২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেনশনে সমতা আনয়ন ও পুনঃস্থাপন

-

সমাজের প্রতিটি স্তরে সামাজিক কল্যাণে বিভিন্ন সেবাধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ, বিধিমালা প্রণয়ন, সংস্কার এবং কার্যকরের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রসার ঘটিয়েছে, যার সুফল ভোগ করছে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার জনগণ, অবসরভোগী ও প্রবীণরা। পেনশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, সার্বজনীন পেনশন ধারণা এবং সামাজিক সুরক্ষায় গৃহীত ব্যবস্থা প্রশংসার দাবি রাখে।

সরকার পেনশনারদের কল্যাণে ইতোমধ্যে কিছু আর্থিক সুবিধা বাস্তবায়ন করেছে যা উল্লেখযোগ্য যেমন- নববর্ষভাতা, পারিবারিক পেনশনভোগীদের মতো শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের মৃত্যুর পর তাদের উত্তরাধিকারী বিধবা স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসাভাতা ও দুই ঈদে দুটি উৎসবভাতা পাওয়ার সুবিধা, পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিবেচনা করে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের অবসরের ১৫ বছর পর পুনরায় পেনশনে পুনঃস্থাপনের মতো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ১ জুলাই ২০১৭ থেকে বাস্তবায়ন হয়েছে।

প্রবীণদের মধ্যে যারা চাকরি থেকে অবসরে, তারা যে পেনশনভাতা পান তা সময়ের তুলনায় অপ্রতুল। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, সময়ের ব্যবধানে অতি প্রবীণদের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। ১৯৯৮ সালে বয়স্কভাতা প্রবর্তন করে। সরকার প্রবীণদের ভরণপোষণ, চিকিৎসাসেবা এবং পরিবারের অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ভাতার পরিধি ও পরিমাণ বাড়ালে সমাজের এ অংশের কল্যাণ ও মানবাধিকারের উন্নতি ঘটবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে ভিত তৈরিতে অতীতে যাদের তারুণ্য ব্যয়িত হয়েছে কর্মে, অনুপ্রেরণায়, জ্ঞানে ও পরিশ্রমে তারা আজ বার্ধক্যে। অর্থকষ্টে, স্বাস্থ্যসেবায়, অসহায়ত্বে তারা প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টনের সুফল ভোগ করার প্রত্যাশা করছে। পেনশনারদের কল্যাণে কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলো।

পেনশন করমুক্ত। যারা শতভাগ পেনশন সমর্পণ করেছেন এবং সমর্পিত পেনশন থেকে প্রাপ্ত অর্থ, গ্রাচুইটি ও ভবিষ্য তহবিল জমা অর্থে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত অঙ্ক পর্যন্ত (বিশেষত পেনশনার সঞ্চয়পত্রে) বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ জুন ২০১১ সালের আগে মুনাফা করমুক্ত ছিল। পরবর্তীতে মেয়াদ শেষে একই উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থে পুনঃবিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর পাঁচ শতাংশ উৎসকর- আয়কর না হলেও বাধ্যতামূলক করা হয় এবং গত ১ জুলাই ২০১৯ থেকে অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের মতো মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে পাঁচ লাখ টাকার ঊর্র্ধ্বে বিনিয়োগ করলে উৎসকর কর্তনের বিধান কার্যকর করা হয়। মুনাফা দুই শতাংশ হ্রাস হয়েছে। এক দিকে মুনাফার হারের ক্রমহ্রাসজনিত পার্থক্য, অন্যদিকে প্রথমে শূন্যকর পরে পাঁচ শতাংশ এবং বর্তমানে ১০ শতাংশ হারে উৎসকর আরোপে স্থির আয়ের সরকারি প্রবীণ কর্মচারীদের ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আয় হ্রাস পেয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও দ্বিগুণ হারে উৎসকর কর্তনে এ শ্রেণীর পেনশনারদের অন্য উৎস থেকে আয় না থাকায় তারা অবর্ণনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের আর্থিক কষ্ট লাঘবে উৎসকর হার হ্রাস করে আয় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনাপ্রসূত হওয়া দরকার।

সামাজিক চাহিদা বিবেচনায় পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের শ্রেণী বা পেশাভিত্তিক পার্থক্য উপলব্ধি এবং সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আয়ের ওপর নির্ভরশীলতা, জীবন যাপন- পারিবারিক খরচ মেটানোর ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় উৎসকর কর্তন থেকে অব্যাহতি দিয়ে যাদের আয়কর নিরূপণে করযোগ্য আয় না হওয়ায় ও কর কর্তন হয়েছে বা হচ্ছে, তাদের কর্তিত টাকা ফেরত দেয়ার সহজ বিধান রেখে আর্থিক সহায়তা সম্প্রসারণ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ক্রয়ের উৎস বিবেচনায় নবায়ন সুবিধাসহ নির্ধারিত সীমায় নবায়ন এবং মুনাফা আয় হ্রাস হেতু উৎসকর দ্বিগুণ না করে পুরোপুরি অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় প্রাধান্য দেয়া জরুরি।

সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী বর্তমান বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন। ১৯৯৭, ২০০৫, ২০০৯ এর বেতন ও প্রাপ্যতা অনেক কম ছিল। বর্তমানে কোনো কোনো গ্রেডে বেতন আগের বেতনের দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। মূল বেতন বৃদ্ধির সাথে পেনশন সুবিধা বেড়েছে আগের তুলনায় বহুগুণ এবং আনুষঙ্গিক প্রাপ্তিও বেড়েছে। কিন্তু পেনশনারদের পেনশন বেড়েছে ৬৫ বছর ঊর্র্ধ্বে ৫০ শতাংশ এবং ৬৫ বছরের নিচে ৪০ শতাংশ। সরকার অভিজ্ঞ সদস্যদের দিয়ে বেতন কমিশন গঠন করেও পেনশনারদের পেনশন প্রাপ্যতায় বর্তমান বাজারমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, বয়স ইত্যাদি বিবেচনায় শতভাগ ঊর্র্ধ্বে ও পেনশন বৃদ্ধি করতে না পারায় অবসরভোগী পেনশনাররা অর্থনৈতিক বৈষম্যে হতাশ ও অসন্তুষ্টিতে ভুগছেন।

বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর তিন মাস ১৮দিন। ৫৯ বা ৬০ বছর চাকরির বয়স ধরলে অবসরের পর ১৫ বছর শেষে বয়স দাঁড়াবে ৭৫-৭৬ (পিআরএল/এলপিআরের এক বছর ছুটিসহ) যা গড় আয়ুর অনেক ঊর্র্ধ্বে। অবসরের ১৫ বছর পর শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পেনশনে পুনঃস্থাপন সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার হিসেবে সমাজসেবামূলক প্রয়াস। যেহেতু সরকার একমাত্র ভরসাস্থল এবং সংবাদ মাধ্যমই অবসরভোগীদের অভাব-অভিযোগকে সরকারের উপলব্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সামাজিক নিরাপত্তা, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও গড় আয়ু বিবেচনায় অবসরোত্তর পিআরএল ও এলপিআরের এক বছর ছুটিসহ ১০ বছর শেষে আগের ১৫ বছর মেয়াদ হ্রাস করে পেনশনে পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় আনা যাতে অধিকাংশ পেনশনার প্রবৃদ্ধির সুফল ভোগ করতে পারেন, সমগ্রেড-সমপেনশন ব্যবস্থার প্রবর্তন, চলমান বেতন স্কেলের সাথে আর্থিক সমন্বয়, আগের আহৃত বেতনের ৮০ শতাংশ হিসাবে দেয়া পেনশনের স্থলে ৯০ শতাংশ পেনশন হিসাব করে অতিরিক্ত অর্থ ছাড়করণ, অবসরের পর স্বাস্থ্যখাতে ভাতা দ্বিগুণ এবং অন্যান্য অর্থতুল্য সেবা সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সদয় মানবিক দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন প্রত্যাশীরা।

লেখক : সাবেক নির্বাহী, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
ইমেইল : qsstechno@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু

সকল