১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুন্দরবনের জন্য ভালোবাসা

- সংগৃহীত

১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল সুন্দরবন দিবস। এই বনের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। যা স্রষ্টাপ্রদত্ত অপার করুণা। জীববৈচিত্র্যের আধার। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা ও সামগ্রিক অর্থনীতির সাথে সুন্দরবনের নিবিড় সম্পর্ক। বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বা বাংলাদেশকে চেনে, এমন পাঁচটি বিষয়ের তালিকা করলে সুন্দরবন সেখানে অবশ্যই স্থান পাবে। বাংলাদেশের গর্ব এই সুন্দরবন। সম্প্রতি ইউনেস্কো সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে বিশ্বের জন্য অসামান্য সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় বিপন্ন বহু প্রজাতির প্রাণীর আশ্রয়স্থল সুন্দরবন। মেছো বাঘ, ইরাবতি ও গাঙ্গেয় ডলফিন, মদনটাক, রাজগোখরা, উদবিড়াল ইত্যাদি প্রায় বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ সুন্দরবনজুড়ে। তথ্য মতে, প্রতি বছর দেশের অর্থনীতিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অবদান রাখছে সুন্দরবন।

ভৌগোলিক অবস্থান ও গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি ও টিকে থাকার এই নিবিড় প্রতিবেশ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সুন্দরবনের প্রধান সৌন্দর্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার তথা বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণে বাঘের সংখ্যা কমছে না, কমছে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে। শিকারির দল বাঘ হত্যা করছে। এ ছাড়া সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যাও কমছে। খাদ্যের অভাব, শিকারিদের দাপট ও আবাসস্থল কমে যাওয়ায় সুন্দরবনের সৌন্দর্যের আরেক প্রতীক হরিণ ভালো নেই। হরিণের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাঘের খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে লবণাক্ততা। উজানে ফারাক্কা বাঁধের কারণে এবং গঙ্গা-গড়াই-কপোতাক্ষ-মাথাভাঙ্গা-ভৈরবসহ সুন্দরবনের সাথে মিঠাপানির সরবরাহের সংযোগ থাকা নদ-নদীগুলোতে পানিসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না বা অল্প লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এমন উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে। লবণাক্ততা কম সহ্য করতে পারে বলে সুন্দরী ও কেওড়া গাছের জন্য রীতিমতো হুমকি তৈরি হয়েছে। মূলত হিমালয় থেকে নেমে আসা মিষ্টিপানির প্রবাহ ও বঙ্গোপসাগরের লোনাপানির মিশ্রণে এক বিশেষ প্রতিবেশ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সুন্দরবনে। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের সার্বিক প্রতিবেশ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সুন্দরবনের প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সোয়া ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, দূষণ, মনুষ্যসৃষ্ট প্রকৃতি-পরিবেশবিনাশী কর্মকাণ্ড সুন্দরবনের জন্য হুমকি তৈরি করছে। সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র শ্বাসমূলীয় বন, যেখানে পলি পড়ে পড়ে নতুন ভূমির গঠন হচ্ছে। আবার নতুন জেগে ওঠা ভূমিতে একইভাবে হরিণ, বাঘ, সাপসহ অন্য প্রাণীরাও আবাসস্থল গড়ছে।

শত শত বছর ধরে সুন্দরবন টিকে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা আবার আপনাআপনি পূরণ হচ্ছে। সুন্দরবন দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পূরণ হলেও মনুষ্যসৃষ্ট বনবিনাশী কর্মকাণ্ড মহাবিপদ ডেকে আনছে। সুন্দরবনের পাশে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার বর্জ্য এর দূষণ ত্বরান্বিত করছে। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার সংবাদও এখন শোনা যায়, যা জীববৈচিত্র্য টিকে থাকার জন্য অন্যতম অন্তরায়। শুঁটকি ব্যবসা ঘিরে সুন্দরবনে যেন কোনো ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। মাঝে মধ্যেই সুন্দরবনে জেলেদের খাবার পানির সঙ্কট দেখা দেয়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে যারা সুন্দরবনে যান, তাদের সুপেয় পানির সঙ্কট দূর করাও জরুরি। সুন্দরবনের আশপাশে যেকোনো ধরনের শিল্পকারখানা বা উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার আগে অবশ্যই পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার (ইআইএ) ফল বিবেচনায় নিতে হবে। সুন্দরবন বিশ্বের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রও। অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে সুন্দরবনের দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি তৈরি হতে পারে! বনে কোনো ধরনের প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ যাতে না হয়, সে ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক করতে হবে।

তবে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া। কোনো কোনো উদ্ভিদ ও প্রাণী কম লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, আবার কোনো কোনো উদ্ভিদ মাঝারি মানের লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। সুন্দরবনে লবণাক্ততা যাতে না বাড়ে, সেজন্য উজানের মিঠাপানির সরবরাহ ব্যবস্থা বাড়ানোর কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সুন্দরবনে কোনো প্রকার ক্ষতিকর প্রভাব পড়লে তার প্রভাব পুরো দেশের ওপর পড়বে। কেননা বিপন্ন প্রাণীদের আবাসস্থলসহ উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুরক্ষা ও সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান অনস্বীকার্য। মনে রাখতে হবেÑ মঙ্গলগ্রহে যাওয়া সম্ভব, শহর বানানো সম্ভব, কিন্তু আরেকটি সুন্দরবন বানানো সম্ভব নয়।

লেখক : পরিবেশকর্মী
sadonsarker2005@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল