১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

একটি আকষ্মিক ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত

-

বিশ্বব্যাপী চলমান ভয়ঙ্কর মহামারি কোভিড-১৯ ভাইরাস মার্চের শেষার্ধে আমাদের দেশে হানা দেয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে ওই ভাইরাস ক্রমান্বয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে। আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা চার মাসের বেশি সময় হাতে পেয়েও অপরিনামদর্শিতার কারণে কোনো রকম প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।

বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ওই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে – এ কথা সকলের জানা ছিল। তা সত্ত্বেও শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বিমান ন্দর এবং সীমান্ত চেকপোষ্টগুলোতে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদেরকে কার্যকরভাবে স্কানিং করা, হোম কোয়ারেন্টাইন বা প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া বা আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে – বিদেশফেরৎ ব্যক্তিদের ভিতর যাদের ওই ভাইরাসের সংক্রমণ ছিল, তারা যেখানে গেছে, সেখানেই ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে।

সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থার পাশাপাশি সংক্রমিত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ও তাদের চিকিৎসার প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতেও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। পর্যাপ্ত টেষ্টিং কিট ও পরীক্ষা কেন্দ্রের অভাব, কোভিড-১৯ ভাইরাসের রোগীদের জন্য হাসপাতালের অপর্যাপ্ততা, চিকিৎসক ও নার্সদের ব্যক্তিগত সূরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) অপর্যাপ্ততা ও নিম্নমান ইত্যাদি নানা কারণে সংক্রমণ শনাক্তকরণ ও সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যাপারে দেশে শুরু থেকেই একটি হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো বিরাজমান।

নমুন সংগ্রহ ও পরীক্ষার স্বল্পতা বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক, শুরুতে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা কমছিল। কোভিড-১৯ ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়া অনেককেই নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। যাহোক, প্রথম দিকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কৃত্রিমভাবে কম থাকার বিষয়টিকে পুঁজি করে দায়িত্বশীল মহল এক দিকে যেমন বাহবা নিয়েছে; অপরদিকে তেমনি আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে।

পরে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করার পর সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা উভয়ই যখন বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে, তখন অযৌক্তিকভাবে আকস্মিক লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বলাবাহূল্য, সংক্রমণের সর্বোচ্চ সংখ্যা এবং মৃতের সর্বোচ্চ সংখ্যার দেখা মিলেছে লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার অব্যবহিত পরেই। যাহোক, লকডাউন তুলে নেয়ার এই অযৌক্তিক ও অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় দেশের সকল বিবেকবান মানুষ এবং বিশিষ্ট জনেরা হতাশ ও স্তম্ভিত হয়েছেন। অপরদিকে, সাধারণ জনগণের এক বিশাল অংশ এবং দেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ গার্মেন্টশ্রমিক ও পরিবহন শ্রমিকের মাঝেও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখন নিজেদের নিরাপত্তার ভয়ে রীতিমত শঙ্কিত।

দেশে না কমেছে দৈনিক সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা, না কমেছে দৈনিক মৃত ব্যক্তির সংখ্যা। উপরন্তূ দেশে হাজার হাজার মানুষ এখনো কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পরীক্ষা করানোর সুযোগ পাচ্ছে না। যারা শনাক্ত হয়েছেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তিরও পর্যাপ্ত সুযোগ নাই। এহেন পরিস্থিতিতে আকস্মিকভাবে লকডাউন তুলে নেয়ার আত্মঘাতী সিদ্ধান্তকে নিরপেক্ষ বিশিষ্টজনেরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

সংক্রমণের ১ম দিন থেকে হিসাব করলে আজকে ৮৫তম দিন। এ যাবত জনসংখ্যার বিবেচনায় আমাদের দেশের কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষার হারের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্ব নিম্নে। অপরদিকে কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষার সংখ্যা এবং সংক্রমণের আনুপাতিক হার বিবেচনায় আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবার উপরে।

বৈজ্ঞানিক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, লকডাউন তুলে দেয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জুন, জুলাই, আগস্টসহ আগামী ছয় মাসে মারাত্মকভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এমনকি তাদের বিবেচনায় আগামী মাসে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে সরকার যদি লকডাউন তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, তাহলে সমগ্র দেশব্যাপী একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশিষ্ট জনেরা মনে করছেন। তাদের ধারনা কল-কারখানা, অফিস-আদালত এবং সকল ধরনের পরিবহন চলাচল শুরু হলে, মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারনে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ এবং এ কারণে মৃতের সংখ্যা খুব দ্রুতই বৃদ্ধি পেতে পার। আর যদি তাই হয় তবে সার্বিকভাবে পরিবহন শ্রমিক ও গার্মেন্টস শ্রমিকদের উচিৎ হবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা প্রথম নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সিদ্ধান্ত নেয়া। জীবনধারণের জন্য জীবিকা বা উপার্জন অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্মরণ রাখতে হবে জীবনের চেয়ে মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আর কিছু নাই। অতএব, এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করা ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement
কুবিতে‘বেআইনিভাবে' ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে সিন্ডিকেট সদস্যের পদত্যাগ জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না : মির্জা ফখরুল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধাপরাধের শামিল : জাতিসঙ্ঘ সঙ্গীতশিল্পী খালিদকে বাবা-মায়ের পাশে গোপালগঞ্জে দাফন রাণীনগরে টমটম গাড়ির ধাক্কায় নিহত ১ স্লিপিং ট্যাবলেট খে‌লেও সরকা‌রের ঘুম আসে না : গয়েশ্বর জনসাধারণের পারাপারে গোলাম পরওয়ারের খেয়া নৌকা উপহার ভোলায় হঠাৎ অসুস্থ ২৯ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি করোনায় ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩১ ‘অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব’ নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলোতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নামল

সকল