২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিনল্যান্ডের ন্যাটোভুক্তিতে তুরস্কের অনুমোদন

-

ন্যাটো জোটে ফিনল্যান্ডকে যুক্ত করে নেয়ার প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। ফলে নর্ডিক দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটটির ৩১তম সদস্য হওয়ার পথ খুলে গেছে। রাশিয়ার সাথে দীর্ঘ সীমান্ত থাকা ফিনল্যান্ড ‘সন্ত্রাসীদের’ মদদ দিচ্ছে এ অভিযোগে আঙ্কারা দীর্ঘ দিন হেলসিঙ্কির আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছিল। অবশেষে বৃহস্পতিবার তুরস্কের পার্লামেন্ট ফিনল্যান্ডের নেটোভুক্তিতে সমর্থন দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে।
গত বছরের মে মাসে প্রতিবেশী সুইডেনও ফিনল্যান্ডের সাথেই নেটোতে যুক্ত হওয়ার আবেদন করেছিল। কিন্তু ‘সন্ত্রাসীদের’ মদদ দেয়ার একই অভিযোগে আঙ্কারা এখনো সুইডেনের আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছে। ন্যাটোতে নতুন কাউকে ঢোকাতে হলে জোটভুক্ত সব দেশের সমর্থন লাগে। তুরস্কের আগে নেটোর বাকি ২৯ সদস্য দেশ ফিনল্যান্ডের ন্যাটোভুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছিল। তুরস্কের সমর্থনও মিলে যাওয়ায় এখন জুলাইয়ে লিথুয়ানিয়ায় হতে যাওয়া পরবর্তী সম্মেলনেই ফিনল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যুক্ত করে নেয়া হবে।
তুরস্কের পার্লামেন্টে তাদের আবেদন নিয়ে ভোটের পর ফিনল্যান্ড সরকার বলেছে, ন্যাটো জোটে যোগ দিলে দেশের নিরাপত্তা যেমন জোরদার হবে, তেমনি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতারও উন্নতি ঘটবে। টুইটারে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন লিখেছেন, ‘মিত্র হিসেবে আমরা সুরক্ষা দেবো ও নেবো। আমরা সবাই একে অপরকে সুরক্ষা দেবো। ফিনল্যান্ড বর্তমানে যেমন সুইডেনের পাশে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে এবং এর ন্যাটোভুক্তির আবেদনে সমর্থন দেবে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান এ মাসের শুরুর দিকে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোভুক্তির ব্যাপারে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দিয়েছিলেন; তুরস্কের নিরাপত্তার ব্যাপারে হেলসিঙ্কির নেয়া ‘খাঁটি ও সুদৃঢ় পদক্ষেপের’ প্রশংসাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু সুইডেনের ব্যাপারে তার আপত্তি এখনো প্রবল। দেশটি কুর্দি ‘বিদ্রোহীদের’ আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে স্টকহোমের রাস্তায় কর্মসূচি পালনের সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুরস্কের প্রেসিডেন্টের।


রাশিয়ার সাথে ১৩৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত আছে ফিনল্যান্ডের; কামানের সংখ্যা বিবেচনায় এটি পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রভাণ্ডারের অধিকারী।
রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পর ফিনল্যান্ড তাদের ‘নিরপেক্ষতা’ নীতিতে বদল এনে পশ্চিমাদের সাথে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউক্রেনে মস্কোর অভিযান সুইডেনকেও ‘নিরপেক্ষতার’ বেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে, প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডের মতো তারাও ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার আবেদন জানায়। তবে ফিনল্যান্ডের মতো তাদের সাথে রাশিয়ার কোনো সীমান্ত নেই।
ন্যাটোর অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন নীতি হচ্ছে সম্মিলিত প্রতিরক্ষা নীতি। এর অর্থ জোটের কোনো দেশের ওপর হামলা, জোটের সব দেশের ওপর হামলা বলেই বিবেচিত হবে। ফিনল্যান্ডের এই ন্যাটোভুক্তিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জন্য বড় কৌশলগত পরাজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ন্যাটোতে থাকলে রুশ হামলার সম্ভাবনা কম, এ ধারণা থেকেই ফিনল্যান্ড জোটভুক্ত হওয়ার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অনুমান করা যায়। নর্ডিক এই দেশটির জনগণ ন্যাটোতে যাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাতারাতি ওই পরিস্থিতি বদলে যায়; ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পক্ষে জনসমর্থন এক-তৃতীয়াংশ থেকে বেড়ে এক লাফে প্রায় ৮০ শতাংশে পৌঁছে যায় বলে সে সময় দেশটির নাগরিকদের মধ্যে হওয়া বেশ কয়েকটি জনমত জরিপে দেখা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement