২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশু ও নারীর সুরক্ষায় করণীয়

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশু ও নারীর সুরক্ষায় করণীয় - সংগৃহীত

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর থাবা সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও পড়েছে। মরণঘাতি এ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশে দেশে পর্যায়ক্রমে নেয়া হয়েছ বিভিন্ন ব্যবস্থা। বিশ্বজুড়ে এ মহামারি রোধে উদ্যোগের কোনো কমতি নাই। সবাই তাকিয়ে রয়েছে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধ এবং ভ্যাকসিন আবিস্কারের দিকে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে একদিকে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে যেমন মৃত্যুর মিছিলে শামিল করছে তেমনি ঠেলে দিয়েছ জীবিকার অনিশ্চয়তার দিকে। এ অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে মানুষের জীবন জীবিকার ধারা অব্যাহত রাখতে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারও স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রণয়ন করেছে ‘কোভিড-১৯ এর সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কারিগরি নির্দেশনা’।

যে কোন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারিগরি নির্দেশনায় এ কারণেই শিশু ও নারীদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার জন্য সকলের করণীয় বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। নিচে শিশু ও নারীদের জন্য করণীয় নির্দেশনা প্রদান করা হলো :

শিশু : শিশুদেরকে সাধারণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি যেমন-বারবার হাত ধোয়া, আশেপাশের পড়ে থাকা জিনিসপত্র না ধরা, হাত লেহন না করা, নাকে আঙুল না ঢুকানো, চোখ ঘষাঘষি না করা ইত্যাদি অভ্যাসগুলো সম্পর্কে শিক্ষাদান করতে হবে এবং সঠিকভাবে চালনা করার জন্য সহায়তা করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত করতে হবে এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের ব্যবহৃত খাবারের থালা বা বাটি, তোয়ালে এবং অন্যান্য সামগ্রী আলাদা রাখতে হবে যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে।

বাবা-মা, অভিভাবক অথবা শিশুর তত্ত্বাবধায়ককে অবশ্যই সবসময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুর সামনে কখনো হাঁচি-কাশি দিবেন না অথবা ফুঁ দেওয়া যাবে না। শিশুকে চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাওয়ানোর সময় ফুঁ দিয়ে গরম খাবার ঠাণ্ডা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আগে থেকে খাওয়া কোন কিছু শিশুর মুখে দেওয়া যাবে না।

শিশুদের জনসমাগমপূর্ণ এলাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। শিশুদের খেলাধুলার জন্য কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা অথবা পার্ক যেখানে আলো-বাতাস এর সুগম চলাচল থাকে সেসব জায়গার যাওয়া যেতে পারে। পার্ক বা খেলাধুলার জায়গা যেখানে জনসমাগম রয়েছে সেখান থেকে শিশুদের বিরত রাখতে হবে। বাহিরে যাওয়ার সময় শিশু, বাবা-মা, অভিভাবকগণ সবাইকে অবশ্যই নিজেদের সুরক্ষা মেনে চলতে হবে যেমন শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। বাহির থেকে ফিরে এসে কাপড় পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই সাথে হাত ও মুখ ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে।

মহামারীর সময়ে শিশুর টিকাদানের সময় চলে এলে অভিভাবকগণ টেলিফোনের মাধ্যমে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে টিকাদানের সময়কাল ঠিক করে নিতে পারেন। তবে যথাযথ সুরক্ষা বজায় রেখে যথাসময়ে শিশুকে টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেয়ে টিকা দেওয়া উচিত। কিছু কিছু টিকার ক্ষেত্রে সময় পরিবর্তন করা যায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুর পরিচর্যার সময় বাবা-মা অথবা শিশুর তত্ত্বাবধায়ককে মাস্ক পরিধান করতে হবে। বাবা-মা, অভিভাবক অথবা শিশুর তত্ত্বাবধায়ক এর যদি জ্বর, ঠাণ্ডা, শুকনা কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তবে তৎক্ষণাৎ শিশুর পরিচর্যা ছেড়ে দিয়ে অন্য কারো হাত সেই দায়িত্ব দিতে হবে এবং নিজেকে হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় নিতে হবে। শিশু যদি কোন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গমন করে থাকে অথবা কোন কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে এসে থাকে তবে তা অবশ্যই ডাক্তার, সমাজ ও স্কুলে জানিয়ে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

গর্ভবতী মা : গর্ভবতী মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিয়ম মেনে চলতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় কনুইয়ের ভাঁজে অথবা টিস্যু ব্যবহার করে নাক ও মুখ ঢাকতে হবে। হাঁচি-কাশির পর ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। নিজের ব্যবহৃত জিনিসপত্র অন্যকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া যাবে না। হাত ধোয়ার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। হাত দিয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত শরীরের তাপমাত্রা এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে এবং ওজন মেপে দেখতে হবে। সেই সাথে গর্ভের বা”চার হার্টবিট এবং নড়াচড়া খেয়াল করতে হবে। বা”চার নড়াচড়া বুঝা না গেলে অথবা কোন পরিবর্তন দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সম্ভব হলে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে ঘরে বসে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া অধিক নিরাপদ।

বাহিরে যাওয়ার সময় নিজের নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত ব্যব¯’া গ্রহণ অর্থাৎ মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং ১ মিটার অথবা তার চেয়ে বেশি দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে। গর্ভবতী মা এর জন্য হাঁটা অতি গুরুত্বপূর্ণ, তাই যথাসম্ভব ঘরে নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। বাহির থেকে ফিরে এসে কাপড় পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই সাথে হাত ও মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। জনসমাগমপূর্ণ এলাকা, অস্বা¯’্যকর পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। অনুষ্ঠান, দাওয়াত, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গমন ইত্যাদি হতে বিরত থাকা উত্তম। জনবহুল এলাকা পরিহার করে শান্ত পরিবেশে যেমন পার্কে যাওয়া যেতে পারে।

গর্ভকালীন সময়ে প্রথম ১-১২ সপ্তাহ এবং দ্বিতীয় ১৩-২৬ সপ্তাহ এর মাঝে মা এর কোন সমস্যা দেখা না দিলে পরবর্তী গর্ভকালীন পরীক্ষাগুলো মহামারীর অবস্থা বিবেচনা করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করাতে হবে।

করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এর প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে আমাদের সকলকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। উপরে বর্ণিত নির্দেশনাসমূহ মেনে চলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শিশু ও গর্ভবতী মাকে আমরা অনেকটাই মুক্ত রাখতে পারবো বলে আশা করা যায়।
লেখক : প্রধান তথ্য অফিসার
তথ্য অধিদফতর

 


আরো সংবাদ



premium cement