২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন

লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন - ছবি : সংগ্রহ

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ভারতবর্ষের তৎকালীন আসাম-বাংলা প্রদেশ থেকে হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন কিং কমিশনড অফিসার ছিলেন। তারা হলেন- জেনারেল মুহাম্মদ ইশফাকুল মজিদ (১৯০৩-১৯৭৩), লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন (১৯২০-১৯৯২), জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী (১৯১৮-১৯৮৪), মেজর আবদুল গণি (১৯১৯-১৯৫৭)। এদের প্রত্যেকেই ছিলেন এ দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার পেছনে তাদের অনন্যসাধারণ ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অবদান জড়িত। তাদের মধ্যে জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন ছিলেন অন্যতম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তিনিই একমাত্র বাঙালি সামরিক অফিসার, যিনি দীর্ঘ ১৪ বছর জেনারেল পর্যায়ে চাকরি করে বাঙালিদের স্বার্থরক্ষায় অবিরাম চেষ্টা করে গেছেন। তিনি এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যাদের অসামান্য অবদানের ফলেই এতদঞ্চলের মুসলমানদের ভাগ্যাকাশে ঘন কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘমালা ভেদ করে উদিত হয়েছিল প্রখর আলোর রবিকর। আর সে পরিবার হলো ঢাকার নবাব পরিবার।

জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনের পূর্বপুরুষ নবার স্যার সলিমুল্লাহর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বৃহত্তর বাংলায় অসহায় বঞ্চিত মুসলমানদের মুক্তি ও সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে ১৯০৫ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ’ গঠন করা হয়েছিল। নবাব পরিবারের আরেক অনন্য কৃতী সন্তান খাজা নাজিমুদ্দীন (১৮৯৪-১৯৬৪) ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন ছিলেন তার ভ্রাতুষ্পুত্র।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ওয়াসিউদ্দিন ১৯২০ সালের ২০ মার্চ ঢাকায় আহসান মঞ্জিলে নবাব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খাজা শাহাবুদ্দিন ছিলেন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গভর্নর ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী এবং মা ফারহাত বানু ছিলেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ভ্রাতুষ্পুত্রী ও বৃহত্তর বাংলার আইনসভার সদস্য (১৯৩৭)।

খাজা ওয়াসিউদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। শৈশব থেকেই তাকে পারিবারিক নিয়মানুযায়ী কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে বড় হতে হয়। প্রথমেই গৃহশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে তিনি পবিত্র কুরআন ও ধর্মীয় আচার-আচরণ শিক্ষা লাভ করেন। একই সাথে ইংরেজি, উর্দু, জার্মান ও ফারসি ভাষাও অনুশীলন করেন। ঢাকা মুসলিম হাইস্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুলে ভর্তি হন। এখানে পড়াশোনাকালে মাত্র ১১ বছর বয়সে তাকে প্রিন্স অব ওয়েলস রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি কলেজে ভর্তি করা হয় এবং এখানে তিনি কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

অতঃপর ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে কিং কমিশনড অফিসার হিসেবে প্রবেশ করার জন্য আবেদন জানান। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উক্তীর্ণ হয়ে ১৯৩৮ সালের মাঝামাঝি তিনি জেন্টলম্যান ক্যাডেট হিসেবে দেরাদুনে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। সফলতার সাথে প্রশিক্ষণ শেষ করে ১৯৪০ সালে আর্মির রয়েল কোর অব আর্টিলারিতে উপমহাদেশের প্রথম মুসলমান অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ২৪তম মাউন্টেন রেজিমেন্টের সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট খাজা ওয়াসিউদ্দিন শুরু করেন সামরিক জীবন। এ ইউনিটের সাথে তিনি ওয়াজিরিস্তানসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে নিয়োজিত থেকে নিজেকে গড়ে তোলেন পেশাদার সামরিক অফিসার হিসেবে। ১৯৪৩ সালে তিনি মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করে একটি মাউন্টেন ব্যাটারির দায়িত্ব পান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টে অংশগ্রহণ করেন। জাপানি আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেজর ওয়াসি তার সৈন্যদের নিয়ে সাঁতার কেটে সিটাং নদী পার হয়ে আসেন।

অতঃপর তার ইউনিট ইমফলে অবস্থান গ্রহণ করে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে থাকে। এখানে একদিন একটি অভিযানে অংশ নেয়াকালে জিপ নিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় ওঠার সময় মারাত্মক দুর্ঘটনায় তার হাড় ভেঙে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। সুস্থ হওয়ার পর ১৯৪৫ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ব্যাঙ্গালোরে ব্রিটিশ-ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের (আইএসএসবি) এডিশনাল ডেপুটি প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্তি লাভ করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ওয়াসিউদ্দিন সদ্যগঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে তাকে সশস্ত্রবাহিনীর আইএসএসবি’র ডেপুটি প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে কর্নেল পদে পদোন্নতি হলে তিনি আইএসএসবি’র প্রেসিডেন্ট পদে নিযুক্তি পান। সেনাবাহিনীর তুখোড় মেধাবী অফিসার হিসেবে তিনি ১৯৫১ সালে যুক্তরাজ্যের কিম্বার্লি স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে ১৯৫২-৫৩ সালে তিনি ফার্স্ট লাইট এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালে ব্রিগেডিয়ার হয়ে সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর অব আর্টিলারি হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। এরপর তিনি ১৫ আর্টিলারি ডিভিশনের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন, যা ছিল একজন পেশাদার ব্রিগেডিয়ারের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের বিষয়। ১৯৬০ সালে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ১৪ ডিভিশনের সেনাবাহিনীর তৎকালীন ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে যোগদান করেন।

এ সময় তিনি প্রাদেশিক সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন এবং দেশ ও জনগণের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সমর্থ হন। ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ তার আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে শক্তিশালী একটি ‘বোর্ড অব গভর্নরস’ গঠন করেন, যাতে এ প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে। এরপর ১৯৬৩ সালে লাহোরে অবস্থিত দশম ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে সরকার তাকে যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল ডিফেন্স কলেজে পাঠান উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য। দেশে ফিরে আসার পর তাকে সেনাবাহিনীর মাস্টার জেনারেল অব অর্ডিন্যান্স পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৬৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর বৃহত্তম সেকেন্ড কোরের কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে ষড়যন্ত্রের ডালপালা গজাতে থাকে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন ছিলেন তখন পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীতে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ জেনারেল। ‘না পারে গিলতে, না পারে ফেলতে’- এ রকম এক স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে তাকে কোর কমান্ডার পদে রেখে কোনো ষড়যন্ত্রই কার্যকর করা সম্ভব হবে না বলে তাকে কমান্ড থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের সব অফিসার ও সদস্যদের অবিশ্বাস ও সন্দেহ করত এবং তাদের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনা করা হতো।

কোনো দায়িত্বই স্বাধীনভাবে পালন করার সুযোগ তাদের দেয়া হতো না। বিপদসঙ্কুল সীমাবদ্ধ পরিবেশে শীর্ষ পর্যায়ের এ জেনারেলকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ করতে হতো। অন্য দিকে, তার প্রাণপ্রিয় পুত্র সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট শফিউদ্দিন ওয়াসি তারই ইচ্ছায় ‘সিনিয়র টাইগার’ নামে পরিচিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নে যশোর সেনানিবাসে যোগদান করেছে। এ রকম চতুর্মুখী বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি দমে যাননি। কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করতে থাকেন। প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি-মাতৃভূমির প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণে তারই একসময়ের সহকর্মী ও কাছের মানুষ কর্নেল ওসমানীকে তিনি সব গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর খবরাখবর জানাতেন। এসব টের পেয়ে সরকার তাকে বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ওয়াসিউদ্দিন নিজের মর্যাদা এবং মাতৃভূমির সম্মানের কথা চিন্তা করে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ও পদত্যাগ করলে তাকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে অন্তরীণ অবস্থায় রাখা হয়।

জেনারেল ওয়াসি কমিশন লাভ করেছিলেন গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হিসেবে। কেননা, সে সময়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের জন্মই হয়নি। কিন্তু তার প্রথম পুত্র শফিউদ্দিন মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষণ শেষ করে, যাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন ‘সিনিয়র টাইগার’ (১ ইস্ট বেঙ্গলের ডাক নাম)-এ বদলি হয়, সেটি তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। এটা ছিল তার গভীর দেশপ্রেমের বড় উদাহরণ। ১৯৭০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি, কাকুলে ২৪তম ওয়ার কোর্সের কমিশন বা পাসিং আউট প্যারেড। প্রধান অতিথি ছিলেন পাকিস্তানের বৃহত্তম সেনা কোর ‘সেকেন্ড কোর’-এর কমান্ডার জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিন।

এ কোর্সের প্রথম ক্যাডেট হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’প্রাপ্ত ব্যক্তিটি ছিলেন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক (অব:) মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এবং তারই কোর্সমেট ছিলেন প্রধান অতিথির পুত্র সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট খাজা শফিওয়াসি উদ্দিন। তার সদ্য কমিশন লাভ করা পুত্র ফার্স্ট ইস্ট বেঙ্গল, যশোর সেনানিবাসে যোগ দেয়ার কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। অন্য দিকে, তিনি নিজেও তখন সপরিবারে অন্তরীণ। এ রকম বিপদসঙ্কুল পরিবেশ, অনিশ্চিত পরিস্থিতি ও অসহায় অবস্থায় বাবার নিরাপত্তার কথা ভেবে একজন সদ্য কমিশনড অফিসার বা সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের পক্ষে বিদ্রোহ করা ছিল অত্যন্ত দুঃসাধ্য।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে ‘প্রাদেশিক’ ভাষায় কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু জেনারেল ওয়াসিউদ্দিন তা উপেক্ষা করে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যেকোনো অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় তার বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের রেজিমেন্টাল কনফারেন্সেও বাংলায় বক্তব্য রাখেন। এমনকি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর ও সিয়ালকোটে যথাক্রমে ৪ ও ৫ ইস্ট বেঙ্গলকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে টিক্কা খানসহ বহু সিনিয়র জেনারেলের উপস্থিতিতে ও তাদের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে বাংলা ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। এটা যে তার অসাধারণ সাহসিকতা ও দেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ, তা বলাই বাহুল্য। তার বাসার নেমপ্লেটও ছিল বাংলা ভাষায় উৎকীর্ণ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ওয়াসিউদ্দিন তার প্রভাব খাটিয়ে খুব দ্রুত পাকিস্তান থেকে সব বাংলাদেশী নাগরিক ও সশস্ত্র বাহিনীর সব বাঙালি সদস্যকে দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করেন। জানা যায়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনকে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক, তা সম্ভব হয়নি। ওয়াসিউদ্দিন সব বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে সর্বশেষ ১৯৭৪ সালে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন।

জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনের বর্ণাঢ্য ও বিশাল কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা, সুখ্যাতিকে দেশের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রথমে তাকে কুয়েতে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করে এবং পরে ১৯৭৬ সালে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়। ১৯৭৭ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে তাকে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয় এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি খুবই সুনামের সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি দেশের স্বার্থ জোরালোভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেন এবং আমাদের স্বাধীন দেশের জন্য বহু দেশের স্বীকৃতি আদায়ে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৯৪৫ সালের নভেম্বর মাসে তার চাচা খাজা নাজিমুদ্দীনের কন্যা জাফার বানুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

অবসর জীবনে তিনি সাঁতার ও গলফ খেলায় অংশ নিয়ে সময় কাটাতেন। তিনি জেনারেল ওসমানী ট্রাস্টের আজীবন চেয়ারম্যান এবং ঢাকা মহানগর সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। গলফার ও সাঁতারু হিসেবে তিনি ব্রিটিশ-ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে সুপরিচিত ছিলেন। লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে তার হাতে গলফ কোর্সের সূচনা হয়।
জেনারেল ওয়াসিউদ্দিনের অনেক অবদানের মধ্যে আরো একটি উল্লেখযোগ্য হলো তিনি তার নিজ উদ্যোগে সেনাপ্রধান এরশাদকে বুঝিয়ে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার ও তাদের পরিবারবর্গের কল্যাণের জন্য 'Retired Armed Forces Officers Welfare Association' (RAOWA) নামের সংগঠন সৃষ্টি করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।

১৯৯২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় সস্ত্রীক দাওয়াতে উপস্থিত হলে এ মহান দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তিনি ছিলেন ‘কর্নেল কমান্ড্যান্ট’ বা অভিভাবক। স্বাধীনতার প্রতীক এ রেজিমেন্ট ও এর প্রতিজন সদস্য তার গভীর ভালোবাসা ও মমতায় সিক্ত ছিল। এর উন্নয়নে তিনি ছিলেন সদা তৎপর। তিনি তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে এ রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়নের সংখ্যা বাড়িয়েছেন।
hoque2515@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১

সকল