২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় মাতৃস্বাস্থ্য সেবা

করোনায় মাতৃস্বাস্থ্য সেবা - ছবি সংগৃহীত

কালীগঞ্জের ছনকাগ্রাম থেকে ১০৩ কিলোমিটার দূরের খুলনার একটি হাসপাতালে গর্ভবতী এক নারী এসে উপস্থিত। তখন রাত ৯টার বেশি। তার ওপর এই করোনা মহামারির সময়। ওই গর্ভবতীর আগের সন্তানের জন্ম সিজারের মাধ্যমে। তাই তিনি ধরেই নিয়েছেন এবারো তার সিজার করানো লাগবে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুতেই তাকে ভর্তি করতে চাচ্ছে না। একে তো রোগীর করোনা কিনা তা জানা নেই কারো, তার ওপর অপারেশন করা লাগবে রাতেই। কারণ গর্ভবতীর পানি সকালেই ভেঙ্গে গেছে। একদিকে যেমন অনুনয় বিনয় চলছে, অপরদিকে হচ্ছে পরিচিতজনদের মাধ্যমে যে ডাক্তার অপারেশন করবে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা। অবশেষে রোগীকে ভর্তি করা হলো। ভর্তি করে তাকে নেয়া হলো অপারেশন রুমে। অপারেশন টেবিলে ওঠানো মাত্রই নরমাল ডেলিভারি হয়ে গেল। মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার কারণে অন্যান্য সেবার মতো মাতৃস্বাস্থ্য সেবাও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট বলছে করোনার কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার বাড়তে পারে। এসব দেশে পরিবার পরিকল্পনার সেবা প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ কমার আশঙ্কা রয়েছে। আর প্রসবপূর্ব ও প্রসবপরবর্তী সেবা কমে যেতে পারে ১৫ শতাংশ। গত বছর এপ্রিলে প্রসবপূর্ব সেবা পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ৫৭১ জন গর্ভবতী। এ বছর ১৮ হাজার ৬২ জন। সরকারি তথ্য অনুসারে আরো বলা হচ্ছে, গত বছর মার্চ-এপ্রিলে চারবার প্রসবপূর্ব সেবা নিয়েছিলেন ২০ হাজার ৩২৬ জন নারী। আর এ বছর একই সময়ে সেবা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৬৩১ জন।

করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এখনো নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই।

worldometers.info অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোট সংক্রমণের দিক দিয়ে আমরা এখন তৃতীয় অবস্থানে। এদিকে ল্যানসেটও বলছে সেপ্টেম্বরে আরো বেশি বাড়তে পারে করোনার প্রার্দুভাব। তবে আশার কথা হচ্ছে পাশের দেশের তুলনায় আমাদের মৃত্যুহার এখনো অনেক কম। এদিকে করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালও শুরু হয়েছে আমাদের দেশে। এই ট্রায়ালের সফলতা আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন অনেকে।

মহামারি মোকাবেলার প্রস্তুতি ও কর্মকান্ডের সাথে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাকেও যুক্ত করতে হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা মনে করছেন, নতুন এই পরিস্থিতিতে আগের সেবাদান কৌশল ও পদ্ধতি কতটুকু কাজে দেবে তা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা দরকার। নতুন পরিস্থিতির সাথে মানানসই পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। আমাদের সামনের যে নতুন চ্যালেঞ্জগুলো আসছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। অন্য সকল বিষয়ের সাথে সাথে এই আস্থার জায়গা উন্নয়নের জন্যও কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

labinrahman@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement