১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফিলিস্তিনকে জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্যপদে সাধারণ পরিষদের সমর্থন

সেপ্টেম্বর থেকে কিছু অতিরিক্ত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে ফিলিস্তিন
সুইডেনের মালমো শহরে সঙ্গীতানুষ্ঠানে ইসরাইলি গায়িকার অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ। এতে জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও অংশ নেন : ইন্টারনেট -


জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থার সাধারণ পরিষদ। এ ইস্যুতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মতামত প্রকাশের জন্য স্থানীয় সময় শুক্রবার (বাংলাদেশ সময় আজ শনিবার) একটি রেজুল্যুশন উত্থাপন করা হবে এবং সেটির পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হবে রাষ্ট্রগুলোকে।
রেজুল্যুশনটির মূল বিষয়বস্তু হলো, ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ প্রদানের ব্যাপরে নিরাপত্তা পরিষদ সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান।
জাতিসঙ্ঘের মোট সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩টি। ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি বিশ্ববাসীর সমর্থন রয়েছে কিনা তা-ও যাচাই করা সম্ভব হবে এই ভোটের মাধ্যমে। কোনো রাষ্ট্র যদি জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্যপদ চায়, সে ক্ষেত্রে সেই রাষ্ট্রকে অবশ্যই সংস্থাটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ জোগাড় করতে হবে। এই সুপারিশ নেয়ার পর সাধারণ পরিষদে আবেদন করা হলে আবেদনের ওপর ভোট হবে। সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য যদি আবেদন মঞ্জুরের পক্ষে ভোট দেয়, তাহলেই জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ পাবে সেই রাষ্ট্র।

জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম ও গাজা উপত্যকা- তিন ভূখণ্ডের সমন্বয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। তবে ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জয়ী হয়ে এই তিনটি ভূখণ্ডই দখল করে ইসরাইল। পরে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনকে নিজস্ব প্রশাসন ও সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয়, কিন্তু তাদের রাষ্ট্রের সম্মান দেয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে যাতে তারা রাষ্ট্রের সম্মান পেতে পারে, সেই রাস্তা তৈরি করে রাখা হয়েছিল। তার পর থেকেই জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল ফিলিস্তিন।

সেসব চেষ্টার ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে জাতিসঙ্ঘে প্রবেশের অনুমতি পায় ফিলিস্তিন। এই ক্যাটাগরিভুক্ত দেশ বা ভূখণ্ডগুলো জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে আলোচনা-বিতর্কে যুক্ত হতে পারে, কিন্তু উত্থাপিত কোনো প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।
গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসন শুরুর পর ফের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য তৎপরতা শুরু করে ফিলিস্তিন। নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে আবেদনও করেছিল জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিন প্রতিনিধিদল। তবে ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায় সেই আবেদন। নিরাপত্তা পরিষদকে সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাতেই আজ ভোট হবে সাধারণ পরিষদে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসঙ্ঘ মিশনের এক সদস্য রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে এবং আমরা বিশ্বাস করি, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী স্থিতিশীলতার জন্য স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের গঠন প্রয়োজন। তবে আমরা এটাও মনে করি, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের নেতাদের সংলাপ ও মতৈক্যের ভিত্তিতেই স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এখানে জাতিসঙ্ঘ দফতরে কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। এ কারণেই আমরা ১৮ এপ্রিলের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছিলাম।’

এই ভোটাভুটি সফল হলে কার্যকরভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাবে ফিলিস্তিন। কূটনীতিকরা বলেছেন, খসড়া প্রস্তাবটি এবার পাস হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে পারে। ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিতব্য এই ভোট ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের বৈশ্বিক সমীক্ষা হিসেবে কাজ করবে। জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য একটি আবেদন প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদ ও পরে সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হতে হয়।
সাধারণ পরিষদ একা জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্যপদের অনুমোদন দিতে পারে না। তবে খসড়া প্রস্তাবটিতে ভোট হওয়ার পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কিছু অতিরিক্ত অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে ফিলিস্তিন। যেমন, সাধারণ পরিষদের অ্যাসেম্বলি হলে জাতিসঙ্ঘের অন্য সদস্যদের মতো একটি আসন পাবে তারা। তবে ভোট প্রয়োগের কোনো ক্ষমতা তাদের হাতে থাকবে না।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের সাত মাস পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বিস্তৃত করে চলেছে ইসরায়েল। বিষয়টিকে বেআইনি বলে মনে করে জাতিসঙ্ঘ। তাই জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে ফিলিস্তিন। বর্তমানে জাতিসঙ্ঘের সদস্য নয় এমন একটি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র ফিলিস্তিন। ২০১২ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের পাস হওয়া দ্বিরাষ্ট্র সমাধান চুক্তির আওতায় এই স্বীকৃতি পায় দেশটি। আর পূর্ণ সদস্যপদের জন্য নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement