২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শবেবরাতের তাৎপর্য

শবেবরাতের তাৎপর্য - নয়া দিগন্ত

অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস হলো শাবান। হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস। শাবান মাস অশেষ মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ। শাবান মাস হলো নবীজী সা:-এর সুন্নত অনুশীলনের মাধ্যমে অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রেম-ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস। আরবি ভাষায় এই মাসের পূর্ণ নাম হলো- ‘আশ শাবানুল মু-আজ্জম’ অর্থাৎ মহান শাবান মাস। শাবান মাস ইবাদতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। আরবি মাসগুলোর মধ্যে শাবান একটি মোবারকময় মাস। রাসূল সা: এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি শাবান পালন করতেন। এ মাসের একটি রাতকে মুসলমানরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মধ্য-শাবানের এই রাত আমাদের কাছে ‘শবেবরাত’ হিসেবে পরিচিত। সত্যিই ‘মহিমান্বিত রাত’। আল্লাহ তায়ালা ১৪ শাবানের দিবাগত এ রাতে বান্দাদের জন্য তার অশেষ বরকত ও রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ত্রুটি ও পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনাসহ আল্লাহর দরবারে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন।

প্রতি বছর ১৪ শাবান দিবাগত রাতকে মহিমান্বিত শবেবরাত বা লাইলাতুল বারাআত বলা হয়। শব ফারসি শব্দ। এর অর্থ রজনী বা রাত। আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য/সৌভাগ্য। আরবিতে লাইলাতুল বারাআত অর্থ ভাগ্যরজনী বা মুক্তির রজনী। লাইলাতুল বারাআত অর্থাৎ পাপ মুক্তির রজনী বা নাজাত বা নিষ্কৃতির রাত। শবেবরাত হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত বরকতময় সুবর্ণ সুযোগ। অফুরন্ত কল্যাণে ভরা এই রজনী বান্দার জন্য মহান প্রভুর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। এ রাতে তাঁর খাঁটি বান্দারা পরম করুণাময় ও মহান সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে ক্ষমা, রিজিক বা বিপদমুক্তি লাভ করে থাকেন। পবিত্র শবে বরাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ তাৎপর্যময় মুক্তির রজনী। মহান আল্লাহর বিরাগভাজন হওয়া কিংবা রোষানল থেকে বান্দা তওবার মাধ্যমে মার্জনা প্রাপ্ত হয়ে নিষ্কৃৃতি লাভের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে, তিনি পাপরাশি ক্ষমা করে দেন। এই রাতে সৃষ্টিকুলের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমনÑ জন্ম, মৃত্যু, রিজিক-দৌলত, উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি পরবর্তী একটি বছরের জন্য লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। এ বরকতময় রাতে অনুতপ্ত ও করুণা প্রার্থী বান্দার জন্য আল্লাহর রহমতের ফল্গুধারা থাকে উন্মুক্ত। এ রাতে আল্লাহ প্রেরিত ফেরেশতারা ইবাদতকারী বান্দাদের সাথে একান্তভাবে মিশে যান।

শবেবরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। রাসূল সা: শাবান মাসকে নিজের সাথে অধিক সম্পৃক্ত করেছেন। হজরত আসমা ইবনে জায়েদ রা: সূত্রে বর্ণিতÑ রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘শাবান মাস আমার মাস, আর রমজান মাস আল্লাহর মাস’। মহান আল্লাহ শবেবরাতের রজনীতে মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

শবেবরাতে আল্লাহ তার বান্দাদের দোজখের শাস্তি থেকে মুক্তিদান করেন। এ রজনীতে বান্দাদের অধিক হারে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইবাদত করা এবং পরের দিন রোজা রাখা কর্তব্য। শবেবরাতের রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন এবং মানবজাতির উদ্দেশে আহ্বান জানাতে থাকেন, ‘আছে কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করব, আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী, আমি তাকে রিজিক দান করব, আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করব’। এভাবে সুবেহ সাদিক পর্যন্ত তিনি আহবান করতে থাকেন। শবেবরাতে পালনীয় কর্তব্যের মধ্যে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা, কবর জিয়ারত, রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত ও পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, অধিক হারে দোয়া দরুদ পাঠ, রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, পরবর্তী দিনে নফল রোজা রাখা, জিকির-আজকার, দোয়া দরুদ পাঠ, তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-ইস্তিগফার, দেশ-জাতি তথা মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। অবশ্য শবেবরাতের কোনো ধরাবাঁধা ইবাদত নেই। শবেরবাত আড়ম্বর নয়। বরং নৈতিক চরিত্রবলের নীরব সাধনার মাধ্যমে করুণাময়ের অশেষ করুণা লাভের আন্তরিক প্রয়াসই এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। তাই মুক্তির বার্তা নিয়ে পবিত্র শবেবরাতে প্রতিটি মুসলমানের যাবতীয় ফজিলত, রহমত ও বরকত অর্জনের জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, সাহাবায়ে কেরাম আসন্ন রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসকে গ্রহণ করতেন। পবিত্র বরকতময়, পুণ্যময় ও মহিমান্বিত এ রজনীর আলোকচ্ছটায় উম্মাহর অন্তরাত্মা হোক চির উদ্ভাসিত। অনাবিল শান্তি ও সমৃদ্ধি আসুক ঘরে ঘরে। এ রাত সমগ্র দেশ, জাতি ও বিশ্বমানবতার জন্য সর্বজনীন শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনুক, এটাই সবার একান্ত কাম্য। 

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা

 


আরো সংবাদ



premium cement
মাটির নিচে পাওয়া গ্রেনেড মাইন মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে জবি, বন্ধ থাকবে পরীক্ষা কুড়িগ্রামে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেওয়ানগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব কিশোরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ সাতক্ষীরা বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলআরোহী নিহত বার্সেলোনাতেই থাকছেন জাভি চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজে হাজারো মুসুল্লির কান্না পোরশার নোচনাহারে আগুনে ৩টি দোকান পুড়ে গেছে খুলনা বিভাগ ও ৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ

সকল