১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে : মাহমুদ আব্বাস

-


- যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আজ মিসর যাচ্ছে হামাস
- জীবিত দুই জিম্মির ভিডিও প্রকাশ হামাসের
- বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায়
- পদত্যাগ করতে পারেন ইসরাইলি সেনাপ্রধান

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই বন্ধ করতে পারে। গতকাল রোববার সৌদি আরবের এক সম্মেলনে এ কথা বলেন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক বিশেষ বৈঠকে রোববার তিনি বলেন, ইসরাইলকে রাফাহে হামলা না চালাতে অনুরোধ করার জন্য আমরা আমেরিকাকে আহ্বান জানিয়েছি। খবর : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, আনাদোলু ও এএফপির।

রাফাহতে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের অবশিষ্ট কিছু ব্যাটালিয়ন ধ্বংস করতে পুরোদস্তুর হামলা চালানোর হুমকি কয়েক সপ্তাহ ধরেই দিয়ে আসছে ইসরাইল। রাফাতে স্থল হামলা শুরুর আগে দিয়ে ইসরাইল গত সপ্তাহে নগরীটিতে বিমান হামলা জোরদার করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো এবং ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এর আগে গাজার দক্ষিণের ওই নগরীতে হামলা না চালানোর জন্য ইসরাইলকে অনুরোধ জানিয়েছিল।
রাফাহ নাগরীটি গাজার মিসরীয় সীমান্তে অবস্থিত। ইসরাইলের অভিযানের মুখে গাজার বাদবাকি অংশ থেকে ১০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা পালিয়ে গিয়ে এ নগরীতে আশ্রয় নিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, গাজার সব ফিলিস্তিনিই রাফাহ নগরীতে জড়ো হয়ে আছে। তাই সেখানে ইসরাইলের কেবল একটি ছোট হামলাও ফিলিস্তিনিদেরকে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করবে। আর ফিলিস্তিনের জনগণের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টা তখনই ঘটবে। ইসরাইল গাজায় একবার তাদের অভিযান শেষ করার পর ফিলিস্তিনের জনগণকে পশ্চিমতীর থেকে হটিয়ে দিতে চেষ্টা করবে বলেও আব্বাস আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

মিসর যাচ্ছে হামাস প্রতিনিধি
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য মিসর যাবে হামাস প্রতিনিধি। আজ সোমবার তারা কায়রোর উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানিয়েছে হামাস কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার কায়রো যাবে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবে প্রতিনিধিদল।

নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রোববার ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সাথে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪৫৪ জন। এ দিকে ইসরাইলি আগ্রাসনে আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৫৭৫ জন ফিলিস্তিনি।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে
দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ালো গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ। শনিবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। এ দিকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার স্কুলগুলোতেও। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক খবর জানিয়েছে, বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা পুরো ভবনগুলো দখল করে রেখেছে।
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে সশস্ত্র পুলিশ। দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কে শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শিবির তৈরি করে অবস্থান নিয়েছে। এসব শিবিরে বর্ণবাদীদের জন্য কোনো বিনিয়োগ নয় লেখা ব্যানারও টানানো হয়েছে। সাত মাস ধরে চলতে থাকা গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। বার্লিনে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে শিবির স্থাপন করেছে যুদ্ধবিরোধী কর্মীরা।
প্যারিসের নামকরা সায়েন্সেস পো ইউনিভার্সিটিতে মূল ভবনের বাইরে বিক্ষোভের কারণে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ক্লাস নিতে বাধ্য হয়। সুইডেনেও শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ। বিক্ষোভে জনতা ফিলিস্তিন মুক্ত কর এবং ইসরাইলকে বয়কট কর স্লোগান দেয়। এ ছাড়া শনিবার বিকেলে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে শত শত লোক জড়ো হন।

জীবিত দুই বন্দীর ভিডিও প্রকাশ
জীবিত আরো দুই বন্দীর ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র দলটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওর দুই জিম্মির একজন মার্কিন ও আরেকজন ইসরাইলি নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার সময় বন্দী হন তারা। ভিডিওতে কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। তবে হামাসের হাতে বন্দীরা এখনো বন্দী আছে, এটি তারই প্রমাণ।
ভিডিওতে ৪৬ বছর বয়সী ইসরাইলি নাগরিক ওমরি মিরান জানিয়েছেন, তাকে ২০২ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। আর ৬৪ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক কিথ সিগেল এই সপ্তাহের ছুটির দিনের কথা উল্লেখ করেছেন।

পদত্যাগ করতে পারেন ইসরাইলি সেনাপ্রধান
গোয়েন্দাপ্রধানের পদত্যাগের পর এবার ইসরাইলি সেনাপ্রধান পদত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। শনিবার ইসরাইলের বেসরকারি সংবাদমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ এর বরাতে এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হার্জি হালেভি কিছু দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement