২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিশ্ব নবী সা:-এর ব্যঙ্গ চিত্র

বিশ্ব নবী সা:-এর ব্যঙ্গ চিত্র - ছবি : সংগৃহীত

আলহামদুলিল্লাহ! সারা জাহানের মালিকের জন্য সমস্ত প্রশংসা। সময়ের প্রয়োজনে চলমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর লোকেরা কাঁধ কাঁধ মিলিয়ে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা:-এর অবমাননার বিরুদ্ধে যেভাবে মাঠে নেমেছে তার জন্য আবারো বলি আলহামদুলিল্লাহ। আশার কথা, এবারই পুরো মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এটি আশা জাগানিয়া একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। শত মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা মুসলিম। আমাদের গৌরবদীপ্ত ঐতিহ্য রয়েছে। ইসলামের শত্রুরা, আল্লাহ ও প্রিয় রাসূল সা:কে নিয়ে কটূক্তি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি পত্রিকায় ওই দেশের এক অর্বাচীন কার্টুনিস্ট; বিশ্বনবী-বিশ্বনেতা সাইয়্যেদুল মুরসালিন মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে টার্গেট করে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছে। এই ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা তাদের তীব্র ধিক্কার জানাই। হাজারো শুকরিয়া যে, আমাদের জাতি আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। রোষে উত্তাল সারা মুসলিম জাহান। বিশ্বনবী সা:-এর অবমাননা মুসলিম উম্মাহ সইবে না। ওরা মহানবী সা:-এর অপমান করতে পারেনি, পারবেও না। উপরের দিকে থুথু নিক্ষেপ করে আকাশকে কলঙ্কিত করা যায় না। ওই থুথু তাদের দিকে ফিরে আসবে। এই বোধটুকু তাদের নেই। তবে এতে এই সম্প্রদায়ের হীন মনমানসিকতা ধরা পড়েছে। ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে মুসলিম জাতি। আসলে আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তবমুখী কর্মপন্থার মাধ্যমে এসব মানসিক প্রতিবন্ধীর অনৈতিক অপতৎপরতার জবাব দিতে হবে। এর জন্য প্রথমেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। জাতির ভেতরে অনৈক্য-জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে দেয়। আর এই সুযোগের অপেক্ষায় ইসলামের শত্রুরা ওঁৎ পেতে থাকে এবং তাদের বিষদাঁত দিয়ে তারা মুসলিম জাতিসত্তার ওপর মরণ কামড় হানে।

সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরআন কারিমে মুসলিমদের উদ্দেশ করে বলেছেন,
‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রুজুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরো আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৩) বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে মুসলিম জাতি নিজেরাই নিজেদের সাথে মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত! আর অমুসলিম সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই সুযোগে মুসলিম জাতির হৃৎপিণ্ডে বারবার তীর ছোড়ার সাহস পাচ্ছে। আদর্শিক বিরোধিতার জবাব আদর্শের মাধ্যমে দিতে হবে। মহানবী সা:কে আমরা ভালোবাসি বললেই হক আদায় হয়ে যাবে না। মহানবী সা:-এর প্রতি যে আসমানি বিধান অবতীর্ণ হয়েছে, তা জানা ও মানা এবং সেই অনুসারে বিশ্বনবী সা: আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁকে মর্যাদা দেয়া হবে এবং নবী করিম সা:কে ভালোবাসার হক যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হবে। ইসলাম বিশ্বমানবতার ধর্ম। ইসলামী জীবন বিধান পবিত্র আল কুরআন, যে মহামানবের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি, সেই মহামানবের আদর্শকে, বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আবেগের বশে বন্ধুকের নলের সামনে বুক পেতে দেয়া সহজ কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে বাস্তবমুখী কর্মপন্থা গ্রহণ করাই সময়ের অপরিহার্য দাবি।

বিশ্ব ইতিহাসের সর্বোত্তম মানুষ, সেরাদের সেরা মুহাম্মদ সা:কে উদ্দেশ করে ফ্রান্স ব্যঙ্গচিত্র বানিয়েছে। এই সব জ্ঞানপাপী পথভ্রষ্টদের উদ্দেশে বলছি, বিশ্বনবী-বিশ্বনেতা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর সুমহান চরিত্রের কোন দিকটি নিয়ে তোমরা ব্যঙ্গ করতে পার? কিসের ভিত্তিতে তোমরা তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করবে? তিনি তোমাদের অবাধ যৌনাচার, সমকামিতা, বেহায়াপনা কালচারবিরোধী- তাই বলে? সুদি ব্যাংক ব্যালেন্স, ক্যাসিনো ব্যবসা, মদ, জুয়া ইত্যাদি আত্মবিনাশী ক্ষতিকর জীবন ধারা থেকে তাঁর অনুসারীদের দূরে থাকতে বলেছেন এবং চিরকালের জন্য এসব মত ও পথকে পরিহার করে চলার জন্য, স্বয়ং তার রবের পক্ষ থেকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তাই? নৈতিক দেউলিয়াপনার পথিকৃৎ জাতি ফ্রান্স! নিকৃষ্ট মানসিকতার প্রতীক কার্টুন আর নৈতিকতার উচ্চমার্গে অধিষ্ঠিত বিশ্বনবী-বিশ্বনেতা মুহাম্মদ সা:-এর মানবিক মর্যাদার মূল্যায়ন করার মতো নৈতিক মনোবল তোমাদের নেই। তোমাদের অনৈতিক উচ্ছৃঙ্খল জীবন ধারার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মানুষ ইউরোপে সর্বাধিক হারে ইসলাম গ্রহণ করছে! আর এ জন্যই কি তোমাদের এত রাগ?
তারা ‘বিশ্ব মানবতার মুক্তির একমাত্র গাইড’ হিসেবে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা:কেই বেছে নিয়েছে।

আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা কি জানো পবিত্র আল কুরআনের সেই বার্তা যা তোমাদের নোবেল প্রাইজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে? আল কুরআন বলে, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি। তোমাদের উত্থান হয়েছে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে। তোমরা সৎকর্মের আদেশ দেবে; অন্যায় কাজ থেকে (মানবজাতিকে) বিরত রাখবে। আর বলবে ‘আমি মুসলমান’। (সূরা আলে ইমরান : ১১০)

নোবেল প্রাইজের প্রশ্ন এখানে এ জন্যই এসেছে যে, চলমান বিশ্বে এই প্রাইজকে মানুষ অনেক বড় দুর্লভ সম্মানজনক প্রাপ্তি মনে করে। আমরাও করি। নোবেল শান্তি পুরস্কার কিছু মানুষের কর্মের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার। এই পুরস্কারপ্রাপ্তরা তাদের বিভিন্ন কর্মের অবদান হিসেবে এটা পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের এই মর্যাদা জাগতিক জীবনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মানুষ মৃত্যুহীন নয়। কত দিন এই খ্যাতি তারা উপভোগ করতে পারবেন? এটি একটি সীমাবদ্ধ রেওয়াজ। দাতা এবং গ্রহীতা কেউ এই গ্যারান্টি দিতে পারবেন না যে, এই সম্মান সুখ্যাতি মৃত্যুর পরবর্তী জীবনেও তারা ভোগ করতে পারবেন।

তবে পবিত্র আল কুরআন এই গ্যারান্টি দিচ্ছে! আগেই উল্লিখিত হয়েছে, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মুসলিম জাতিকে উদ্দেশ করে বলেছেন- (এখানে পুরো মানবজাতি কারণ যেকোনো জাতির সদস্যই হোক না কেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সা:-এর আনুগত্য মেনে নেবে তিনিই মুসলিম। আল্লাহ সুবহানা তায়ালা মুসলিম নামে আলাদা করে কোনো জাতি সৃষ্টি করেননি। দেখা যাচ্ছে যে, ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ যারাই ইসলাম গ্রহণ করে তিনিই মুসলিম। বিন্দু মাত্র পার্থক্য কোথাও নেই।)।

‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি! তোমাদের উত্থান (বিশ্ব মাঝে) হয়েছে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে।’
বিশ্ব মানবতার কল্যাণ করাই ছিল বিশ্বনবী-বিশ্বনেতা মুহাম্মদ সা:-এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। নবী করিম সা:-এর আনুগত্য ও অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে বিশ্ব মানবতার কল্যাণ। পাপ-পঙ্কিল জীবন ধারার অন্ধকার পথের পথিকদের আলোর পথে এনেছে ইসলাম।

সূরা আসরে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, সময়ের শপথ! সমস্ত মানুষ ক্ষতির (বা ধ্বংসের) মধ্যে অবস্থান করছে, তারা বাদে, যারা ঈমান এনেছে; সৎ কাজ করেছে; একে অপরকে হকের দাওয়াত দেয় এবং ধৈর্য ধারণের জন্য পরস্পরকে উৎসাহ দেয়। সূরা আসরে ঈমানের পরেই সৎ কাজকে মুখ্য উদ্দেশ্য করা হয়েছে। পুরো কুরআন কারিমে সৎ কাজের কথা রয়েছে।

‘যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে অবিচ্ছিন্ন পুরস্কার।’ (সূরা ইনশিকাক : ২৫)
এই পুরস্কার হচ্ছে, মুসলমানদের জন্য নোবেল প্রাইজের চেয়েও শ্রেষ্ঠ; যার স্থায়িত্ব অনন্তকাল। এমন পুরস্কারের ঘোষণা পুরো কুরআন কারিমে অসংখ্যবার দেয়া হয়েছে।

চলমান বিশ্বে মুসলিম জাতির ইসলামী স্কলাররা এই দায়িত্ব পালন করছেন। ইসলামী সমাজের কিছু আগাছা পরগাছাকে আমরা ধর্তব্যের মধ্যে আনি না। এখানে আমরা কিছু অমুসলিম পক্ষপাতহীন জ্ঞানী মানুষের বিশ্ব নেতাদের যাচাই-বাছাইয়ের দু-একটি তথ্য তুলে ধরছি।

সর্বশ্রেষ্ঠ

‘১৯৭৪ সালের ১৫ জুলাই সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘Jime’ এ বিভিন্ন ইতিহাসবেত্তা, লেখক, মিলিটারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং অন্যদের মতামত প্রকাশ করা হয় এ বিষয়ের ওপর-

Who were historyÕs great leaders? অর্থাৎ ইতিহাসের শ্রেষ্ঠনেতা কারা ছিলেন? কেউ বলেছেন হিটলার, কেউ বলেছেন- গান্ধী, বুদ্ধ, লিঙ্কন এবং এ রকম আরো অনেকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাইকো অ্যানালাইস্ট জুলমেসারম্যান এ ব্যাপারে বিবেচনার সঠিক মাপকাঠি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন- ‘নেতাদের অবশ্যই তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। ১. অনুসারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ব্যবস্থা করা; ২. মানুষের জন্য সামাজিক সংগঠন কায়েম করা যেন তারা নিরাপত্তা বোধ করতে পারে? ৩. তাদেরকে এক বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত করা।

এ তিনটি মাপকাঠি নিয়ে তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব খুঁজেছেন এবং হিটলার, লুই পাস্তুর, সিজার, কনফুসিয়াস এবং আরো অনেককে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘পাস্তুর এবং সাল্কের মতো ব্যক্তিরা প্রথম ক্ষেত্রের নেতা। এক দিকে গান্ধী ও কনফুসিয়াস এবং অন্য দিকে আলেকজান্ডার, সিজার ও হিটলারের মতো ব্যক্তিরা দ্বিতীয় হয়তো বা তৃতীয় স্তরের নেতা। ঈসা, বুদ্ধ প্রমুখ ব্যক্তিরা তৃতীয় ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। হয়তো বা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা মুহাম্মদ সা: যিনি এই তিন স্তরেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মুসাও একই কাজ করেছেন তবে কম মাত্রায়।’ (খ্রিষ্টান বর্মতত্ত্ব ও ইসলামী বই থেকে, লেখক : আহমদ দীদাত)
ভারতের কর্নাটকের সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপক রামা কৃষ্ণা রাও তার ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা: বই এ বিশ্ব নেতাদের যাচাই করার তিনটি সূত্র উল্লেখ করেছেন।

১. তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে তিনি কি তেজস্বিতায় সত্যি সত্যি ভাস্বর ছিলেন? ২. তিনি কি মহত্ত্বের সমুন্নতিতে এমন উচ্চ মার্গে অধিষ্ঠিত ছিলেন যে, তিনি তাঁর যুগের মানদণ্ড ছাড়িয়ে গেছেন? ৩. তিনি কি এমন কিছু রেখে গেছেন যা গোটা বিশ্বের জন্য উত্তরাধিকার সম্পদ? রাও সাহেব আরো লিখেছেনÑ ‘মহত্ত্বের উপযুক্ত তিনটি পরীক্ষাতেই নবী মুহাম্মদ সা: সর্বোচ্চ মাত্রায় উতরে যান।’

পরিশেষে মহান রবের কাছে এই প্রার্থনা- চাই দয়াময়, দাও হিম্মৎ/ আমার জাতির বুকে,/ ঈমানদীপ্ত চেতনার বান/ জাগুক সবার প্রাণে। / তোমার নবীর উম্মৎ যারা/ নবীজির সম্মানে।/ অকাতরে প্রাণ করে দান/ তাদের সারথি হয়ে/ এগিয়ে যেন যেতে পারে তারা/ দিনের মশাল নিয়ে।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল