১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মিয়ানমারকে ধ্বংস করছে জান্তা সরকার : জাতিসঙ্ঘ

আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিলো বিদ্রোহীরা
-

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চীনের মধ্যস্থতায় এ বছরের জানুয়ারিতে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেয়া হলেও সেটি জান্তার সদিচ্ছার অভাবে বিফলে গেছে। জাতিসঙ্ঘ বলছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে দেশটিতে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জান্তা যেভাবে সাধারণ জনগণের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে তাতে দেশটি এখন নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে।
জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্রগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ২০২১ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর পরই দেশটিতে সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে সাধারণ জনগণ। জোট গঠন করে তার সেনাদের বিভিন্ন রাজ্যে ইতোমধ্যে পরাজিত করেছে।
জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুস মিয়ানমারের প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কাছে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জান্তা ক্রমেই দেশটির ওপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। তাদের বহু সেনা হতাহত হয়েছে। এটি আক্ষরিক অর্থেই জান্তার পরাজয়।’ টম আরো বলেন, ‘জান্তা ক্রমেই ধ্বংসাত্মক আচরণ করছে। গত ৬ মাসে দেশটিতে স্কুল, হাসপাতাল ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জান্তা দেশটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে মেতেছে।
জান্তাবিরোধী জোট কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর এই সপ্তাহের শুরুতে চীনের ইউনান প্রদেশের সাথে সংযোগ আছে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক মহাসড়ক ও এর পার্শ্ববর্তী শহর নিজেদের দখলে নিয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে জুনের শেষের দিকে যুদ্ধ ব্যাপক আকার ধারণ করে। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা চালায়।
পরে চলমান সংঘর্ষ বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এলেও সেটি নাকচ করে দিয়েছে আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সমন্বিত জোট।
গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল :
মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ শানের গুরুত্বপূর্ণ শহর নাউংছোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। গত শুক্রবার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সম্পূর্ণভাবে হটিয়ে দিয়ে শহরটি টিএনএলএ দখল করে। গোষ্ঠীটির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও যোদ্ধাবাহিনীর প্রধান জেনারেল তার ভোনে কিয়াও এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘নাউংছো শহর সম্পূর্ণ আমাদের।’
শান মিয়ানমার ও চীনের সীমান্তবর্তী প্রদেশ। নাউংছো এই প্রদেশের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। দুই দেশের মধ্যকার অধিকাংশ বাণিজ্য হয় এই শহরের মাধ্যমে। এছাড়া শহরটিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য একটি অভিজাত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে। তা ছাড়া এ শহরটি থেকে শান প্রদেরশের রাজধানী তাউঙ্গির দূরত্ব বেশি নয়, মাত্র ৫০ কিলোমিটার।
এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে ক্ষমতাসীন জান্তার মুখপাত্রদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এএফপি, কিন্তু কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশি শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে সঙ্ঘাত শুরু হয় তৎকালীন বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। চলমান এই সঙ্ঘাতের একপর্যায়ে ১৯৬২ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তবে তাতে সঙ্ঘাতের মাত্রা কমেনি।
গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে জান্তা বাহিনীর সাথে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর। সেই যুদ্ধে সাফল্যও পাচ্ছে বিদ্রোহীরা। গত সাত মাসে বিদ্রোহীদের কাছে দেশের এক পঞ্চমাংশের ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা।


আরো সংবাদ



premium cement