১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এটা কি ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’?

এটা কি ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’? - ছবি : সংগ্রহ

প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছি। সাড়ে ৬টার দিকে মোবাইল বেজে ওঠে। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি, টগরের ফোন। ফ্রান্সে এখন রাত দেড়টা। এত রাতে ফোন! চমকে উঠে ধরতেই- ‘আব্বা কি ঘুমোচ্ছিলেন?’ ‘এ সময় আমি কি ঘুমাই?’ ‘তুমি ঘুমাও না কেন?’ ‘খবর খারাপ, ফ্রান্সেও দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস। সর্বত্র আতঙ্কসহ ঘুম ‘হারাম’ হয়ে গেছে। তিন মাসের খাবার ঘরে রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কারণ, যে এলাকা যখন আক্রান্ত হবে, সে এলাকা তখন স্কুল-কলেজসহ বাইরের সাথে চলাচলও বন্ধ করে দেবে। এ কারণেই অন্তত মাস তিনেকের জন্য ঘরে খাবার রাখতে হবে, বিশেষ করে শুষ্ক খাবার যেন ঘরে মজুদ রাখা হয়।’
‘এভাবে যেদিন গোটা বিশ্বটা আক্রান্ত হয়ে পড়বে, তখন যোগাযোগ বন্ধ করবে কার সাথে? কারণ, গত চার মাসেই বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চীনের পর ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইরানে। চার মাস আগে চীনের উহানে প্রথম করোনার অস্তিত্ব টের পাওয়া গিয়েছিল।

গত ১২৫ দিনে করোনার প্রকোপে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ২০২ জনের। আক্রান্ত হয়েছে ৯৩ হাজার। বিশ্বের অন্তত ৮০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে, এক অজানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বিশ্ব। এর থেকে মুক্তির উপায় কারো জানা নেই। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও রয়টার্সের। ২০২০ থেকে ২০২২ হওয়ার কথা চীনের ইতিহাসের স্বর্ণালি বছর। প্রথম বছর দারিদ্র্য বিদায়ের ঘোষণা, দ্বিতীয় বছর দেশটির একনাগাড়ে শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্তি উৎসব এবং ২০২২ সালে হওয়ার কথা দলের নেতা হিসেবে শি জিনপিংয়ের ১০ বছর পূর্তি উৎসব। তবে সব ওলটপালট করে দিয়েছে করোনা। চীন বিশ্বে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ছে। প্রেসিডেন্টও জনসমক্ষে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। সিপিসির ৭০ বছরের শক্ত মেরুদণ্ডে আতঙ্ক বইতে শুরু করেছে।

বিশ্বে চীনের প্রধান শক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য যে স্থানে করোনা আঘাত হেনেছে, সেখানেই। চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন দমবন্ধ অবস্থা। করোনা যেখান থেকে ছড়িয়েছে, সেই উহান চীনের শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ৮৩টি বড় বড় কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে। শহরটির অবস্থা মৃত্যুপুরীতুল্য। এর মধ্যেই মারা গেলেন ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং, যিনি প্রথম সাতজন সহযোগীসহ করোনাভাইরাসের কথা সাহস করে তুলে ধরেছিলেন।

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো চীনের বহু শহরে তাদের দোকানপাট ও কার্যালয় আপাতত বন্ধ করে নিয়েছে। প্রবাসী চীনারা অনেক দেশে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়ছে।’
‘আব্বা ঠিকই বলেছেন, চীনাদের ব্যবসা এবং লোকজন ফ্রান্সেও একঘরে হওয়াসহ জনরোষের কবলে। এত দিন আমরা একটা চীনা দোকান থেকে কাঁচাবাজার করতাম। একেবারে টাটকা নড়াচড়া অবস্থায় মাছ পাওয়া যেত। মাঝে মধ্যে সে জন্য যেতাম। এখন কেউ যায় না। দোকান বন্ধ হওয়ার পথে। চাইনিজরা দিন দিনই হয়ে উঠছে অস্পৃশ্য। যানবাহনে চলার পথে চাইনিজ প্যাসেঞ্জার পাশে থাকা আরো মুশকিল। তাদের কাছে কেউ বসতে চায় না। কাছের লোকজন দূরে সরে পড়ে- এমনকি কেউ কেউ পরের স্টেশনেই গাড়ি থেকে নেমে যায়।

তথ্যপ্রযুক্তিসহ ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের বেশির ভাগই চাইনিজ। ধস নেমেছে এসব পণ্যের ব্যবসায়ও। বিশ্বজুড়ে চাইনিজরা আজ অস্পৃশ্য। জনরোষের কারণ, বিশ্বে সবচেয়ে নোংরা খাবার খায় চীনারা। নোংরা খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমেই কি করোনাভাইরাস মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে?’

একদিন জুমার নামাজ আদায়কালে রূপায়ণ মসজিদের খতিব মুফাসসির জামাল উদ্দিন বয়ানকালে বলেন, চার কারণে চীনাদের ওপর এই ‘আসমানি গজব’।
১. কুরআনুল কারিমে হস্তক্ষেপের ঘোষণা : মুসলিমদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনসহ সব ধর্মীয় গ্রন্থ নতুন করে লেখার পরিকল্পনা করছে চীন। ‘কুরআনের বিধান পরিবর্তনের অধিকার কারো নেই’। পবিত্র কুরআনকে উদ্ধৃত করে তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রতি যে ওহি অবতীর্ণ করা হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করলে আমি তো মহাদিবসের (কিয়ামতের দিনের) শাস্তির ভয় করি’ {সূরা ইউনুস, আয়াত-১৫}। পবিত্র কুরআন আল্লাহর বাণী। এতে পরিবর্তন আনার অধিকার কারো নেই। কোনো নবীকেও আল্লাহর বিধান পরিবর্তনের অধিকার দেয়া হয়নি। মহানবী সা:কেও কুরআনের কোনো বিধান পরিবর্তনের অধিকার দেয়া হয়নি। নবীরা হচ্ছেন আল্লাহর বাণীর বাহকমাত্র। এর সামান্যতম পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের ক্ষমতা তাদের নেই। নবীদের দায়িত্ব আল্লাহর বাণী সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। কিয়ামত পর্যন্ত যে কুরআনুল কারিমের একটা দাঁড়ি-কমায় হাত দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের আদলে কুরআনসহ ধর্মগ্রন্থগুলো পুনর্লিখনের বিষয়ে গত নভেম্বরে এক সভায় এ জন্য পরিকল্পনা করা হয়।

২. পরিচ্ছদ : শরীর খোলা রাখাসহ নারীদের স্বল্প বসনের দিক থেকে শীর্ষে চীন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(হে নবী!) আপনি আপনার পত্নীদের ও কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদের বলুন, যখন কোনো প্রয়োজনে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এমনকি, চেহারাও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে আবৃত করে রাখে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সূরা আহজাব, আয়াত-৬০)। স্বল্প বসনের রাজ্যে আল্লাহ এমন পর্দার ব্যবস্থা করেছেন যে, এখন নারী-পুরুষ কেউ ঘর থেকেই বের হয় না। ঘরের ভেতর চোখ দু’টি ছাড়া সমস্ত শরীর চলে গেছে পর্দার আড়ালে।

৩. খাদ্য : বিশ্বের তাবৎ রাজ্যের খাবার থেকে চীনাদের খাবার একটু ভিন্ন। পবিত্র, স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারী সব ধরনের খাদ্য গ্রহণে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। যেসব খাবার অপবিত্র ও অবৈধ তা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহির মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, আহারকারী যা আহার করে তাতে তার জন্য আমি কোনো হারাম খাবার পাই না; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের মাংস- এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ’ (সূরা আন-আম, আয়াত-১৪৫)।

দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু হারাম। যেমন- বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু, বানর ইত্যাদি। পাঞ্জাধারী হিংস্র পাখি খাওয়া হারাম। যেমন- ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘রাসূল সা: দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জন্তু আর নখ দিয়ে শিকারকারী প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন’ (মুসলিম, হাদিস নং-১৯৩৪)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত’ (সূরা মায়েদা, আয়াত-৩)। নোংরা ও নাপাক কিছু খাওয়া হারাম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাদের জন্য তিনি (রাসূল) পবিত্র বস্তু হালাল করেন আর অপবিত্র বস্তু করেন হারাম ’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১৫৭)। যেমন- মৃত জন্তু, পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, প্রবাহিত রক্ত এবং যেসব খাবারে কোনো উপকার নেই যেমন- বিষ, মদ, খড়কুটো, মাদকদ্রব্য, তামাক ও অন্যান্য নেশজাতীয় দ্রব্য খাওয়া হারাম। ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক, চিল ইত্যাদি খাওয়াও হারাম। কারণ হাদিসে এগুলোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইসলাম কর্তৃক নিষিদ্ধ - হুদহুদ, দোয়েল, ব্যাঙ, পিঁপড়া, মৌমাছি ইত্যাদি খাওয়াও নিষিদ্ধ।

৪. ধর্মীয় কাজে বাধা : খবরে প্রকাশ, ‘একবার ভাবুন তো, আপনি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও নামাজ রোজা রাখতে পারছেন না, কুরআন ও অন্যান্য ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারছেন না, চাইলেও নারীরা হিজাব ব্যবহার করতে পারছেন না, এমনকি সরকারি চাকরিতে হিজাব পরিহিতা নারীদের নিয়োগ বন্ধ; এক কথায়, ধর্মীয় স্বাধীনতার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এমন ঘটনা দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করে আসছে চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়। চীন সরকারের নির্মম নির্যাতন ও নৃশংসতার সাক্ষী জিনজিয়াং প্রদেশের এক কোটি ১০ লাখ মুসলমান।
চীনের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত সবচেয়ে বড় প্রদেশ এটি। জিনজিয়াং কাগজ-কলমে ‘স্বায়ত্তশাসিত’ হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।

১৯৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কিছু দিন পর কমিউনিস্ট সরকার উইঘুরদের বৃহত্তর চীনের সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব মেনে না নেয়ায় শুরু হয় উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন; নেমে আসে বিভীষিকাময় অত্যাচার। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নামে তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির স্থলে কমিউনিজম চাপিয়ে দেয়ার জন্য চীনা কমিউনিস্টরা উঠে পড়ে লেগে যায়। এর অংশ হিসেবে ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়। প্রার্থনালয় ভেঙে দেয়া হয়। ধর্মীয় কার্যাবলির ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। চীনাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে যখন উইঘুররা বিদ্রোহ শুরু করে, তখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহায়তায় হাজার হাজার নিরীহ উইঘুরকে হত্যা করা হয়েছে। অনেককে করা হয় গৃহহীন। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে প্রিয়জনদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে; সন্তানদের ধরে নিয়ে রাখা হচ্ছে ক্যাম্পে। এরকম ভীতিকর পরিস্থিতির মাঝেই চলছে তাদের জীবন। উইঘুর তথা মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য যা যা করা দরকার তার কোনো কিছুই বাকি রাখছে না বেইজিং প্রশাসন।

আল্লাহ তায়ালা যেহেতু অতিশয় মেহেরবান ও দয়াময়, তাই আল্লাহ তাৎক্ষণিক শাস্তি প্রয়োগ করেন না। তিনি অবকাশ দেন, সুযোগ দেন বারবার। সুযোগ পাওয়ার পরও পাপের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া, বিধর্মী কার্যকলাপ, ব্যভিচার, মাপে কম দেয়া, অন্যায় কাজে বাধা না দেয়া, হত্যা করা, দুনিয়াপ্রীতি বৃদ্ধি পাওয়াসহ ধনীরা কৃপণ হয়ে পড়লে নানান বালা-মুসিবতের মাধ্যমে ফেরাউন, নমরুদদের শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে মিশকাত, বুখারিসহ অনেক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

প্রকৃতির প্রতিশোধ : পরিবেশবিজ্ঞানের ভাষায়, করোনাভাইরাস প্রকৃতির প্রতিশোধ। প্রকৃতিকে নির্জীব, চলৎশক্তিহীন ও সর্বংসহা মনে হলেও আসলে তা নয়; বরং তা নির্মম প্রতিশোধ গ্রহণকারী। প্রকৃতি কারো অণু পরিমাণ অপরাধও সহ্য করে না। প্রতিশোধ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, সুনামি, মহামারী ইত্যাদি প্রকৃতিরই প্রতিশোধের হাতিয়ার। ১০ অক্টোবর ২০১৮ সালে মাইকেল আসছে’ সংবাদটি আগেই জানতে পেরেছিল বিশ্বের ১ নম্বর পরাশক্তি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বিশ্বের শীর্ষে, স্মার্টআপ ও গুগলের ‘তীর্থস্থান’ আমেরিকার মতো দেশ। তবু চেয়ে চেয়ে দেখাসহ কয়েক লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না। একইভাবে সুনামি, আচেহ প্রদেশে ‘মেগাথ্রাস্ট’ ভূমিকম্প : ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এ দিন ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলের দ্বীপ সুমাত্রার আচেহ প্রদেশে আঘাত হানে ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প। এর পরপরই সৃষ্টি হয় ভয়াবহ সুনামি যা সোমালিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সুনামিটি ভারত মহাসাগরের অনেক দেশেই আঘাত হানে। কেবল ইন্দোনেশিয়াতেই এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। নিহতের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি ছিল আচেহ প্রদেশে। এটাকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। জয়ীও হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে জয়ী হয়েছে বলা যায় না। প্রকৃতি প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু। এ মোকাবেলায় মানুষ বড়ই অসহায়।

সাত দশক আগে ১৯৪৯ সালে চীনের ঘটনা। কৃষিপ্রধান চীন। চড়ুইপাখি কৃষকের ধান খেয়ে দেশের ক্ষতি করে। নতুন চীনের জনক মাও সে তুং একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, সময় হয়েছে চড়ুইপাখি বিলুপ্ত করার। সে আদেশ যথাযথভাবে পালন করা হয়েছিল। এমন নির্বোধ কর্মকাণ্ডের খেসারত দিতেও বেশি সময় লাগেনি। পরের বছরই ধেয়ে এসেছে প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ। কারণ, শস্যদানার পাশাপাশি চড়ুইপাখি নানা ধরনের পোকামাকড়ও খায়। এ পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেল পোকামাকড়ের সংখ্যা। এতে করে ফসলের ক্ষেত ছেয়ে যেতে থাকে ক্ষতিকর পোকামাকড়ে। ফলে, যে শস্য বাঁচানোর জন্য এত কিছু করা হলো, তা গেল পোকামাকড়ের পেটে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শস্যভাণ্ডার খালি হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের মজুদ করা খাদ্যেও ঘাটতি দেখা দেয়। খাদ্যসঙ্কটের মুখে পড়ে যায় কোটি কোটি মানুষ। দেখা দিলো দুর্ভিক্ষ। ফলে পরবর্তী তিন বছরেই প্রাণহানির সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৫ মিলিয়নে। এ দুর্ভিক্ষ ‘দ্য গ্রেট ফেমিন’ নামে পরিচিত।

প্রকৃতির নিয়ম খুবই সুশৃঙ্খল। এর চিরন্তন নিয়মের কখনো ব্যত্যয় ঘটে না। সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায়- এই নিয়মে কোনো হেরফের নেই। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানই কোনো-না-কোনো শৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত। এরা একে অন্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই উপাদানগুলোর কোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, নষ্ট হয় পরিবেশগত ভারসাম্য। এ ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার গুরুদায়িত্ব প্রকৃতিই নিজ কাঁধে তুলে নেয়। করোনাভাইরাস যদি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য হয়ে থাকে, তবে ভারসাম্য ফিরে না আসা পর্যন্ত ২০১৮ সালে মাইকেলের মতো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনো বিজ্ঞান-প্রযুক্তিই হয়তো কাজে আসবে না। তাহলে উপায় কী?

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement