২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আর্য-বিষয়ক বিতর্ক ও সত্য তালাশ

-

জ্ঞানচর্চার নানা দিগন্তে ম্যাক্সমুলার (১৮২৩-১৯০০) ও স্যার উইলিয়াম জোন্স (১৭৪৬-১৭৯৪) গুরুত্বপূর্ণ নাম। আমরা যখন আর্যদের বিষয়ে অনুসন্ধান করি, তখনো তাদের নামই সবার আগে সামনে আসে। তাদের বিচারে আর্য একটি ভাষাগোষ্ঠীর নাম। আর্য ভাষায় যারা কথা বলে, তারা আর্যজাতির অন্তর্ভুক্ত।

এ গবেষণাধারা শুরু হয় ষোড়শ শতকে। ইউরোপীয় গবেষকদের অনেকেই ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে তুমুল আগ্রহী হন। গোয়ায় আগত ব্রিটিশ জেসুইট পাদ্রি Thomas Stephens (১৫৪৯-১৬১৯) ১৫৮৩ সাল নাগাদ গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার সাথে সংস্কৃতের সাদৃশ্যের উল্লেখ করেন নিজের ভাইয়ের কাছে লেখা এক পত্রে। ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে গোয়ায় আগত বণিক ফিলিপো সসেটি এখানে অবস্থান করেন ১৫৮৩-১৫৮৮ সাল। শেখেন সংস্কৃত। এরপর তিনি লক্ষ করেন, সংস্কৃত ও ইতালীয় বহু শব্দে মিল রয়েছে। ১৫৮৫ সালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি এ নিয়ে আলোকপাত করেন।

এরপর আর্যদের ইতিহাস বিশ্লেষণে আসে নতুন দৃষ্টিকোণ। একে আরো শক্তিশালী করেন Gaston-Laurent Coeurdoux (১৬১৯-১৭৭৯) অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ইত্যাদি এলাকায় করেন খ্রিষ্টবাদের প্রচার। শেখেন সংস্কৃত ও তেলেগু ভাষা। রচনা করেন তেলেগু-ফরাসি-সংস্কৃত অভিধান। দেখান তিন ভাষার বিপুল সাদৃশ্য। এরপর এ প্রশ্ন জোরালো হয়ে ওঠে যে, এ মিলের উৎস কোথায়?

ডাচ পণ্ডিত Marcus Zuerius van Boxhorn (১৬১২-১৬৫৩) হাজির করেন স্কিথিয়ান নামে এক আদিম ভাষার বয়ান, যা থেকে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ভাষা।

সংস্কৃত, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার উৎস হিসেবে এক আদিভাষার উল্লেখ করেন উইলিয়াম জোন্স। এক্ষেত্রে তিনি ব্যাকরণ ও ভাষাতাত্ত্বিক বিবিধ উপাদান পর্যালোচনা করেন। ম্যাক্সমুলার সবলে পেশ করেন ‘ইন্দো-এরিয়ান’ বা ‘ইন্দো-আর্য’ ভাষাগোষ্ঠীর কথা। দাবি করেন, বিভিন্ন ভারতীয় ভাষাগুলো এই ‘ইন্দো-আর্য’ ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাপরিবারের উল্লেখ করেন ব্রিটিশ গবেষক থমাস ইয়ং (১৭৭৩-১৮২৯)। যাতে আছে হিন্দি, ইংরেজি, ল্যাটিন, ফারসি, রুশ, বাংলা, জার্মানসহ বহু ভাষা। বিশ্বের সবচে বৃহৎ ভাষাপরিবার এটি। আসে আর্য সংক্রান্ত ভাষাতাত্ত্বিক সংজ্ঞা। বলা হয়, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত যেকোনো ভাষা যদি কোনো ব্যক্তির মাতৃভাষা হয়, তবে তিনি আর্য। কিন্তু এ থেকে আমরা যে প্রশ্নের জবাব পাই না, সেটা হলো, আর্যরা এলো কোথা থেকে?

হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এর জবাবে বিবিধ গবেষণার তথ্য সামনে এনেছেন। যেমন, পণ্ডিত কোসিনারের মতো গবেষকদের দাবি, আর্যদের আদি বাসভূমি ছিল উত্তর ইউরোপীয় উপত্যকায়। বাল গঙ্গাধর তিলক প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, প্রাচীন আর্যজাতির বাস ছিল ৬০০০ খ্রিষ্টপূর্ব শতাব্দীতে উত্তর মেরু অঞ্চলে। অধ্যাপক জে এল মায়ার্স, হ্যারল্ড পিক এবং চাইল্ড মনে করেন খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় সহস্রাব্দে এদের নিবাস ছিল দক্ষিণ রাশিয়াতে এবং তার পূর্বাঞ্চল কাস্পিয়ান সাগরের তীরে।

স্টুয়ার্ট পিগোটের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ শতাব্দীর পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে উত্তর-পশ্চিম থেকে ভারত একাধিক জাতি কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছিল। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী মানুষও তাদের অন্যতম ছিল। ইংরেজ ঐতিহাসিক হুইলারের ধারণা, এই সময়ই ঋগে¦দ বর্ণিত প্রাচীন আর্যজাতি উত্তর পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে এবং হরপ্পা সংস্কৃতির ধারক যে মনুষ্যগোষ্ঠী ছিল তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। (ঋগে¦দ-সংহিতা প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৩)

আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান সাতটি ভাষার মধ্যে পাঁচটি এখনো ইউরোপের ভাষা, শুধু সংস্কৃত ও পারসিক ইউরোপের বাইরের। ইউরোপে গ্রিক, ল্যাটিন, জার্মান প্রভৃতি আর্য ভাষাগুলোর যে রকম ঘন সন্নিবেশ আছে, ভারতে তা নেই। ইউরোপে আর্য গোষ্ঠীভুক্ত ভাষার আধিক্যের কারণে বিশেষজ্ঞ অনেকেই মনে করেন, আদিতে আর্যরা ইউরোপেই বাস করতো। সংস্কৃত ভাষায় তালব্য বর্ণের (ন, ং, ৎ) প্রাধান্য দেখা যায়। যা ইউরোপীয় অন্য কোনো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় নেই। তারা মনে করেন, এটা হতে পেরেছে, ইউরোপ থেকে ভারতে আসার পরে দ্রাবিড় ভাষার প্রভাবে। তাদের মতে, আর্যরা ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ভারতে প্রবেশ করেছিল।

বেদ হচ্ছে আর্যদের প্রাচীনতম সাহিত্য। চারটি বেদের মধ্যে ঋগে¦দ প্রাচীনতম। ঋগে¦দের রচনাকাল জানতে পারলে আর্যদের ভারতে আগমনের সময় জানা যায়। জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্সমুলারের মতে, ঋগে¦দ কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে রচিত হয়নি। এর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময় রচিত হয়েছিল। এর রচনাকাল ছিল ১২০০-১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে। অধ্যাপক ব্যাশামের মতে, ঋগে¦দের রচনাকাল ছিল ১৫০০-১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ঋগে¦দ থেকে আর্যদের ভারতে বসতি স্থাপন ও বিস্তার সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে এ সম্পর্কে আরো কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। ঋগে¦দে আছে আফগানিস্তানের কাবুল ও স্বাত, পাঞ্জাবের শতদ্রু, ইরাবতি, চন্দ্রভাগা, বিপাশা, ঝিলাম এবং সিন্ধু ও সরস্বতী নদীর উল্লেøখ। গঙ্গা ও যমুনার উল্লেখ ছিল না প্রথম দিকের বেদগুলোতে। এটি স্পষ্ট করে যে, হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ দিয়ে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে থাকবে এবং প্রথমে আফগানিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বসতি স্থাপন করে থাকবে। আফগানিস্তান সীমান্ত থেকে পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী এলাকাকে তারা বলতো ‘সপ্তসিন্ধু’।

কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। অনেকেই দাবি করেন, আর্যরা মূলত ভারতীয়। তারা দেখাতে চান, আর্যদের প্রাচীন গ্রন্থ বেদ ভারতে রচিত হয়। এতে আছে সপ্তসিন্ধুর উল্লেখ। আছে এমন পশু ও বৃক্ষের উল্লেখ, যা ভারতে রয়েছে। যেমন ঘোড়া, গাভী, সিংহ এবং ওক, বার্চ। কিন্তু প্রথম বক্তব্য দ্বিতীয় বক্তব্যকে খারিজ করে দেয়।

যেহেতু ভারতে তাদের আসার পরে বেদ রচিত হয়েছে, অতএব এতে ভারতীয় পশু ও গাছপালার সাথে ইতোমধ্যে তাদের পরিচয় হয়ে গেছে। এমনকি সেগুলোর অনেকটা ভারতের বাইরেও ছিল। যেমন বার্চ হচ্ছে রাশিয়ান বনের সাধারণ এক গাছ। ওক হচ্ছে ইউরোপের একটি অন্যতম গাছ। আর ঘোড়া, গাভী তো মধ্যপ্রাচ্য মধ্যএশিয়া ইত্যাদিতে ছিল সবসময়ই। ফলত বেদে এর উল্লেখ থাকতেই পারে। বৈদিক সাহিত্যে সিংহের উল্লেখ আছে। সিংহ আছে ভারত ছাড়াও বিশ্বের দেশে দেশে। কিন্তু ভারতীয় প্রাণীদের মধ্যে সিংহের চেয়ে বাঘ ও হাতির ব্যাপকতা রয়েছে। দেখা গেল বাঘ হাতি বা উটের মতো প্রাণী বৈদিক সাহিত্যে অনুপস্থিত। এটি ভারতীয় পশু বা বৃক্ষ সম্পর্কে রচয়িতাদের অপরিচয়ের জানান দিচ্ছে।

বৈদিক সাহিত্যে যেসব গাছপালা ও পশু-পাখির দেখা মিলে, তারা মূলত বাস করে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। আর্যরা গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব বুঝছিল। তারা স্থায়ী বসবাসে অভ্যস্ত হচ্ছিল। গরু, ঘোড়া ও ভেড়ার জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়েছিল। এর মানে কৃষি ও চারণযোগ্য ছিল তাদের আবাসস্থল। স্তেপে জমি ছিল বিস্তর, উঁচু জমি ছিল পর্যাপ্ত। সে হিসেবে অনেকেই অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি অঞ্চলকে তাদের আদিবাসভূমি হিসেবে উল্লেখ করেন।

বৈদিক সাহিত্যে আর্যরা নিজেদের ফেলে আসা স্বদেশের স্মৃতিচারণ করেনি। এ থেকে দাবি করা হয়, আর্যরা আসলে স্বদেশ ত্যাগ করেনি। নতুবা যে জন্মভূমি তারা ছেড়ে এসেছে, এর কথা স্মরণ করাটা ছিল একান্তই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু এরা আগে ছিল যাযাবর। আদিবাসভূমি ত্যাগ করার বহু যুগ পরে বেদ রচিত হয়েছে। সপ্তসিন্ধুতে তারা বসবাস করেছে শত শত বছর। ফলে একেই বেদে উল্লেখ করা হবে, এটা স্বাভাবিক। প্রাচীন বিচরণভূমি ভুলে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

পারগিটার হাজির করেন বিশেষ এক বয়ান। তার মতে, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আর্যদের ভারতে আসার কোনো প্রমাণ ভারতের ইতিহাসে নেই। বরং উত্তর-পশ্চিম হতে আর্যদের ভারতের বাইরে যাওয়া সম্ভব।

ঋগে¦দের নদী স্তোত্রে যে নদীগুলোর উল্লেøখ আছে তা গঙ্গা দিয়ে শুরু হয়ে উত্তর-পশ্চিমে সরস্বতী দিয়ে শেষ হয়েছে। এই নদী স্তোত্র থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, আর্যরা পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে গিয়েছিল।

কিন্তু নদী স্তোত্র দিয়ে এটি প্রমাণ করা যায় না যে, তারা ভারতের ছিল এবং ভারত থেকে গিয়েছিল বাইরে। বৈদিক সাহিত্যে ৩৯টি নদীর নাম আমরা পাই। ঋগে¦দেই আছে ২৫টি নদীর নাম। তবে গঙ্গা নদীর নাম এসেছে কেবল একবার। কিন্তু কেন? আর্যরা যদি ভারতের অধিবাসী হবে, তাহলে গঙ্গার সাথে তাদের পরিচয় কেন এত কম? পূর্ব থেকে তারা যদি পশ্চিমে গিয়ে থাকে, তাহলে গঙ্গার সাথে তাদের থাকা উচিত নিবিড় সম্পর্ক। এর উল্লেখ থাকার কথা বারবার। আদি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় সমুদ্রের কোনো উল্লেøখ মিলে না। তবে কি আর্যদের বসবাস ছিল এমন কোথাও, যা সমুদ্রতীর বা দ্বীপে ছিল না। সেদিক বিচারে প্রফেসর গাইলস মনে করেন, পূর্ব ইউরোপ হয়ে থাকবে তাদের আদিনিবাস।

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, আর্যরা যদি ভারতের বাইরের হবে, তাহলে সেখানে কেন বেদের মতো গ্রন্থ রচিত হয়নি? এ এক ফ্যালাসি। প্রশ্নটি এমন যে, বাংলাদেশ যদি অতীত থেকে বাঙালিপ্রধান হয়ে থাকবে, তাহলে ১৯৭১ সালের আগে কেন বাঙালিরা বাংলাদেশ গঠন করল না? পেছনের ঐতিহাসিক বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত খেয়াল না করার ফলে এ প্রশ্ন জন্ম নেবে। এটি বোধগম্য বিষয় যে, একটি জাতি উন্নত সাহিত্য রচনা সবসময়ই করে আসে না। একটি সময় থেকে তাদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশেষ ঔৎকর্ষ ঘটে। তখন তারা উন্নত সাহিত্যের জন্ম দেয়। এটি অবাস্তব নয় যে, ভারতে আসার আগে বেদের মতো গ্রন্থ রচনা করার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক উন্নয়ন আর্যদের মধ্যে ঘটেনি। এ প্রসঙ্গও গুরুত্বপূর্ণ যে, আর্যদের আদিভূমি যদি ভারতই হতো, তাহলে গোটা ভারতে আর্য বসবাস ও সংস্কৃতির বিস্তার হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু গোটা দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর ভারতের বৃহৎ এলাকা ছিল আর্য সংস্কৃতির প্রভাবের বাইরে।

প্রথমদিকের ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দাবলি আর্যদের বাসস্থানের ভৌগোলিক অবস্থানের ইশারা দেয়। এতে পর্বতমালার পাদদেশে বিস্তীর্ণ স্তেপ ভূমিতে বসবাসের আলামত স্পষ্ট। এসব শব্দে চিত্রিত পরিবেশের বিচারে অধ্যাপক ব্র্যান্ডেস্টাইন মনে করেন যে, উরাল পর্বতের দক্ষিণে কিরঘিজ স্তেপ অঞ্চলই ছিল আর্যদের আদি বাসভূমি। এটিই অধিকাংশ ঐতিহাসিক কবুল করেছেন। ড. অতুল সুর হিন্দু সভ্যতার বুনিয়াদ গ্রন্থে লিখেন, ‘ভাষাতত্ত্ব ও প্রত্নতত্ত্বের ভিত্তিতে আধুনিক পণ্ডিতরা সিদ্ধান্ত করেছেন যে, রুশ দেশের উরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত শুষ্ক তৃণাচ্ছাদিত সমতল ভূখণ্ডই আর্যজাতির আদি বাসস্থান।’

ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দাবলিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের জমি, গাছপালা এবং জীবজন্তুর উল্লেখ এসেছে পরবর্তীকালে। যেখানে শুষ্ক স্তেপ ভূমির বদলে জলাভূমির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যেন গাঙ্গেয় উপত্যকার আবহাওয়া বইছে, ভেজা ও বৃষ্টিবহুল। অতঃপর বৈদিক উৎসগুলোতে সহসা দেখা যায় দুটি সাগর এবং হিমালয় ও বিন্ধ্য পর্বত, যা ভারতে তাদের আগমনের ইশারাবাহী।

কিন্তু আরো অগ্রসর হয়ে দেখব, ঋগে¦দে শুধু ইশারা নয়, আছে আর্য হিন্দুদের ভারতে আগমন সম্পর্কিত তথ্যের স্পষ্ট উপস্থিতি। ড. অতুল সুর জানাচ্ছেন, আর্যরা ছিল যোদ্ধার জাত, আর সিন্ধু সভ্যতার বাহকরা ছিল বণিকের জাত। এই বণিকদের ঐশ্বর্য ও ধনদৌলত আর্যদের মনে ঈর্ষার সঞ্চার করেছিল। সে জন্যই আর্য গ্রামবাসীরা সিন্ধুসভ্যতার নগরসমূহকে ধ্বংস করতে প্রবৃত্ত হয়েছিল। নগরসমূহকে ধ্বংস করে বিজয় গৌরবের উন্মত্ততায় তারা তাদের প্রধান দেবতা ইন্দ্রের নাম রেখেছিল ‘পুরন্দর’। হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেন, বৈদিক যুগের মানুষ ভারতে এসেছিল বাইরে থেকে এবং তারাও প্রাগৈতিহাসিক যুগের অন্তর্ভুক্ত। আগে ধারণা ছিল আদিম ভারতীয়রা অসভ্য ছিল এবং আর্যরাই প্রথমে এসে সভ্যতার বিস্তার করে। কিন্তু সে ধারণা এখন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে ভেঙে পড়েছে।


লেখক : কবি, গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement