সংহতি জানাতে ইউক্রেনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- রয়টার্স
- ১৫ মে ২০২৪, ০০:০৫
রাশিয়ার সাথে যুদ্ধরত ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানাতে দেশটির রাজধানী কিয়েভে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে একটি ট্রেনযোগে কিয়েভে পৌঁছান ব্লিনকেন। এর আগ পর্যন্ত তার এ সফরের কথা গোপন রাখা হয়েছিল।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে সম্প্রতি ৬১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ পাস করেছে মার্কিন কংগ্রেস, তারপর থেকে ব্লিনকেন কিয়েভ সফরে যাওয়া সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা। ব্লিনকেনের সাথে সফররত সাংবাদিকদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘রাশিয়ার বোমাবর্ষণের মধ্যে ইউক্রেনীয়রা স্পষ্টতই অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে আছে, তাদের আশ্বাসের জোরালো বার্তা দেয়ার আশা করছেন ব্লিনকেন।’
ওই কর্মকর্তা জানান, ২৪ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনুমোদন করার পর ওই সামরিক সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই কামান, এটিএসিএমএস নামে পরিচিত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনীয় বাহিনীগুলোর কাছে পৌঁছানো শুরু করেছে।
সফরে ব্লিনকেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে ফের আশ্বস্ত করবেন এবং দেশটির ভবিষ্যতের ওপর দৃষ্টি রেখে একটি ভাষণ দেবেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেন সেনা স্বল্পতার পাশাপাশি কামানোর গোলা সঙ্কটে ভুগছে। এসব কারণে দক্ষিণে দনেস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রবল চাপে আছে। এর সুযোগ নিয়ে লোকবল ও গোলাবারুদে অনেক বলীয়ান রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রগামিতা অর্জন করছে।
খারকিভের কাছে সীমান্তবর্তী শহরে ঢুকে পড়েছে রুশ সৈন্যরা
এদিকে বিবিসির প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়াতে খারকিভ অঞ্চলে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। আর সেই অভিযানের মধ্যেই ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত শহর ভোভচানস্কে ঢুকে পড়েছে রুশ সৈন্যরা। এই শহরটি ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কাছে অবস্থিত। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কাছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত শহর ভোভচানস্কে প্রবেশ করেছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা শহরের উত্তর উপকণ্ঠ থেকে ‘শত্রুকে পেছনে হটিয়ে দিয়েছে’।
এমনকি বেশ কয়েকটি এলাকায় ইউক্রেনের সেনারা ‘কৌশলগত সাফল্য’ পেয়েছে বলেও দাবি করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। মূলত ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্তে সামরিক তৎপরতা চালানোর পর মস্কো এবার নতুন জায়গায় হামলা শুরু করেছে। গত শুক্রবার থেকে উত্তর-পূর্বে খারকিভ অঞ্চলে যতটা সম্ভব ভূখণ্ড দখল করতে বড় অভিযান শুরু করে রুশ সেনাবাহিনী।
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এই স্থল হামলায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী এই অঞ্চলের অন্তত নয়টি গ্রাম এবং বসতি দখল করে নেয়। এর ফলে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ খারকিভের দিকে পালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া শহরটি রাশিয়ান সৈন্যদের আর্টিলারি-রেঞ্জের মধ্যে চলে আসলে কী হতে পারে তা নিয়ে ইউক্রেনীয় কমান্ডারদের মধ্যেও উদ্বেগ রয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, রাশিয়া তার সর্বশেষ আক্রমণে ‘ব্যাপকসংখ্যক সেনা’ মোতায়েন করেছে, যা পাঁচটি ব্যাটালিয়ন পর্যন্ত হতে পারে এবং স্বীকার করেছে, মস্কোর সেনারা কিছু ‘কৌশলগত সাফল্যও’ পেয়েছে।
তবে সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলেছে, দিনের শুরু থেকে রাশিয়া শতাধিক সৈন্য হারিয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী তার পুরনো অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে বলেও দাবি করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বলেছে, ১২টি এলাকায় লড়াই চলছে এবং ভোচানস্কের পশ্চিমে স্টারিতসার বসতিতেও এই লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে তারা বলেছিল, ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে রিজার্ভ বাহিনীকে খারকিভ অঞ্চলে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।
আলাদাভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার সন্ধ্যার ভাষণে ঘোষণা করেছেন, একজন নতুন কমান্ডার খারকিভের বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছেন। অবশ্য তিনি বলেননি ঠিক কখন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইখাইলো দ্রাপতি তার পূর্বসূরি ইউরি হালুশকিনের কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছেন। বিবিসি বলছে, খারকিভ থেকে ৭৪ কিমি (৪৫ মাইল) দূরে অবস্থিত ভোভচানস্ক শহরটিতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভারী বোমা হামলা হয়েছে এবং আশপাশের অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া এখন গ্লাইড বোমা দিয়ে শহরের বসতিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে।
যদিও এটি এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শহর তবে তারপরও ভোভচানস্কের নির্দিষ্ট কোনো সামরিক গুরুত্ব নেই। তবে এটি রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া ইউক্রেনীয়দের মনোবলের ওপর বেশ জোরালো আঘাত হবে। খারকিভের আঞ্চলিক প্রধান ওলেহ সিনিয়েহুবভ বলেছেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নতুন দিকে ছোট দলে আক্রমণ করে যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইন প্রসারিত করার চেষ্টা করছে। তিনি স্থানীয় টিভিকে বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ান সৈন্যদের আটকে রেখেছে; কিন্তু তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ নতুন এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
টেলিগ্রামে তিনি রাশিয়ার অগ্রগতি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতিটিকে ‘বেশ জটিল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। প্রায় ছয় হাজার মানুষকে ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মর্টার বা আর্টিলারির গোলা ৩০টি বসতিতে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া প্রায় ২০০-৩০০ জন লোক এখনো ভোভচানস্কেই রয়ে গেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা