১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, ৩৬৫ দিনই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, ৩৬৫ দিনই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস - ছবি : সংগৃহীত

ভালোবাসা এক পবিত্র ও স্বর্গীয় অনুভূতি যার উৎপত্তি মনের গহীন থেকে এবং এর ব্যাপ্তিও অনেক, সীমান্ত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে, দিগন্ত থেকে আকাশচুম্বী। যেমনটি আমরা দেখতে পাই মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা, ভাইবোনদের প্রতি পারস্পরিক ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, আত্মীয়ের প্রতি ভালোবাসা, দরিদ্রের প্রতি ধনীর ভালোবাসা, ভৃত্যের প্রতি মনিবের ভালোবাসা যেন এক ঐশী সূধা, এই ভালোবাসাকে সাধারণ কোনো কথা দিয়ে সংজ্ঞায়িত যেমন করা যাবে না ঠিক তেমনি এর ব্যপ্তিও বোঝানো যাবে না।

ভালোবাসা যুগান্তকারী নজির দেখিয়েছেন ছোট্ট বায়েজিদ বোস্তামি, মায়ের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে পানি হাতে সারারাত মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়েছিলেন, আবার নবী ইয়াকুব আ: তারই পুত্র ইউসুফ আ:-এর চিন্তায় কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, অন্যদিকে ইউসুফ আ: তার ভাইদের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্ত উদাহরণ দেখিয়েছেন তাদেরকে মাফ করে দিয়ে যারা কিনা তাকে খুন করতে চেয়েছিল। আমরা ইতিহাস থেকে এটিও দেখতে পাই নবী আইয়ুব আ:-এর প্রতি তার স্ত্রী রহিমার অগাধ ভালোবাসা, আবার অন্যান্য স্ত্রীসহ আয়েশার রাঃ প্রতি মুহাম্মদ সা. নিখাদ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে রাসূল সা. অনেক সময়ে আয়শা রা.-কে হুমায়রা (ছোট্ট লাল পাখি) বলেও ডাকতেন। এই ভালোবাসা হলো ঐশী ভালোবাসা যেখানে নেই কোনো স্বার্থ, নেই কোনো ভেজাল, নেই কোনো কুটিলতা ও জটিলতা বরং রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, স্বস্তি, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, দয়া ও প্রশান্তি।

আর এই ভালোবাসার মানদণ্ডও হবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি, যেমনটি হাদিসে বলা হয়েছে- ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।' (আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং ২০৩৪১)। অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে- ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়। ১. আল্লাহ ও রাসূল সা. তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয় হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালোবাসা। ৩. কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা।’’(বুখারি, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং : ১৫)

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুহসিনদের ভালবাসেন।’ (বাকারা-১৯৫)।অন্যত্র বলা হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’(বাকারা-২২২)এবং ‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’ (ইমরান-৭৬)। সৎকর্ম করা, পবিত্রতা অবলম্বন করা, এবং তাকওয়া অবলম্বন করা একে অন্যের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে আকড়িয়ে ধরার কোনো সুযোগ নেই।মানুষের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহর কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়া।আল্লাহ কাদেরকে ভালোবাসেন তাদের কিছু চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের কথাও বলে দিয়েছেন।

২৬৯ সালের দিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন'স নামে এক খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারক বা পাদ্রি ও চিকিৎসক ইতালির রোম শহরে বসবাস করতেন।এই ধর্ম প্রচারক একদিকে যেমন ধর্ম প্রচার করতেন, অন্যদিকে তরুণ, যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা ও পরিণয় সূত্রের দীক্ষাও দিতেন। তাই তরুণদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু ইতালিতে তখনও খ্রিস্টীয় ধর্ম প্রচার ছিল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তাই খ্রিস্টীয় ধর্ম প্রচারের অভিযোগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি যখন জেলখানায় বন্দি তখন জনৈক এক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে করে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। কারারক্ষীর ওই মেয়ে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবাসতে থাকে বা তার প্রেমে পরে যায়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ইতালির তৎকালীন রাজা রাষ্ট্রীয় এক ফরমানের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

পরে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন স্মরণে 'ভ্যালেন্টাইন ডে' বা ভালোবাসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।তখন থেকেই মূলত এই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বিশ্বের কিছু কিছু দেশে পালিত হয়ে আসছে। তবে এই দিবসকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে অতিমাত্রায় মদ্যপান ও যৌনতা (যা খ্রিস্টীয় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিরোধী) বৃদ্ধির অভিযোগে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইন দিবসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডের প্যুরিটিয়ানরা (প্রোটেস্টান খ্রিস্টিয়ান যারা চার্চ অফ ইংল্যান্ডকে রোমান ক্যাথলিক অনুশীলন থেকে বিশুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন) একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশ যেমন অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে ভ্যালেন্টাইন দিবস নিষিদ্ধ হয়েছে।এশিয়ার সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ও ইরানসহ অনেক দেশেই ভ্যালেনটাইন দিবস পালন নিষিদ্ধ। পাশের দেশ ভারতের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ভ্যালেনটাইন দিবসের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। যেমন চন্দ্র প্রকাশ কৌশিক টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, 'আমরা প্রেমের বিরোধী নই, তবে যদি কোনো দম্পতি প্রেমে থাকে তবে তাদের অবশ্যই বিয়ে করা উচিত।' তিনি আরো বলেছেন, 'দম্পতিরা যদি দাবি করেন যে তাদের বিয়ের কথা চিন্তা করার জন্য সময় প্রয়োজন, তবে আমরা তাদের বলব যে তারা যদি নিশ্চিত না হয় তবে প্রকাশ্যে একসাথে ঘুরে বেড়িয়ে তাদের প্রেমকে ঘৃণার পাত্র করা উচিত নয়। আর যদি তাই করে, তবে আমরা তাদের বাবা-মাকেও জানিয়ে দেব।' ভারতের আরেকটি রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী বলেছেন, ‌"রোম্যান্স উদযাপন কিশোর গর্ভাবস্থাকে উৎসাহিত করবে এবং ভারতীয়দের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে রোম্যান্সের ধারণাটি নষ্ট করার পরিবর্তে বরং বাবা-মা এবং সন্তানের মধ্যে ভ্যালেনটাইন দিবসের পরিবর্তে 'পিতামাতার পূজা দিবস' করা দরকার।" যে যুক্তিতে আজকালকার তরুণ তরুণীরা এই প্রেমকে জরুরি মনে করে তা হল যে একটু চেনাজানা না হলে, যাচাই না করে তার সাথে কি সংসার করা যায়? প্রশ্ন হল যাচাই করে ভালো না লাগলে তাহলে সরে যাবেন? পরে সমস্যা হবার চেয়ে আগেই কেটে পড়া ভালো! সত্যি কি তাই? যারা প্রেম করে নানা ঘাটের পানি খেয়ে, যাচাই করে নিয়ে সংসার করেন তাদের কি ভাঙ্গন নেই? তাহলে কি কারনে এই ভালবাসার মতো একটা শান্তিময় বিষয়কে আমরা উন্মাদনার দিকে কেন ঠেলে দিচ্ছি?

৯০-এর দশক থেকে বিশেষ করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কূট চক্রান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৯৩ সাল থেকে শুরু হয় ভ্যালেনটাইন দিবস পালন। একই বছর এই দিবস পালনকে বিশেষ ভাবে মিডিয়া কাভারেজে দেয় কিছু অপরিণামদর্শী মিডিয়াকর্মী। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা এই দিবসকে লুফে নেয় এক থাবায়, সেই থেকে শুরু হলো বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন। আর এই দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নানা ধরণের প্ল্যান-প্রোগ্রাম, বিপিনন বাণিজ্য, অশ্লীলতা আরো কত কিছু।

ধীরে ধীরে এই দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নানাবিধ অনুষ্ঠান, কর্মসূচি, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি যেমন-তরুণ-তরুণী, যুগল-যুগলী, কপত-কপোতী ১৪ ফেব্রুয়ারিতে মিলিত হয় কোনো এক জায়গায়, তারপর হাতে, গালে, কপালে, থুতনির নিচে উল্কি আঁকা, নিজর্নে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে প্রেম বিনিময় করা, এক সাথে লাঞ্চ, পরে ডিনার করা, পূর্ব নির্ধারিত কোনো হোটেলে যাওয়া, কারো ফ্ল্যাটে যাওয়া সেখানে ভালোবাসার আদান-প্রদান করা, এমনকি শারীরিক সম্পর্ক করা, সবকিছু ঠিক থাকলে এক সাথে রাত্রি যাপন করা ইত্যাদি ইত্যাদি। তরুণ-তরুণীরা তেমন চিন্তা না করে, পরিস্থিতির মধ্যে পরে বা শয়তানের প্ররোচনায় পরে এবং ১৪ ফেব্রুয়ারির আবেদনে সাড়া দিয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পরে, যা ভালোবাসার নামে নোংরামি, ভ্রষ্টতা, ও অশ্লীলতা ছাড়া আর কিছু কি? অথচ আমাদের সামনে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক হাদিস যেখানে নারী ও পুরুষকে সাবধান করা হইয়েছে এই ভাবে- 'যখন কোনো পুরুষ নিজর্নে একাকী কোনো নারীর সাথে মিলিত হয়, সেখানে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান' (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবি -৩১৮৮)।

বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত, ও গবেষণার ভাষ্যমতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ফলে বিভিন্ন সামাজিক ও শারীরিক সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হয়।সামাজিক ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে-

সমাজ বিজ্ঞানী ও মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা সর্বাগ্রে অর্থের ও সময়ের অপচয় কথা বলেছেন। ভালোবাসা দিবস পালন করতে তরুণ-তরুণীকে যথেষ্ট রকমের সময়ের অপচয় করতে হয় এই দিবস উদযাপনকে ঘিরে, এই দিনে তারা কী করবে, কোথায় যাবে, কিভাবে উৎযাপন করবে এগুলো ভেবে তারা প্রায়ই হন্ত-দন্তহীন হয়ে পরে। পাশাপাশি, বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডকে কী উপহার দিবে, কোথায় তারা লাঞ্চ করবে, কোন হোটেলে বুকিং দিবে, কোন রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি কিনবে, কেমন হবে তাদের Identical কেক ও কার্ড, perfect gifts and the fanciest dinner অর্ডার দেয়া ইত্যাদি। এই দিবসকে প্রমোট করার জন্য কিছু সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী তো রেডিই আছে। ১৪ ফেব্রুয়ারিকেন্দ্রিক জিনিসপত্রের দাম থাকে অনেক বেশি।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে ২০১৭ সালে শুধু আমেরিকায় এই দিবস পালন করতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাবধান করে বলেছেন, 'নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই, আর শয়তান হলো তার প্রভুর প্রতি বড়ো অকৃতজ্ঞ' (বাণী ইসরাইল-২৭)। বাংলাদেশে এইরকম কোন পরিসংখ্যান ও গবেষণা না থাকলেও তরুন-তরুণীদের আর মিডিয়ার হুলুস্থুল দেখে সহজেই অনুমেয় যে কী পরিমাণ খরচ হতে পারে। একটি বিজাতীয় অপসংস্কৃত পালন করতে যে পরিমান সময় ও অর্থের অপচয় হয়, তা যদি দেশ ও জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য ব্যয় করা যেত, তাহলে নিঃসন্দেহে দেশের কল্যাণ হতো বৈকি।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আরেকটি সাংঘাতিক দিক হলো অল্প বয়সে তরুণীর গর্ভধারণ ও গর্ভপাত বৃদ্ধি পাওয়া। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে তরুণ-তরুণীর মধ্যে বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস, উত্তেজনা অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। যার ফলে তারা শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত হয় এবং অনেক সময়ে অতি অল্প বয়সেই তরুণীটি গর্ভধারণ করে থাকে।England's National Health Service-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুসারে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের সপ্তাহে প্রায় ১৬২৬৩ জন শিশু গর্ভধারণ করেছিলেন।অন্যান্য সপ্তাহের মধ্যে এটি ৬% বেশি। তবে খ্রিষ্টমাস ও থার্টি ফাস্ট নাইটে এই গর্ভধরণের মাত্রা আরো বেশি। এই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ফলে তরুণ-তরুণীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে ও নানা মানসিক সমস্যা শুরু হয়। সিএনএনের ভাষ্যমতে ২০১৬ সালে আমেরিকার জনসংখ্যার প্রায় ৪৭.৩% যাদের বয়স ১৮ অথবা উপরে তারা তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা, ও বিচ্ছেদপ্রাপ্ত অবস্থায় পতিত হয়, যা কিনা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১৫.৭৮ মিলিয়ন। এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের মাত্রা ও কুফল। বাংলাদেশে এই রকম পরিসংখ্যান না থাকলেও অপ্রাপ্ত বয়সে মা হওয়া এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাতের মাত্রা বেড়েই চলছে। অথচ বিবাহ-বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ককে কোনো ধর্মই সমর্থন করে না।আল্লাহ তায়ালা সাবধান করে নিষেধ করেছেন যে, তোমরা কোনোরকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে বা গোপনেই হউক না কেন (আনাম-১৫১)। এ থেকে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া যায় যে বিবাহ বহিঃর্ভূত শারীরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে হারাম।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস শুধুমাত্র সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিই সাধন করে না বরং মানুষের ঈমান, আকিদা, ধর্মীয় মূল্যবোধকেও ধ্বংস করে থাকে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন একটি হারাম কাজ এই ব্যাপারে বিশ্বের সমস্ত ওলামা মাশায়েখ একমত। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের মতো একটি হারাম, ঘৃণ্য, জঘন্য, অশ্লীল ও বেহায়াপনা দিবসকে সামাজিকিকরণের হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন মিডিয়া ও কোম্পানির যৌথ প্রযোজনায়। অথচ প্রকাশ্যে পাপাচার করা ও পাপাচার প্রমোট করাকে একটি বড় অপরাধ ও গর্হিত কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে নবী কারিম স. বলেছেন, ‘'আমার সকল উম্মাত মাফ পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত।'

আল্লাহ তায়ালা গোটা বছরের ৩৬৫ দিন দিয়েছেন নির্মল ও নিখাদ ভালোবাসার জন্য। আপনার পিতা-মাতা, ভাইবোন, দাদা-দাদি, নানা-নানি, আত্মীয়-স্বজন, ভালো বন্ধু বান্ধব যারা আপনাদের জীবনে প্রভাবশালী, গঠনমূলক ভূমিকা রাখেন, তাদের সকলের সাথে ভালোবাসা প্রকাশ করুন, তাদের খোঁজ খবর নিন, তাদের সাথে সময় ব্যায় করুন, তাদেরকে নিয়ে ঘুরতে যান, একসাথে রেস্টুরেন্টে খাবার খান, তাদেরকে একটি ফোন করুন, কফি খাওয়ার জন্য বাইরে নিয়ে যান, তাদেরকে উপহার দিন, এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ছোট প্রকাশ ভঙ্গিগুলোর আপাত দাম খুবই কম, তবে অবিশ্বাস্যরূপে এর অর্থবহ প্রভাব রয়েছে। তাই ভালোবাসা প্রকাশ বা উদযাপন করার জন্য বিশেষ কোনো দিন (ভ্যালেন্টাইন ডে) ও অনৈতিক সম্পর্কের (বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের) প্রয়োজন নেই। বরং বছরের প্রতিটি দিনকে একেকটি ভালোবাসা দিবস মনে করে তাদের খোঁজখবর নিন ও পারস্পরিক সম্পর্ককে আরো মজবুত ও সুদৃঢ় করুন। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া একটি ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। আমরা যে ঘনিষ্ঠ সামাজিক সম্পর্কগুলো রক্ষা করি, বিকশিত করি তা কেবল আমাদের সুখকে বাড়িয়ে তোলে আর মানসিক চাপ হ্রাস করে তাই নয়, বরং স্ব-মূল্যবোধের বোধকে বিশাল উচ্চতায় নিয়ে যায়, জীবনকে করে তোলে আরো মধুময়, আরো বেশি কল্যাণকর, ঐশী সুধা যেন এই মর্তেই পাওয়া যায়, আর পারস্পরিক সম্পর্ক হয় আরো বেশি ঘনিষ্ঠ।

লেখক : সলিসিটর, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস


আরো সংবাদ



premium cement