১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জলবায়ু পরিবর্তন : প্রসঙ্গ উপকূলীয় নারী ও শিশুরা

জলবায়ু পরিবর্তন : প্রসঙ্গ উপকূলীয় নারী ও শিশুরা - সংগৃহীত

মরিয়ম বেগম তার তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার এক আত্মীয় বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট্ট একটি খুপড়ি ঘর বানিয়ে বাস করেন, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় স্বামী বাবুল মিয়াকে হারান মরিয়ম বেগম। গত বছর নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল' এর আঘাতে মরিয়ম বেগমের গ্রামের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে সময় তার বসবাসের একমাত্র ঘরটিও লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই থেকে সাতক্ষীরা সদরের আত্মীয়ের বাড়িতে থাকছেন তারা কোন রকমে। ১৫ বছর বয়সী প্রথম সন্তান রবিউল মিয়া সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। রবিউল সাতক্ষীরা জেলা সদরে একটি মাছের আড়ত কাজ করে। মুন্সীগঞ্জে থাকা সময় মরিয়ম বেগম একটি মাছের ঘেরে কাজ করতেন। গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে, মরিয়ম বেগমের বাড়ি প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বলে এবার তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্যামনগরে মুন্সীগঞ্জে আর থাকবে না ঢাকায় যাবেন। মরিয়ম বেগমের মতো অনেক নারীই ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্বামী-সন্তান, পরিবার, বাড়িঘর হারিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বসবাস করছে জীবন ও জীবিকার তাগিদে।

বিভিন্ন গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত দেশের একটি এবং এর উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। জার্মান ওয়াচ গ্লোবাল-এর জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিআরআই-২০১৭) অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ শীর্ষ দশের একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকারী প্যানেল (আইপিসিসি) ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে তার ১৭ শতাংশ জমি এবং তার খাদ্য উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ক্ষতি হারাতে চলেছে। সিডর, আইলা, রোয়ানু, নার্গিস, ফণী, ও বুলবুল নানা নামে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রায় আঘাত হানছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। দেশের লাখ লাখ জনগণ নানা সময় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদী ভাঙ্গন, জলোচ্ছ্বাস দাবদাহ ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক এলাকা ডুবে যাচ্ছে, আর সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে লবণাক্ততা। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও জীব-বৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিনে দিনে এ অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মোট জমির ২০ শতাংশ এবং মোট আবাদযোগ্য জমির ৩০ শতাংশের বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলীয় অঞ্চলে পানি ও কৃষির উপরে সবচেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাব পড়ার ফলে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির শিকার হচ্ছে।

শারীরিক ও সামাজিক রীতিনীতি বিবেচনায় নারী ও শিশুরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণে অবস্থানে রয়েছে। অনেক সময় দুর্যোগ পূর্বাভাস সতর্কতা নারীরা একটু দেরিতে জানতে পারেন। পুরুষরা বাইরে থাকার কারণে তারা আগে দুর্যোগ সর্তকতা জানতে পারেন এবং অনেক সময় তারা দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন, নারীরাই সেই সুযোগ পাননা। দেখা যায় দুর্যোগের সময়, নারীরা তাদের শিশু সন্তান, ও বয়-বৃদ্ধদের নিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করেন। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় দেখা যায় নারীরা তাদের বাড়িঘর ও গৃহপালিত পশুপাখি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি গরু-ছাগল রক্ষায় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে রাজি হন না। দুর্যোগ পরবর্তী সময় নারীরা বাড়ির বাইরে না যাওয়ার কারণে ত্রাণ সহায়তাসহ নানা বিষয় থেকেও বঞ্চিত হন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশে মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ নারী। নারীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের খাদ্য, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, প্রাণিসম্পদ, বৃক্ষসম্পদ ও কৃষি ফসলাদির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। এসব খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নারীদের উপর পানীয় জল, জ্বালানি সংগ্রহ ও গৃহস্থলি কাজের চাপ বৃদ্ধি পায়। ইউএনডিপি'র এক প্রতিবেদন অনুসারে গর্ভবতী নারী এবং কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মারাত্মকভাবে ফেলছে। দুর্যোগ সময় পুরুষের তুলনায় নারীর মৃত্যু ও আক্রান্তের ঝুঁকি দ্বিগুণেরও বেশি। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ে নিহত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ছিলেন নারী এবং ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় আক্রান্তদের ৭৩ শতাংশ ছিলেন নারী।

ইউনিসেফে'র ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধ্বংসী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য পরিবেশগত বিপর্যয়গুলো বাংলাদেশে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি শিশুর জীবন ও ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ, যা দরিদ্র বাংলাদেশিদের তাদের ঘরবাড়ি ও কমিউনিটি ফেলে অন্যত্র নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে ঢাকা ও অন্য বড় শহরগুলোতে যাচ্ছে, যেখানে শিশুদের বিপজ্জনক শ্রম বা শিশুবিয়ের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ৬০ লাখ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিবাসী রয়েছে, যা ২০৫০ সালের মধ্যে বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। এছাড়া, উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী আরো ৪৫ লাখ শিশু নিয়মিত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দ্বারা আক্রান্ত হয়।

উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবে নারী ও শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন ও জাতীয় শিশু নীতিমালা অত্যন্ত কার্যকরী টেকসই পদক্ষেপ। সরকার নারী ও শিশু সুরক্ষা, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও উন্নয়নে পৃথক পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করেন তা 'জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১' এবং 'জাতীয় শিশু নীতিমালা-২০১১'। এই নীতিমালা দ্বয়ে নারী ও শিশুদের দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে তা উল্লেখ রয়েছে। নীতিমালা গুলোতে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১ এর ৩৭ ধারায় বলা হয়েছে, দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নারী ও কন্যা শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা; দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারীর নিরাপত্তা বিশেষভাবে বিবেচনা করা; সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম আরো নারীবান্ধব করা এবং সুরক্ষার জন্য কর্মকৌশল প্রবর্তন করা ও দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থায় খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম যেন নারীর চাহিদা পূরণ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি অবস্থায় খাদ্যের পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় শিশু নীতি ২০১১-এর ৬ ধারায় অনুরূপ ভাবে শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দুর্যোগ পরবর্তী পূনর্বাসনের সময় শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের নিরাপত্তা বিশেষভাবে বিবেচনা করা; দুর্যোগকালীন জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় শিশুদের বিপদ কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বস্তুগত সাহায্যের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় মনোসামাজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা; সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরো শিশুবান্ধব করা এবং পরিচর্যা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এতিম অসহায় শিশুদের জরুরি অবস্থায় সুরক্ষার জন্য কর্মকৌশল প্রবর্তন করা এবং দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে শিশু যে কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের বসবাস করে উক্ত কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের সদস্যদের দুর্দশাগ্রস্ত শিশু কল্যাণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার কথা উল্লেখ করা আছে।

সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক বেশ কিছু সংখ্যক গৃহীত প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তনে নারী ও শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ২০০৯ হালনাগাদ করা হচ্ছে। বিসিসিএসএপি ২০০৯ ও 'জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন ২০১০' বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। বিসিসিএসএপি ২০০৯ এর প্রথম থিমেটিক এরিয়া খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য এর আওতায় নারী উন্নয়ন বিষয়ক প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উক্ত থিমেটিক এরিয়ার আওতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক 'জলবায়ু পরিবর্তনে চরম হুমকির মুখে প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থানকারী নারী ও শিশু সুপেয় পানি সরবরাহ ও সামাজিক সুরক্ষাকরণ' প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং 'জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগপ্রবণ পরিবেশে অবস্থানকারী নারী ও শিশুর সামাজিক সুরক্ষাকরণ প্রকল্প' চলমান আছে, যাতে প্রতিকূল পরিবেশে বসবাসকারী নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গ্রহণসহ দুর্যোগপ্রবণ পরিবেশে অবস্থানকারী নারী ও শিশু সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে (জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০১৯-২০)। এ সকল প্রকল্পসমূহ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের (বিসিসিটি) সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা'র মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকল্প কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নয়ন দেশ হিসেবে গড়তে সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উপকূলীয় অঞ্চলে নারী ও শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব নিরসনে মোকাবিলায় কাজ করছে এবং এ বিষয়ক প্রকল্প/কার্যক্রম গুরুত্বসহকারে পরিচালনা করছে। ২০০৯ সালে থেকে বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তন এর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রথম সারির নেতৃত্বের অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউনেপ) সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক সম্মান 'চ্যাম্পিয়ন অভ দ্যা আর্থ' পুরস্কার গ্রহণ করেন।

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূল অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, প্রস্তুতি ও দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা ক্ষেত্রে সচেতনতামূলক সংবাদ ও অনুষ্ঠানাদি প্রচারে মাধ্যমে গণমাধ্যম জনগণকে সচেতন করছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম (বেতার ও টেলিভিশন) তাদের প্রচারিত অনুষ্ঠানাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি উপকূলীয় অঞ্চলের ৮টি কমিউনিটি রেডিও তাদের সম্প্রচারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে এই কমিউনিটি রেডিওসমূহ। এক্ষেত্রে বেসরকারি সম্প্রচার (বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও) মাধ্যম তাদের প্রচারিত সংবাদ ও অনুষ্ঠানাদি আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলীয় অঞ্চলে বিরূপ প্রভাব বিষয়ক অনুষ্ঠানাদি শুধু দিবস ও ঘটনা (ইভেন্ট) ভিত্তিক না হয়, বিষয়টি জরুরি প্রয়োজন ও গুরুত্বারোপসহকারে সারাবছর সম্প্রচার অত্যন্ত জরুরি।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এখনই। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব উপকূলীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং এই অঞ্চলের নারী ও শিশুদের উপর এর প্রভাব আরো মারাত্মক। বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহে এক যোগে কাজের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পাশাপাশি আমরা যদি সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি, তবেই এই ব্যাপক দুর্যোগ মোকাবেলা সম্ভব হবে আমাদের পক্ষে। বাঁচবে দেশ – সুরক্ষিত হবে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের নারী ও শিশুরা।

পিআইডি ফিচার


আরো সংবাদ



premium cement