২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফের গোলাবর্ষণ

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়ায় গোলার আঘাত : এএফপি -

ইউক্রেনে অবস্থিত ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়ায় ফের গোলাগুলির কথা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় একের অপরকে দুষছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। উভয়পক্ষ জানিয়েছে, প্ল্যান্টের অফিস ও ফায়ার স্টেশনে ১০ বার আঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনায় এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের পারমাণবিক সংস্থা এনারহোয়াটম জানিয়েছে, রুশ হামলাকারীরা জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্ট ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছাকাছি অঞ্চলে গোলাবর্ষণ করেছে। এতে বেশ কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোলাগুলির কারণে কর্মীদের দ্রুত সরিয়ে নেয়া অসম্ভব ছিল। ফলে অভারটাইম করতে হয়েছে তাদের। তবে পরিস্থিতি ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছে এনারহোয়াটম।
গত সপ্তাহেও পরমাণু কেন্দ্রটিতে বিস্ফোরণ হয়েছিল। যার জেরে একটি ইউনিট বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানায়, বৃহস্পতিবার যেভাবে সেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, তাতে যেকোনো সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। একবার তেজস্ক্রিয় বস্তুতে বিস্ফোরণ হলে তা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা।
ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার শেল বা রকেট এসে পড়েছে ওই কেন্দ্রে। যদিও রাশিয়া এখন পর্যন্ত তা স্বীকার করেনি। এ বিষয়ে তারা এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। গত সপ্তাহে রাশিয়া জানিয়েছিল, ইউক্রেন ওই পরমাণু কেন্দ্রে আক্রমণ চালিয়েছে। কারণ রাশিয়ার সেনা ভেতরে আছে। ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়ার সেনা পরমাণু কেন্দ্রের ভেতর থেকে আক্রমণ চালাচ্ছে। সে কারণে তাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, পরমাণু কেন্দ্রকে সামনে রেখে রাশিয়া ইউক্রেনকে ব্ল্যাকমেইল করছে।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি সতর্ক করে বলেন, এটি একটি ‘গুরুতর সময়’। আর জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর জাতিসঙ্ঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, ওই পরমাণু কেন্দ্রটিকে সেনাহীন করতে হবে। রাশিয়াকে দ্রুত ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন তিনি। তার বক্তব্য, পরমাণু কেন্দ্রে এ ধরনের পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেভাবেই হোক ওই এলাকাটিকে সেনামুক্ত করতে হবে।
এ দিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞ দলকে দ্রুত পরিদর্শনের জন্য অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এর আগে প্ল্যান্টের সুরক্ষায় আশপাশে একটি নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে সংঘর্ষকে বিপজ্জনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অ্যাখা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র। তবে এর বিরোধিতা করে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত রাশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, নিরস্ত্রীকরণ কোনো বিকল্প হতে পারে না; এতে উসকানি ও সন্ত্রাসী হামলায় পরিস্থিতিকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ান বাহিনীকে তাদের দখলে নেয়া জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বাধ্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার তার দৈনিক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, ‘জাপোরিঝিয়া থেকে দখলদারদের তাড়াতে সমগ্র বিশ্বকে অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’ রাশিয়ান পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’-এর নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘শুধু রাশিয়ানদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার সমগ্র ইউরোপের জন্য পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণ শুরুর পর মার্চ মাস থেকেই রাশিয়ান সৈন্যরা দক্ষিণ ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রটি দখল করে রেখেছে। এটি ইউরোপের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। বৃহস্পতিবার রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরকে প্ল্যান্টের কাছে নতুন গোলাগুলির জন্য অভিযুক্ত করেছে, তবে তাদের দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement