২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পরীক্ষার চাপে পিষ্ট শিক্ষার্থীরা

-

বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা নেয়া হয় সারা বছর। কোনো কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় বইয়ের আধিক্যে পরীক্ষার চাপ আরো বেশি। এতে শিক্ষার্থীরা একপ্রকার পিষ্টই বলা চলে। কোচিংয়ে তো পরীক্ষার বিকল্প আছে বলে ভাবাই হয় না। শিক্ষাজীবনের সব সুখপ্রদ মুহূর্ত পরীক্ষা নামক একটি শব্দেই বিষাদে ভরে ওঠে। জানা যায়, পরীক্ষাপদ্ধতির সূত্রপাত প্রাচীন চীনে। এর প্রচলন হয়েছিল ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে। পরে ইংল্যান্ড শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষাপদ্ধতি সংযোজন করে। আস্তে আস্তে বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন ঘটে।

পরীক্ষার সাথে অনেক কিছু জড়িত। রুটিন, গ্রেড, জিপিএ কিংবা ফল সব কিছুই সম্পর্কিত। এ বিষয়গুলো সহজ করতে নতুন নতুন পরীক্ষাপদ্ধতির সূচনা হচ্ছে। যেমন- আগে পরীক্ষা মানে ছিল বড় বড় করে প্রশ্নের উত্তর দেয়া। তা ছিল রচনামূলক। এরপরে শুরু হয় মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন (এমসিকিউ) পদ্ধতি। সেখানে শুধু টিক দিতে হয়। তবে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে মজার পরীক্ষা হলো ব্যবহারিক, যেখানে সব কিছু হাতে-কলমে করতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এখন পরীক্ষা অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটার-নির্ভর।

মূল্যায়নের উদ্দেশ্যেই পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। কে কত ভালোভাবে ক্লাস করেছে, কতটা মনোযোগ সহকারে ক্লাসে শিক্ষকের কথা শুনেছে, কার মেধা কতটুকু এসব যাচাই করা হয়। মূল্যায়নের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো নম্বর প্রদান। যে যত বেশি নম্বর পায়, সে তত ‘ভালো ছাত্র’ বলে বিবেচিত হয়। পরীক্ষা মানে পাস-ফেলের কারবার। ফেলের চাপ সামলাতে না পেরে প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর অভিমান বা লজ্জায় আত্মহত্যার মতো বেদনাদায়ক ঘটনার সংবাদ শুনতে হচ্ছে আমাদের।

দেশে এখন আলোচনা হচ্ছে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে। এসব পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন মতামত দেয়া হয়েছে। অনেক অভিভাবকের কাছেই এখন পিইসি ও জেএসসি- অল্প ব্যবধানে এ দু’টি পাবলিক পরীক্ষা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ স্কুলে ভর্তি হয়ে অল্প অল্প করে পরীক্ষা বিষয়টি যখন স্বল্পপরিসরে বুঝতে আরম্ভ করে, তখনই তাকে পাবলিক পরীক্ষার মতো বড় আসরে বসতে হচ্ছে। তাদের মাথায় ঢুকে যায় কেবল ভালো ফলের স্বপ্ন। অনেক সময় নিজের সামর্থ্যরে সাথে অভিভাবকের চাহিদা না মেলায় সন্তান মানসিকভাবে হয় বিপর্যস্ত। বেশির ভাগ অভিভাবকই চান, তার সন্তান খুব ভালো ফল করুক।

পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেই তাদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। এর সাথে আছে ‘এ প্লাস’ পাওয়ার চাপ। সন্তানদের কাছে এটিই বেশি আশা করেন অভিভাবকেরা। স্কুলের বাইরে, নিজ শিক্ষকদের সাথে না থেকে নতুন পরিবেশে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের চাপ; এর ওপর অভিভাবকদের পক্ষ থেকে ভালো ফল করার জন্য আরোপিত বাধ্যবাধকতা। অবশ্য, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা না রেখে ক্লাস মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। হাইস্কুলগুলোতে বছরে তিনটির স্থলে দু’টি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। কমানো হয়েছে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা।

মেধা হলো নিয়মিত চর্চার বিষয়। কিন্তু পরীক্ষা থেকে যে ভীতির জন্ম নেয়- তা কাটাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে অবশ্যই পরীক্ষার প্রয়োজন। কিন্তু তা ঘন ঘন না হওয়া ভালো বলে মনে করেন শিক্ষা নিয়ে গবেষণাকারীরা। পরীক্ষা কমিয়ে বছরে দু’টি যথেষ্ট বলে তাদের অভিমত। বিকল্প কোনো পদ্ধতি বের করা গেলে তাও বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্তত শিশুদের পরীক্ষাভীতি থেকে মুক্ত করা জরুরি। শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রমের একটি অপরিহার্য অংশ হলো পরীক্ষা। এর প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোভাব ইতিবাচক থাকা দরকার। এ ছাড়া পরীক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত।

লেখক : শিক্ষক


আরো সংবাদ



premium cement