তবে তাদের সে গবেষণার অগ্রগতি মহাকাশের প্রথম আকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমরা জানি, কুরআন পাকে স্পষ্ট ঘোষণা, আল্লাহ ছয়দিনে সাত আসমানকে সৃজন করেছেন। মহানবী সা:-এর মিরাজে যাওয়ার আগে মানবজাতির অন্য কেউ মহাকাশ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞানার্জন অথবা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হননি। পবিত্র মিরাজের ঘটনা মানবজাতিকে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। মূলত আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সর্বোত্তম স্রষ্টা ও পালনকর্তা। সে কারণে তিনি কোনো প্রাণী সৃষ্টির আগে তাদের আহার ও বাসস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেন। প্রাণিকুল বিশেষত, মানবজাতি অনুকূল পরিবেশে নিজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশকে নিজের অনুকূলে খাপ খাইয়ে নেয়। সর্বশেষ মহাকাশ গবেষণায় মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব বিষয়ে গবেষণা চলছে। গবেষকরা মহাকাশে বিশেষত মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন।

মূলত, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত প্রাণিকুলের খাদ্য ও বাসস্থানের পরিবেশকে সংরক্ষিত করেই প্রাণিকুলের বিস্তার ঘটাচ্ছেন। মানুষ স্রষ্টার সে আনুকূল্য লাভ করার মানসিকতা অর্জন করতে পারেনি। তাই তারা স্রষ্টার দেয়া জীবনোপকরণের আনুষঙ্গিক বিষয়াদি আবিষ্কার করেই স্রষ্টার অনুগ্রহের কথা ভুলে যায়। নিজেকে আবিষ্কারক বা জ্ঞানের আধার হিসেবে প্রচার করে থাকে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের নতুন কোনো গ্রহে বা উপগ্রহে মানবজাতিকে স্থানান্তর করা একান্ত কর্তব্য। মানুষ পৃথিবীতে ভূমির দখলদারি এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভুত্ব বিস্তার নিয়ে মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত; যে কারণে মানুষ নিত্যনতুন ও কৌশলগত সমরাস্ত্র তৈরির পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করে চলেছে। ভূপৃষ্ঠে, সমুদ্রগর্ভে এমনকি মহাশূন্যে যুদ্ধাস্ত্রের রিজার্ভ বা মজুদ গড়ে তুলেছে। প্রতিযোগিতামূলক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের গুণগত মান যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, পৃথিবীতে পারমাণবিক অস্ত্রের যুদ্ধ শুরু হলে তা অল্পক্ষণেই সমগ্র পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবে। আমরা জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। যে বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় নিমিষেই ঘটেছিল লাখ লাখ লোকের প্রাণহানি। অগুনতি মানুষ এ বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় অদ্যাবধি দুর্বিষহ জীবন যাপন করে চলেছে। মূলত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার ছিল একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এ কারণে সে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটেনি। অক্ষশক্তির হাতে তখন কোনো পারমাণবিক শক্তি ছিল না; যে কারণে অক্ষশক্তি মিত্রশক্তির ওপরে পারমাণবিক অস্ত্রের পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম হয়নি।

বর্তমানে একাধিক রাষ্ট্রের হাতে বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ গড়ে উঠেছে। সে কারণে বর্তমানে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে তা একপক্ষীয় যুদ্ধ হবে না। হবে দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধ; যে যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া থেকে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না। সে কারণে বলা যায়, বর্তমানে স্বাভাবিক বা পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে মেধা, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা নির্বুদ্ধিতা। কারণ বর্তমানে পৃথিবীতে আদর্শিক, রাজনৈতিক ও প্রভাববলয় বিস্তারের সঙ্কট যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা সবাই অবহিত। এ আদর্শিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে পারমাণবিক অস্ত্রের যুদ্ধ শুরু হলে কোনো পক্ষই অপর পক্ষকে ছাড় দেবে না। এখন বোদ্ধা ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের কর্তব্য পৃথিবীতে নয়, আমরা আমাদের শ্রম, মেধা ও অর্থ দিয়ে মহাশূন্যে নতুন আবাসন খোঁজার বা নতুন বলয় তৈরির চেষ্টা যেন করি। আল্লাহ তায়ালা সব সৃষ্টির জন্য জন্মের আগে থেকে খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সে কারণে আমরা এ বিশাল মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে অভিযান চালিয়ে মানবজাতির জন্য নতুন আবাস বা আলয় গড়ার চেষ্টা করি। সে ক্ষেত্রে সমগ্র পৃথিবীর জ্ঞানী ও বোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে এ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করি। পৃথিবীতে প্রভাববলয় বা আধিপত্য বিস্তারের হানাহানি বন্ধ করতে হবে। কালামে পাকে আল্লাহ তায়ালা মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এ দুইয়ের মধ্যে যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই সেগুলো সমবেত করতে সমর্থ।’ (সূরা শুরা, আয়াত-২৯, পারা-২৫) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা বলতে পারি, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী’ বলতে আল্লাহ মহাবিশ^কে বুঝিয়েছেন।

আমরা জানি, পবিত্র কালামে পাকের বর্ণনা অনুযায়ী, মহাবিশ্বে সাতটি আকাশ রয়েছে। মহানবী সা: পবিত্র মিরাজ শরিফের রাতে সাত আসমান পরিভ্রমণ করেছিলেন, যা কুরআন ও হাদিসে প্রমাণিত। আমরা এক আকাশের রহস্যও কিঞ্চিৎ উদঘাটন করতে পর্যন্ত সমর্থ হইনি। সে কারণে আসুন, এই পৃথিবীর দখলদারি নিয়ে হানাহানি না করে, সম্মিলিতভাবে আমরা মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে প্রাণের উপযোগী পরিবেশ অনুসন্ধান করি। বর্তমান পৃথিবীর মানবজাতি ও আগামী প্রজন্মের মানবজাতির জন্য বসবাসের উপযুক্ত আবাসন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি।


আরো সংবাদ



premium cement