ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির তথ্য ভুল

ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় বেসরকারি সংস্থা পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া। সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কোনোভাবেই ধর্মের সাথে সংযুক্ত নয় এবং ভারতে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়েই সার্বিক প্রজনন উর্বরতার হার কমেছে। তবে সামগ্রিকভাবে হিন্দু নয়, মুসলিম জনসংখ্যা কমেছে সবচেয়ে বেশি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১৯৫০-২০১৫ সালের মধ্যে ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে সাত দশমিক ৮২ শতাংশ। এ সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ৪৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে দাবি করা হয়, ভারতে বর্তমান বিজেপি সরকার ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে লালন করার অনুকূল পরিবেশ দিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের এ প্রতিবেদন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে। বিজেপির দাবি, ‘কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতিই’ ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া বলছে, আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত তিন দশক ধরে মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। ১৯৮১-৯১ সাল পর্যন্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে ২০০১-১১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ছয় শতাংশে।
বেসরকারি এ সংস্থা বলেছে, ‘মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের’- এ পতন হিন্দু জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্ট। একই সময় সীমার মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২২ দশমিক সাত শতাংশ থেকে কমে ১৬ দশমিক আট শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’ সংস্থাটি আরো বলেছে, ভারতের ১৯৫১-২০১১ সাল পর্যন্ত আদমশুমারির যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় তার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ, যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তা নতুন নয়।
পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার মতে, ভারতে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই সার্বিক প্রজনন উর্বরতার হার কমেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫-০৬ ও ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত সার্বিক প্রজনন উর্বরতা হার সবচেয়ে বেশি কমেছে মুসলমানদের মধ্যে, প্রায় এক শতাংশ, বিপরীতে হিন্দুদের কমেছে দশমিক সাত শতাংশ। ভারতের এ জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি বলছে, ‘এ প্রবণতা স্পষ্ট করে যে, উর্বরতার হার বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় একই রকম। তাই এ ধরনের ব্যাখ্যা কেবল ভুল নয়, বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীনও বটে।’