২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রে বিষাদময় ঈদ

যুক্তরাষ্ট্রে একটি ঈদের জামাত। এ ধরনের জামাত এ বছর দেখা যাবে না। - সংগৃহীত

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আবারো ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুর ফিতির। মুসলমান সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। ঈদ আরবি শব্দ। অর্থ খুশি বা আনন্দ। আবার অনেকে মনে করেন আরবি শব্দ আদত বা অভ্যাস থেকে ঈদের উৎপত্তি। আমাদের প্রিয়নবীর (সা.) সময় থেকে তথা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ আরবে সর্বপ্রথম ঈদ উদযাপন শুরু হয়।

রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মুসলিম সম্প্রদায় যাতে পবিত্রতার সাথে উৎসব করতে পারে সেই জন্য ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর নামে দুটি উৎসব চালু করেন। এই ঈদ মুসলমানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই উৎসব এখন আর শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ঈদের আনন্দে এখন সকল ধর্মের মানুষ উপভোগ করে বলে তা পরিণত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে।

ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা ধনী গরিব উঁচু নিচু নির্বিশেষে একই কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকে। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র বিরাজ করছে বিষাদের ছায়া। ফলে মুসলমান বিশেষ করে বাংলাদেশীদের মধ্যে নেই ঈদের আনন্দ। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র লকডাউন অব্যাহত থাকায় ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদগুলো গত তিন মাস ধরে রয়েছে বন্ধ। অনেক খতিব, ইমাম ও মোয়াজ্জিন ইতিমধ্যে হারিয়েছেন চাকরি।

প্রত্যেক ঈদে বাংলাদেশী কমিউনিটি আনন্দে মেতে উঠে। নিউইয়র্কের সবজায়গায়পালিত হয় চাঁদ রাত। এতে রাতভর আতশবাজিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পুরো নিউইয়র্ক। মেহদির রঙ্গে মেয়েরা সাজে। নাচে গানে হাজার হাজার বাঙালি নরনারী শিশু কিশোর উদযাপন করে চাঁদ রাত। নিউইয়র্কে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার স্কুলের মাঠে আয়োজন করে সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত। এতে বিশ হাজার লোক একত্রে নামাজ আদায় করে। এছাড়া পার্ক চেষ্টার জামে মসজিদ, আল আমিন জামে মসজিদ, বাংলা জামে মসজিদ, মিশিগানে নূর মসজিদ ও বায়তুল মোকার্রম আল ইসলাহ মসজিদ, আল ফালাহ ও নিউ জার্সি স্টেটে জালালাবাদ জামে মসজিদ স্কুল মাঠে আয়োজন করে বিশাল ঈদ জামাতের। এতে প্রতিটি জামাতে হাজার দশেক মুসল্লি অংশ গ্রহণ করে থাকে।

এবার মসজিদগুলো বন্ধ থাকায় যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে নিউইয়র্কের কোথাও হচ্ছে না ঈদের জামাত। স্বাস্থগত বিধিনিষেধের কারণে কোলাকুলিও করা যাবে না। তাছাড়া লকডাউন থাকায় বন্ধ রয়েছে মার্কেট ও শপিংমল। ফলে ঈদের নতুন কাপড় কেনার সুযোগ থেকেও অনেকেই হবে বঞ্চিত। ফলে মুসলমানদের হাজার বছরের গড়া ঈদ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে দেখা দিয়েছে ছন্দ পতন।

করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করেছেন ।প্রাণ হারিয়েছেন ২৮০ জন বাংলাদেশী ।যাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এখনো বহু বাংলাদেশী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ফলে বংলাদেশীদের ঘরে ঘরে বিরাজ করছে বিষাদের ছায়া ।তাছাড়া দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্যবসা বানিজ্য ও কাজ-কর্ম বন্ধ থাকায় অর্থনীতিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে যাদের কাগজপত্র নেই তারা এখন সবচেয়ে বেশি সমস্যা পীড়িত। কিন্তু তারপর ও ঈদ প্রতিবছরের মতো এবারো আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে সুখ, শান্তি, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মিলনের মহান শিক্ষা নিয়ে। সকল আতঙ্ক ও ভয়-ভীতিকে জয় করে ঈদের আনন্দ বিরাজমান থাকুক সকলের হৃদয়ে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

লেখক : সমাজকর্মী ও কলাম লেখক, নিউইয়র্ক


আরো সংবাদ



premium cement