১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তাইওয়ানে ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প

৭ জনের মৃত্যু, আহত ৭০০
ভূমিকম্পে হেলে পড়া তাইওয়ানের একটি ভবন : ইন্টারনেট -

পঁচিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তাইওয়ানে অন্তত সাতজনের মৃত্যু এবং আরো ৭০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। অন্তত ৭৭ জন টানেলের ভেতরে ও ধসে পড়া ভবনগুলোতে আটকা পড়েছেন। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে ঘটা এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশী চীন, ফিলিপাইন এবং জাপানেও। ওই সময় লোকজন কাজে যাচ্ছিল আর শিক্ষার্থীরা যাচ্ছিল স্কুলে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর তথ্য অনুযায়ী, তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৪। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে, উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। টেলিভিশনে প্রদর্শিত ছবিগুলোতে বিপজ্জনকভাবে কাত হয়ে থাকা বেশ কয়েকটি ভবন দেখা গেছে। জনবিরল পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্টি হুয়ালিয়েনেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রাজধানী তাইপের হাসপাতাল কর্মী চ্যাং ইউ-লিন (৬০) বলেন, ‘ভূমিকম্পটি খুব শক্তিশালী ছিল। মনে হচ্ছিল আমার বাড়িটি বুঝি উল্টে পড়বে।’ ভূমিকম্পের পর জাপান ও ফিলিপিন্স সুনামি সতর্কতা জারি করেছিল, কিন্তু পরে তা তুলে নেয়। উদ্ধারকারীরা হেলে পড়া ভবনগুলোর জানালায় মই লাগিয়ে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধার করছেন, গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে আসা ভিডিওগুলোতে এমনটি দেখা গেছে। অন্য এলাকায় ব্যাপক ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে তাইপের পাতাল রেল কিছুক্ষণ বন্ধ রাখা হয়। পরে বেশির ভাগ লাইনেই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দেশটির দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটকা পড়া প্রায় ৭৭ জনের মধ্যে অন্তত ৬০ জন হুয়ালিয়েন শহরের উত্তর দিকের একটি টানেলে আটকা পড়েছেন, আরেকটি টানেলে আটকাপড়াদের মধ্যে দুইজন জার্মানও আছেন। ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা ৭৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে।
তাইওয়ানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেই বুধবার হুয়ালিয়েন পরিদর্শনে যাবেন বলে তার দফতর জানিয়েছে। আগামী মাসে তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের কথা রয়েছে। জাপানের আবহাওয়া দফতর ভূমিকম্পটির মাত্রা ৭ দশমিক ৭ ছিল বলে জানিয়েছে। তারা বলেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় ওকিনাওয়া প্রিফেকচারে কিছু অংশে সুনামির বেশ কয়েকটি ছোট ঢেউ পৌঁছেছে। তারা সুনামি সতর্কতার মাত্রা হ্রাস করে শুধু সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
ফিলিপিন্সের সিসমোলজি এজেন্সিও দেশটির বেশ কয়েকটি প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করে লোকজনকে উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। চীনের রাষ্ট্র্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে। রয়টাসের একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, চীনের বাণিজ্যিক নগরী সাংহাই শহরেও ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাইপেতে এখনো পরাঘাত অনুভূত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি পরাঘাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাইওয়ানের বিদ্যুৎ পরিচালনা কোম্পানি তাইপাওয়ার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের সময় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলেও সরবরাহ আবার স্বাভাবিক হয়েছে। তাইওয়ানের দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভূমিকম্পের কোনো প্রভাব পড়েনি।
তাইওয়ানের হাইস্পিড রেল অপারেটর জানিয়েছে, তাদের কোনো ট্রেনে ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি, তবে সবকিছু পরিদর্শন করে দেখার কাজ চলতে থাকায় পরিষেবা সচল হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ১৯৯৯ সালে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ২৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল ও ৫০ হাজার ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, গত ২৫ বছরের মধ্যে তাইওয়ানে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি।


আরো সংবাদ



premium cement