২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যদি লক্ষ্য থাকে অটুট বিশ্বাস হৃদয়ে...

-

শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়েই দেখলাম, পুরো দেশটাই যেন এক বৃহৎ কারাগার। জেলে বন্দী রেখে আর রিমান্ডে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে আমাকে ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। মাসের পর মাস বিনাচিকিৎসায় স্যাঁতসেঁতে ও আলো বাতাসহীন কারা প্রকোষ্ঠে ফেলে রাখা হয় আমাকে। সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। ফলে অনেকগুলো নতুন ব্যাধি শরীরে বাসা বেঁধেছে। বন্দী অবস্থায় প্রায় দিনই হাজিরার জন্য নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী কারাগার থেকে জজকোর্ট-সিএমএম আদালতে আনা-নেয়া ছিল ‘শাস্তি’র অন্য এক রূপ। উচ্চ আদালত থেকে সব মামলায় জামিন পেয়েও ‘ওপরের হুকুমে’ নির্জন কারাকক্ষে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন। অতঃপর আবারো ‘গায়েবি’ মামলা জুড়ে দিয়ে প্রলম্বিত করা হয়েছে কারাভোগ। যখন মুক্তি পেলাম, তখন আমার কাঁধে ১২২টি মামলার বোঝা। সবগুলো মামলাই ‘গায়েবি’, নয়তো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সাজানো। বেরিয়ে এসে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা করিয়েও সুস্থতা ফিরে পাইনি। গত বছরের ৪ মে নরসিংদীর কারাগার থেকে বেরুনোর পর সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনের উদয়াস্ত কাটাতে হচ্ছে আদালতের বারান্দায় অথবা আইনজীবীদের চেম্বারে।

এত মামলায় লড়তে গিয়ে আমার আর্থিক কষ্ট বুঝে সম্ভবত আইনজীবী ছোট ভাই টাকা নিতে চান না। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এভাবে আপনার চলবে কী করে? তিনি আর্থিক সমস্যার বাইরে আরেকটি ভয়ঙ্কর সমস্যার কথা জানালেন : লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; একেক জনের বিরুদ্ধে একাধিক তো বটেই, ক্ষেত্রবিশেষে শতাধিকও। নেতারা পরিচিত; মামলায় নিয়মিত হাজির না হলে তাদের জামিন বাতিল হবে এবং বড় ধরনের সমস্যায় পড়বেন- এ কারণে তারা নিয়মিতই মামলায় হাজির হন। সমস্যাটা হয় কর্মীদের নিয়ে। বেশির ভাগ কর্মী আদালতে হাজির হন না। অনেকের বাড়ি থেকে আদালতে আসার টাকাও নেই। কেউ কেউ বাড়িতে থাকার সুযোগ হারিয়েছেন অনেক আগেই; থাকেন পালিয়ে, লুকিয়ে, এখানে-সেখানে। গরহাজির এই কর্মীদের কারণে বিপদে পড়েন তাদের আইনজীবীরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আদালতের কাছে নিয়মিত জবাবদিহি করার ভয়ে পারলে এই আইনজীবীরা এখনই পালিয়ে যান। কাজেই, প্রিয় তৃণমূল কর্মীদের কাছে সবিনয় অনুরোধ, একটু কষ্ট হলেও আপনাদের আইনজীবীদের দিকে তাকিয়ে, মামলার হাজিরাগুলো নিয়মিত দেবেন।

দীর্ঘদিন গণতন্ত্রহীন কর্তৃত্ববাদের চর্চার ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে; কেউ কাউকে মানতে চায় না, সবাই স্বেচ্ছাচারী হয়ে যেতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি কুফলের কারণে সামষ্টিক শুভ চিন্তার পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুফল পাওয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিরোধী রাজনীতি করা ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের বাইরের কেউ নয়। তাই রাষ্ট্রের এই ক্ষতিকর প্রভাব তাদের কারো কারো মধ্যেও পড়তে থাকে। এমন চিন্তা কাজ করে যে, অন্যরা আন্দোলন করুক, আমি সুফল ভোগ করব। সরকার নিজেও কূটকৌশলে এই চিন্তাটা ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে, ‘তুমি আন্দোলন করে কী পাবে? প্রধানমন্ত্রী তো হবেন আরেকজন’; ‘তুমি মিছিলে গেলে কিসের লাভ? নেতা হবেন আরেকজন’। এই অশুভ চিন্তাগুলো থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সতর্কভাবে মুক্ত থাকতে হবে। জনসমাগম অনেক বেশি হলে বাধাদানকারী শক্তিও বাধ্য হয় পিছু হটতে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত সমাবেশ এবং গণমিছিল এর উদাহরণ।

মানবসভ্যতা শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই অনেক প্রাণী পৃথিবীতে বসবাস করছে; যেমন- তেলাপোকা। এই ছোট্ট পতঙ্গটি থেকে শুরু করে আরো অনেক প্রাণী বিগত লাখো বছরেও তাদের জীবনযাপনের মান উন্নত করতে পারেনি, কোনো সভ্যতা তৈরি করতে পারেনি, কিন্তু মানুষ পেরেছে। কারণ মানুষ কেবল নিজের জন্য বাঁচে না, সে তার পরিবারের জন্য বাঁচে, সমাজের জন্য বাঁচে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাঁচে; সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে সে পরবর্তী প্রজন্মের জীবনযাপনের মান উন্নত করার জন্য নিয়মিত সংগ্রাম করে থাকে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, ধৈর্য্যসহকারে এ লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। ‘এই লড়াইয়ে আমার কী লাভ’, এমন স্বার্থসর্বস্ব চিন্তা করা যাবে না। এমন চিন্তা করে না লড়ে জীবন না দিলে, আজ আমাদের জাতিকে বাংলা ভাষার পরিবর্তে ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে হতো, আজো আমাদের থাকতে হতো পরাধীন।

স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার জন্য অগণিত দেশপ্রেমিক বিপ্লবীর ত্যাগ, লাখো শহীদের জীবন, গণমানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং একসাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা, গনতন্ত্র ও গণমানুষের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই স্বাধীনতা ও গণমানুষের অধিকার বন্দিশালায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার সব পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। আধিপত্যবাদসহ বিদেশী শক্তির সহায়তায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পদদলিত করে সব কিছু লুটেপুটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকমী গুম-হত্যা এবং নির্যাতনের মধ্যেও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সরকারের নানামুখী নির্যাতনের মধ্যেই লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। জোর লড়াই অপেক্ষা করছে। রাজনীতিসচেতন সমাজবিশ্লেষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, আগামী দিনের লড়াইয়েও সাধারণ মানুষ দলে দলে অংশ নেবে এবং রক্ত দিয়ে হলেও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

লক্ষ্য স্থির থাকলে সে লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তাড়না সৃষ্টি হয়। সেটাই মানুষকে লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে দেয়। পরিকল্পিতভাবে পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ-অবিশ্বাস সৃষ্টি করে দেশের সর্বত্র এক অনিশ্চিত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এটা সবার জন্যই বিপজ্জনক। দেশবাসী এই অনিশ্চিত পরিবেশের অবসান চায়।

বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব হলো, বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতির অবসানের জন্য লড়াইয়ের সঠিক কর্মসূচি প্রণয়ন এবং ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আগামীর লড়াইয়ে ক্ষমতাসীনদের করুণ পরিণতি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

লেখক : আইনজীবী ও রাজনীতিক


আরো সংবাদ



premium cement
তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ রংপুরে মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি, অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা হবে বাংলাদেশে : ধর্মমন্ত্রী সিলেটে ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় চিনিসহ গ্রেফতার ৪ অবৈধ সম্পদ : এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন

সকল