২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রেল তুমি কার!

রেল তুমি কার! - ছবি সংগৃহীত

রেল সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ হওয়ায় এখনো ভ্রমণের পছন্দের তালিকায় রেল। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও ত্রুটির কারণে যাত্রীরা রেলভ্রমণে বিমুখ হচ্ছেন। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রেলভ্রমণে কিভাবে যাত্রীদের আকৃষ্ট করা যায় সে জন্য সেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সেখানে আমাদের রেল কর্তৃপক্ষ ১৩ আগস্ট টিকিট যার ভ্রমণ তার নিয়ম জারি করে যাত্রী বিড়ম্বনার নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। রেল মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়ছে তা হচ্ছে, রেলভ্রমণে কেউ টিকিট হস্তান্তর করতে পারবে না। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে অনলাইনে কেনা টিকিটের বিপরীতে শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তিই ভ্রমণ করতে পারবে। অন্য কেউ সেই টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবে না। রেলের টিকিট বিক্রয় হস্তান্তরযোগ্য নয়! এটি রেল আইনের শত বছরের পুরনো ধারাতেও বলা আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে রেল কর্তৃপক্ষ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলো? বিশে^র কোথাও শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করার নজির আছে কি না আমাদের জানা নেই। ভারতসহ প্রায় সব দেশে করোনার লকডাউন শেষে অনলাইনের পাশাপাশি স্টেশন কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। তাহলে আমাদের দেশে কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করতে বাধা কোথায়?

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নিষ্ঠুরতায় প্রায় ৬৬ দিন রেল বন্ধ থাকার পর গত ৩১ মার্চ থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু নতুন নিয়ম চালু করায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। আগে একজন যাত্রী অনলাইন কিংবা কাউন্টারে টিকিট কিনতে পারত। কিন্তু নতুন নিয়মে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। যা সবার পক্ষে পালন করা কষ্টসাধ্য। নতুন নিয়ম হচ্ছে টিকিট যার, ভ্রমণ তার। অর্থাৎ একজনের টিকিট দিয়ে অন্যজন ভ্রমণ করতে পারবে না। একজন যাত্রী সপ্তাহে দু’বার আটটির বেশি টিকিট কাটতে পারবে না। যাত্রায় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি। কিন্তু ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার রেল মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কিছু বিষয় শিথিল করেছে। যেমন : অন্যের টিকিটে ভ্রমণে তিন মাস জেল ও জরিমানার বিধান ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন করার বিষয়টি শিথিল করেছে। এক আইডি কার্ডে পরিবারের সর্বোচ্চ চার সদস্যের টিকিট ক্রয় ও রেলভ্রমণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের যতগুলো সমস্যা বিদ্যমান তার মধ্যে টিকিট কালোবাজারি একটি সমস্যা। টিকিট কালোবাজারিকে সাধারণ যাত্রীরা চিনতে না পারলেও রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকই চেনেন। এমনকি দায়িত্বে থাকা রেল পুলিশ সদস্যরাও। অর্থাৎ বলা যায় সবার যৌথ উদ্যোগে টিকিট কালোবাজার প্রকল্প চলে। সত্যিকারার্থে কালোবাজার রুখতে হলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। টিকিট প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে। যাত্রীরা যেন সহজে টিকিট কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। সময়মতো প্রতিটি ট্রেন ছাড়তে হবে। কালোবাজারি থেকে টিকিট ক্রয় করতে যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। কোনো যাত্রী কালোবাজারিদের নিকট থেকে টিকিট কিনলে তাকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কালোবাজারিদের সাথে রেল কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত কি না সে বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। রেলের কেউ জড়িত থাকলে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ঈদ মৌসুমে কালোবাজারিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই শেষ! রেল কর্তৃপক্ষ টিকিট কালোবাজারি বন্ধের অজুহাতে ব্যথা সারাতে মাথা কাটার নতুন যে নীতি গ্রহণ করেছে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ সরকারি হিসাবে দেখা গেছে এখনো দেশের প্রায় ছয় কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে না। এ অবস্থায় শতভাগ অনলাইন টিকিট বিক্রি করা মানে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়া। রেলের যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আছে তা দূর করতে পারলে, এমনিতে কালোবাজারি বন্ধ হয়ে যাবে। কালোবাজারি বন্ধের নামে যাত্রীদের শাস্তি দেয়ার কোনো মানে হয় না।

মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতিহারে বলা হয়েছিল স্বল্প খরচের বাহন রেলকে অগ্রাধিকার দিয়ে রেলের আধুনিকায়ন ও সেবার মান বাড়ানো হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। এই সরকার তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় আছে। রেলের ভাড়া বাড়ানো হলেও সেবার মান বাড়েনি। অথচ প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেলওয়েতে যাত্রীসেবার মান বাড়ছে। তাদের রেলবহরে দিন দিন যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের ইঞ্জিন ও কোচ। বাংলাদেশের রেলব্যবস্থা এখনো চলছে ব্রিটিশ আমলের ইঞ্জিন ও কোচ দিয়ে। বর্তমানে যেসব রেল চলাচল করছে তার মধ্যে কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়া সব রেলের আসন নোংরা ও দুর্গন্ধময়। বৃষ্টি আর টয়লেটের ময়লা পানিতে একাকার হয়ে যায় কামরার ফ্লোর। নড়বড়ে ও ভাঙা দরজা-জানালা দিয়ে চলছে রেল। যাত্রীদের ভাগ্যে জুটছে মাদক কারবারি, অজ্ঞান পার্টি, হিজড়া ও ভিক্ষুকদের সীমাহীন যন্ত্রণা। রেলের সেবার মান বাড়াতে রেলভ্রমণ অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। যারা আন্তঃনগরে ভ্রমণ করবেন তারা শুধু এ সুবিধাটা নেবেন। তাদের জন্য এটিএম বুথ সিস্টেম ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। ভাড়া নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি স্টেশনে সফটওয়্যার সার্ভার ব্যবহার করা। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামার পর টিকিট কোনো টিটির কাছে প্রদর্শন না করে সার্ভার মেশিনে টাচ করে প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা করা। কেউ যেন বিনা টিকিটে রেলভ্রমণ করতে সাহস না করে সে জন্য পাঁচ বছরের জেলের বিধান চালু করা। বিশ্বের কোথাও রেলের টিকিট শতভাগ অনলাইনে বিক্রির নজির না থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষের মাথায় এমন উদ্ভট চিন্তা কী করে এলো তা বোধগম্য নয়! তবে রেলকে জনবান্ধব করার প্রয়াসে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি থেকে শুরু করে গ্রামের একজন কৃষকেরও টিকিটপ্রাপ্তি সহজলভ্য করা প্রয়োজন। দুর্নীতি অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষের এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত হবে না, যা জনভোগান্তির সৃষ্টি করে।


আরো সংবাদ



premium cement
মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সকল