২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চারিদিকে করোনা আতঙ্ক : বসে থাকার ফুসরত নেই সাংবাদিকদের

সাংবাদিকের কোনো অবসর নেই - ছবি : সংগৃহিত

দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। সংক্রমিত হচ্ছে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, মহল্লা থেকে মহল্লা, দেশ থেকে দেশ। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মহাদেশ থেকে মহাদেশে বিস্তার হচ্ছে দ্রুত গতিতে। ইতোমধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। করোনা সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তের খবর জানতে মানুষ উদ্বিগ্ন। সবসময় টেলিভিশন, মুদ্রন পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রাখছে মানুষ। দেশে কোথায় কী অবস্থা? কোন দেশে কত জন আক্রান্ত? প্রাণ গেল কত জনের? বয়স কত? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তারা।

পরিবেশ পরিস্থিাত বুঝে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। সচেতন হচ্ছে জনগণ। সরকারের এই সময় উপযোগী ব্যবস্থা এবং মানুষের সচেতনাতা সৃষ্টি সব কিছুর পেছনে নিরলসভাবে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। সংবাদকর্মীদের কুড়িয়ে আনা তথ্যগুলো একত্রিত করে পরিস্থিতি আন্দাজ করছেন নীতিনির্ধারকেরা।

মানুষ যখন করোনার ভয়ে প্রাণ রক্ষায় ঘর থেকে বেলকনিতে আসতে ভয় পাচ্ছে, সংবাদিকরা তখন কতদ্রুত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায় সেই চিন্তায় কাজের গতি বাড়াচ্ছে। ছুটে যাচ্ছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। পুরো শহরের দোকান বন্ধ থাকায় ভারী খাবার তো দূরের কথা সামান্য নাস্তাও করতে পারছেন না সংবাদ সংগ্রাহকরা। এদিকে  করোনায় আক্রান্তের ভয় আছেই। যার কারণে কোনো দোকান বা কারো বাসা থেকে কিছু খাওয়ার সাহস করছে না কেউ। তথ্যগুলো মানুষের কাছে পৌছে দেয়াই যেন তাদের পূর্ণাহার।

রাত-দিন সমান। গভীর রাতে ঘুমানোর পরও যখন হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়, সাথে সাথে মোবাইলটা নিয়ে দেশ-বিদেশের বর্তমান অবস্থা জানার চেষ্টা। ঘুমের মধ্যে কোনো তথ্য প্রচারে বিলম্ব হলো কিনা, এমন চিন্তায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা গণমাধ্যমগুলোতে চোখ রাখতে রাখতে চোখ ক্লান্ত হলেও মনের জরেই চলছে কাজ। বিশ্বব্যাপি মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়জিত করেছে চিকিৎসাসেবা ও গণমাধ্যমের সাথে জড়িত মানুষগুলো। এদেরকে সহযোগিতা করছে বহনকারী গাড়ি চালকেরা। তারাও যেন নিবেদিত প্রাণ।

বিশ্বব্যপি এ মহামারী নিয়ে তেমন কোনো ভালো সংবাদ এখনো পাওয়া যায়নি। উন্নত দেশগুলোও নাজেহাল। মৃত্য ব্যক্তির দাফন/শেষকৃত (যার যার ধর্ম মতে) আর আক্রান্তদের আলাদা করে রাখা ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না কেউ। এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে ভয়াবহ চিত্র। এতে বলা হয়, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগামী চার মাসে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। সংখ্যার বিচার যা অনেক বড়।

উন্নত দেশগুলোতে যদি এই অবস্থা হয়, আল্লাহ না করুক, আমাদের মতো গরীব ও ঘনবসতী রাষ্ট্রে করোনা ব্যপক হারে ছড়িয়ে পাড়লে কি হবে? আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহামারী থেতে রক্ষা করুন- আমিন।

এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যায় প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে চীন (৮১,৭২৮ জন) এবং ইতালিকে (৮০,৫৮৯) ছাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৮৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে ভাইরাসের প্রকোপে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা এই দুই দেশের তুলনায় কম। যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের কারণে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। যেখানে চীনে মোট মৃত্যু ৩ হাজার ২৯১ জন এবং ইতালিতে মারা গেছেন ৮ হাজার ২১৫ জন।

বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। ২৭ মার্চ দুপুর পর্যন্ত দুইজন ডাক্তারসহ মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮ জন। দেশে করোনার বিস্তার শুরু হলে বাংলাদেশ সরকার ২৬শে মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল টানা ১০ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।

সাংবাদিক সাইফুল্লাহ হিমেল। নিউজের কাজে ছুটে বেড়াতে হয় প্রতিনিয়ত। ২৪ মার্চ বিকেলে বাংলাদেশ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। সবাই যখন বাড়িতে ফিরছে ঠিক তখন নিউজ এডিটিংয়ের কাজে ব্যস্ত তিনি।  বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছেন তার বাবা। ফোন দিয়েই বাসায় ফেরার কথা বললেন।

সাংবাদিক সাইফুল্লাহ’র ভাষায়, ‘‘মনে হচ্ছিল আব্বু আমাকে ছুটির সংবাদ দিচ্ছে। অথচ নিউজ প্রকাশ হওয়ার আগ থেকেই আমি জানি, আজ সাধারণ ছুটির ঘোষণা আসতে পারে। কিন্তু বাবার সাথে তাল মিলিয়ে বললাম, ‘তাই নাকি? কখন ঘোষণা করেছে? আব্বু উত্তর দিল, আমি এইমাত্র দেখলাম তুই অনলাইনে দেখ। দ্রুত বাড়ি চলে আয়।

আব্বু ফোন কাটতেই একটি অতি পরিচিত নম্বর থেকে ফোন: ‘হ্যালো! তোমার নাকি ছুটি হইছে! কোনো ঝামেলা না বাড়িয়ে দ্রুত বাড়ি চলে আসবে। কারো জন্য কিছু কিনতে গিয়ে গাড়ির টিকেট মিছ করবে না। আগে টিকেট কাটবে। আম্মু ডাকছে। ফোন রাখছি, পরে ফোন দিব।’ বলেই ফোনটা কেটে দিল। আমার কথা বলার তেমন সুযোগ হলো না। ফোনটা রিসিভ করে হেড ফোনটা কানে দিয়ে কথাগুলো শুনছি আর হাতে কাজ করছি। যা হোক, দুইজনের একজনকেও বলতে পরলাম না যে, সাধারণ ছুটি হলেও জরুরি সেবা দানকারী (হাসপাতাল, গণমাধ্যম, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের কোনো ছুটি হয় না।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় আবারো ফোন বেজে উঠলো। বিশেষ একটি কল।

‘টিকেট কনফার্ম? কয়টার গাড়ি? কয় নম্বর সিট?’

ঠাস ঠাস করে তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে মারলো ফোনের ওই পাশ থেকে। আমি একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার চেষ্টায়। শেষে বললাম, সাধারণ ছুটিতে জরুরি সেবাদানকারীদের ছুটি নেই। অনেকটা কর্কশ কন্ঠে, ‘পত্রিকা আবার জরুরি সেবা হলো কবে থেকে?’

অনেক চেষ্টার পর তাকে শান্ত করে একটা প্রশ্ন করলাম, সাধারণ ছুটির খবরটা কোথায় শুনেছো? উত্তরে বললেন, ‘কেন? দৈনিক নয় দিগন্তের ফেসবুক পেজে দেখেছি।’ আমি বললাম, আমরা যদি বাড়িতে চলে যাই তা হলে ছুটি, সুবিধা-অসুবিধা, করোনা পরিস্থিতি, ডাক্তারের পরামর্শ, কোথায় কি হচ্ছে ইত্যাদি খবরগুলো মানুষ কেমনে জানবে? আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর পেলাম না। ওই পাশ থেকে লাইন কেটে দিলে যে শব্দ হয়, সেরকম একটা শব্দের মাধ্যমে শেষ হলো ফোনালাপ। এরপর থেকে টানা ৪৮ ঘন্টা ওই নম্বরে কল দিলে একটা মেয়ে একই কথা বার বার বলতো আপনার কাঙ্খিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’

 

লেখক : সাইফুল্লাহ হিমেল


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকার পয়োবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি টি-২০ খেলতে সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল খুলনায় হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলল যুক্তরাষ্ট্র? জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে

সকল