১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক কমানোর পরিকল্পনা রাশিয়ার

-

ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের গভীর সম্পৃক্ততার কারণে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কে সম্ভাব্য অবনমন আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে রাশিয়া। তবে এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে বৃহস্পতিবার ক্রেমলিন জানিয়েছে। এই পদক্ষেপের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর কমানোর বিষয়টি এমন সব দেশের জন্য একটি আদর্শ চর্চা; যারা শত্রুতা বা বৈরিতার মুখোমুখি হয়।’
‘ইউক্রেন সঙ্ঘাতে পশ্চিমাদের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার কারণে রুশ ফেডারেশন এই ধরনের বৈরী পশ্চিমা হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প বিবেচনা ছাড়া কোনো উপায় দেখে না।’ তবে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এবং রাশিয়া পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিভিন্ন উপায় বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে পেসকভ।
এদিকে, রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভও পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমন করার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বৈরী নীতির কারণে মস্কো পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাসে বাধ্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার দৈনিক ইজভেসতিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, ‘পশ্চিমের সাথে আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে অস্থির পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনো এমন পদক্ষেপ শুরু করিনি।’
‘কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত কি সম্ভব? আমি বলতে পারি যে আমরা এই সঙ্কটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এই জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো সর্বোচ্চ স্তরে নেয়া হয়। তাই এই বিষয়ে ধারণা করাটা আগাম হয়ে যাবে।’ যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে বিশ্ব মঞ্চে পশ্চিমাদের ‘দায়মুক্তির ধারণা’ শেষ পর্যন্ত রাশিয়াকে আরো সিদ্ধান্তমূলক উপায়ে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য করবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
সীমান্তে ইইউ প্রতিরক্ষা লাইন চায় পোল্যান্ড ও বাল্টিকরা
রয়টার্স থেকে জানা যায়, রাশিয়া ও তার মিত্র দেশ বেলারুশের সাথে সীমান্ত রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জোটভুক্ত দেশ পোলান্ড ও বাল্টিক দেশ পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া। বুধবার জোটের এই সীমান্তে একটি প্রতিরক্ষা লাইন তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। মস্কোর সামরিক হুমকি ও অন্যান্য ক্ষতিকারক কার্যকলাপ থেকে ইইউকে রক্ষার জন্য এই লাইন তৈরি করতে চায় তারা।
বৃহস্পতিবার থেকে ব্রাসেলসে শুরু হওয়া একটি শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার জন্য ইইউর চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি পাঠায় এই চার দেশের নেতারা। চিঠিতে তারা বলেছেন, এই প্রকল্পটি জোটের ২৭টি দেশের ৪৫ কোটি মানুষকে সুরক্ষা দেবে। এ ছাড়া এটি বাস্তবায়নে জোটটির সব সদস্যের আর্থিক সহায়তাও প্রয়োজন হবে। রয়টার্সের দেখা চার নেতার ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সামরিক ও হাইব্রিড হুমকি থেকে ইইউকে রক্ষার জন্য রাশিয়া ও বেলারুশের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত বরাবর একটি প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ করা জরুরি।’
হাইব্রিড হুমকিগুলো সামরিক ও বেসামরিক হয়ে থাকে। পাশাপাশি এটি আক্রমণের গোপন ও প্রকাশ্য উপায়গুলোর সংমিশ্রণকেও বোঝায়, যার মধ্যে বিভ্রান্তি, সাইবার আক্রমণ, অর্থনৈতিক চাপ এবং সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসীদের ঠেলে দেয়ার মতো ঘটনাগুলো রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যৌথ এই প্রচেষ্টার পরিসর এবং এর খরচের জন্য ইইউকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন জোগাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ কিছু ইইউ কূটনীতিক অনুমান করেছেন, রাশিয়া ও বেলারুশের সাথে ৭০০ কিলোমিটার ইইউ সীমান্ত বরাবর মাটিতে এমন একটি প্রতিরক্ষামূলক লাইন নির্মাণের প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ইউরো (২.৬৭ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় হতে পারে। ব্রাসেলসের শীর্ষ সম্মেলনে ইইউ নেতাদের মধ্যে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হবে প্রতিরক্ষায় ইউরোপীয় বিনিয়োগ এবং এর অর্থায়ন। কেননা ইউক্রেনে রাশিয়ার শুরু করা যুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে হাইব্রিড অভিযান বাড়াচ্ছে মস্কো।


আরো সংবাদ



premium cement